আপনি নিশ্চয়ই শারমিন। লোকে আমাকে ডাকে শোভন বলে। শারমিন শুনে একটু মুখ বাকিয়ে বলে কোন লজ্জা নাই নাকি?। শোভন বলে মা বাবা আকিকা করে নাম রেখেছিল। শারমিন একটু বিস্মিত হয়ে বলে ওহ! আপনার আকিকা করা হয়েছিল। তো কি দিয়ে করা হয়েছিল। শোভন বলল ছাগল দিয়ে।শারমিন শুনে বলে স্বভাবটা তাই ছাগলের মত। শোভন হেসে বলে জি হ্যাঁ। তো শোভন- আমি আপনার জন্য কি করতে পারি, শারমিন বলল।
শোভন তখন বলে করার তো আছে অনেক কিছুই, আবার বলতে পারেন কিছুই করার নেই।শারমিন রেগে বলল আপনি কি চান বলুন তো? শোভন বলে কথাটা আমাকে আবার বলতে হচ্ছে-চাওয়ার আছে অনেক কিছুই-আবার বলতে পারি কিছুই চাওয়ার নেই।
শারমিন: ভোনিতা না করেন বলুন আপনি কি চান?
শোভন: চাইলে দেবেন।
শারমিন: সেটা পরের ব্যাপার, আগে বলুন।
শোভন: আমি আসলে কিচ্ছু চাই না।
শারমিন: তাহলে।
শোভন: আমি শুধু আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
শারমিন: কি কথা?
শোভন: কথাটা শোনার পর গ্যাসের চুলার মত দপ করে আপনার চোখ দুটো জ্বলে উঠতে পারে। আপনার মেজাজ হয়ে যেতে পারে করোলার মত তেতো। নিউজপ্রিন্ট কাগজের মত ফড়ফড় করে ছিড়ে ফেলতে পারেন আমার মাথার চুলগুলো। কিংবা সিনেমার নায়িকাদের মত ঠাস করে চড় বসিয়ে দিতে পারেন আমার গালে।
শারমিন রেগে বলল আমার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। তখন শোভন বলল সরি আমি আর এক মিনিট সময় নেব। কোন উদ্দেশ্য নয় স্রেফ মন চেয়ে নেব। ভাল লাগবে বলে কেউ কাউকে কিছু দিতে চাইলে সেটা কি ফিরিয়ে দেয়া উচিৎ। শারমিন বলল আপনি কি আমাকে কিছু দিতে চান।
শোভন বলল জী। তাহলে দিন শারমিন বলল এবং হাত বাড়াল তারপর একটা ফুলের তোড়া শোভন শারমিনের হাতের উপর রাখল। এবং সেটা শারমিন নিয়ে গেল কিছুদুর যাবার পর রাস্তার ওপর ফেলে দিল।
শোভন সেটা দেখল এবং এগিয়ে গেল।
অতঃপর ঘটলো আরো একটু ঘটনা:-
হঠাৎ শারমিনের সামনে দাড়াল শোভন। সে বলল বেশীর ভাগ মানুষের সবচেয়ে বেশী সীমাবদ্ধতা কি জানেন? সে যার ওপর রাগ করে তাকে কিছুই বলতে পারে না। রাগটা প্রকাশ করে নিতান্তই কোন নিরীহ কোন জিনিসের ওপর।যেমন দাম্পত্য কলহ। দাম্পত্য কলহে স্বামী-স্ত্রী নিজেরা নিজের হাড় না ভেঙ্গে কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গে, ক্ষমতার ভাগা-ভাগিতে একদল আরেক দলের মাথা না ফাটিয়ে- বাস ভাঙ্গে ট্রাক-ভাঙ্গে।
জমির ভাগা-ভাগিতে একদল আরেক দলকে না কুপিয়ে, জমি কুপিয়ে নষ্ট করে ফেলে।এসব কথার মধ্যে কোন প্রকার মন নেই শারমিনের কথাগুলো শুনছে আর রেগে রেগে যাচ্ছে।
তারপর শোভন বলল যেমন আপনি আমার উপর রাগ না করে আমাকে না ছুড়ে ফেলে এই ফুলগুলো ছুড়ে ফেলে দিলেন। জানেন এই ফুলগুলোতে অনেক ভালবাসা ছিল। ভালবাসা ছুড়ে ফেলে দিলে ভালবাসার কষ্ট হয়। ভালবাসা ছুড়ে ফেলে দিবেন না প্লিজ। একথা শুনে বৃষ্টি বলে তাই……….নাহ্।
