জগৎ সমূহের পরিচয়-
১
তখন স্রষ্টার মহিমা প্রকাশ পেল স্ব-রূপে,
তারপর প্রকাশ পেল বিশ্ব রূপে, সৃষ্টির জ্ঞান তার
নখ দর্পনে, তিনিই নূরে খোদা নূরে মোজাচ্ছাম
আলে মোহাম্মদ মোস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম।
২
ইশারায় আমরা নেমেছিলাম এখানে
প্রবল দুঃখ-কষ্টে বিশুদ্ধ হলাম এখানে
ইশকের উত্তাপ আরো প্রবল হল এখানে
রূহের বাসস্থান জমিনে নয় আসমানে।
৩
যখন সন্ধ্যা নামে যেখানে মানুষ ফিরে যেতে চায় না
সেই সব অন্ধকারেও আলো আছে, পাথরের ভেতর
যেমন থাকে। অগণিত প্রাণ যারা চলে গেছে
অন্ধকারের ভেসে উঠা আকাশের উজ্জ্বল তারার ভেতর।
৪
একটি স্থির জাহাজ, আর পালগুলো হাওয়ায় দুলছে
আমরা পান করেছি নীল, আর হৃদয় ব্যথা করছে
একটি গভীর ঘুম, আর খুলছে অদৃশ্য কথাগুলো
আমরা পড়ছি রাত্রি আর দিনের সোনালী পাতাগুলো।
৫
সোনালী শস্যকণা যা অংকুরিত হয়
উন্মোচিত হয়, তারপর দুপুরের মৃদু
বাতাসে দুলে সবুজ শস্য ক্ষেত
জীবন থেকে উঠে আসা জীবন।
৬
ক্ষুদ্র আর বৃহৎ ছিল একই সীমানায়
বহু দূর ভেসে এলে প্রেমের নেশায়
ভাগ্যলিপিতে নেমে এল সুখ ও যন্ত্রনা
সমস্ত জগৎ প্রিয়ার ভালবাসায় রচনা।
৭
দুপুরের সূর্যের আলোয় বহমান প্রাণের ধারা
ঘূর্ণায়মান ধূলো-মেঘ, আলোর কণা,
শত-কোটি বৎসর ধরে মহাশূণ্যর অতলে
হারায় যারা ক্রমাগত বিহব্বল প্রণয়হারা।
৮
তোমার দীর্ঘ আলাপ আমি বুঝতে পারি না
প্রতু্ষ্যে আর সন্ধ্যার আলাপ বুঝতে পারি না
দুপুরের সূর্য়ের আলোয় বৃক্ষরা হারায় ছায়া
প্রত্যেকে নতমুখী, কম্পমান সুর কখনো থামেনা।
৯
প্রত্যুষের উপছে পড়া শরাবের নীল পেয়ালায়
আমরা পান করি ভোরে, দুপুরের, বিকালে, সন্ধ্যায়
এক মূহুর্ত আগে তুমি এমনত ছিলেনা বন্ধু
আকাশ, সমুদ্র, তারকারা ঘুরছে উজ্জ্বল পাখির ডানায়।
১০
অদৃশ্য হায়! আমরা হলাম অদৃশ্যের বিমূর্ত ছবি
সমস্ত জগতসমূহ সুন্দর ও সত্য অখন্ড একাকী
মৃত্যু, গতি, ভিন্নতা এই হল গভীর তীক্ত শরাব
নিঃসঙ্গতা হারায় জন্ম-মৃত্যুর উন্মাদ মাদকতায়।
১১
নিঃসঙ্গতা আহ! আমরা যাহা পান করি
অবচেতনে, যখন পাতাগুলো হলুদ বর্ণ
ফুলগুলো সৌন্দর্য্য হারায় ধূসর সন্ধ্যায়
বিচ্ছিন্ন মেঘেরাও ঝড়ো বাতাসে কেঁদে যায়।
১২
বিচ্ছিন্নতায় আমরা জেগে উঠলাম, নেচে উঠলাম
প্রজাপতি বনপথে লাফায়, তুষার গলে ঝরনা ধারায়
পূর্ণিমা জ্যোৎস্নায় রুপালী রাত শিশির ভেজা বৃক্ষশাখায়
অদ্ভুদ নীল শামিয়ানার নিচে একদিন অদৃশ্যর জলসায়।
মানুষ জগৎ সমূহের আয়না-
১
পূর্বাপর কিছুই ছিল না, সাগর, নদী, পাহাড়
আলো কিংবা অন্ধকার, সকাল কিংবা সন্ধ্যা
দিগন্তের রক্তিম আভা কিছুই ছিল না।
অবুঝ হৃদয়ে তখনো ছিল প্রেমের বেদনা।
২
প্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আকাশের ঝলমলে তারা
সন্ধ্যার নিসর্গ, বেলা শেষে ডুবে যাওয়া সূর্য,
কোন দিন হারাবে পূর্ণিমার রুপালী চাঁদ-সূর্য,
গ্রহ-তারা সব গভীর অন্ধকারে অসীম অন্তরে।
৩
আমরা প্রবেশ করেছি রহস্যময় আয়নায়
আয়নার ভেতরে স্তরে স্তরে আয়নায়
এখানেই লিপিবিদ্ধ জীবন, মৃত্যু, আহার
একটি নাম পবিত্র, রঙ্গিন-রোশনায়।
৪
অনন্তের দেখা তুমি খুঁজে পাবে না
পানি পারেনা সমুদ্রকে দেখতে। পারে অনুভবে
ঘূর্ণায়নে। মহাকালের অসীম উৎসও পাবেনা খুঁজে
যে মানব নিজেই শুধু মায়াবী মহাকাল।
৫
হে মাবুদ, আমাদের পাথর ও শিরিস কাগজ দাও
যাতে সারা জীবন ঘষতে পারি এই দেহ, হৃদয়
এবং সংলগ্ন সবকিছু। আমরা আর কিছু চাই না
আমরা জন্মের পরেই বিশুদ্ধ মানব ছিলাম।
৬
যখন ধূর্ত শিয়ালেরা হৃদয়ে আঘাত করো
আর সাপগুলোও মাথার মগজে বসত করো
প্রবল ঝড় এসে জীবনের বৃক্ষ উপড়ে ফেল
