আমি তখন স্কুলে পড়ি ক্লাস নাইনে। আমার সাথে একটা মেয়েও পড়তো নাম শারমিন। মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর ছিল তা নয় আবার অসুন্দর তাও নয়। ওর চোখে মুখে একটা মায়াবী ভাব ছিল। ওর চলাফেরা কথা বার্তা আমার খুব ভাল লাগতো ।
মনের অজান্তেই ও আমার ভাললাগার মানুষ হয়ে গেল। ভাল লাগা থেকে কখন যে ওকে ভালবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেই জানি না। আমি বুঝতে পারলাম তখন যখন ও কোন সমবয়সী কোন ছেলের সাথে মেশে কথা বলে- তখন আমার খুব রাগ ওঠে। আমি তখন ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ি। ওর প্রতি আমার এরকম মনোভাবকে আমি ভালবাসাই বললাম। কে কি বলবে আমি জানি না। আমি ওকে সব সময় ফলো করতাম । ও কখন স্কুলে আসে কার সাথে মেশে। আমি ওকে চোখে চোখে রাখতাম। আমার একটা দুর্বলতা ছিল , আমার দ্বারা সবই সম্ভম কিন্তু কোন মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রোপোজ করা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না।
২য় দৃশ্য
স্কুল ছুটির ঘন্টা বাজল। সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। আমি গ্যারেজ থেকে সাইকেল টা বের করলাম । সাইকেল নিয়ে বের হচ্ছি আর শারমিনকে খুজছি।
শারমিন কমন রুম থেকে ব্যাগ কাধে নিয়ে বের হলো। তারপর একটা রিক্সা নিল। আমার রুটিন মাফিক কাজ ওর রিক্সার পেছন পেছন গেলাম। আমি রোজ ভয়ে ভয়ে থাকি অন্য কোন ছেলে যেন ওর পাশে না থাকে।
তাই সব সময় ওর খোঁজ রাখতাম। কোন দিন ওকে আমার মনের কথা বলতে পারতাম না। ( আমার মনের কথা মনেই রইল বলা হল না, সবই বোঝ তবু কেন নিজেই বল না)* দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলো । প্রত্যেকদিন ওর পেছন পেছন যেতাম ও আমাকে দেখে হাসতো আমি খুব খুশি হতাম। ব্যস্ এটুকুই।
এরই মধ্যে আমার বাড়ির লোকজন জেনে ফেলেছে। আমার কাকা কাকী বড় ভাই ভাবী আমাকে এসব ব্যাপারে আমাকে নিষেধ করেছে।
৩য় দৃশ্য
প্রত্যেক দিনের মত সেদিনও আমি শারমিনের রিক্সার পেছন পেছন যাচ্ছিলাম, হঠাৎ আমার ভাইয়ার সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। ভাইয়া উল্টো দিক থেকে আসছিল। সেখান থেকে ভাইয়া আমাকে কোন কথা না বলে বাড়ি নিয়ে আসলো। তারপর বাড়ির সবাই মিলে আমাকে শাসাতে লাগল। দু একটা চড় থাপ্পড় ও পড়ল আমার গায়ে। আমাকে নিষেধ করে দিল কোন দিন যেন আমি মেয়েদের পিছে না ঘুরী। ঘুরলে আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দহকুলার নদীতে ভাসিয়ে দিবে।
৪র্থ দৃশ্য
এত কিছু হওয়ার পরেও ফন্দি আটলাম ওদের বাড়িতে যাওয়ার। ওদরে বাড়িতে ঢোকার আগ মুহূর্তে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ শুরু করল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কুকুরের কন্ঠে প্রতবাদি সুর ও বলছে সাবধান সাবধান।
৫ম দৃশ্য
সকালে স্কুলে আসার জন্য তৈরি হলাম । আসার আগ মুহূর্তে আবার একবার সকলের উপদেশ মাথায় নিতে হল। তারপর স্কুলে আসলাম।
স্কুলে আসার পর বন্ধুরা আমাকে দেখে হাসা হাসি করছে – ওদের কাছে মনে হয় আমি যেন একটা রং করা একটা খেলার পুতুল। ওরা বলল তোর দ্বারা এসব হবে না। বৃথা স্বপ্ন দেখিস না বাদ দে। আমি বললাম স্বপ্ন দেখা পাপ নাকি। আরেক জন বলল হ্যাঁ স্বপ্ন দেখা পাপ – ঐ দেখ ঐ দিকে।
ইতোমধ্যে শারমিন কে একটা ছেলে বাইকে করে স্কুলে নামিয়ে দিল। সেটা দেখে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। বন্ধুরা সবাই আমাকে ধাক্কা মেরে মেরে কথা বলতে লাগল। ওরা বলল যা তুই যদি শারমিনকে রাজি করাতে পারিস- যা আমরা সবাই মিলে উল্লাপড়া চৌধুরী হোটেলে পার্টি দেব। সব খরচ আমাদের।
