আহত হওয়ার মাত্র ১১ মিনিটের মাথায় আমি হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে গিয়েছিলাম হাসপাতালে। এজন্য আমাকে সিআইডি-পুলিশসহ নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল, অদ্ভুদ ব্যাপার হলো আজ পর্যন্ত হুমায়ুন আজাদের পরিবারের সদস্যরা খোঁজ নেয়নি কে সেই ছেলে যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে অবশ্য আমার ক্ষোভও নেই। তবে এক ধরনের অভিমান আছে ওই পরিবারের লোকজনের ওপর।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি আর আগষ্ট এলেই ভাবি এবার সেই ঘটনা নিয়ে লিখবো। কিন্তু আলসেমিতে হয়ে ওঠে না। আমাদের অফিসের ফিচার সম্পাদক জাহিদ রেজা নূর কয়েকবার বলেছিলেন লিখতে। তাঁর কথায় একবার কিছুটা লিখেওছিলাম। কিন্তু শেষ আর করা হয়ে ওঠেনি নানা ব্যস্ততায়।
আজ মনে হচ্ছে ব্লগে শেয়ার করি সেদিনের ঘটনা। পাঠক বিষয়টি জানুক। আমি মুক্ত হই গণমাধ্যমে ইতিহাস চেপে রাখার দায় থেকে। কারন আমার পরিচিতরা ছাড়া সাধারন মানুষ ঘটনাটি জানে না। আজ তাদের জানাচ্ছি।
আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের (ডিইউএফএস) তুখোড় সদস্য। ক্লাস শেষ করেই কলা ভবন থেকে ছুটে যাই টিএসসিতে। সেখানেই আড্ডা, সেখান থেকে খেতে যাওয়া, আবার ফিরে আসা। রাতে এখান থেকে নয়টা সাড়ে নয়টা কখনো কখনো ১০ টায় হলে ফিরি।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। তখন শীতকাল। বইমেলা চলছে। টিএসসি জমজমাট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন একটি গানের উৎসব হবে। টিএসসির নিচে তার মহড়া চলছে। গিটারে গান। আমি বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেই গান শুনছি।
রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে। হঠাৎ একটি বোমা ফাটার মতো শব্দ হলো। মাঝারি ধরনের শব্দ। আমার আবার সব কিছুতেই ব্যাপাক কৌতুহল। খুব সাহসী আমি সেটি বলবো না তবে ভয় ডর নেই এটুকু বলতে পারি।
তো কোথা থেকে এলো সেই শব্দ সেটি জানতে আমি টিএসসি থেকে হাঁটা শুরু করলাম বাংলা একাডেমির দিকে। রাস্তার মাঝে যে ডিভাইডার আমি সেটি ধরে আনমনে হাঁটছি। মনে হলো সোহরাওয়াদী উদ্যান দিয়ে কেউ দৌড়ে পালাচ্ছে। একটু দূরে যেতেই দেখি এক জায়গায় জটলা। গেলাম সেখানে।
দেখলাম চাঁর-পাঁচজন পুলিশ সদস্য, কিছু লোক সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সামনে পড়ে আছে রক্তাত্ব একটি লোক। কিন্তু কেউ ধরছে না। আমি দ্রুত সেখানে গিয়ে উপুড় হওয়া লোকটিকে তুললাম। রক্তে ভেজা। মুখ দেখে চিৎকার করে উঠি এ তো হুমায়ুন আজাদ। আমি যখন স্যারকে তুলি স্যারের এক পাশের গাল দুই ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গিয়েছিলো। পুরো মুখটা পুরো হা হয়ে ছিল। আমি দুই পাশে চাপ দিয়ে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করলাম।
হুমায়ুন আজাদকে আমি সামনাসামনি আগে কখনো দেখি নাই। কিন্তু তাঁর অনেক বই পড়েছি। আমার স্কুলের এক ইংরেজি শিক্ষক যে আমাকে মানুষ হওয়ার দীক্ষা দিয়েছিল তাঁর কাছ থেকে জেনেছি হুমায়ুন সম্পর্কে। তাই তাকে চিনতে পারলাম।
যাই হোক মূল ঘটনায় ফিরি। স্যারকে হাসপাতালে নিতে হবে। কি করবো? আমি আমার মোবাইল ফোন থেকে একটি ফোন করলাম বিটু ভাইকে। বললাম-বিটু ভাই, হুমায়ুন আজাদকে বোমা মারছে। আপনি বাংলা একাডমেরি সামনে আসেন। (আমি প্রথমে ভেবেছিলাম স্যারকে বোমা মারা হয়েছে)। বিটু ভাই তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় চলচ্চিত্র সংসদের অর্থ সম্পাদক এবং আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ বড় ভাই।
বিটু ভাইকে ফোন করে আমি রক্তাত্ব হুমায়ুন আজাদকে হাপাতালে নেওয়ার জন্য একটি রিকশায় উঠানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু রিকশায় উঠানো সম্ভব হলো না। আমি তখন দৌড়ে টিএসসির দিকে আসলাম। সাদা একটি প্রাইভেট কার ছিলো। আমি তাকে বললাম ভাই আমাদের এক স্যার হুমাযুন আজাদকে কেউ বোমা মেরেছে। হাসপাতালে নিতে হবে। একটু আসেন। সে কিছুতেই রাজি হলো না। বরং গাড়ি ঘুরিয়ে উল্টো দিকে চলে গেলো। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
এরপর দেখি পুলিশের বিশাল এক ট্রাক দাঁড়িয়ে টিএসসির সামনে। আমি তখন চিৎকার দিয়ে তাদের বললাম ভাই স্যারকে হাসপাতালে নিতে হবে। প্লিজ আপনাদের গাড়িটা নিয়ে আসেন। একই সঙ্গে আমি হুমকিও দিলাম। চেচামেচি করলাম। পুলিশ সদস্যরা রাজি হলো। তারা এলো গাড়ি নিয়ে। লোকজনের সহায়তায় আমি স্যারকে পুলিশের সেই ট্রাকে তুললাম। স্যারের খুব কষ্ট হচ্ছিল বোঝা যাচ্ছিল।
এদিকে স্যারকে আমি ট্রাকে উঠনোর আগে আগে সেখানে হাজির হলো পাভেল ভাই। সে বোধহয় নিউ নেশন বা কোন একটা ইংরেজি কাগজে কাজ করতো। সে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একের পর এক ছবি তুলছে স্যারের সঙ্গে আমার। আমি তাকে গালি দিয়ে বলছি, পাভেল ভাই এখন ছবি তোলার সময়? পরে বুঝেছিলাম সে তার কাজ করেছে। তাঁর তোলা এই ছবিগুলোই পরে সব ফটো সাং
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০০৯ ভোর ৪:২৫