ফুলগুলো আবার হাতে তুলে দেয় শোভন এবং তখনই শারমিন ফুলগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে তার ওপর দিয়ে হেটে যায়। তবুও কিছুই মনে করে না শোভন।
কারণ শারমিনের মধ্যেই ও খুঁজে পেয়েছে দিগন্ত ছোঁয়া ভালবাসা। ফুল গুলো তুলে বুকে জড়িয়ে নেয় শোভন।
পরের দিন সকালে আবার দেখা করে শোভন শারমিনদের বাসার গেটের সামনে। দেখা মাত্র বলে গুড মরনিং। শারমিন বলে আপনি আজকেও এসেছেন। শোভন বলল কেন আমি আসতে পারি না। শারমিন থুম মেরে কিছুক্ষন পর বলে না।
শোভন বলে আমাকে যে আসতেই হবে।শারমিন বলল কেন।
শোভন: কখনো বৃষ্টি দেখেছেন। আকাশের মত নিরাপদ জায়গায় ভেসে বেরিয়েও বৃষ্টির ফোঁটা গুলো নেমে আসে এই ময়লা জমে যাওয়া মাটিতে। অশুদ্ধ মাটিগুলো স্নান করে পবিত্র হবে বলে। আর সেই পবিত্র মাটিতে কোন কোন বীজ পাতা মেলবে বলে। আর সেই পাতায় একটি রঙিন ফুল ফুটবে বলে। আমি এসেছি বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে কাউকে ভালবাসবো বলে, কারো মন রঙিন হবে বলে।
শারমিন: আপনার একটু বেশী সাহস।
শোভন: সাহসের কথা বলছেন। ভাগ্য কেবল সাহসীদেরই সাহায্য করে।
কে যেন বলেছেন কথাটি কে যেন………………….।
সেদিন কোন ফল নামল না শোভনের ভালবাসার অংকে। দেখা যাক পরের দিন বিকেলে আবার চেষ্টা।
শোভন: বাসায় যাচ্ছেন?
শারমিন: আপনার কি মনে? জার্নি বাই বোট।
শোভন: না ভাবলাম সিনেমা দেখতে যাচ্চেন।
শারমিন: কি সিনেমা!
শোভন: আকাশের অবস্থা দেখেছেন।
শারমিন: হ্যাঁ---তো।
শোভন: বৃষ্টি হতে পারে?
শারমিন: হলে হবে আমার কি?
শোভন: বৃষ্টিতে ভিজেছেন কখনো।
শারমিন: না।
শোভন: কখনো ভিজতে ইচ্ছে করে না।
শারমিন: না।
শোভন: কখনোই ইচ্ছে করে না।
শারমিন: না বললাম না একবার।
শোভন: ওহ কে যেন বলেছিলেন, যে যুবতী বৃষ্টিতে ভিজতে জানে না। সে হয় দেবী না হয় পাথর। আচ্ছা আপনি কি দেবী না পাথর কোনটা।
শারমিন: আমি মানুষ।
শোভন: মানুষেরও কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে।
শারমিন: আমার করে না।
রেগে চলে যায় শারমিন, শোভন পেছনে দৌড়ে গিয়ে বলে- একদিন ভিষণ বৃষ্টি হাত রেখে হাতে রিক্সার ছাউনি ফেলে, ভিজে যায় চোখ চোখের পাতা। ভিজে যায় আমাদের সনাতনী মন। কার কবিতা জানেন। শারমিন বলে জানি না। শোভন বলে আমিও জানি না।
আর মনে মনে বলে এগুলো আমার মনের কথা প্রিয়তমা। তুমি আমাকে বুঝতে পারছো না বুঝতে চেষ্টাও করছো না । শোভন তারপর বলল একটা কথা বলি-হঠাৎ আকাশ ভেঙ্গে ঝুম করে বৃষ্টি নেমে এল আপনি কি আমার হাতটা ধরে রিক্সায় উঠবেন। এ বলে হাত তুলে রাখে শোভন।
শারমিন রাগ করে বাড়ি চলে যায়। এবং সেইদিন সন্ধ্যায় একটা ফুলের তোড়া পাঠিয়ে দেয় শোভন বৃষ্টির জন্মদিন উপলক্ষে। সেই রাতে ফোন করে শোভন…শারমিন রিসিভ করে বলে…..