কী রাজি? আমি বললাম ওক ডান তাই হবে। সেদিন স্কুল ছুটির পরে আর ওর পিছে গেলাম না ডিরেক্ট বাড়িতে গেলাম।
৬ষ্ঠ দৃশ্য
বিকেলে ফোন হাতে নিয়ে পাইচারি করতেছি । ফোন দেব কি দেব না। মনের মধ্যে বিভিন্ন প্রশ্ন বাসা বেধেছে, ভয়ও লাগছে। ফোন দিলে কি হবে সব ভয় তুচ্ছ করে ফোন দিলাম রিং হচ্ছে- আর রিং এর সাথে সাথে আমার হার্ট বিট বেড়ে চলেছে। এভাবে বার বার ফোন করতে লাগলাম কোন সাড়া নাই। বার বার নো আনসার, আমার মনের কথাই বলা হল না।
৭ম দৃশ্য
ফোনে ওর সাথে কথা বলতে পারলাম না। বিভিন্ন টেনশন হচ্ছিল, পড়াশুনা হচ্ছে না। ওর মুখোছবি ভেসে ওঠে চোখের সামনে । এভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম । হঠাৎ স্বপ্নে দেখি অন্য একটা ছেলের সাথে ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারপর আমার বন্ধুরা আমাকে রাগানোর জন্য বলতে লাগল পাগল তুই একটা পাগল বোকা প্রেমিক তোর মত এত বোকা প্রেমিক দুনিয়াতে নাই। তারপর আমি একটা চাদড় গায়ে জড়িয়ে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে গাইতে লাগলাম ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়। বুকের জমানো ব্যাথা কান্নার লোনা জলে ডেউ ভাঙ্গে চোখের নদীতে।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল দেখি গা ঘেমে গেছে। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম আমার চোখের সামনে ওর বিয়ে হয়ে গেল আমি কিছুই করতে পারলাম না। ওহ্ ধুততুরি বলে মাথার পেছনে একটা চড় মাড়লাম আর বললাম এটা স্বপ্ন ছিল। আমি আমাকেই বললাম সরি সরি।
৮ম দৃশ্য
আজ আমি ইচ্ছা করেই দেরিতে স্কুলে আসলাম। দেখি পিটি প্যারেট শুরু হয়ে গেছে। তারপর ক্লাসে বই রেখে লাইনে দাড়ালাম। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন কওে জাতীয় সংগীত গাইতে লাগলাম। আর মনে মনে বলছি- আমি পড়াশুনায় সবার থেকে ভাল। কোন দিন খারাপ রেজাল্ট করিনি সব সময় ফাস্ট হয়েছি। তবে কি এই ভালবাসায় আমি লাস্ট হয়ে যাবো এই সব ভাবতে লাগলাম। কখন যে সংগীত শেষ হয়ে পিটি শুরু হয়ে গেছে আমি জানিই না। স্যার এসে পেছনে একটা বাড়ি দিয়ে বলল পিটি বাদ দিয়ে দাড়িয়ে আছিস ক্যান। পিটি কর।
জি স্যার পিটি করছি আমি বললাম ।
এ রকম করতে করতে দুই বছর কেটে গেল। আমরা কলেজে পড়ি। ভালভাবেই আমরা কলেজ করছি। আমি এখনও শারমিনকে আমার মনের কথা বলতে পারিনি।
হঠাৎ-ই শারমিনকে আর কলেজে দেখি না। শারমিনের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতেও পারি না । আমি বললাম কোন ভয় ডর মানি না শারমিনের সাথে এরপর আমার দেখা হলে প্রথম কথা হবে- শারমিন আমি তোমাকে ভালবাসি। আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ। আমি তোমাকে ছাড়া সত্যি বাঁচতে পারবো না।
৯ম দৃশ্য
কলেজের ক্যাম্পাসে আমরা বন্ধুরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি। আমরা কেউ শারমিনকে দেখি নাই। হঠাৎ শারমিন বলল কেমন আছো সবাই। সবাই উত্তর দিল ভাল আছি।
তুমি কেমন আছো কলেজে আস কেন। আমি কোন কথা বলছি না। শারমিন বলল তোমাদের একটা রিকোয়েস্ট করার জন্য আসলাম। সবাই আমার অনুরোধ রাখবে তো। আমি বলে উঠলাম সবাই অনুরোধ রাখবে- আমিও রাখবো , আগে এদিকে এসো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
শারমিনঃ কি কথা বলবে- বল।
শোভনঃ আমি যা বলতে চাই সেটা তুমি জান ।
শারমিনঃ কি জানি? আমি কিছু জানি না।
শোভনঃ আমি সব সময় তোমার রিক্সার পেছন পেছন যেতাম তোমাকে চোখে চোখে রাখতাম । তুমি বোঝনা আমি কেন এ রকম করতাম।
শারমিনঃ হ্যাঁ দেখতাম তুমি পেছন পেছন আসতে তাতে কি বোঝা যায় শোভন !....কী?
