বানী ১:
আস্তিকমাত্রই অবিজ্ঞানমনস্ক একেকটা আস্ত ছাগল যে কিনা এই সাধারণ বিষয়টাই বোঝেনা যে ইশ্বর এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেননি। এটা সৃষ্টি হয়েছে সম্পূর্ণ অটোমেটিক্যাললি । একেবারে নিখাদ নির্ভেজাল কম্প্লিট সায়েন্স। কোন আজাইড়া মিরাকলের খাদ বা ভ্যাজাল এতে একেবারেই নাই।
বানী: ২
নাস্তিক মানেই অনুভূতিবোধহীন রামপাঁঠা যারা এই সুশৃঙ্খল মহাবিশ্ব যে কোন মহাশক্তির হাতের ছোঁয়া ছাড়া এত নিপূণভাবে সৃষ্টি ও পরিচালনা সম্ভব নয়- তাই অনুধাবন করতে পারেনা।
-----------------------
এটাই হলো আস্তিক নাস্তিকের সারবত্তা। আরেকটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর তা হলো বিজ্ঞান ও মহাস্রষ্টা পরস্পর সাংঘর্ষিক দু'টো বিষয় :-& । হয় স্রষ্টা মানো, নয় বিজ্ঞানকে আঁকড়ে ধরো । একসাথে দু'টো নিয়ে টানাহেঁচড়া করবে? উঁহু বাবা, সেটি হচ্ছেনা । তাই, অনেক আস্তিক ধর্মগ্রন্থে কিভাবে বিজ্ঞান আছে তা নিয়ে লেখে আর তা দেখে নাস্তিকেরা ঝা ঝা করে ওঠে, 'তাদের বিজ্ঞান' নিয়ে টানাহেঁচড়া করা নিয়ে।
অনেকেই বলে স্রষ্টাকে মেনে নেয়া মানে বিজ্ঞানের যুগে বসে বিজ্ঞানকে ও তার অবদানকে অস্বীকার করা।
এখন প্রশ্ন হলো আমি একজন আস্তিক। আবার আমি একজন সাহিত্য ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। তাহলে কি আমি ১ম ক্যাটাগরিতে পড়ি? যুক্তিতো তাই বলে। এখন উপায় কি? শেষে আমি আমার মতো আর কোন ছাগল স্রস্টায় বিশ্বাস করতেন কি না খুঁজতে গেলাম আন্তর্জাতিক ছাগল চরানো চারন ভুমিতে।
চারণভুমিতে গিয়ে দেখলাম, যে বিজ্ঞান ও স্রষ্টা নিয়ে এতো দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিজীবনে সেই স্রষ্টাকে আঁকড়ে ধরেই অসংখ্য 'ছাগল' বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় প্রভুত উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রেখেছেন ও রেখে চলেছেন। এতোগুলোর নাম এখানে বলা সম্ভবনা, লিঙ্কে যান । এই দ্বৈততার মাঝে সফলভাবে বাস করেও অনেকেই আবার 'নোবেল' নামক একপ্রকার মেডেল ও জিতেছেন বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ । উনাদের মাঠময় ঘাস খেয়ে বেড়াবার সময় সেইসব মেডেলে রবির কিরণছ্বটা লেগে আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেল। আরেকটা লিঙ্ক বিবিসিকে দেয়া ডঃ ফ্রান্সিস কলিন এর সাক্ষাতকার।
মাঠের অন্যদিকে এবার নজর দিলাম একটু। ওমা, এবার দেখি এখানে শুধু ময়লা টুপি ও ছুল্লুদাড়িবিশিষ্ট ব্যাক্তিই নয় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর সুদীর্ঘ সুপক্ক শ্রশ্রুরাজি দোলায়ে দোলায়ে পরমানন্দে ব্রাহ্ম ঘাস (বাঁশ না) ভক্ষন করছেন । উনাকে দেখে বুকে যে কি বল পেলাম বলবার অপেক্ষা রাখেনা। এরপর একে একে দেখি মাঠে কবি নজরুল, জীবনানন্দদাস, অতুলপ্রসাদ, ডিএল রায়, রজনীকান্ত এঁরাও মহানন্দে ঘাস খাচ্ছেন। আবার আরেকদিকে দেখি সেক্সপীয়ার, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ, শেলী, টমাস গ্রে, আলফ্রেড টেনিসন আরও অনেকে।
এত মহা মহা ছাগলদের মাঠে দেখে বেশ ভালই লাগলো । যাক বাবা। ঘাস লাতা পাতা সমৃদ্ধ চারণভুমিতে আমি শুধু একাই বিচরণ করিনা। অনেক জ্ঞানী (মহাজ্ঞানীও) পরমানন্দে এই মাঠে ঘাস লতাপাতা খেতে ও জাবর কাটতে আসেন। যদিও খোঁয়াড় ছেড়ে এই মাঠে কার্ল মার্ক্স, লেনিন, সালমান রুশদী বা আমাদের প্রিয় তসলিমা নাসরিন, হুমায়ন আজাদ স্যারেরা ঘাস খেতে আসেন না। তাতে কি? তাঁরা না থাকলেও এই মাঠটা যে খুব কম সমৃদ্ধ তা নয়।
কাজেই আমার বিশ্বাসের কারণে আমার মনে ঠিক সেরকম কোন সংকীর্ণতা নেই। ছাগলই না হয় হলাম, নাই বা হলাম রাম পাঁঠা।
----------------------------------------
(এটা কাউকে অফেন্ড করবার জন্য লেখা না। স্রেফ একটা রম্য রচনা হিসেবেই বিবচনা করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।) তারপরেও অতিসংবেদনশীল কেউ যদি আমার ক্ষেত্রেই বানী ১ অনুসরণ করেন, ধরে নেয়া হবে তিনি বানী ২ মেনে নিয়েই তা করছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৫:২৫