ভয়ার্ত আর্তনাদের ভেতর ফুলগুলো ফুটেছিল।
৭
সব কিছুই কম্পমান আর জগৎ ইশকের বাগান
কেউ ফিরেনা এখানে, আর পুড়ছে প্রিয়তম প্রাণ
সব কিছুই নূর, আর মাবুদের পাক কালাম
প্রত্যুষে সূর্যের আলোয় আমরা শুধু পড়ছিলাম।
৮
যে আলোর জন্য সারা জীবন কেঁদেছিলে
সে আলো মনের অজান্তে বেড়েছিল
যে বাক্যর জন্য সারা জীবন ঘুরেছিলে
সেই পবিত্র বাক্য তুমি শুধু নিজেই হলে।
৯
দেখ আদম রুপে মিলেছে আজ
এক সারিতে অপূর্ব সব জগতের রূপ
অখন্ড রুহু দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ওজন বিহীন
দেশ ও কালহীন অচেনা এক আগন্তক।
১০
ঘূর্ণায়মান মহাশূণ্য স্তরে স্তরে সাজানো আসমান
অনন্ত বিক্ষিপ্ত আলোক রশ্মির একেকটা রূপান্তর অজস্র-
হাজার কোটি বৎসর। ক্রমাগত বিচ্ছেদ আর অশ্রুপাত
দীর্ঘতর হচ্ছে, আর আমার কিছুই নেই, সমস্তই 'আমি'।
১১
প্রদীপ সেখানে জ্বলছিল আর নিভছিল
ভোর আর রাতের বাজনা সেখানে বাজছিল
জগত মায়াবী জলসা, অদৃশ্য জগতে হৃদয়
জন্ম-মৃত্যুর গভীর নেশায় নাচছিল।
১২
আমরা যা জানি সব ভুল
এক গ্রন্থি থেকে আরেক গ্রন্থি
প্রবল রহস্যময় ইশকের উজ্জ্বল আগুন
অন্ধকারের কথা অন্ধ লোকে জানে।
১৩
আমাদের রাজত্বে কোন ভুল হয় না
আমরাই সমাপ্ত করি বেদনার তৃতীয়জনা
বীজেরা প্রবৃষ্ট হয় নিখাদ অন্ধকারে
আমাদের রাজত্ব তারও পূর্বে যুদ্ধক্ষেত্রে।
১৪
মায়াবী জগতে আহব্বান করলে মৃত্যু উপত্যকায়
তারপর চরম নির্মমভাবে মৃত্যু দিকে ঠেলে দিলে
তবু তোমার প্রতি বিশ্বাস চিরকালই ছিল হে প্রিয়তমা
প্রতিবার বেঁচে উঠলাম তোমাকে মৃত্যু স্পর্শ করে না।
১৫
তুমি বাহির হতে পারনা এই দৃশ্যমান জগৎ হতে
এখানকার সংগীত, কাব্য, খোদাই করা নিসর্গ রূপ;
বাহির হতে পারনা প্রত্যুষে মিশানো আকাঙ্ক্ষা হতে
এই দেশ, এই সময়, এই হাত-মুখ তুমি পাবেই।
১৬
হঠাৎ গভীর রাতে তোমার ছবি দেখে কেঁদে উঠে মন
অন্ধকারের ভেতর বন্দি হয়ে কাঁদে আলোর জীবন,
এই দুটি চোখ যা কিছু দেখে সব নিবিড় অন্ধকার
শুধু পীরিতির এই ধ্যানের ছবি আলোর ভান্ডার।
১৭
এখনই এসো বার্তাবাহক! দ্রুত নিয়ে যাও খবর
বাম পাশে ধমনীর নিচে শুয়ে আছে প্রিয় সুন্দর,
নিঃশ্বাসের আগে শুধু বিশ্বাস করে পৌঁছে যেও পথ
যেখানে আলো নেই অন্ধকারও নেই, প্রেমের জগৎ।
১৮
সূর্যের আলো স্পর্শ করতে পারেনি পবিত্র ভূমি।
অথচ একটি সাদা পাখি, স্বচ্ছ আর উজ্জল পাখি
আমার বামপাশ থেকে উড়ে গেল ডানপাশে
অসীম সময়েও সে আর ঘরে ফিরে আসেনি।
যুবকের সোনালী দিনগুলো-
১
আর আলো যখন আকাশ বিস্তীর্ণ করে
তাকে উৎসর্গ করি আমরা পবিত্র কোরবানগাহে
আমরা আমাদের চরম বিপন্ন যৌবনকে
উৎসর্গ করি রহস্যময় আঁধারের কাছে।
২
আমাদের তাড়িত করা হলো যুদ্ধক্ষেত্রে
একজন বহন করলেন পবিত্র ফলক
আরেকজন বহন করলেন অসীম অন্ধকার
আমরা শেষ দৃশ্য দেখতে চাইলাম।
৩
মানুষ কি শুধু সন্মুখে যাবে, যৌবন থেকে বৃদ্ধ
মৃত্যু থেকে পরকাল। যদি কোনদিন পিছনে ফিরে
ভ্রুণ থেকে সূর্যে, নক্ষত্র থেকে সৃষ্টির পূর্বে
যখন দেশ আর কাল অনুভূতিহীন।
৪
হে যুবক! তোমার মাথার তালুয় তৈল দাও
আর সাদা কাপড় পরে আনন্দ প্রকাশ কর
তোমার মন যা খুশি তাই কর, কিন্ত জেনে রেখ-
অন্ধকার দিনগুলোতে যৌবনে হিসাব দিতে হবে।
৫
ভোরের সূর্যের মত কতইনা সুখী তোমাদের জীবন।
কিন্ত শয়তানেরা প্রাচুর্য্যের আকাঙ্ক্ষা ও যৌবনের তাড়নার দ্বারা
তোমাকে আঘাত করে, তুমিও যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়
শোন! যোদ্ধা আর বিনয়ীরাই সত্যিকারের গর্ব করতে জানে।
৬
কোন দুঃসময় নেমে এলে ধ্যান কর মুর্শিদ রূপের
দ্রুত স্থান ত্যাগ কর সুন্নত ইউসুফ আলাইহি ওয়াসাল্লামের
