(গল্পের প্রতিটি চরিত্র অকাল্পনিক)
নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিলো। কেন যে বাসে করে ভাইভা দিতে এলাম। সতেরটা এপ্লাইএর পর একটা ভাইভা কল পেয়েছি। নিজেকে ভাইভা কল পাওয়ার পর সৌভাগ্যবান মনে হয়েছিল। আমার বন্ধু আবেদ ৬৩টা এপ্লাই করেও গত ৬ মাসে একটাও ভাইভা কল পায়নি। তার উপর আজ যে কোম্পানিতে ভাইভা দিতে এসেছি তা এই ইন্ডাস্ট্রিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি। ডেসিগনেশন বা সেলারি যাই হোক, এখানে কাজ করতে পারাও আমার জন্য বড় সৌভাগ্যর ব্যাপার হবে। এরকম একটা চাকুরীর ভাইভা দিতে এলাম বাসে করে। কাউণ্টার বাস হলে কি হবে, লোকালের চাইতে বেশী ভিড় ছিল। ঘামে, সহযাত্রীর চাপে অবস্থা বেসম্ভব ভাল!
এই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম, পাশে উচ্চস্বরে কথাবার্তা সেদিকে মনযোগ নিয়ে গেল। আমি যেখানে ওয়েট করছিলাম ভাইভার জন্য ঠিক তার বা পাশে রিসিপসন। রিসিপ্সনের মেয়েটা করা স্বরে একটা ছেলেকে ঝারছে।
“আপনি একটা সহজ কথা বুঝতে পারছেন না কেন?”
ছেলেটা, ‘‘না মানে আমাকে বলা হয়েছিল, পরে জানানো হবে। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেল, আমার সাথে কেউ যোগাযোগ করেনি। তাই আরকি...”
“আপনাদের কমনসেন্স বলতে কিছু নেই কি? ভাইভা দিছেন গতসপ্তাহে, এখনো যোগাযোগ করেনি বলে আপনি ছুটে চলে এলেন খবর জানতে। আরে ভাই কোম্পানির কি আর কোন কাজ নেই?”
“না ম্যাডাম, আমি আসলে খোঁজ নিতে এসেছিলাম, কারণ আমাকে বলেছিল আমার সাথে যোগাযোগ করা হবে। কিন্তু কেউ যোগাযোগ করেনি তাই......”
“ভাই আপনি জানতো, আপনার চাকরি হলে আপনার সাথে যোগাযোগ করতো। যেহেতু যোগাযোগ করেনি, তার মানে আপনার চাকরি হয়নি, এই সহজ কথাটা বুঝতে পারেন না। আপনি কোথাও চাকরি করবেন কিভাবে”
কথাতো ঠিক চাকরির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তা চাকুরিদাতারা
জানায় না। (যদি অকৃতকার্যরা এতে কষ্ট পায়)
ছেলেটি অবাক বিস্ময়ে কিছুক্ষণ, হয়তো ক্ষণিকের জন্য মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল। ছেলেটি নেমে যেতেই মেয়েটি দারওয়ানকে ডেকে দিল এক ঝাড়ি। এইসব উদ্ভট লোকজনকে কেন যে অফিসে ঢুকতে দেয় এরা, এইসব বলে মেয়েটি গজগজ করতে লাগল। আমিতো ঢোঁক গিললাম। যে অফিসে একজন রিসিপ্সনের কর্মচারীর এই রুদ্রুরুপ সেখানে উপরের তলার বসেরাতো ভয়াবহ হবে।
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে যখন একটু বেখায়াল ছিলাম, হঠাৎ দেখি ব্ল্যাক জিন্স আর সাদা শর্ট ফতুয়া পরা একটা ডানাকাটা পরি পাশ দিয়ে গেল। এতো রুপ মেয়েটার যে অবাক হয়ে নির্লজ্জের মত অপলক তাকিয়ে ছিলাম করিডোরের বাঁক ঘুরে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। আমি ভাবতে লাগলাম এমন সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে কয়টা দেখেছি? দুএকটার বেশী মনে করতে পারলাম না।
কিছুক্ষন পর তাকে আবার দেখা গেল, এসে রিসিপ্সনে দাঁড়াল। আমিও যথারীতি তার দিকে চেয়ে আছি। হঠাৎ বুঝতে পারলাম সে ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে, আড়চোখে আমাকে দেখল। আমি মাথা ঘুরিয়ে এমন ভাব নিলাম যে আমি চারপাশ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি, আর সেই দেখার একটা অংশ ছিল তাকে দেখা।
যাই হোক যথারীতি আধঘণ্টা বসে থাকার পর আমার ভাইভা কল এলো। ভাইভা বোর্ডে ঢুকেই খেলাম এক ধাক্কা, সেই মেয়েটি বসে আছে, সাথে আরও দুইজন লোক। ভাইভার শুরুতে তারা তাদের পরিচয় দিলেন। মেয়েটি কোম্পানির হিউমেন রিসোর্সের জিএম। এই শুনেতো আমার কইলজা শুকিয়ে গেল, ভাইভা দিব কি? পালিয়ে বাঁচতে পারলে ধন্য হই। কেন নার্ভাস হলাম বুঝতে পারিনি কখনো। হাস্যকর এক ভাইভা দিলাম। বংশ টাইটেল নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তাদের কোম্পানির নাম মুখে চলে আসলো। বুঝেন অবস্থা! আমার উত্তর শুনে সে, না থুক্কু, উনি হেসে দিলেন। ও মাগো কি সুন্দর হাসিরে বাবা, আমিতো মরেই যাবো বাঁচাতে পারবে না” টাইপের হাসি। কোনমতে ভাইভা শেষ করে পালিয়ে বাঁচলাম। এতো সাধনার পরে একটা ভাইভা কল পেলাম, তাও গেল গোল্লায়। হায়রে কপাল! সান্ত্বনা একটাই, জলজ্যান্ত পরি দেখার ভাগ্যতো হল, এও কি কম। বেকার জীবনে সময় পার করতে, কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াতে একটা ভেলাতো পেলাম।
কিন্তু এটা ভাইভা ছিল? নাকি ভাললাগা? অথবা ভালবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৫