তীব্র ফিনাইলের গন্ধে কান্নার শব্দও আজগুবি লাগে,
বৃদ্ধের দেহত্যাগ যেন দরিদ্র পরিবারের বিনা মেঘে বৃষ্টি।
সাদা পোশাকের আড়ালে দরিদ্রের প্রতি ঘৃণাজ্বল হৃদয়,
চলন বলনে বোঝাই যায় না,সেবা দানকারী না ডাইনী!
ক্ষমতাধরদের জন্য মহাসুখ,দরিদ্র্য! ধ্যাত,ওসব মরুক।
দুর্গন্ধ,লাশ,চিৎকারের মাঝেও সামান্য প্রেম দেখেছি,
দরিদ্র কৃষকের কোলে মাথা রাখা কৃষাণীর ডাগর চোখে।
“আর বিলি কাটন লাগবে না,আপনে ইকটু ঘুমান,
দুই রাত্তির গেল,না খাইলেন,না ঘুমাইলেন!
আপনের মাথা ছুঁইয়া কসম করছি,কাইন্দেন না!
সাধে কি আর মরতে চাইছি,রাইতে ঐ ঘরে যান ক্যা?”
“ধুর মাগী,তুই কি পাগলী? কইতি,আর যাইতাম না”
হঠাৎ,হঠাৎ,হারানোর চিৎকার, কেউ বুঝি চলে গেল!
হ্যা,সেই ফুটফুটে শিশুটাই তো,কি মিষ্টি হয়েছিল দেখতে!
ঘাটের কুলির মেয়ে,মরে গিয়ে বেঁচেছে,ধন্যবাদ বিধাতাকে।
বিত্তবানের সন্তান হতে পারলি না? অক্সিজেনের অভাব হত না!
বিদ্যার কি ক্ষমতা বাবাহ! মানবতা সমুদ্রে যায়।
শুনলাম যন্ত্রণাকাতর মায়ের ক্রন্দনরত প্রলাপ,
শেষ সম্বল নাকফুলটাও কে নাকি দয়া করে নিয়েছে কিনে!
ওর বাবা কতো শখ করে পুতুল আঁকা জামা কিনেছে,
তা বুকে জড়িয়ে দুজনেই কাঁদে,সেই সাথে তাড়া,চলে যেতে হবে।
নামহীন মিষ্টি মেয়েটা লাশ হয়ে গেল চোখের সামনে,নিছক অভিমানে!
কর্তৃপক্ষ বলেছে মৃত্যু সনদ আর ছাড়পত্র নিয়ে এখনই,এই মুহূর্তে চলে যেতে।
অপরদিকে আয়ার দাবি-
”কিছু পয়সা দাওনা বাপু,তোমাদের জন্য যা করেছি,অন্য কারো জন্যে কী করি!”
মিষ্টি মেয়েটা লাশ হয়ে গেল,কার কি আসে যায় তাতে,এটাই সভ্য সমাজের রীতি।
এখানে সবাই ব্যস্ত,যে যার মতো,এমনকি,এই যে সাজানো বিছানার সারি।
স্বার্থ,সুখ,বিত্ত,ত্যাগ এ আধুনিক সমাজের প্রাণের চোখে মহা বোকামি!
জন সম্মুখে মহাভক্তিতে মানবতার নামে সিজদা দেয়,
আর,পশ্চাতে দরিদ্রের রক্ত চুষতে চুষতে দরদী বনে যায়।
মানবতার রীতি যদি এই হয় তবে শ্রেষ্ঠ তো ঐ প্রভু ভক্ত কুকুরই!
বিবেকের বেত্রাঘাতে বাঁচি না পক্ষপাতহীন বিধি,
কামনা রইলো,পরজন্মে যেন কুকুর হয়ে জন্মি।
সেই ফুটফুটে নামহীন বাবুটা এখনও আমার চোখের পাতায়