যার বাসস্থান হলো সুন্দর আর পাক-পবিত্র
তার কবর ও কবরের জীবন উজ্জ্বল আলোকিত।
৭
তুমি যখন রাস্তায় চল দু'পাশের লোকজন তাকিয়ে থাকে
কিন্ত যখন অন্ধকারে আস আর খারাপ কামনা করতে থাক
সমস্ত জ্ঞান, বুদ্ধি, বিশ্বাস বিলুপ্ত হয়ে যায়। জেনে রেখো,
আগর জ্বালিয়ে গহীন জংলায় আলো আর সুঘ্রাণ ছড়ানো যায়।
৮
হে যুবক! কোন যুবতী নারী যখন বাঁকা চোখে রাস্তায় চলে
তুমিও তার দিকে চেয়ে থাক আর খারাপ কামনা করতে থাক,
তোমার চোখ যতই দেখে তৃপ্ত হয়না, কিন্ত জেনে রেখো,
কবরের অন্ধকার দিনগুলোতে ভয়ংকর সাপ এই কামনাই হবে।
৯
হে যুবক ! শয়তান এসে বহুকষ্টের মুজাহেদার দরজা ভেঙ্গে ফেলে
তারপর জ্ঞানের প্রহরীকে আহত করে জীবনের আলো হরণ করে
তুমি মহান রহমান ও রাহিমের দরবার থেকে নিরাশ হইওনা
তুমি সর্বদায় স্বল্প আহার, স্বপ্ল ভাষী, স্বল্প নিদ্রাসক্ত হয়ে যাও।
১০
যখন নফসের আহার সারে জাহানে ছড়ানো
তখন পহারা দাও চোখ, নাসিকা, কর্ণ, জবান
আর প্রজ্জলিত হৃদয় শিখায়, তোমার স্মৃতিগুলো
বিঃসৃত হবে। তোমার ব্যর্থতাগুলো পুরস্কিত হবে।
১১
তুমি জ্ঞানের সাথে প্রেম শিখ, প্রেমের কোন পাঠশালা নেই
শুন! শুদ্ধ আর অশুদ্ধ প্রেম কাম থেকেই জন্ম নেয়
জেনে রেখ, পবিত্র কামকে যদি রক্ষা করতে না পার
তাহলে তোমার সমস্ত জীবন ও জ্ঞান বরবাদ হয়ে যায়।
১২
হে যুবক! জীবনে তুমি অনেক মানুষকে শত্রু মনে করেছ
কিন্ত ভেবে দেখ জীবনের উপর কি অপরিসীম জুলুমইনা করেছ
এই হাত যখন রক্তাক্ত, জীবন যখন বিপন্ন, স্বদেশ ত্যাগ কর
সংকির্ণতা কেটে যাবে, পৃথিবী প্রশ্বস্তময় হবে, সন্মান বৃদ্ধি পাবে।
১৩
হে যুবক! সারা রাত জেগে আল্লাহর স্মরণে কাটাও
আর তোমার জীবনের আলো গুপ্তধন পাহাড়া দাও
কুৎসিত রাতের পবিত্রতায় রয়েছে রহস্যময় উপকার
অন্ধকারে মসজিদে গমনকারীদের জন্য রয়েছে পূর্ণ নূর।
১৪
হে যুবক! জালিম বাদশা স্বীয় নফস থেকে পলায়ন কর
আর কাহাফবাসী যুবকদের ন্যায় তুমি আত্মরক্ষা কর
যারা বয়সের যুবক ছিল না মনের দিকে ছিল যুবক
যা ছিল সংকীর্ণ গুহা তা আসলে অসীম হৃদয়ের মসজিদ।
১৫
হে যুবক! তুমি সর্বদায় মুর্শিদের ছায়ায় বসত কর
আর পবিত্র মধুর নাম হরদম জপতে থাক
তুমি যখন আত্মজ্ঞান দ্বারা নিজেকে চিনে নিবে
পর্দা উঠে যাবে তোমাকে তুমি দেখতে পাবে।
১৬
এখানে হাত দিওনা এখানে অগ্নুৎপাত
এখানে জন্মেছিল প্রাণ এখানেই বিনাশ।
এখানে ডুব দিওনা এখানে অশ্রুপাত
এখানে জন্মেছিল প্রাণ এখানেই বিনাশ।
১৭
পবিত্র যৌবনের দীপ্তমান সূর্যকে কোটি-কোটি সালাম
ইহাই নূরে আলো পৃষ্ঠদেশে স্থাপিত চিরন্তন কালাম
ফুলগুলো ফুটে আর্তনাদের ভেতর নিঃশ্বাস বন্ধ করে
যুবকেরা মাবুদকে ঋণ দেয়, অনন্ত জীবন লাভ করে।
১৮
তারকার আলো যেমন সূর্যের কাছে বিলীন হয়
পবিত্র প্রেমে কাম দেহের মাঝেই বিলিন হয়।
হে মাবুদ প্রেমের বাগানে গোলাপ বানিয়ে দাও
যাতে বিশ্ব বাগানে তার সুঘ্রাণ ছড়াতে পারি। আমীন
জ্ঞানীদের জীবন-
১
তোমরা জগতের কোন প্রাণীকে চিনতে পার না
প্রতিটি প্রাণী 'রহমান' নামের খোদাই করা আয়না,
তোমরা কখনো আত্মপ্রকৃতি অংকন করতে পারনা
সমগ্র বিশ্ব-জগৎ মানুষের আত্মপ্রকৃতির নমুনা।
২
তোমরা অনেক কিছু দেখ কিন্ত কোন কিছু দেখতে পাওনা
অনেক কিছু স্পর্শ কর আসলে কোন কিছু স্পর্শ করনা
অনেক কিছু অনুভব কর আসলে কোন কিছু অনুভব করনা
সবকিছুই মাবুদের নিদর্শন সবকিছুই তাঁর অদৃশ্য মহিমা।
৩
বুদ্ধি, চিন্তা এবং পরিকল্পনা মানুষকে জ্ঞানী করে তোলে
জগতে নতুন কিছু সৃষ্টি হয়, যেখানে মানুষ সুখ খুঁজে
আর প্রভুর নাম সারাক্ষণ জপলে মহাজ্ঞানী করে তোলে