শারমিন: হ্যালো কে বলছেন?
শোভন: কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে। লোকে ডাকে শোভন বলে।
শারমিন: ও আপনি ..আপনি আমার ফোন নম্বরও জেনে গেছেন!
শোভন: মেনি মেনি হ্যাপি রির্টান্স অব দি ডে।
শারমিন: মানে?
শোভন: আপনার জন্মদিনের উইশ করলাম।
শারমিন: তার মানে ফুলগুলো আপনে পাঠিয়েছেন।
শোভন: সরি আপনার পছন্দের ফুলগুলো পাঠাতে পারিনি।শুড়িলের মত দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে লাল কাপড় না বেধে। শ্রাবণের এই বর্ষায় ঘর থেকে বেরিয়েছি অনেক আগেই। বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে ১০৮ টা নীলপদ্ম না আনতে পারলেও, সারা শহর চোষে এনেছি ২৪টি লাল গোলাপ। আজ ২৪শে আগস্ট আপনার বার্থডে। ২৪টি বসন্ত আপনাকে ছুয়েছে ভালবেসে, সেই সাথে আমিও। আনন্দে আজ সারা রাত কারো চোখে ঘুম হবে না। আচ্ছা আপনি কি জানেন আপনার সবচেয়ে কোন জিনিসটা সুন্দর।
শারমিন: কোন জিনিসটা।
শোভন: আমি জানি কিন্তু বলব না, অন্তত আজ নয়।
একদিন রাতে শোভন ফোন করে বলে আপনার ঘুম আসছে না। শারমিন বলে আমার ঘুম আসছে কি আসছে না তা কি আপনাকে বলতে হবে। শোভন বলল আপনি বলুন আর না বলুন, আমি জানি আপনার ঘুম আসছে না।
শারমিন: কিভাবে জানেন।
শোভন: আমি আপনাকে দেখতে পাই।
শারমিন: আচ্ছা তাই?
শোভন: মানুষের তিনটি চোখ জানেন তো। বুকের ভিতরের চোখ দিয়ে মানুষ সব দেখতে পায়। আচ্ছা আমার ফুলগুলো কি ফেলে দিয়েছেন। শারমিন মিথ্যে করে বলে ফেলব নাতো কি করবো ঘরে রেখে পূজা করবো।
শারমিন: আমি জানতাম।
শারমিন: আপনি সব জানেন। বলুন তো আমি কি পড়ে আছি।
শোভন: সেটা পরে বলি- আজ আকাশ দেখেছেন।
শারমিন: না।
শোভন: আপনার ঘরের জানালা দিয়ে আকাশ দেখা যায়।
শারমিন: যায়।
শোভন: একটা অনুরোধ ছিল।
শারমিন: কি?
