ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষ এখন যেকোনো কিছু খুব সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে। এবং এইসকল তথ্য-উপাত্ত্ব গুলো কোনোরকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই অধিকাংশ মানুষ গ্রহণ করছে 'সঠিক' মনে করে। যা খুব-ই বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদেরকে তথা বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাকে। বাংলাদেশের ইন্টারনেটের মূল নিয়ন্ত্রনটা এখন প্রায় পুরাটাই তরুণদের হাতে। যেটা অনেকটা আমাদেরকে ভুল পথের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চই মন্তব্যটা পড়ে। আমিও কিছুটা দ্বিধার মধ্যে ছিলাম মন্তব্যটি লেখার পূর্বে। তাহলে আসুন, আজ কোনো একটা বিষয় নিয়ে একটুক বিশ্লেষণ করা যায় কি না দেখে নিই।
বেশ কিছুদিন ধরে ফেইসবুক ও ইউটিউব-এ একটা ভিডিও-এর সাজেশন পাচ্ছি যেটির নাম "কুত্তা সং"। অনেকবার কেটে করেছি, কারণ গানের শিরোনাম দেখে শোনা বা দেখা’র ইচ্ছা পুরাটাই চলে যায়। তারপরও যখন বার বার সাজেশন-এ পাচ্ছিলাম তখন ভাবলাম একবার শুনেই দেখি। ওমা !!! এতো দেখি পুরাটাই OMG !!!
ইউটিউব-এ গানটির বিস্তারিত যেভাবে লেখা হয়েছে তা হলো (i do just copy & pest here) :
"Kutta Song Is a Bollywood type Funny Song. this Bangla funny music video and Bangla song make for fun.
after relation breakup You can enjoy this song. Its a party Kutta style dance song. this funny song Is the best Bangla new Music video HD. The Breakup Song.."
ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর কিভাবে আমরা সেই সম্পর্ককে মূল্যায়ন করছি বা করতে হবে সেটি দেখানো হয়েছে বা দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে এই ভিডিওটি তে। এটা খুব-ই অস্থির (যদিও "অস্থির" শব্দটা এখন খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুব সমাজের মাঝে চমৎকার, সুন্দর, ভালো ইত্যাদি শব্দের সমার্থক শব্দ হিসাবে) মানসিকতার একটা বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আমি 'অস্থির' বলতে "অস্থির"-ই (impatient) বোঝানোর চেষ্টা করছি।
"কুত্তা সং" এই ভিডিওটি প্রায় ১০ লক্ষবার দেখা হয়েছে শুধুমাত্র ইউটিউব- এর অরিজিনাল চ্যানেল থেকে। ফেইসবুক, ডাউনলোড, কপি ভিডিও কতবার হয়েছে সেটার হিসাব আমার জানা নাই। এবং এই ভিডিওতে যে কমেন্ট গুলা এসেছে সেগুলার প্রায় সবগুলোই তরুণদের কাছ থেকে।
আমি কোনোভাবেই তরুণদের এগিয়ে যাওয়াকে তিরস্কার করছি না বা ছোট করে দেখছি না। কারণ তারা অনেক সচেতনাতামূলক ভিডিও-ও উপহার দিয়েছে আমাদেরকে। সেজন্য তাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু আমার অসুবিধার জায়গাটা হলো "কুত্তা সং" স্টাইলে ফান করা উচিত না। কারণ, ভবিষৎতে মানুষ এগুলোকে প্রাসঙ্গিক হিসাবে ব্যবহার করবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বিশ্লেষণের সময়। ভালো-খারাপ, সুন্দর-অসুন্দর সবসময় ছিলো, আছে এবং থাকবে। কিন্তু যারা সমাজকে কিছু দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে, সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নিজের খেয়ে সমাজের মোষ তাড়াচ্ছে তাদেরকে এইসব অনুভূতিপ্রবণ বিষয়ের দিকে একটু বেশি খেয়াল রাখতে হয় বা রাখা উচিত।
আমরাই দেখেছি, এই তরুণরা কিভাবে শীতের রাতে রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকা মানুষের গায়ে নিজেদের উদ্দ্যোগে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়, মানুষের কাছ থেকে চেয়ে আনা টাকা-পয়সা দিয়ে শীতের কম্বল তুলে দিয়েছে। সুতরাং আমরা চাইলেই পারি এইসব অনুভূতিপ্রবণ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে পরবর্তী উদ্দ্যোগ নিতে।
আমি পুরাটাই বিশ্বাস করি যে, গানটি তৈরী করা হয়েছে শুধুমাত্র মজা বা মানুষকে আনন্দ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাই বলে সৃষ্টির সেরা জীবকে এভাবে পশুর সাথে তুলনা করে নিজেদেরকে এতটা নিচে নামানোর কোনো দরকার হয়না। একই থিমটা অন্যকোনো শব্দ দিয়ে সাজালে মনে হয় ভালো হতো।
১। সর্বোপরি, প্রথম জেনেরেশন কে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে দ্বিতীয়/তৃতীয় জেনেরেশন কে সঠিক পথে আনার জন্য।
২। ইন্টারনেট ব্যবহার সংক্রান্ত যে সব আইন গুলা আছে সেগুলার অনেক বেশি সঠিক ভাবে প্রয়োগ।
৩। অনেক শক্তিশালী নজরদারি প্রয়োজন।
৪। বাংলাদেশের কনটেন্ট গুলার প্রতি অনেকবেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
৫। কন্টেন্ট তৈরী করার ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ, দেশীয় সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যাপারগুলা মেনে চলা উচিত।
এবং
৬। আমাদের মতো তরুণদেরকেও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে সামগ্রিক বিষয়ের প্রতি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৪