সন্ধ্যে বেলা। দোকানে বসে আছি ছোট ভাই সহ। কাজের ফাকে কথা চলছে বিস্তর। হঠাত ও জিগ্যেস করল বুলু ভাই কি দেশে আছ? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন ও বলল , তাইলে আপনি এখানে বসে আছেন কেন। কোথাও গিয়ে ঘুরে আসেন। প্রস্তাবটা ভালই লাগলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যাব কই? সেটার সমাধান বের হলো যেহেতু ফ্যামেলি ট্যুর না তাহলে নিঝুম দ্বীপ ঘুরে আশা যেতে পারে। নোয়াখালীর মানুষ হয়ে এখনো নিঝুম দ্বীপ দেখা হলো না তাই বেপারটা আমারও বেশ মনে ধরে।
সাথে সাথে বুলু রে ফোন দিলাম। দোস্ত তুই কই? কত দিন কোথাও যাওয়া হয় না। চল নিঝুম দ্বীপ যাই. এদিকে ওর হাতেও বেশি সময় নাই। যা হোক পিচকি বেলার দোস্তের কথা তো আর ফেলা যায় না। তা ও যদি হয় দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার মত কিছু হয়। পর দিন আমি বাড়ি চলে গেলাম। তার পর দিন দ্বীপের উদ্দেশে বের হলাম। নেট ঘেটে যা ইনফো পেলাম তার উপর ভরসা করে কাধে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লাম।
১৬/১২/১৫
প্রথমে মাইজদি/সোনাপুর আসলাম। সেখান থেকে সিএনজি তে করে গেলাম চেয়ারম্যান ঘাট। এখানে ৮ টায় সি ট্রাক ছাড়ে । কিন্তু আমরা আসছি ততক্ষণে ১০ টা বেজে গেছে । ভাটার সময় অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ও নাই। ওখানকার একজন পরামর্শ দিল পাশের চত্লার ঘটে যেতে । ওখানে স্পিড বোট পাওয়া যাবে। ব্যাস সিএনজি তে করে আবার ছুটলাম চত্লার ঘাট । বেশি দূর না। কাছেই ছিল। ঘাটে অনেক মানুষ বসে আছে ট্রলারের অপেক্ষায়।
ট্রলার আসবে আরো দেড় দু ঘন্টা পর। পুরা মাথা নষ্ট। স্পিড বোট ও নাই। এদিকে আমাদের হাতে সময় কম। মাত্র দুই দিন। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে যেতে যেতেই এক দিন শেষ হয়ে যাবে। মাথায় হাত। যাক ভাগ্য ভালো যে আধা ঘন্টার মধ্যে একটা স্পিড বোট আসে। ভাড়া বেশি হলেও সময় বাঁচানোর জন্য তাতেই চেপে বসি দুই বন্ধু। জিনিসটা আমার কাছে সেরাম মজা লাগে। হেব্বি স্পিডে জলের বুক চিরে ছুটে চলা। ওয়াও! আধা ঘন্টায় পৌছে গেলাম হাতিয়ার নলচিরা ঘটে। সেখান থেকে মোটরসাইকেল এ করে গেলাম জাহাজমারা। দেড় ঘন্টার জার্নি। সেখানে একটা দোকানে একটু চা-পানি খেলাম। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম মোক্তারিয়া ঘাটে। অবশ্য সরাসরি ঘাটে আসতে পারতাম। বুঝার ভুলের কারনে বাজারেই নেমে গেছিলাম। এবারের মোটরসাইকেল ওয়ালা কিছুদুর যাওয়ার পর বলল ভাই আপনারা কিছু বলেননা কেন? আমি বললাম কি বলব, চুপচাপ বসে ভাবতেসি কোথায় কোথায় যাব? তারপর সে তার নিজের কিছু গল্প শোনালো আমাদের (যার সবটাই অশ্লীল)। লোকটারে বাধা দেই নাই। ঘাটে ট্রলারের অপেক্ষায় আরো আধা ঘন্টা। অবশেষে একটা ট্রলারের দেখা পেলাম। আরো প্রায় আধা ঘন্টা পর নিঝুম দ্বীপ। আহা!