বুদ্ধিহীন জগতে আত্মা চিরকাল পরম আনন্দ লাভ করে।
৪
জ্ঞানীগণ! মাবুদের সত্যকে কেন গোপন কর, যা নিন্দনীয়
তোমরা খেয়াল বশত মাবুদের কথা কম বেশী করোনা
তাহলে হৃদয় ও পৃথিবী ক্রমাগত অন্ধকারে আচ্ছন্ন হবে
অন্ধকার কি জান, তা হল পরম সত্যকে না চেনার বেদনা।
৫
যারা হৃদয়ে উদ্ধারকারী নবীকে চিনেছিল
তারা যখন কারো সাথে কথা বলে
তারা আসলে একটি আয়নায় কথা বলে
মানুষের হৃদয় মাবুদের রহস্যময় আয়না।
৬
আমরা যা কিছু দেখি তা বুঝি না
আমরা যা কিছু বুঝি তাও আয়না
মাটি ফুঁড়ে ফুল ফুটেছে রক্ত গোলাপ
সমস্ত জগৎ প্রেমের সীমাহীন বিলাপ।
৭
বৃদ্ধকালে! যে এবাদতে পাপের স্মৃতিচিহ্ন বহন করে
সেই জ্ঞানী যে সারা জীবনের এই 'আমি' কে পরিত্যাগ করে
তুমি পূতঃ পবিত্র একটি জীবনকে নিজের জীবন ভাব
এখন তোমার নাম শায়খে পরম্পরা মোহাম্মদ মস্তোফা।
৮
জ্ঞানীগণ! পরস্পর শ্রেষ্ঠত্বের হিংসা করোনা
জ্ঞানের দিকে মাবুদই শ্রেষ্ট, তিনিই বাগান
আমরা শুধু বাহারী ফুল। জ্ঞানীদের মাধ্যমে
মাবুদ নিজের সুন্দর আর সুগন্ধ ছড়ায়। আমীন।
৯
যখন উৎসর্গ করা হয় লালচে পশমী চাদর
তুমি কতইনা খুশি হও ইহাই গৌরবের
যখন উৎসর্গ করা হয় দেহের সোনালী চামড়া
তুমি তাহা গ্রহণ করনা ইহাই জীর্ণতা।
১০
তাওরাত কিতাবের বনী ইস্রাইলদের কিছু লোককে
মাবুদ ধ্বংস্তপ থেকে উদ্ধার করে হিজরত করালেন
আমি প্রবীণ জ্ঞানীগণের পবিত্র হস্তে চুম্বন করলাম
দুনিয়াতে সমস্ত আহলে কিতাবীগণের ধর্ম ইসলাম।
১১
জ্ঞানীগণ! শুধু ক্ষমতার জন্য ধর্ম ও যুদ্ধকে ব্যবহার করোনা
ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাজত্ব ঐশী ধর্মাবলম্বীদের
ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাজধানী হল জেরুজালেম
মনোনিত, ন্যায়-বিচারক আর প্রবীণ জ্ঞানীগণ হলেন রাজা।
১২
সূফিগণ! যারা চিরকালই লাঞ্চিত ও অবহেলিত
বিশ্ব হোক ধর্ম নিরপেক্ষ কিংবা ধর্মপেক্ষ।
সমস্ত রাষ্ট্র আর শিল্পকলার প্রতিষ্ঠাতা সূফিরা
শিল্পগুণ কখনো উপভোগ করতে পারে না তারা।
১৩
আমার সারা জীবনের শিক্ষা ব্যর্থ ছিলনা
অথচ প্রাণ প্রিয় শিষ্য বিদ্রোহী হয়ে গেল
ওর চোখে কি কোন উজ্জ্বল কিছু ভাসছে
আমার অব্যর্থ দৃষ্টি সীমায় সাড়া দিলনা।
১৪
তোমাদের উন্নতি দান করে থাকে
বিশ্ব জগতের সমস্ত নীতিবোধ থেকে
পারস্পরিক কর্তৃত্ব লাভের প্রবল চেষ্টা
আর ব্যর্থতা, ঘৃণা চিরকাল চলতে থাকে।
১৫
বাক্য আর হরফ বিহীন বাতেনী মাকাম
সেখানে পঠিত হয় ভাগ্যবান রূহের নাম
তখন ঈমান স্বতস্ফুর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়
ঈমানের বাগানের সৌন্দর্য্য আমলে প্রকাশিত হয়।
১৬
অন্ধকার থেকে যখন আলোতে নিক্ষেপ করা হল
জ্ঞানের পর্দাগুলো তোমায় ও আমায় আড়াল করে দিল
তারপর আমরা অস্তহীন সূর্যের দিকে ফিরে এলাম
আর অনন্ত জীবনের জন্য মানুষকে আহবান করলাম।
১৭
আমাদের দৃষ্টি যখন হরণ করা হবে
আমরা যা দেখি তা অন্য কিছু হবে
আমরা যা বুঝি তাও অন্য কিছু হবে
জ্ঞানের পর্দা কখনো শেষ হবে না।
১৮
ঝড়, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত- তিন বেদনায়
একটি বিশাল সবুজ বৃক্ষ শিকড়চ্যুত
অত্যাচার, ঘৃনা, অপবাদ- তিন বেদনায়
একজন মানুষ সংসারচ্যুত, এক বেদনার আশায়।
কেউ নও সঙ্গীহারা-
১
বহমান প্রবল ঝড়ের হাওয়ায় অনন্ত জীবন
আমরা হারায়, ঝড় কখনো শেষ হবেনা
এই জীবনে আমরা শুধু চাই-
প্রিয় সঙ্গী আর কিছু আহার।
২
কতকাল হতে শুনিতে পাই অবুঝ প্রিয়দের মৃত্যুর খবর
হৃদয়ের উপত্যকায় খসে পড়ে নিরেট শুকনো পাথর
নিবিড় শৃঙ্খলেও পাখিদের দল শিকারীর বাণে আহত হয়
