সম্ভবত ক্লাস এইটে পড়ি। ১৯৯২-৯৩ মফস্বল থানা (উপজেলা) শহর । খুব চলে আদনান বাবু, খালেদ হাসান মিলু, রবি চৌধুরীর ক্যাসেট। পাওয়া যায় না ব্যান্ডের কোন এ্যালবাম। ব্যান্ডের গান সম্পর্কে পড়ি পত্রিকায়। সমালোচনা শুনি মুরব্বীদের মুখে, - এইগান ঠিকবে না। গান বলতে কিছুই না বাদ্যের তালে তালে চিল্লা ফাল্লা।
কোথাও কোথাও শুনি “মেলায় যাইরে”। ভালো লাগে। একটা আগ্রহ দানা বাঁধে। বাসায় ক্যাসেট প্লেয়ার নাই। এমন না যে বাসায় গান শুনা নিষেধ। টিভি রেডিও আছে শুধু মাঝখান থেকে ক্যাসেট প্লেয়ারটা নাই। আবদার করা যাবে না। কারন বাবার মতে, বিনোদন আর খেলাধুলার এত আয়োজন আছে যে পড়ালেখা চাঙ্গে তুলতে নতুন আরেকটার দরকার নাই।
বিদেশ থেকে খালা এলেন সাথে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার। এটা আমারাইজ করে ফেললাম। এবার জেলা শহর হবিগঞ্জে গেলে (দুনিয়ার যে প্রান্থেই যেতে হোক না কেন জেলা শহর হয়েই যেতে হয়।) একটা অডিও ক্যাসেট আনা চাই (৬ মাসে অন্তত ১টা)। প্রথম অডিও ক্যাসেট কিনি ডিজিটাল ব্যান্ডের একটা এ্যালবাম তারপর মাইলসের প্রত্যাশা।
তখন পত্রিকা আর ম্যাগাজিনে ‘অডিও বাজার’ নামে বিশেষ প্রতিবেদন থাকত। সেখান থেকে ব্যান্ডের এ্যালবামের খবর পাওয়া যেত। হবিগঞ্জের ঝংকার ইলেক্ট্রনিক্স থেকেই ক্যাসেট কেনা হত। এমনি একবার গিয়ে জানতে চাইলাম এলআরবি’র ‘সুখ’ আর ফিলিংস এর ‘জেল থেকে বলছি’ এর মাঝে কোনটা বেশি চলছে। নতুন এ্যালবাম আসলে বিজ্ঞাপনও থাকত। দোকানের ভাই সুন্দর করে বুঝালেন এলআরবি’র ‘সুখ’ সেই রকম চলছে। আর ফিলিংসের গায়ক নেশা করে, সুর ও ভাল না। চলছে না এত। দুইটা এ্যালবামের দু’লাইন করে গান শুনিয়ে দিলেন। বুঝলাম ‘সুখে’ সুর আছে জেমসে সুর নাই। ফিলিংস/জেমস সম্পর্কে ভুল ধারনা নিয়ে সুখ হাঁতে ফিরে এলাম। ‘ চল বদলে যাই’ এ বুঁদ হয়ে রইলাম কয়দিন। রিওয়াইন্ড করে করে শুধু ‘সেই তুমি’ই শুনতাম। এরপর এক সময় ‘রুপালি গিটার’ ভাল লাগল । বিটিভিতে ঈদে ‘ব্যান্ডে শো’ নামে একটা অনুষ্ঠান হত। ১৯৯৪’র দিকে সম্ভবত সেই অনুষ্ঠান বা শুভেচ্ছা নামক ম্যাগাজিনে প্রথম দেখলাম এল আর বি’র গান। সে কি শিহরণ। আইয়ুব বাচ্চু গানের মাঝখানে মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড সমেত ছুটলেন টুটুলের কি বোর্ড পর্যন্ত। এইটুকুতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে যাচ্ছিলাম।
দিন যায় ভালো লাগতে থাকে হাসপাতালে, যত বেশি, কেমন আছ গান গুলো। একসময় ‘কি আশাতে’ । প্রায় ২০ বছর পর খুব ভালো লেগে গেল ‘আমি যে কার’ গানটি।
১৯৯৫ সালে ঢাকায় আসি তখন গুরু যা গায় তা ই হিট। কলেজ থেকে ফিরতে ফিরতে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গাই, ‘আপবাদ দাও আমায় ......’ ‘যেন ধুলো মাখা টেবিলে বিষণ্ণ খেয়ালে ......’
১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে কোন এক কনসার্টে প্রথম সামনা সামনি দেখি গুরুকে। পরে আরও কয়েকবার।
ইদানীং অনেক লাইভ টিভি প্রোগ্রামে গাইতে দেখেছি আমার কৈশোরের নায়ক কে। ‘সেই তুমি’ যেন এল আর বি’র অভিচ্ছেদ্ধ একটা গান। গুরু’র এমন অনেক টিভি শো দেখেছি আর ভেবেছি গুরুর গলাটা আর আগের মত নাই। সুখ এ্যালবামের ‘সেই তুমি’ আর আসছে নে গুরুর গলা থেকে।
যখন জেনেছি, গুরু রুপালি গিটারটা ফেলে চলে গেছেন। সত্যি আমি গোপন করে রেখেছি আমার অশ্রু।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪৩