somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডারউইনের গালাপাগোস এবং আমার বিস্ময়!

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দক্ষিন আমেরিকার সমুদ্র উপকুল হতে আনুমানিক এক হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে ইকুয়েডর এর নিকটবর্তী আগ্নেয়শিলা দ্বারা গঠিত ভূমিখণ্ডের দ্বীপগুচ্ছ নিয়ে রহস্যময় যে দ্বীপগুলো পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে আছে তাই “গালাপাগোস” নামে পৃথিবীজুড়ে পরিচিত। পানামার প্রথম বিশপ ‘তমাস দ্যা বারলাঙ্গা’ ১৫৩৫ সালে পানামা হতে পেরু যাওয়ার সময় অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই সন্ধান পান রহস্যময় দ্বীপপুঞ্জ গালাপাগোসের। তিনি তার সফর শেষে স্পেনের তৎকালীন রাজা পঞ্চম চার্লসকে তার এই আবিস্কারের কথা জানান। তিনি যে রিপোর্টটি জমা দেন তাতে গালাপাগোসকে বর্ণনা করেন বিশাল আকৃতির সব গালাপাগোস কচ্ছপ (যে প্রজাতির কচ্ছপের নামে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে) আর বোকা পাখির দ্বীপ হিসেবে; যে বোকা পাখিগুলো ঠিকমত উড়তেও শেখেনি এবং যাদের ইচ্ছা করলে খুব সহজেই হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়। ১৫৭০ সালের আগ পর্যন্ত পৃথিবীর মানচিত্রে গালাপাগোস এর কোন চিহ্ন ছিল না। ১৫৭০ সালের বিশ্বমানচিত্রে গালাপাগোস সম্পর্কে প্রথম অফিসিয়াল রেকর্ড পাওয়া যায়।



এইচএমএস বিগ্ল রাজকীয় নৌবাহিনীর একটি চেরোকি শ্রেণীর ১০-গানের ব্রিগ-স্লুপ জাহাজ। ১৮২০ সালের ১১ই মে এর যাত্রা শুরু হয় উলউইচ ডকইয়ার্ড থেকে। এইচএমএস বিগ্‌লের দ্বিতীয় অভিযানের সময় এইচএমএস বিগ্ল এই দ্বীপে এসেছিল ক্যাপ্টেন ফিৎজরয়ের নেতৃত্বে যে যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন চার্লস ডারউইন। তারা দ্বীপে এসে পৌঁছেছিল ১৮৩৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর, মূল উদ্দেশ্য ছিল কিছু জরিপ পরিচালনা। ক্যাপ্টেন ফিৎজরয় ও তার তরুণ সঙ্গী জাহাজের প্রকৃতিবিদ চার্লস ডারউইন মূলত চারটি দ্বীপে বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ভূতাত্ত্বিক জরিপ পরিচালনা করেছিলেন। দ্বীপ চারটি হল চ্যাথাম, চার্লস, অ্যালবেমার্ল এবং জেমস আইল্যান্ড। কাজ শেষে ২০শে অক্টোবর তারা দ্বীপপুঞ্জ ছেড়ে গিয়েছিলেন তাদের বিশ্বভ্রমণ শেষ করার জন্য। এই দ্বীপে এসেই ডারউইন লক্ষ্য করেছিলেন এখানকার মকিংবার্ডগুলো একেক দ্বীপে একেক রকম। বর্তশানে এই পাখিগুলোকে ডারউইনের ফিঞ্চ বলা হয়, যদিও সে সময় ডারউইন মনে করেছিলেন এদের সাথে কোন গভীর সম্পর্ক নেই এবং দ্বীপ অনুযায়ী তাদের আলাদা নামকরণের বিষয়টিও ভ্রমণের সময় তিনি চিন্তা করেননি।



সে সময় ইকুয়েডর প্রজাতন্ত্রের গালাপাগোস প্রদেশের গভর্নর ইংরেজ অভিজাত নিকলাস লসন চার্লস আইল্যান্ডে তাদের সাথে দেখা করেন। ডারউইনের সাথে দেখা হলে তিনি জানান, কচ্ছপও একেক দ্বীপে একেক রকম। দ্বীপপুঞ্জে থাকার শেষ দিনগুলোতে ডারউইন ভাবতে শুরু করেছিলেন, একেক দ্বীপে ফিঞ্চ ও কচ্ছপের এই বৈচিত্র্য প্রজাতির পরিবর্তন সম্পর্কে নতুন ধারণার জন্ম দিতে পারে। ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ডারউইন গালাপাগোস সহ ভ্রমণের সময় বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত নমুনাগুলো অভিজ্ঞ জীববিজ্ঞানী ও ভূতত্ত্ববিদদের দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পেলেন, গালাপাগোসের ফিঞ্চগুলো বিভিন্ন প্রজাতির এবং দ্বীপ অনুযায়ী তাদের বৈশিষ্ট্য অনেক ভিন্ন। এই তথ্যগুলোই ডারউইনকে তার প্রাকৃতিক নির্বাচন এর মাধ্যমে বিবর্তন প্রমাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ ধারণা থেকেই তিনি তার সবচেয়ে বিখ্যাত বই অন দি অরিজিন অভ স্পিসিস রচনা করেন যা ১৮৫৯ সালে প্রকাশিত হয়।



গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে নানা কারণেই বলা হয় রহস্যময় অঞ্চল। এখানকার প্রকৃতির আচরণ যেমন বিচিত্র তেমনি অদ্ভুত প্রাণিকুলের ধরন। এ অঞ্চলের প্রকৃতি সব সময় যেন বিচিত্র খেয়ালি হয়ে বিচরণ করে। আকাশ, বাতাস, সাগর, মাটি সবখানেই প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার উদাহরণ জ্যান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের আকাশে প্রায় সময়ই বয়ে চলে প্রচণ্ড হাওয়ার স্রোত। সেখানকার সাগরে এলোমেলো ঢেউ আর খরস্রোতের তাণ্ডব। আবার যখন তখন নেমে আসে চারদিক আঁধার করা কুয়াশা। প্রকৃতির এত্তসব বিপত্তি পেরিয়ে সেখানে জাহাজ চালানো খুব কঠিন ছিল। এসব প্রতিকূল পরিবেশ দেখে প্রাচীনকালের নাবিকরা এ অঞ্চলের নাম দিয়েছিল 'জাদুদ্বীপ' বা 'মায়াদ্বীপ'।



গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার এক হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে নিরক্ষরেখা বরাবর। ১৮৩৫ সালে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন যখন এই রহস্যময় অঞ্চল ভ্রমণে আসেন, এই দ্বীপপুঞ্জে তার পর্যবেক্ষণের ফলে বিবর্তন প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি নতুন এক তত্ত্ব সংযুক্ত করেন। সেটাকে বলা হয় প্রাকৃতিক চয়নতত্ত্ব। এখানে যেসব প্রাণী বিচরণ করে তাদের দেখে আশ্চর্য হতে হয়। এখানকার উদ্ভিদও বৈচিত্র্যের দিক থেকে অনন্য। সামুদ্রিক পাখিদের বেশ কয়েকটি প্রজাতি কেবল গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জেই দেখতে পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে গালাপাগোস পেঙ্গুইন, উড়তে অক্ষম করমোরয়ান্ট আর ওয়েভড অ্যালবাট্রস। বিশেষ এই প্রাণীগুলোর দেখা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। তবে যে দুটি প্রাণীর কারণে গালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ সবচেয়ে বিখ্যাত তারা হলো টোরটোয়াইজ বা দৈত্যাকার কচ্ছপ আর সামুদ্রিক ইগুয়ানা। মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানকার বাসিন্দা প্রাণিকুল মানুষের উপস্থিতিকে মোটেই ভয় পায় না। মানুষ নামের দোপেয়ে জীবটাকে যে একটু ভয় পাওয়া দরকার সে ব্যাপারটাই বোধ হয় ওদের মাথায় ঢোকে না। শুধু জীববৈচিত্র্যই নয়, এখানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির গাছের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। এখানকার ঝঞ্ঝাপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছ আর প্রাণীগুলো বিচিত্রভাবেই বেড়ে উঠেছে।



সবমিলিয়ে উদ্ভিদ, প্রাণী, পরিবেশসহ নানা ভঙ্গিমার বিজ্ঞানী আর টেলিভিশন চ্যানেলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থেকেছে এই অঞ্চল। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন প্রাইভেট ট্র্যাভেল ট্যুরের আয়োজন করছে ট্রিপ টু গালাপাগোস এই রহস্যময় দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে দেখার। দশদিনের লাক্সারি ট্রিপে একজনের জন্য খরচ হবে ছয় হাজার ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। আমি আজ থেকে টাকা জমানো শুরু করলাম, আমাকে যেতেই হবে প্রকৃতির এই রহস্যমাখা দ্বীপপুঞ্জে। সবশেষে আসুন দেখি কিছু অসম্ভব সুন্দর ছবি এই দ্বীপের প্রাণীকুলের।




















সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×