আকস্মিক কিছু মূহূর্তের জন্যই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।
৩
আলোর কোন অভাব নেই এবং ছিলও না
কোন রাত নক্ষত্র কিংবা চাঁদ বিহীনও জ্বলে না
মানুষ জন্মে উপুর হয়ে প্রস্থান করে চিৎ হয়ে
উপুর কিংবা চিৎ সব মায়াবী আলো বাজনা।
৪
মানুষ ভ্রমনে এল নক্ষত্র থেকে অন্য নক্ষত্রে
কোনদিন খুঁজে পাবে মৃত্যুর পরের মানুষকে
তুমি আপন সত্ত্বাকেও খুঁজে পাবে
কখনো ভালবেসে কেঁদে ফেললে অকারনে।
৫
একটি চোখে কখনো অন্ধকার ফিরে আসে না
সূর্যের চেয়ে প্রখর আভা, আহ! সোনালী আভা
প্রেমের প্রবল বাতাসে বহমান হয় আবেগ
বন্ধু তোমার সাথে কখনো বিচ্ছেদ হয় না।
৬
আমরা কখনো তোমাকে উত্যক্ত করি
যখন নিজের উপর অত্যচার-জুলুম করি
আমরা কখনো তোমাকে সমাদর করি
যখন নিজের উপর নিয়ন্ত্রন গ্রহন করি।
৭
রাতের স্বপ্নে যে রূপ দেখিলে-
অন্য মানবের কিংবা পশু-পাখি, নদী-জল
সকলেই রহস্যময় বিরহী আত্মার প্রতিচ্ছবি
এই মহাজগত সকলেই অখন্ড আমি।
৮
সব আছে, কি যেন নেই-
দৃশ্যর পরে দৃশ্য, কথার পরে কথা
বিরামহীন নিরন্তর এই শব যাত্রায়
আমরা প্রিয় সঙ্গী চাই আর কিছু আহার।
৯
অমরতা আহ! অবশেষে আমরা যাহা নাগাল পেলাম
মৃত্যু, গতি, ভিন্নতা আহ! পাগলামীতে নেচে উঠলাম
যে বিষ পান করেছি তার নাম প্রণয় বৃদ্ধির যন্ত্রনা
যে সমুদ্রে সাঁতার দিয়েছি তার নাম দিয়েছি 'জানিনা'।
১০
ক্ষুর্ধাত আর হিংস বাঘ যখন দ্রুত দৌড়ায়
বন হরিণ প্রাণের ভয়ে বন পথে লাফায়
সেই ঘন বন আমার হৃদয়, এখানে বাস করে
ক্ষুর্ধাত বাঘ, আর বন হরিনের আস্তনায়।
১১
আমার হৃদয়, সেখানে বাস করে সহিংস বাঘ
আমি না হয় ছুঁড়ে দিলাম রক্ত গোলাপ
আকাশ ভরে জ্বলে উঠে রাতের তারা
পাষাণ ও সর্বহারা প্রেম হৃদয়ে তন্দ্রাহারা।
১২
একটি সাদা রঙা উজ্জ্বল প্রদীপ শিখা
যা আমাকে উত্তাপ দেয় নিবিড় ভাবে
আর উজ্জিবিত করে তুলে প্রবল ভাবে
বিবর্ণ ফুল যখন ঝরে ছিল সন্ধ্যার অন্ধকারে।
১৩
মানুষ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হল-
নতমূখী বয়োবৃদ্ধ যৌবন, পাকা চুল
অসাধারণ মৃত্যুর প্রসাধন; মানুষ জানেনা
তার চিরকাল সীমাহীন অদ্ভুদ অনুমান।
১৪
মানুষই এলিয়েন, চারপাশেও এলিয়েন
মৃত্যুর পরের মানুষ, জিন, ফেরেস্তারা
অগণিত চোখে চেয়ে আছে দূরে
সারা দিন-রাত আসমানের তারা।
১৫
পূর্বে বৃহৎ সময়ের জন্য বহুবার বিশ্ব তৈরি হয়েছিল
তারপর তার পতন ঘঠে, এখন জন্ম স্বল্প আয়ুর জন্য।
সমগ্র বিশ্ব জগত জন্মগ্রহন করেছে যতক্ষণে
পতন হবে তার চার ভাগের এক ভগ্নাংশ সময়ে।
হায়! একি আমি নাকি তুমি-
১
আমাদের আহবান করল ফসলের নিসর্গ প্রান্তর
আমাদের বহন করল খোলা আকাশের জ্যোতি
পৃথিবী ও আকাশমন্ডলের ভরশূণ্য পবিত্র জ্যোতি
আমরা বহুকাল কেঁদেছিলাম জাদুর আয়নায়।
২
তোমার একটি নিঃশ্বাস আশিকের সমগ্র জীবন
প্রিয়ার প্রতিটি নিঃশ্বাসে ঘটে প্রেমিকদের মিলন
জগতের প্রতিটি অণুও যদি তোমার আশেক হয়
এ নৃত্য আর বাজনার আওয়াজ শেষ হবার নয়।
৩
তখন পবিত্র বাম চরণের ভার
আমার ডান স্কন্ধে নিক্ষেপ করলে
আমাকে দিলে ইসমে আজমের নিশানা
তোমার বাম চরণের ভার সবচেয়ে ভারী।
৪
অতীত ও ভবিষ্যতের প্রবক্তাগণ থামাও তোমার পাগলা ঘোড়া
এক মূহুর্তের জন্য নেমে এসো পানশালার সব দরজা খোলা
আর ভরপুর পান করে নাও প্রেমের প্রভূর তাজাল্লীগুলা
প্রেমের সূধা আর পাবে না; আসল প্রেমে বদনাম শুধু।
৫
পাগলা ঘোড়া দ্রুত চল পাহাড় ছেড়ে তৃণভূমির উপত্যকায়
আমার মন হল পাগলা ঘোড়া বন্দি দেহের আস্তানায়
আজ রাতে কি হল পানশালার এক মদ মাতালের
জগতের রহস্যময় বর্ণে আঁকা তারায় ভরা সন্ধ্যা রাতের।
৬
ভালবাসা আহারে!
