হিজরীর অষ্টম বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা) সব রাজা, সম্রাটদের ইসলামের দাওয়াতে পত্র প্রেরন করছিলেন। একটি পত্র হারিছ ইবনে উমায়র আযদী (রা) কে দিয়ে বসরার শাসকের উদ্দেশ্য পাঠালেন। হারিছ ইবনে উমায়র আযদী (রা) বসরায় যাওয়ার জন্য মুতা নামক স্থানে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন মুতার গভর্নর শারজীল হারিছ (রা) কে গ্রেফতার করলেন। আর যখন জানতে পারলেন হারিস (রা) হযরত মুহাম্মদ (সা) এর পত্র বাহক, তখন তাকে হত্যা করলেন ।
এই খবর যখন মদীনায় পৌছাল তখন মুসলমানগন খুবই কষ্ট পেলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা) মুতার গভর্নরকে শায়েস্তা করার জন্য মুসলিম মুজাহিদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। হযরত নবী (সা) সব মুজাহিদকে হারাক নামক স্থানে সমবেত হতে বলেন। যায়দ ইবনে হারিস (রা) কে এই মুজাহিদ বাহীনির দায়িত্ব দিলেন। যদি যায়দ (রা) শহীদ হয়ে যায় তারপর জাফর ইবনে আবী তালিব (রা) এই বাহিনীর দায়িত্ব নেবে । আর যদি জাফর (রা) শহীদ হয়ে যায় তাহলে আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা) এই দলের সেনাপতি হবে । যদি তিনি ও শহীদ হয়ে যায় তাহলে সৈন্য বাহিনী যাকে ঠিক করবে সেই সেনাপতি হবে । তারপর মুজাহিদ বাহিনীকে মুতার উদ্দেশ্যে বিদায় জানালেন।
অপর দিকে মুতার ময়দানে ১ লক্ষ সৈন্য নিয়ে হাজির হল শারজীল ।অপর দিকে বীর মুজাহিদের সংখ্য হল মাত্র ৩ হাজার। এই তিন হাজার মুজাহিদ বীর দর্পে হাজির হল মুতার যুদ্ধের ময়দান । যুদ্ধের দামাম বেজে উঠল । মুজাহিদরা লড়াই করতে লাগলেন বীরের মতই।প্রধান সেনাপতি যায়িদ ইবনে হারিস (রা) লড়াই করতে করতে শত্রুদের সারি ছিন্ন বিছিন্ন করতে লাগলেন। তিনি যুদ্ধ করতে করতে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন । তাকে শত্রু সৈন্যরা ঘিরে ফেলল। হযরত যায়েদ (রা) শহীদ হয়ে গেলেন। পতকাটি তুলে নিলেন হযরত জাফর (রা)। লড়াই করতে করতে এক রোমান সৈন্যের আঘাতে তার ডান হাত কেটে গেল। তিনি পতকাকে বাম হাতে তুলে ধরলেন। তার বাম হাতও কেটে গেল তিনি উভয় হাতের বাকী অংশ ও গর্দানের সাথে দিয়ে পতকাকে তুলে ধরে রাখলেন। তাকে বল্লমের আঘাতে জর্জরিত করে দেয়া হলে তিনি শহীদ হয়ে গেলেন । যুদ্ধের পরে তার সারা শরীরে ৯৯ টি আঘাতের দাগ পাওয়া যায় । এর পর পতকা তুলে নিলেন আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা) । তিনি বীরত্বের সাথে অনেকক্ষন লড়ে গেলেন। এক পর্যায়ে তিনি ও শহীদ হয়ে গেলেন । পতকা ভুলুন্ঠিত হবার আগেই ছাবিত ইবনে আকরাম (রা) পতকাকে তুলে ধরলেন। এবং চিৎকার করে বলতে লাগলেন হে মুজাহিদ গন , তোমাদের মধ্যে হতে একজনকে সেনাপতি বানিয়ে নাও। মুজাহিদ গণ সেনাপতির দায়িত্ব দিলেন আল্লাহর তরবারী হিসেবে খ্যাত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) । খালিদ (রা) পতকা ধারন করে শত্রু বাহিনীকে এক মরন কাপড় দিলেন। যুদ্ধ করতে করতে সন্ধ্যা গনিয়ে আসল । শত্রু বাহিনী পিছু টান দিলেন। মুজাহিদ বাহিনী বিজয়ী হলেন। যুদ্ধে মুসলিমদের ১২ মর্দে মুজাহিদ শহীদ হলেন।
আর হযরত জাফর (রা) রেখে গেলেন অন্যন্যা দৃষ্টান্ত।
১. ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:২৩ ০