জগতে যাহার বড় ভাই নেই তাহার চেয়ে বড় দুঃখী হয়তো আর কেউ নেই । সেদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবান বলা চলে । মাথার উপরে বড় কেউ থাকা মানে নিজেকে হালকা রাখা ।
ছোটবেলায় প্রায় ভাইয়ার সাথে বের হলে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতে হতো । ওর বড় বড় পা ফেলে হাঁটার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানো কঠিন ছিল । বারবার পড়ে গিয়ে পায়ের চামড়া ছিলে যেতো । তাও বের হতাম । অন্য রকম আনন্দ ছিল । ভাইয়া খেপিয়ে বরাবরই মজা পেতো । কখনো হঠাৎ করে এসে একটা মাইর দিয়ে চলে যেতো , আমি সারা বাড়ি ঘুরতাম শোধ তোলার জন্য । আমি ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হতাম ,সুযোগের অপেক্ষায় থাকতাম ,ভাইয়া নামাজ পড়তে দাঁড়ালে কিংবা পড়তে বসলে আমার কাজ সেরে আসতাম । তারপর আমার ভিলেন মার্কা হাসি ।
ভাইয়া ছিল আমার রাত জাগার আর চা খাওয়ার সেরা পার্টনার । যখনই বলবো ভাইয়া চা খাবা ? সাথে সাথে রাজি ।
একবার আমার এস এস সি পরীক্ষার সময় ,সবে রাতে পড়তে বসেছি, ভাইয়া এসে বলল তাড়াতাড়ি উঠ একটা বিষয়ে কিছুক্ষণ তোদের সাথে কথা বলবো । ভাইয়া কোন একটা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বই পড়ে আর মুভি দেখে গবেষণা শেষ করলো ,সেই বিষয়ে কথা শেষ করতে রাত তিনটা বেজে গেল । সেই রাতে আর পড়াই হলো না ।
বরাবরই আমরা ভাই বোনেরা আর কাজিনরা পাগলাটে স্বভাবের , একদিন ভাইয়া কে স্কাইপে কল দিলাম রাতের বেলা ,ভাইয়া জ্বিনের গল্প শুনবা ? ও বলল আমি এখোন একটা মিটিং এ আছি দাড়া এক ঘন্টা পর কল দিচ্ছি । সত্যি সত্যি কল দিলো ,হাফসা কি হইছেরে ,সাংঘাতিক কিছু? বল বল । আমি আর আপু শুনা মাত্রই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম ।
আমাদের ছিল জ্বিন ভূত নিয়ে খুব আগ্রহ । ভাইয়া একদিন গ্রামে বেড়াতে গেলে , সকাল বেলা ভাইয়া আর একজন কাজিন মিলে বাঁশ ঝাড়ে ডুকলো জ্বীন খুঁজার উদ্দেশ্যে । অনেকক্ষণ পর ফিরে এলো দুইজন হাপাতে হাপাতে । আমরা তো ভয়ে শেষ । ভাইয়া বলতে লাগলো , জ্বীন নাকি কাজিনকে ধরে আছাড় মেরেছে ,জ্বীনের ইয়া বড় দাড়ি আর অনেক লম্বা সে , সাদা জামা পড়া ছিল । আমরা আর সেই রাত ভয়ে ঘুমাতে পারিনি । বড় হয়ে জানলাম , সেই গল্প নাকি ভাইয়া আর কাজিন মিলে বানিয়েছিল ।
আর প্রায় বলতো ও নাকি স্বপ্নে জ্বিন দেখতো । সেই গল্পও অনেক মজা করে বলতো ।
আম্মু মারা যাওয়ার পর পর পাশের বাসার আন্টি এসে আমাদের ভয় লাগিয়ে দিলো ,কি সব না কি অদ্ভুত কান্ড ঘটে । সত্যি সত্যি রাতের বেলা কর্পূরের গন্ধ পেতাম ,আব্বুর সাথে ঘুমাতাম তখন । বাসার সবাই মনে মনে ভয় পাচ্ছিল ।
মাঝরাতে পাঁচ তলার উপর বিড়ালের ডাক শুনা যেতো । ভাইয়া কে বলা মাত্রই লাঠি নিয়ে খুঁজতে বের হতো ।
ভাইয়া হচ্ছে বরাবরই মজার আর আড্ডায় পারদর্শী । ওর ছুটির দিন গুলো অনেক আনন্দে কেটে যেতো ।
অনেক দিন ভাইয়ার সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না । পুরানো পোষ্ট পড়তে গিয়ে হঠাৎ ওকে খুব মনে পড়ছে । আগে বাসায় সবসময় হইচই থাকতো , আমাদের দুই বোনের ঈদ কিংবা রোজার আইটেম নিয়ে ঝগড়া লেগে যেতো ।
বড় হওয়া বড্ড ঝামেলার । ছোট থাকা কি আনন্দের ছিল !
আমাকে নিয়ে লেখা ভাইয়ার দুইটি পোষ্ট নিচে দেওয়া হলো :
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৮