শোভনঃ আমি তোমাকে ভালবাসি , আই রিয়ালি লাভ ইউ।
শারমিনঃ কি যেন বললে শুনতে পারিনি।
শোভনঃ শুনতে পারনি নাকি না শোনার ভান করছো।
শারমিনঃ সত্যি কিছু শুনতে পারিনি। দেখলেনা মটর সাইকেলের কি রকম আওয়াজ। ওটা কানের ভেতর ঢুকে গেছিল- কান ঝাঁ ঝাঁ করছে। কিছুই শোনা যায়নি আবার বল।
শোভনঃ ( মনে মনে) ইাইস্কুল থেকে কথা বলতে চাইছি সেই কথা যখন বললাম তুমি শুনতে পেলে না , তখন আর বলবই না। মনে হয় আল্লাহ চায় না তোমার আমার সম্পর্ক হোক।
ও দিকে বন্ধুরা মনে করছে হয়তো বা আমার প্রেম হয়ে গেল।
শারমিনঃ কি ব্যাপার এরকম ্্এ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড হয়ে গেলে কেন- কি যেন বলবে বল।
শোভনঃ না,,,,,, মানে তুমি এতদিন কলেজে আসলেনা তাই আর কি।
শারমিনঃ আমি ক্লাস করার জন্য আসিনি। আমার আর পড়া হবে না- আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
*কথাটা শোনার পর মোটেও আমার ভাললাগার কথা নয়। আমার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। আমার মনে ঝড় বইতে লাগল। কিছু করার নেই। এমন ভাব করলাম যেন ওর বিয়েতে আমিই বেশি খুশি।*
শারমিন বলল কলেজে আসলাম তোমাদের ইনভাইট করার জন্য। পহেলা মে ২০১৩ বুধবার আমার বিয়ে। বন্ধুরা কোন কথা বলল না একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতাকি করছে। শারমিন বলল আমার বিয়েতে কিন্তু সবাইকেই আসতে হবে, সবাই কিন্তু কথা দিয়েছো। শারমিন চলে গেল।
কী ব্যাপার শোভন এটা কি হল। ওর বিয়েতে যাবি। অন্য কারো সাথে ওর বিয়ে হবে ভাবতেই পারছিনা। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কোন কথা বেরুচ্ছে না। আমি সব কষ্ট ভুলে গিয়ে বললাম অবশ্যই ওর বিয়েতে যেতে হবে।কথা দিয়েছি না........। আমি কেঁদে ফেললাম।
বন্ধুরা সবাই আমাকে সমবেদনা জানালো ওদেরও কষ্ট হচ্ছে। ওরা বলল ওর ব্যাপারে আমরা তোকে অনেক ক্ষেপিয়েছি- আমাদের ক্ষমা করে দিস। আমি চোখ মুছে বললাম না না বন্ধুদের মাঝে এটা কিছুই না।
১০ দৃশ্য/ শেষ দৃশ্য
আমরা সবাই মিলে বিয়ে বাড়িতে পৌছালাম। আমাদের একটা ঘরে বসতে দিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বর পক্ষ চলে আসল। খাওয়া দাওয়া করল। শারমিনকে কনে সাজানো হয়েছে।ওকে খুব সুন্দর লাগছে ও আমাকে দেখে একটু হাসল। কনে ও বরকে একসঙ্গে বসানো হল।
কাজী বিয়ে পড়াতে লাগলেন। আমি বললাম আমার চোখের সামনে শারমিনের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমি কিছুই করতে পারলাম না দোস্ত আমার মনের কথা মনেই রইল রইলো বলা হল না। যদি ওর সাথে আমার বিয়ে হত। ( আবেগ)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