আট চল্লিশের দেশভাগের দীর্ঘশ্বাস দেখিনি
দেখিনি, বায়ান্নতে মুখের ভাষা ফিরে পাবার উল্লাস
কালো কাপড়ে মোড়ানো ষাটের দশকেও দেখতে হয়নি
আমি বাংলার নয় বাংলাদেশের সন্তান।
উনসত্তরের গনভ্যুত্থানে বিপ্লবীদের বজ্রমুষ্ঠি দেখিনি
দেখিনি, ৭০’র নির্বাচনে দেয়া দাত ভাংগা জবাব
রাজপথটাকে রক্ত গোসল দেয়াইনি পুরো একাত্তরে
আমি বাংলার নয় বাংলাদেশের সন্তান।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত সাথে
দু লক্ষ মায়ের লজ্জার বিনিময়ে পাওয়া
আমার স্নিগ্ধ সুন্দর সবুজ মাকে
পালা করে ভোগ করে দুই শুয়োরের দল
ভাংগা গলায় ডাকা মায়ের করুণ কন্ঠস্বর
ফেরাতে পারেনি সেইসব লোভী পাপিষ্ঠ সন্তানদের
কত কষ্টের পাওয়া দেশমাতৃকার বুকে আজ
মুখোশধারী কিছু হায়েনার দাত আর নখের হিংস্র আচড়
প্রহরের পর প্রহর যায়
দিন মাস বছর আসে যায়
অন্ধকারের পর আলো আসে
বেদনার পর সুখ
আমার দেশ মায়ের কোলে
কত সন্তান আসে চলে যায়
বুকের জ্বালায় ঝলসিত মাকে
কোন সন্তান আশা জাগায়?
মা, মা গো, আমরা তোমার কুলাংগার সন্তান।
৩৯ টি বছর গেল, গেল মায়ের কত সুর্যসন্তান
শুধু বেচে আছি আমরা কতক ভিরু কুলাংগারে
হায়েনার হিংস্র থাবার দৌড়ে গিয়ে মুখ লুকাই
অজস্র কাটাকাটি আর মায়া মমতায় ভরা সেই মায়ের কোলে
চকিত সে দু চোখ দু হাত জুড়ে আমার নিরাপত্তা
শান্ত আমাকে, অস্থির করে তোলে প্রতিশোধের নেশা
তুষের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলি
আশা নিরাশার দোলায়
রক্তচোখে নিষ্পলক দেখতে থাকি
পেট্রল বয়ে চলা আমার বজ্রমুষ্ঠি
কত শত বার পুড়িয়ে মারি
কত শত বার গড়ি
অস্থির উম্মাদ উম্মাতাল রক্তস্রোত যেন
প্রতিশোধেই থেমে পড়ে
আজ এই বিজয় দিনে,
শপথ চাই
সব বাংলাদেশের সন্তানদের কাছে,
বেচবনা,
বেচতে দেবনা,
মাকে কোন প্রাপ্তির বিনিময়ে
কোন হায়নাকে ছাড়ব না শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে
মায়ের বুকের লাল সবুজকে ফিরিয়ে দিব
শরীরের শেষ ঘাম মায়ের বুকে ফেলে
আজ এই বিজয়ের দিনে,
তৃষ্ণার্ত, ধুষর দুটি চোখে
দেখতে চাই
নীল আকাশের বুক দাবড়ানো মুক্ত বিহঙ্গ মেলা
মাঠের পর মাঠ সাজানো সবুজের আলেয়া
নদীর ঢেউয়ের তালে ভেসে চলা ডিংগী নৌকা
কৃষকের মুখে জুড়ে ফসল তোলার হাসিখানা
বটের গুড়িতে বসে সুমধুর বাঁশীর ঝঞ্জা
গ্রাম্য মেয়ের অবাধ নূপূরের বাজনা
মায়ের মুখের লাল রঙ্গা সেই হাসি
সেই হাসি দেখে বলতে চাই,
আমি আমার মায়ের গর্বিত সন্তান।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:১১