দ্বীপে নেমে মোটরসাইকেলে চেপে সোজা নামার বাজার। ও একটা কথা বলা হয় নি, এদিকে মোটরসাইকেল ই একমাত্র বাহন। তখন বিকেল চারটা। সামনে হোটেল দ্বীপ সম্পদ (সৈয়দ চাচার খাবার হোটেল )। কয়েক রকম মাছ দিয়ে খাবার খেলাম। চাচার সাথে পরামর্শ করে মসজিদ বোডিং এ উঠলাম। দুই বেডের একটা রুম নিলাম। ব্যাগ রেখে বের হলাম।
চৌধুরীর খাল যাব। হরিন দেখতে হবে। ট্রলার ভাড়া করলাম আমরা দুই জন, আর সাথে আরো তিন জন পেলাম। এখন পাচটা বাজে। যেতে লাগলো আধা ঘন্টা। নেমে সোজা বনের দিকে ঢুকে গেলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিতরে হাটলাম, হরিনের পায়ের চিহ্নে পুরো জায়গা ভর্তি. কিন্তু হরিনের দেখা পেলাম না। আলো কমে এলে অন্য তিনজন আর আমাদের মাঝি বন থেকে বের হয়ে যায়। আমরা ভিতরে আরো কিছুক্ষণ ঘুরি। কিসের হরিন! কই হরিন? হাহ!! ওরা সবাই আমাদেরকে দেখে গাঢাকা দিয়েছে। যা হোক সন্ধা নেমে আসছে। ফিরতে হবে। অবশ্য বের হতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলছি। বুঝতে পারছি না কোন দিকে যাব। পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম গুগল ম্যাপ দেখে বের হব। ওরেব্বাস! বিপদ তো ভালই দেখছি। ইন্টারনেট এর সিগনাল নাই। যা হোক কি বুঝে তবুও ম্যাপ ওপেন করলাম। জিপিএস সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে। আর কোনো ভাবে ওই জায়গাটার ম্যাপটা অফলাইনে ছিল। এই অফলাইনে থাকা ম্যাপ টাই কাজে দিলো। জিপিএস এর জন্য নিজের লোকেশন টা ম্যাপে দেখতে পাচ্ছিলাম। তাই দেখে দেখে বন থেকে বের হয়ে আসলাম। এসে দেখি মাঝি আমাদের দেরী দেখে খোজাখুজি শুরু করসে। আমরা বেশ ভাব নিয়া কইলাম কইসিনা আরেকটু থাইকা যান। আলো কমলে কি হইসে। সাথে লাইট আছে, জিপিএস আছে। কোনো ব্যাপার না। চোখ বুইঝা বাইর হই আসা যাইবো।(তবে আপনি যদি প্রমিজ করেন কথাটা কাউরে কইবেন না, তাইলে আপনার সাথে একটা গোপন কথা শেয়ার করতে পারি। আচ্ছা আসেন, আমার মুখের কাছে আপনার কানটা নিয়ে আসেন। (ফিসফিস) আমরা কিন্তু একটু একটু ভয় ঠিকই পাইসিলাম )
যা হোক হরিন না দেখতে পাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে বাজারে ফিরে আসলাম। চাচার হোটেলে খেলাম। বাজারে ঘুরাঘুরি করলাম। এক জায়গায় একটা লোক জিলেপি ভাজছিল। গপাগপ গরম গরম সাবড়ে দিলাম বেশ কটা। পরের দিন সকালে চোয়াখালি যেতে হবে হরিন দেখতে। তো আগে থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া করে নিলাম। যা হোক একটা বাইক ওয়ালা(আব্দুর রহিম/০১৮৭১৩২৪৯০৭) বলল সে হরিন দেখাবে। আর যদি সে হরিন দেখাতে না পারে তাহলে সে বাইকের ভাড়া নিবে না। তবে তাই হোক। বোডিং এ ফিরে এলাম।
১৭/১২/১৫
সকালে উঠে বাইক ওয়ালারে ফোন দিলাম। সে এসে আমাদেরকে নিয়ে গেল। তবে সে চোয়াখালি গেল না। তার অনেক আগেই বাইক টা একটা বাড়িতে রেখে আমাদেরকে নিয়ে খেত পেরিয়ে বনের ভিতর ঢুকে পড়ে। কিছুদুর যাওয়ার পর সে হাটার গতি কমিয়ে দেয়। আমরাও.. সাবধানে পা ফেলে শিকারী বিড়ালের মত। চুপি চুপি পিছু নিচ্ছিলাম লোকটার। ডানে বামে উকি ঝুকি দিচ্ছিল সে। হঠাত থেমে গেল, আর হাতটা সামনে ইশারা করা..। একটা গরুর বাছুরের সাইজের হরিন আমাদের আট দশ হাত সামনে দিয়ে লাফ দিয়ে বাম থেকে ডানে চলে গেল। এবার আমরা আরো সতর্ক হয়ে গেলাম। আরো বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর। লোকটা এবার একটু দুরে ইশারা করল. বেশ খানিকটা দুরে একটা হরিনকে চলে যেতে দেখলাম। আরো আরও কিছুটা সময় পর দেখলাম এক জোড়া হরিন, যেন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে। অবশ্য এদের কারোই ছবি তুলতে পারিনি।
এবার বাইকে করে চুয়াখালি। বনে প্রায় ঘন্টা খানেক ঘুরা ঘুরি করলাম। হরিণে দেখা নাই। বাইক ওয়ালা পরে বলসে যেদিকে লোকজন বেশি যায় সেদিকে হরিন থাকে না। মানুষজনের শব্দ পেলে হরিন বনে ঢুকে যায়।
এরপর বাজারে ফিরে চাচার হোটেলে ভাত খেলাম। কারণ ততক্ষণে নাস্তা শেষ হয়ে গেছে। খেয়ে দেয়ে আবার ট্রলার নিলাম। আজকেও তিন জনের অন্য একটা দল পেয়ে গেলাম যারা আমাদের সাথে যেতে আগ্রহী।
প্রথমে গেলাম কবিরাজের চর। তারপর কমলার দ্বীপ। বোটেই গেল অনেক সময়। কমলার দ্বীপ জায়গাটা সেই লেভেলের সুন্দর। বোটে করে ফিরে আসছি। ফিরার পথে অনেক মহিষ দেখেছি নদীর পাড়ে। বিকেল হয়ে গেছে। বাজারে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাজারের কাছেই সি-বিচ। নামার বাজার সি-বিচ। দুই বন্ধু হাটতে হাটতে চলে গেলাম। বিচের পাশে হাটলাম। বসে সূর্যাস্ত দেখলাম। বহুদিন এমন সময় পাইনি। কত বছর...
