আজ থেকে ঠিক ছয় বছর সাত মাস তের দিন আগে “এপয়নমেণ্ট লেটার” নামক এক হার্ডকপি ডকুমেন্টসের কল্যাণে আমার জন্ম। ভাবতেও অবাক লাগে কত কাঙ্ক্ষিত, প্রত্যাশিত ছিল আমার এই জন্ম। মানুষরূপে জন্ম নেয়ার পর থেকে সবসময় আমার একান্ত স্বপ্ন ছিল একদিন আমি “কর্পোরেট ......” হব। কিন্তু যদি তখন জানতাম আমার এই বিবর্তনের পরিণতি এমন ভয়াবহ হবে তবে কি কখনো এমন চাইতাম। কি ক্লান্তিকর অসহ্য এই জীবন।
প্রতিদিন এলার্ম নামক ব্লুটুথ ডিভাইসের সাউন্ড ফ্রিকয়েন্সির ফিডব্যাকে আমার দেহ নামক সিপিউইটি স্টার্ট নেয়। মন নামক আমার র্যামটি তখন সারা দিতে চায় না। তবুও আমি আমার প্রসেসিং ইউনিটটি চালু করে একটি কর্মময় দিনের জন্য তৈরি হই। আমার দেহ হতে “প্রাকৃতিক বর্জ্য” নামক টেম্প ফাইলগুলোকে ডিলিট করে আমার দেহ নামক সিপিইউ এর হার্ডডিস্কটি ফাঁকা করে ছুটে চলি “পাবলিক বাস” নামক ব্রাউজারের উদ্দেশে। সময় মত আমার কাঙ্খিত ওয়েব এড্রেসের ব্রাউজারে এন্ট্রি করতে না পারলে আমার ওয়ার্কষ্টেশনে পৌছতে দেরি হয়ে যায়, একমাসে মোট তিনদিন এরুপ হলে আমার মাসিক পাওয়ার সাপ্লাই হতে একদিনের পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়া হয়।
গত সাড়ে ছয় বছরে আমি তিনজন ইউজারের হাত ঘুরে বর্তমান ইউজারের কাছে আছি আজ আট মাস হল। আমার বর্তমান ইউজার লোক ভালো, তবে মাঝে মাঝেই আমাদের সকল “কর্পোরেট রোবট” এর উপর ক্ষেপে উঠেন। অসংখ্য অর্থহীন শব্দে আমাদের সম্বন্ধন করেন, যে শব্দের তরঙ্গ আমাদের র্যামে কোন সারা জাগায় না। তবে এই ইউজার ভালো, আমার আগের ইউজার একবার আমার এক সহকর্মী রোবটকে ঝাকাঝাকি পর্যন্ত করেছিলেন। তবে আমরা কর্পোরেট রোবটরা খুবই হ্যাপি লাইফ লিড করি, কেননা ইউজাররা সহজে আমাদের র্যামে “ইমোশন” নামক সফটওয়্যারটি রিইন্সটল করতে পারে না।
যাই হোক, যে কথা বলছিলাম। সকাল দশটার মধ্যে ওয়ার্ক ষ্টেশনে পৌঁছে শুরু করে দেই নানান ফাইল প্রসেসিং, চলে নানান আপলোড-ডাউনলোড। সারাক্ষন বিজি থাকায় আমার র্যাম আর প্রসেসর গরম হয়ে উঠে, কখনো কখনো কুলিং ফ্যানেও তা ঠাণ্ডা হয় না। তখন সিস্টেম রিস্টার্ট দিয়ে নিজেকে রিফ্রেশ করে নেই। সন্ধ্যা নাগাদ যখন ওয়ার্ক ষ্টেশন থেকে বের হই তখন আমার সিপিইউ প্রচণ্ড স্লো হয়ে যায়। এই অবস্থায় ল্যান নেটওয়ার্ক (লোকাল বাস) দিয়ে “পাবলিক বাস” নামক ব্রাউজারে চেপে ল্যান নেটওয়ার্কের স্লো স্পিড, হ্যাকারদের উৎপাত, অন্য রোবটের সাথে ঘর্ষণের শর্ট-সার্কিট এতসব যন্ত্রণা সহ্য করে আমি আমার ডোমেইন এড্রেসে পৌঁছই।
সারাদিনের কর্মব্যাস্ত সময় শেষে ডোমেইন এড্রেসে ফিরে নিজেকে এলিয়ে দেই রিচার্জারের কোলে। এভাবে সারা সপ্তাহ কর্মব্যাস্ততা শেষে একদিন আমার সিপিইউ ফুল্লি রিচার্জ হওয়ার সুযোগ পায়। কিন্তু সেদিনও এণ্টিভাইরাস সফটওয়্যার রান করা, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে আমার হার্ডওয়্যার ক্লিন করা, র্যামবুস্টারে র্যাম স্পিড বাড়ানো এরকম নানান কাজে আমাকে ব্যাস্ত থাকতে হয়। এভাবেই যান্ত্রিক ব্যস্ততায় কেটে যায় আমার প্রতিটি যন্ত্রণাময় দিন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৯