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাক গোলাপের কাঁটা
স্বপ্নগুলো আহারে!
সূদুর নীল আকাশের মিটিমিটি তারা।
৭
আমার উজ্জ্বল চোখের জ্যোতি কোনদিন ম্লান হবে না
তোমাকে দেখার পর দুটি চোখ আর কিছু দেখে না
তোমাকে বোঝার পর এই মন আর কিছু বুঝে না
আমি ক্রমাগত হারাচ্ছি সব তোমার ভেতর।
৮
সবুজ রঙা পাতা জন্মে তীব্র কুয়াশার পরে
কাটার ওপরে ফুল, হায়! কাটার ওপরে
আশা রাখ অমঙ্গলের পরেও শান্তি আসবে
প্রতিটি মানুষ সূফী, প্রতিটি প্রাণ শান্তি পাবে।
৯
মানুষ অনেক ভুল করে সুখের আশায়
মানুষের শুদ্ধতাও ভুল হিসাবে পাল্টে যায়
তুমি অস্তির হয়োনা, বিশ্ব- জগতে ভুল নেই
তুমি নিরাশ হয়োনা, সবকিছু সুন্দরের নিয়ন্ত্রণে।
১০
সন্ধ্যা নেমে এসো রূপালী রাত ধরে
এবং ডুবে যাও এ জীবনের গভীরে
তারপর, বাবার মতন নিষ্পাপ করে তোল
নিরুত্তর দুটি চোখ যা শূণ্যময় আর সাদা।
১১
তুমি যখন আমাকে হরফের কথা বল-
হরফ হলো তোমার রহস্যময় নূরের আয়না
হরফ আর বাক্য আকাশ আর জমিন এগুলো পর্দা
তুমি আওয়াজ তুল আর তোমাকে তুমি দেখতে চাও।
১২
হাবিব তুমি পাহাড়ে যাও সেখানে আছে সুন্দরতম ঝর্ণা
আর জীবনে নিজের সাথে কখনো প্রতারণা করোনা
তুমি আকাশে তাকাও সেখানে ভাসে নীলাভ মনের বেদনা
তুমি ঘুমন্ত নাকি জাগ্রত। তোমার পরিচয় তুমি জাননা।
১৩
ভালবাসার দৃষ্টান্ত প্রকাশ্য, মানুষের চোখ দুটি খোলা
আমরা হারিয়েছি দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা
নিপুন অশ্বারোহী বুনন করে সবুজ রঙা পাতা
সন্ধ্যায় যখন ক্লান্ত হয় বনপথ তখন হলুদ রঙা।
১৪
বনপথ আহা! যে পথে কেউ যেতে চায়না
যেখানে যুবকেরা বিবর্ণ হয়, মৃত্যুর মুখে পড়ে সম্রাটেরা
হলুদ পাতা যে বিচ্ছিন্ন হয় সে শিখে স্বাধীনতা
সে শিখে বেদনাময় রাত্রি, পান করে নীরবতা।
১৫
নীরবতা- যা একটি হলুদ ফুল
আর অন্ধ মানুষের ভালবাসা,
রাত্রির প্রহরে ঝরে ধূসর ছায়া ঢাকা পথের ধারে
'হেপিটাস' তুমি হয়তো হাঁটবে আগামীকাল ঘাসের উপরে।
১৬
পাথরগুলা জীবন্ত। চোখ আছে দূরের তারকাদের
যখন একাকী পথ চল সালাম কর তাজাল্লীদের
তুমি একা নও। চুম্বন কর সেজদায় অবনত বৃক্ষদের
প্রতিটি সৃষ্ট বিষয় বিকাশ মাত্র সুন্দতম নামের।
১৭
আমার অন্তিম মূহুর্তে, আমার দুর্ভিক্ষে
যোগ্যতম বন্ধুগণ কোথায়, জন্মদাতারাও নেই
প্রিয়তমা জীবনের এই কঠিন দুঃসময়ে
আমার মাঝে পেয়েছি তোমার নির্জন প্রকাশ।
১৮
প্রতিটি ফুলের মৌসুমে কেউ তোমাকে ডেকে যায়
প্রজাপতি আহ! সোনালী সূর্যের আলোয় লাফায়
পৃথিবীতে সমস্ত প্রাণ বিহার করে ফুল শয্যায়
আমার মন আঁধারের পথে আবে হায়াত খুঁজে বেড়ায়।
মূহুর্তে বিরহের সুর-
১
এখানে থামিও না, কেউ এখানে থামে না
বৃষ্টি আসে না, ফুল ফুটে না
আলো জ্বলে না, অন্ধকারও না
এখানেই জন্মেছিল প্রাণ শুধু একেলা।
২
প্রদীপের আলো, যার জন্ম অন্ধকার থেকে
কে আছে অন্ধকারের সব কিছু দেখে
রাতের বুনো হাঁস সেও পাথা মেলে উড়ে গেলে
শুধু একটি সন্ধ্যা প্রদীপ তার পিছু নিল।
৩
প্রতিটি প্রভাতে তোমাকে দিলাম হৃদয়ের লাল গোলাপ
পরিনামে পেয়েছি কাঁটার আঘাত আর অশ্রুসিক্ত বিলাপ
সূর্য আলো ছড়ায় অধাঁরের পৃথিবীতে নিবিড় উমে