শোভন: আকাশটা দেখবেন একবার।
শারমিন: না।
শোভন: প্লিজ দেখুন না একবার। দেখুন আকাশে আপনার ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে।
কথাগুলো শোনার পর শারমিন একটু মুচকি হাসল এবং জানালা দিয়ে আকাশ দেখল এবং শোভনকে ভাবতে লাগল।কারণ ও মনে মনে শোভনের প্রেমে পড়ে গেছে।কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
কারণ শারমিন সব সময় শোভন কে এড়িয়ে চলেছে।সে কারণে বলার সাহস হচ্ছে না।তারপরও একটা ভয় ওর মধ্যে কাজ করছে।সব বাধা দূর করে শারমিন শোভনকে ভালবাসার কথা বলতে চায়।
প্রতিদিনের মত শোভন সেদিন সকালেও শারমিনকে ওর মনের অশান্ত কথাগুলো বলার জন্য যাচ্ছিল।
কিন্তু হঠাৎ একটা ট্রাকের সাথে সঙ্গে সংঘর্ষ হয় শোভনের বাইকের। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু এদিকে শারমিন ভাবছে শোভন আসলে ও নিজেই শোভনকে ভালবাসার কথা বলবে।অন্যান্য দিনে শারমিন শোভনের ওপরর রাগ করলেও আজ নিজে শোভনকে ভালবাসার খথা বলবে কিন্তু একি শোভন তো আসছে না । এক পা দু পা হাটে আর ভাবে এইতো অটোমেটিক সামনে এসে দাড়াবে এবং রুটিন মাফিক তার বক্তব্য পেশ করবে এই সব ভাবে শারমিন। অনেকটা টেনশন হচ্ছে শারমিনের।তারপর শারমিনের ছোট বোন এসে বলে আপু তোকে যে ভাইয়া বিরক্ত করে তাকে দেখলাম কিছু লোক হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।
একথা শোনার পরি শারমিন পাথর হয়ে গেল- আবেগে চোঁখ দুটো সিক্ত হতে লাগল। তারপর হাসপাতালে গিয়ে দেখে শোভন মুমুর্ষ অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
ডাক্তার বলল তাকে আর বাঁচানো যাবে না।শারমিন কেঁদে ফেলল। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসে শোভনের।
কিন্তু সেটা কচুপাতার পানির মত যেন মুহুর্তেই টলে পড়বে মাটিতে। এ ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারে না। চোখ তুলে তাকাতেই শোভন দেখতে পায় শারমিন কে। শারমিনের চোখ দুটো জলজল করছে। শোভন অসুস্থ থাকা অবস্থাতেও শারমিনকে বলে আপনি কেমন আছেন। শারমিন কেঁদে ফেলল।কাঁদো কাঁদো গলায় বলে তুমি আমাকে এতো ভালবাস আর আমি তোমাকে সব সময় কষ্ট দিয়েছি। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম রাস্তায়-তুমি আসবে বলে কিন্তু তুমি আসলে না।পরে জানতে……………………………………………..।
তুমি যদি আমাকে ছেড়ে চলেই যাবে তাহলে বালবাসতে গেলে কেন।
হয়তো তোমাকে আমি বুঝতে পারি নি আর যখন বুঝলাম তখন তুমিই চলে যাবে না ফেরার দেশে—একেমন নিয়তি।আমি তোমাকে ছাড়া কি করে বাচবো……….আই লাভ ইউ শোভন। আই লাভ ইউ।
শোভন বলে জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে তোমার ভালবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।আমি মরে গিয়ে শান্তি পাব কারণ আমি মনে করেছি আমার ব্যবহার তোমার মনে কষ্টের কারণ হয়েছে কিন্তু তা নয় তুমি আমাকে ভালবেসে ফেলেছো।আমি অনেক বাগ্যবান। তুমি সুখে থেকে-আমাকে ভুল ভেবে ভুলে যেও।বেশী সুখ আমার সহ্য হয় না- ওপাড়ের ডাক এসে গেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শোভনের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরুতে লাগল। উপস্থিত সবাই কান্না করছে। শারমিন বলে চলেই যদি যাবে তাহলে ভালবাসতে গেলে কেন।কাল দিন পর্যন্ত আমি ভালই ছিলাম- তোমাকে মনে করার মত আমার জীবনে কিছুই হয় নি। কিন্তু আজ আমি আমার মনের কথা গুলো বলা বের হয়েছি, আর তুমি আমার ওপর অভিমান করে চলে যাবে। না হয় না তোমার কিছু হলে আমি বাচবো না। কেদে কেদ বলে শারমিন।কিছুক্ষনের মধ্যেই শোভনের হাত পড়ে যায় , শোভনের মনে হয় যেন হাজারো রাতের ঘুম তার দুচোখে এসে জমা হয়েছে। নির্বাক চোখে শারমিনের দিকে চেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ছেড়ে দেয়।
শারমিন শোভনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে ভালবাসার মূল্য না বুঝেই চলে গেলে। তোমাকে কতটুকু ভালবাসি তা যখন বলার জন্য আসলাম তখন তুমিই থাকলে না। জীবনের খাতায় একটা অংক কষতে আসলাম আমার অংকের খাতায় যোগফল শূন্য হবে আমি বুঝতেই পারি নি।সেন্স লেস হয়ে যায় শারমিনের-তখন প্রকৃতির মাঝে থেকেই শুনতে পারে শোভনের মুখের কথা…………………………………………….।
সমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:২৪