somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধা নরমাল ঘটনা - ১

০৭ ই মে, ২০১২ রাত ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৭ সালের ঘটনা, তখন আমার বয়স ৬। ৬ বছর বয়সের ঘটনা কারো খেয়াল না থাকাই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমার আরো আগের ঘটনাও খেয়াল আছে। মোট কথা আমার স্মৃতিশক্তি অনেক ভাল।
যাই হোক, আমি তখন গ্রামে থাকি পুরা দাদী-চাচী-চাচামার্কা ফ্যামিলিতে। আমাকে স্কুলে ভর্তি করানো হল। আমি স্কুলে যেতে তখনো চাইতাম না, এখনো ভার্সিটিতে শুধু মাত্র পরীক্ষা দেয়ার টাইমেই যাই। আমি ছোট থাকতে অনেক শয়তান ছিলাম, এখনো আছি কিন্তু বয়সের কারণে শয়তানির ধরণ পরিবর্তন হয়েছে। ছোট কালের শয়তানি দেখে দাদী অনেক চিন্তিত অনুভব করলেন। ছোট কালের শয়তানিগুলোর উদাহরণ হিসাবে বলা যায় - আমি তুখুর গালিবাজ ছিলাম। এই গালিগালাজ শিখেছে পাশের বাড়ির হাফেজের আব্বা নামের এক ব্যাক্তি থেকে। তিনি এখন মরহুম। আমি ঐসব গালিগালাজের মানে তখন না বুঝলেও ভাল লাগত, এইকারণে যাকে তাকে যেইখানে সেইখানে গালি দিয়া দিতাম।
দাদী মনে করলেন আমার ভিতর ভৌতিক কোনো জিনিসপত্র কাজ করছে। জ্বিনে পাইছে টাইপের। এরপর আমার অজান্তে দাদী আমার আম্মির সাথে পরামর্শ করে এক এলেমদার হুজুরকে ডাকলেন আমার জ্বিন তাড়ানোর জন্য। হুজুর দুপুরের দিকে এলেন ফিনিক্স সাইকেলে করে। তিনি তাঁর ফনিক্স সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ার ধরে আলগা দিয়ে সাইকেলের ঠ্যাং নামিয়ে সাইকেল দাঁড় করিয়ে সামনের রুমে বসলেন। ঐ সাইকেল গুলার একটা বৈশিষ্ট্য হল, সাইকেল দাঁড় করালে পেছনের চাকাটা আলগা অবস্থায় থাকে, তখন সাইকেলের প্যাডেল ঘুরালে পেছনের চাকাটাও ঘুরে। অনেকটা জিমনেসিয়ামের সাইকেল গুলার মত। হুজুর সামনের রুমে গিয়ে বসার সাথে সাথে আমি বের হয়ে গিয়ে হুজুরের সাইকেলের প্যাডেল ঘুরাতে লাগলাম আর চাকা কিভাবে ঘুরে তা দেখতে লাগলাম। আমার পুরুপুরি খেয়াল আছে এসব। সাইকেলের প্যাডেলের মাঝখানে লেখা ছিল GHK. সাইকেলের সিটে একটা পিংক কালারের কাপড়ের কভার ছিল।
কিছুক্ষণ পর দাদী আমাকে ভিতরে ডাক দিলেন। ভেতরে গিয়ে দেখলাম হুজুর খাটের উপর বসে আছেন আর তার সামনে একটা ছোট টুল। আমাকে দাদী বললেন, হুজুরকে সালাম দেয়ার জন্য। আম্মি এবং চাচীরা অন্য রুম থেকে পর্দার আড়াল থেকে ব্যাপারটা খেয়াল করছেন। আমি ভেতরের দরজার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম। আমি হুজুরকে সালাম দিলাম। উনি আমাকে আপনি আপনি করে কথা বলছিলেন। কোন ক্লাসে পড়েন। কেমন আছেন টাইপের। এরপর দাদী বললেন ঐ টুলে গিয়ে বসতে -হুজুর আমাকে দোয়া করে দিবেন যাতে করে আল্লাহপাক আমার এলেম বিদ্যা সীমাবিহীন করে