বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্প ক্রমেই ভারতনির্ভর হয়ে পড়ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভারতের প্রেসের কাছেই বই ছাপাতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এ নিয়ে দেশীয় প্রকাশকদের তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে প্রাথমিকের বিপুল সংখ্যক বই ছাপানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রেসগুলোকে নানা ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশীয় প্রকাশকরা। তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেছেন, ভারতের প্রেসে বই ছাপানো হলেও নিয়মের কোন হেরফের হয়নি। বরং টাকা খরচ কম হচ্ছে। সেইসঙ্গে বইয়ের মানও ভাল হচ্ছে। চলতি শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের প্রায় ৪ কোটি বই ভারতের প্রেস থেকে ছাপা হয়। আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৫ কোটি বই ভারতের প্রেসে ছাপা হবে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ভারতের প্রেসের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দেশীয় প্রকাশকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২০১৩ সালে প্রাথমিকে ১০ কোটি ৭১ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৭টি বই ছাপা হয়। এরমধ্যে ভারতের তিনটি প্রেসে ছাপা হয় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৩টি বই। এর মধ্যে ভারতের কৃষ্ণা ট্রেডার্স ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৯৯৩টি, বিকে প্রকাশনী পেয়েছে ১৫ লাখ বই ছাপানোর অনুমতি। গফসন প্রকাশনী পেয়েছে ৮ লাখ ৭০ হাজার বই ছাপানোর অনুমতি। জাতীয় শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বাংলাদেশের ১৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে বাকি ৬ কোটি ৮৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৭৪টি বই ছাপানোর অনুমতি দেয়। ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৮৬ কপি বই ছাপানো হয়। বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, এনসিটিবি দেশীয় প্রকাশনা ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। টেন্ডারে টিকলেও দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্যাক্স বসানো হয়নি। এটা করলে তারা টেন্ডারে প্রতিযোগিতা করতে পারতো না। তোফায়েল খান আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রকাশকরা ফিলিপাইনসহ আরও কয়েকটি দেশে বই রপ্তানি করেছে। অথচ বাংলাদেশের বইয়ের বাজার ভারতীয়দের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের মুদ্রণ শিল্প ধ্বংস ডেকে আনবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এনসিটিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেখানে সুবিধা পাবো সেখান থেকেই বই ছাপাবো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত কোন পার্থক্য নেই। ভারত যদি বইয়ের গুণগত মান ঠিক রাখে তাহলে সেখান থেকে বই ছাপাতে আমাদের সমস্যা নেই। দেশীয় প্রকাশকরা প্রতিযোগিতায় টিকলে এবং মান নিশ্চিত করতে পারলে তারাও বই ছাপানোর অনুমতি পাবে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই ভারতের প্রতিষ্ঠানকে বইয়ের কাজ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগে যেখানে একটি বইয়ের দাম পড়তো ৭০ টাকা সেখানে এখন একটি বইয়ে খরচ হচ্ছে ২৩ টাকা। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বই দেয়া হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি।
এখানে দেখুন