জানি অন্তিকালে এ হৃদয় বিস্ফেরিত হবে কারো প্রেমে।
৪
দৃশ্যমান সব অদৃশ্যর মায়ামুগ্ধ জ্যোতির
যাকে পরাভূত করে ঘূর্ণায়মান 'হু' জিকির
জগতের আকৃতি বৃত্তময়: স্থান ও কাল মায়াময়
অখন্ডিত অস্তিত্ব রঙ বদলায় আলো ও ছায়ায়।
৫
যখন অন্ধকারে প্রবল বাতাসেরা বহমান হয়
বজ্রপাতের ভেতর বৃক্ষশাখারা শিকড়চ্যুত হয়
প্রবল বেদনায় কান্ড আর পাতারা রক্তাক্ত হয়
আত্মা বন্ধনমুক্ত হয়ে হাওয়ায় উড়তে লাগল।
৬
পরম সত্য পঠিত বাক্য- একটি সুন্দর পাখি
পাখিটি সূর্যের ছায়া, তার ছায়া মাটিতে পতিত।
উত্তপ্ত সূর্যে যে চোখ চেয়ে থাকে দীর্ঘকাল
ভাষা ও জলহীন, বাজে তার আর্তনাদ বিলাপের বীণ।
৭
সেই দিগন্তে সূর্যের আলো আর ক্লান্ত প্রাণ থেমেছিল
বিরহ-বিচ্ছেদে প্রাণ আর পিছনে ফিরেনি;
ক্রমাগত সূর্যকে ছেড়ে প্রান্তরে হারিয়ে গেল,
তখনো আকাশ হতে দেখেছে বিরহি সূর্যের আগুন ছবি।
৮
তুমি যখন আমাকে আকাশের উজ্জল সূর্য হতে বল
সূর্য হল তোমার রহস্যময় রূহের এক অগ্নিবলয়
প্রত্যুষে পূর্ব দিকে একদল নারী প্রার্থনা করেছিল
আমি তাদের হৃদয়ে ভালবাসার আগুন বুনেছিলাম।
৯
মাথার উপরে বেদনার অসীম নীল শূণ্যতা
আর পায়ের নিচে অন্ধকারের নীরবতা
যখন বেদনার শূণ্যতা থেকে আওয়াজ এল
অন্ধকারের নীরবতায় একটি ফুল ফুটেছিল।
১০
জীবনের প্রাম্ভেই শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিজ্ঞা চাই একটি মহৎ কাজের
তুমি সন্মান জানাও এই পথে অগ্রগামী আর সন্মানীদের
জীবনের অধিকার সৎ গুরুকে দাও তুমি তার ছায়া হও
তোমার ছায়াও ছাপ ফেলবে বিশ্ব প্রেমের ছায়ার উপর।
১১
মৃতদের মধ্যে কেউ একজন আমার ঘনিষ্ঠজন
যেমন ঘনিষ্ঠ ছিলাম আমরা জীবিত কালে
আমার কাছে ছুটে আসে প্রায়ই সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে
আমাকে জানায় এপর-ওপারের তাজা খবর।
১২
সেই অতলে কেউ রইল না
ভবের সঙ্গী- মাটি , পানি, অগ্নি, বায়ু
বিরামহীন প্রেমের এই করুন পথে
সুখ-যন্ত্রনা কেই রইল না।
১৩
জ্ঞানের ঐ বহু শাখায় প্রেমিকেরা পথ শুধু পায়
ভালবাসার সিক্ত পথে এই দুনিয়ার পান্থশালায়
তোমার কোলে মাথা রেখে প্রিয়তমা ঘুমাতে চাই
আমার দু'চোখ উপড়ে ফেল অবিরাম রক্তধারায়।
১৪
যা সীমাবদ্ধ তা আসলে অসীম
যা দৃশ্যমান তা আসলে অদৃশ্য
আমরা অবলোকন করলাম মহিমা
মহিমাই অবলোকন করল মহিমা।
১৫
তারকাময় উজ্জল অন্ধকার রাতের পাতাগুলো
আর স্বর্ণ উজ্জ্বল সোনালী দিনের পাতাগুলো
অনন্তর আমরা ক্রমাগত পড়তে লাগলাম
আমরা প্রত্যহ দুপুরে আরও নিকটবর্তী হলাম।
সীমাহীন বিষাদ আর নিনাদ-
১
আমার আর্তনাদে- মসজিদে প্রার্থনা নষ্ট হয়ে গেল
লোকজন গালি দিল আর বলল ও একজন পাগল,
আমার আর্তনাদে- আরশে আজিমে ফাটল সৃষ্টি হল
পূর্বে এই অব্যক্ত ভাষাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম।
২
দুটি জ্যোতির্ময় শিখা এখানে ঘুরে বেড়ালো
অথচ পৃথিবীর কেউ দেখতে পেল না
কাছেই ফুটেছিল রক্তজবা, বাম চোখে অশ্রু এল
দূরে থেকে দেখছে কেউ আমার প্রাণের কেউ।
৩
তোমার সমাধীতে এসে দেখলাম
ইহা ইহা যে আমারই সমাধী
তুমি যে পথের পানে হাঁটতে
এই বিরান পথের পথিক হলাম আমি।
৪
