সকালের হালকা কুয়াশা মাখা শুভ্রতায় একদিন আগমন ঘটে আন্টি আর তাহার ছানার । তখন সবেমাত্র অ আ ক খ শিখছিলাম । শহরের বদ্ধ পরিবেশে খেলার সাথী পেয়ে আমরা যেনো খুশিতে আত্নহারা । আমি ,আপু আর ওর সারা বাড়ি আর পাড়া জুড়ে ছুটাছুটি আর হাসির বন্যায় ভাইয়া পড়লো মহা বিপদে , পড়াশোনা চুলোয় গেলো । আম্মু কেবল বকে ক্লান্ত হতো ।
সব ধরনের খেলা আমরা খেলতাম ,সবার ছোট ছিলাম বলে আমাকে দুধভাত রাখা হতো । আমরা কখনো মেয়েলি হাড়ি পাতিল খেলা, কখনো ছেলেদের গোয়েন্দা গোয়েন্দা খেলা, কখনো আমার আর ওর লাগতো প্রতিযোগিতা । ভাইয়া বলতো দেখি কে আমাকে বেশি ভালোবাসে, শোনা মাত্রই আমি আর ও ভাইয়াকে চিপস খাওয়াতে গিয়ে প্যাকেট খালি করে ফেলতাম , আর ভাইয়া বিজয়ের হাসি দিতো । মুরুব্বি কেউ এলে পাকা চুল বেছে দেওয়ার প্রতিযোগিতা লাগতো ।
শুকনা হলে কি হবে, ওর ছিলো ভীষন শক্তি , মারামারি তে আমাকেই হার মানতে হতো । বরাবরই ও ছিল আন্টির আদরের ছানা ,আন্টি ওকে বকা দিয়ে নিজেই কান্না করতো । দিনে দিনে তাই ওর বজ্জাত ভাব বেড়ে গেল । এভাবেই আমি স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম , ওরা আলাদা বাসা নিলো ।
প্রায় ওদের বাসায় যাওয়া কিংবা বজ্জাত টার আমাদের বাসায় আসা ছিল দারুন আনন্দের কাজ । আপুর সাথে মাঝেমাঝে লাগতো ওর তুমুল ঝগড়া । আজ অবধি তাই আপুকে ভয় পায় । দিনভর বকবকানি করে সবার কান ঝালাপালা হতো ।
ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত ভালোই চলছিল । একদিন দেখি হঠাৎ ও আমাদের বাসায় আসছে না । আমরা গেলে বই মুখে গুজে রাখতো । ভাবখানা দেখলে গা জ্বলে যেতো । আমরাও যাওয়া কমিয়ে দিলাম । আন্টি নিয়মিত ও কি করছে না করছে সব খবর আম্মু কে জানাতো । আম্মু এসে আমাকে বলতো । ও ভালো রেসাল্ট করলেও জানাতো, কোথায় এডমিট হলো, স্কুলে কি কি হচ্ছে ওর ভালো কথা শুনে শুনে আমরা ক্লান্ত হতাম । মনে মনে রাগ ঝারতাম । এমন হলো ওর নাম শুনলেই অসহ্য লাগতো । আম্মু কে বলে দিলাম ওর নাম আমার সামনে নিবা না ।
এমনভাবে চলছিল অনেক বছর । ক্লাস ফাইভ থেকে আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে । হঠাৎ খবর পেলাম ও অনেক অসুস্থ , আপু আর আমার শুনা মাত্রই মন বিষন্নতায় ভরে গেল । নীরবে চোখের জল ফেলে আমরা তখোন প্রার্থনা করছিলাম ,আমাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও ওকে ভালো করে দেও আল্লাহ । অপছন্দ করতাম ঠিক, কিন্তু কখনও তো খারাপ চাইনি ।
ভয়ে ভয়ে একদিন ফোন দিলাম , অবজ্ঞা ভরা গলা ,সহ্য হলো না । আপুকে বললাম ওকে আর জীবনেও ফোন দিবোনা ।
একদিন ফেসবুকে বজ্জাত টা রেকুয়েস্ট পাঠালো । ততোদিনে ও পুরোপুরি সুস্থ । জানতে পারলাম ক্লাস সিক্স এ থাকাকালীন কোনও এক আত্মীয় আমাদের বাসায় আসতে বারন করেছিল । আপু আর ভাইয়া যেহেতু বড় তাই আমাকেই দোষী ভাবলো । আমাকেও নাকি ও সহ্য করতে পারতোনা ।
দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ অবশেষে মিটলো । বছর শেষে ফিরে পেলাম ঠিক আগের আমার ছোট ভাইটি । ঠিক সেই ঝগড়া, মাঝে বাদ পড়লো খেলাগুলো আর সেই সময়গুলো । আমার অল্প তে মন খারাপ হওয়া, অল্প তে কেঁদে বুক ভাসানো ,বোকামি ,সব যেন আমার ভাইটি সহজে বুঝতে পারে আগের মতোই ।কিছুই যেন বদলায় নি । আগের মতোই ওর পাগল অভ্যাস গুলো আমাদের হাসির কারন হওয়া সবি আছে ।
শুধু বলবার আছে, ভাই তুই যেখানেই থাক তুই আমার আর আপুর ভীষণ প্রিয় । ভাইয়ার মতোই তোকে আমরা ভীষণ ভালোবাসি । সারাজীবন এমনই পাগল থাক ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:১০