গত কয়েক মাস ধরে প্লেন করছিলাম সুনামগঞ্জ যাব শিমুল বাগান দেখতে । সব কিছু ঠিক থাকলে ২৪শে ফেব্রুয়ারী সঠিক টাইম । কিন্তু তা হল না । যাত্রা এক সপ্তাহ পিছালো । কিন্তু দুশচিন্তা ততদিন শিমুল ফুল থাকবে তো ? এলাকার শিমুল গাছগুলোতে এখনো ভরপুর ফুল দেখা যাচ্ছে । আশাজাগানিয়া ব্যাপার । খুব ভোরে দুই বন্ধু রওয়ানা দিলাম সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে । প্রথমেই যাত্রা সিলেটকে উদ্দেশ্য করে ।
অলস সময় । সিলেটে, সুরমা নদীর পাড়ে ।
সুরমার পাড়ে কিন ব্রিজের পাঁশে আলি আমজাদের ঘড়ি ।
সিলেটের কুমারগাঁ য়ে সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড ।
পথে সিলেট থেকে তুলে নিলাম মামাতো ভাই শরীফ কে । আসতে বললেই, চলে আসলো ঘুম বাতিল করে । বেচারা জানেইনা কোথায় যাচ্ছে । জানার কোন উৎসাহ ও চোখে পড়লো না ।
বেশ ৫ ঘণ্টার যাত্রা শেষে পৌঁছলাম সুনামগঞ্জ সাহেব বাড়ী ঘাঁটে । আগেও এসেছি, এখান থেকে মোটর সাইকেলে করে যেতে হয় অপরূপ যাদুকাটা নদী । এর আশেপাশেই আছে সেই কাঙ্খিত শিমুল বাগান । এই সুযোগে সাহেববাড়ী ঘাঁটের পাশেই হাসন রাজার বাড়ী + যাদুঘরে ঢুঁ মারার খায়েশ ।
হাসন রাজার ব্যাবহার করা আসবাব, তৈজস পত্র ও অন্যান। যাদুঘরে সংগ্রহীত ।
খানদানি দর্শক । জমিদার বাড়ির মুরগি বলে কথা ।
জাদুঘরের পাঁশের ফুল গাছটার নাম জানি না।
জাদুঘরের পাঁশেই পলাশ ফুল ।
কলস বাঁধা । পাখিদের আবাসের ব্যাবস্থা ।
এই পাখিটার নাম জানি না ।
যাদুঘরে খায়েশ মিটিয়ে ফটো তুলে ঘাঁটে ফিরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মোটর সাইকেল ওয়ালাদের কোন দেখা নাই । আশেপাশের লোকদের সাথে কথা বলে জানলাম, শহরে ঢুকতেই যে নতুন ব্রিজ দেখা যায় সেদিক দিয়ে নতুন রাস্তা হয়েছে । এখন ওই পথে যাদুকাটা নদী যাওয়া হয় । ঐটাই সহজ ও উন্নত রাস্তা ।
নতুন রাস্তা হয়েছে, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছে এই এলাকা গত কয়েক মাসে । মনে আছে ২০০৫/০৬ সালে এ পথে টেকের ঘাঁটে চুনা পাথরের খনিতে গিয়ে ছিলাম পুরো ৬/৭ ঘণ্টা লাগিয়ে । বর্ষায় প্রকল্পের একটি নৌকা সপ্তাহে দুদিন আসা যাওয়া করত এখানে । ওই একটাই যান । সপ্তাহে ওই দুদিনই পুরো সপ্তাহের পত্রিকা আসতো । বাহিরের দুনিয়ার সাথে যোগাযোগ এভাবেই ছিল এখানে।
সিএনজি করে রওয়ানা দিলাম । পথে দুঃসংবাদ পেয়ে গেলাম । শিমুল বাগানে ফুল ঝড়ে গেছে । মনটা খুব খুব খারাপ ।
সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর উপর তৈরি নতুন ব্রিজ ।
রাস্তার পাঁশে তরমুজের ক্ষেত । বাংলালিংক তরমুজ । (নামকরনে বুঝা যায় আমাদের রসবোধ আর প্রতিভা । কথায় আছে না, প্রতিভা আর ঘামের গন্ধ কখনো চাপা থাকে না ।)
যাদুকাটা নদীর পাড় জুড়ে বালুর রাজ্য ।
অপরূপ যাদুকাটা নদীর রুপের যাদু ।
যাদুকাটা নদী পার হয়ে মোটর সাইকেলে পৌঁছলাম শিমুল বাগানে। হায়! সত্যি বাগানে ফুল নেই । খুব সামান্যই ফুল আছে গাছে, দুঃখটা বাড়ানোর জন্য ।
এক টুকরো শিমুল স্বর্গ ।
পাশেই লেবু বাগানে ফুল ফুটছে ।
রুক্ষ ফাল্গুনের শেষে, চৈত্রের আগমনী । সামনের দিন গুলোতে আরও বিবর্ণ হবে বাঁশ ঝাড় । সামনের বালুময় অংশ বর্ষায় উজানের পানিতে তলিয়ে গিয়ে যৌবন ফেরাবে বাঁশঝাড়ের ।
দিন শেষ ফেরার পালা ।
খুব সুন্দর একটা জায়গা পুরো সুনামগঞ্জ । শুষ্ক মৌসুমে এমন সুন্দর, আর বর্ষায় হাওড় জুড়ে থাকবে পানি । এর রূপে মুগ্ধ ছিলেন হাসন রাজা আর আব্দুল করিমদের মত কতশত কবি, বাউল, ফকির । আর আমরা ? আমদের সেই সরস চোখ কোথায় ? তারপর ও .........
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:১৪