সৃষ্ট বিষয় অস্তিত্বহীন প্রতিফলনগুলো অদৃশ্যর
আকার- আকৃতি, মায়ামুগ্ধ খেলা জ্যোতির
সময় স্থির, 'আহাদ' রুপে তিনি চির জীবন্ত
'আহমদ' নামে ক্রমাগত মুক্ত ও প্রকাশিত।
৫
আমরা যুদ্ধ করি সারা জীবন ছায়ার সাথে
বসন্তের পুস্পগুলো ঝরে পড়ে ঝড়ের রাতে
যে বক আর্তনাতে কাঁদে শিকারীর তীরের ফলায়
আমরা শুদ্ধ হতেই চেয়েছিলাম, তবু বিদ্ধ হলাম মোহমায়ায়।
৬
যে তীর ছোড়া হল সেই তীর ফেরানো যায়
যে পুষ্প ঝরে গেল সেই পুষ্প ফুটানো যায়
প্রেমে ঐ বেহুশ হয়ে শরাব রসে মজুক সবাই
তথ্য কথার ফুল ঝুড়িতে ভব রহস্য পাবেনা ঠাঁই।
৭
অনন্তর বৃত্তের বাইরে আর কোন কিছুই নেই
রহস্যময় বিন্দু যা দিয়ে বৃত্তের শুরু এবং শেষ
এই হল সত্য। অবশিষ্ট্য ভ্রান্ত, ইবলিশ
কিন্ত অবশিষ্ট্য বলতে আর কিছুই নেই।
৮
পরিপূণ্য জ্যোতি দৃষ্টিচূত হয়না বিভ্রান্তও নয়
এই তুরীয় আবেগ আহব্বনকারীরর ডাকে সাড়া দেয়
সে পৌছে গেল দুই ধনুকের ব্যবধানের অর্ধবৃত্তে
তারপর আরও নিকটবর্তী হল এবং মিশে গেল বিন্দুতে।
৯
আহারে! ইশক যখন থমকে যায়
অতিক্রম করতে থাকা সূর্ন্দয্য ও ঘৃণার উপত্যকায়
হতম্ভব এই হৃদয় সৃষ্টির প্রতিটি নজর কাড়ায়
আহ! ধ্বনি দিয়ে কেঁদে যায়।
১০
যখন প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস আর ধূলিমেঘ ছুটে এল
সেই দিন রাত্রিতে প্রদীপ শিখাও নিভেছিল
নির্জন গহীন এই প্রান্তরে বন্ধুর কবরের পাশে
একদল হরিণ শাবক আর নেকড়ে বাঘ ঘুমিয়েছিল।
১১
সমস্ত চোখের ভেতর দুটি চোখ আলিঙ্গন করল
তোমার দৃষ্টিময় চোখ যা চেয়ে থাকে আমার প্রতি
সূর্যের চেয়ে প্রখর তার আভা, আহ! সোনালী আভা
যখন হৃদয়ের আরশিতে ফুটে উঠল জ্যোতির্ময় ছবি।
১২
বার বার পৃথিবীতে সন্ধ্যা এলে
গভীর অন্ধকারে তোমাকে খূঁজে ফিরি
নির্জন গহীন অরণ্যের গভীরে খুঁজি
পাথরের অন্ধকারে আলোর উজ্জ্বল ঝলকানী।
১৩
ও পরানের চোখ একবার তাকাও
উজ্জ্বল সূর্যের আভা চোখ একবার তাকাও
নক্ষত্র মন্ডলের ভেতর রক্তাশ্রু চোখ
আমার দুটি চোখ তোমাকে দেখতে পেল না।
১৪
ফুল! যা ভাল মানুষকে প্রত্যাক্ষান করে
বেহেস্তে- পান করেছি কাওসারের পেয়ালা
পাথর! আমরা হলাম দোজখে পতিত পাথর
ফুল- এক অন্ধ মানুষের গল্প।
১৫
বন্ধুর সমাধীতে ছিটাইওনা সু-ঘ্রাণ ফুল আর আতর দিয়ে
বন্ধু জীবিত, কর্ম, আদর্শ আর ভক্তের হৃদয় ছুঁয়ে
সারা বিশ্ব প্রেমের আসর, শামিয়ানা নীল আসমান
এই মূহুর্তের শরাব রসে মাতালে পানশালার মেহমান।
১৬
যখন প্রবল রক্তাক্ত দুটো চোখ উপড়ে ফেলা হল
যখন বাম হাত আর ডান পা কর্তন করা হল
তারপর শূলে বিদ্ধ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হল
উৎসর্গকৃত জীবন ব্যথা আর মৃত্যুকে বুঝতে পারেনি।
১৭
বিন্দুর বর্ণনা শেষ হবে না
আলাপ ক্রমাগত দীর্ঘতর হচ্ছে
আলাপ ক্রমাগত সংকোচন হচ্ছে
বিরহের বর্ণনা শেষ হবে না।
১৮
রাত আর জ্যোৎস্না, গোলাপ আর বাগান
সব কিছুই প্রাণ, প্রাণ শুধু একলা।
একটি উজ্জল ছায়ায় আমরা আশ্রয় পেলাম
আমরা শুধু জানি ছায়া ও তার পবিত্র নাম।
----------------------------------------------------------------------
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:০৯