দেন। আমি গিয়ে বসলাম টুলের উপর। হুজুর আমার পেছনে খাটে, আমি উনার সামনে নিচে টুলের উপর বসলাম। হুজুরের গা থেকে আতর পারফিউমের খোশবু পাওয়া গেল। আমি এখনো ঐ খোশবু স্মরণ করতে পারি। হুজুর এবার তাঁর পা দুইটা সামনের দিকে নিয়ে আসলেন। মানে আমাকে ধরে রাখার জন্য। পাবলিক বাসে উঠলে যেরকম গাদাগাদি অবস্থা লাগে আমার ঐরকম লাগল। এরপর হুজুর উনার দুইটা হাত আমার দুই চোখের উপর রাখলেন পেছন থেকে। জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি চোখে দুইটা গোল চাকা দেখতে পাচ্ছি কিনা। গোল চাকা দেখতে পাওয়ারই কথা। আমি বললাম, আমি জোনাকি টাইপের কিছু আলো দেখছি। হুজুর এরপর দোয়া কালেমা আরম্ভ করলেন। কতক্ষণ পড়েছেন মনে নাই। এরপর বললেন, যাও আম্মুর কাছে।
এপর্যন্ত আমার পরিষ্কার খেয়াল আছে।পয়েন্ট বাই পয়েন্ট। কিছুদিন আগের ঘটনা। আমি এখন চট্টগ্রাম আছি, এখানে আব্বু আম্মু সহ এসেছি অনেক আগে। আম্মির সাথে কথা হচ্ছিল, জসিমের আম্মা নামের এক মহিলা সম্পর্কে। উনি মারা গেছেন এবং ওনার ছেলে জসিম বিদেশে আছে এই টাইপ কথাবার্তা। আমিই আম্মিকে এসব বলছিলাম, যে জসিম বিদেশে আছে, ঐ মহিলাটা মারা গেছে এসব। আম্মি এসব শুনে আমার মনে রাখার প্রশংসা করলেন। এরপর এই কথার লেজ ধরে উনি ঐ হুজুরের কথা জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি ছোট থাকতে হুজুরকে কথাগুলো ইনায়ে বিনায়ে বলছি নাকি সত্য সত্য। আমি বললাম, যে কারো চোখে হাত দিয়ে চেপে ধরলে চোখে জোনাকি দেখবে চাকা দেখবে, এইখানে বানিয়ে ইনিয়ে বলারতো কথা নেই। আম্মি বললেন, জোনাকির কথা না। আমি নাকি তখন বলেছিলাম, আমার নাম নুরুল আবসার। আমি আমাদের বাড়ির তালগাছের আশেপাশে থাকি। কিন্তু হুজুরের কাছে আমি মাফ চেয়েছি আর বলেছি যে আমি এই দেশ ছেড়েই চলে যাচ্ছি। বিমানে করে চলে যাব। এইসব।
আমি ভাবলাম আম্মি আমার সাথে মজা করছে। কিন্তু উনি সিরিয়াস। আমি বাড়িতে গিয়ে চাচি আর দাদীকে জিজ্ঞেস করেছি, দুজনেই বললেন আমি এইসব হাবিজাবি বকেছি নাকি। হুজুর মারা গেছেন, নাইলে উনার সাথেও দেখা করতাম।
আমার কাছে আজীব লাগল এই বিষয়টা যে, সাইকেলের চাক্কা ঘুরানো হইতে হুজুরের গায়ের আতরের ঘ্রাণ সহ খেয়াল থাকবে কিন্তু মাঝখান দিয়া এই কথা গুলান খেয়াল থাকবে না কেন?
একটা ব্রেইন কেমনে জিনিসপত্র স্মৃতিতে সংরক্ষণ করে এইটা বৈজ্ঞানিক বিষয়। একই সময়ে একই ফ্লো'তে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খেয়াল আছে কিন্তু মাঝখানের কথাগুলো মেমোরী থেকে স্কিপ করার বিষয়টা বুঝা গেল না।

আরো কিছু আউলা টাইপ আধা নরমাল ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে। সময় পেলে শেয়ার করব।
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×