সন্ধ্যায় চাচার হোটেলে খেলাম। মহিষের দুধ খেলাম কাচা । আরো খেলাম খেজুরের কাচা রস।
পরদিন... ১৮/১২/১৫
সকালে ফিরার পালা। ওখান থেকে ট্রলার ছাড়ে সরাসরি নোয়াখালী। ভাবলাম ঝামেলা বাচবে। আর তাই করতে গিয়ে যে বাম্বু টা খেলাম সেটা এই দুই দিনে খাওয়া সব কিছু থেকেই বড় বেশি ছিল। আমরা ভাবসিলাম ঘন্টা তিনেক লাগবে। সেখানে লাগচে সাত ঘন্টার উপরে। তার পর গোদের উপর বিষফোড়ার মত মাঝপথে আসল বৃষ্টি। ঠান্ডা ও পড়ছিল বেশ। যদিও আমরা ভিজি নাই।
সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে। দারুন একটা ট্যুর।
ছবি দিতে পারছি না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম। আপলোড হয়, কিন্তু তারপর কই যে হারাই যায় কে জানে
সন্ধ্যে বেলা। দোকানে বসে আছি ছোট ভাই সহ। কাজের ফাকে কথা চলছে বিস্তর। হঠাত ও জিগ্যেস করল বুলু ভাই কি দেশে আছ? আমি বললাম হ্যাঁ। তখন ও বলল , তাইলে আপনি এখানে বসে আছেন কেন। কোথাও গিয়ে ঘুরে আসেন। প্রস্তাবটা ভালই লাগলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যাব কই? সেটার সমাধান বের হলো যেহেতু ফ্যামেলি ট্যুর না তাহলে নিঝুম দ্বীপ ঘুরে আশা যেতে পারে। নোয়াখালীর মানুষ হয়ে এখনো নিঝুম দ্বীপ দেখা হলো না তাই বেপারটা আমারও বেশ মনে ধরে।
সাথে সাথে বুলু রে ফোন দিলাম। দোস্ত তুই কই? কত দিন কোথাও যাওয়া হয় না। চল নিঝুম দ্বীপ যাই. এদিকে ওর হাতেও বেশি সময় নাই। যা হোক পিচকি বেলার দোস্তের কথা তো আর ফেলা যায় না। তা ও যদি হয় দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার মত কিছু হয়। পর দিন আমি বাড়ি চলে গেলাম। তার পর দিন দ্বীপের উদ্দেশে বের হলাম। নেট ঘেটে যা ইনফো পেলাম তার উপর ভরসা করে কাধে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লাম।
১৬/১২/১৫
প্রথমে মাইজদি/সোনাপুর আসলাম। সেখান থেকে সিএনজি তে করে গেলাম চেয়ারম্যান ঘাট। এখানে ৮ টায় সি ট্রাক ছাড়ে । কিন্তু আমরা আসছি ততক্ষণে ১০ টা বেজে গেছে । ভাটার সময় অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ও নাই। ওখানকার একজন পরামর্শ দিল পাশের চত্লার ঘটে যেতে । ওখানে স্পিড বোট পাওয়া যাবে। ব্যাস সিএনজি তে করে আবার ছুটলাম চত্লার ঘাট । বেশি দূর না। কাছেই ছিল। ঘাটে অনেক মানুষ বসে আছে ট্রলারের অপেক্ষায়।
ট্রলার আসবে আরো দেড় দু ঘন্টা পর। পুরা মাথা নষ্ট। স্পিড বোট ও নাই। এদিকে আমাদের হাতে সময় কম। মাত্র দুই দিন। কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে যেতে যেতেই এক দিন শেষ হয়ে যাবে। মাথায় হাত। যাক ভাগ্য ভালো যে আধা ঘন্টার মধ্যে একটা স্পিড বোট আসে। ভাড়া বেশি হলেও সময় বাঁচানোর জন্য তাতেই চেপে বসি দুই বন্ধু। জিনিসটা আমার কাছে সেরাম মজা লাগে। হেব্বি স্পিডে জলের বুক চিরে ছুটে চলা। ওয়াও! আধা ঘন্টায় পৌছে গেলাম হাতিয়ার নলচিরা ঘটে। সেখান থেকে মোটরসাইকেল এ করে গেলাম জাহাজমারা। দেড় ঘন্টার জার্নি। সেখানে একটা দোকানে একটু চা-পানি খেলাম। আবার মোটরসাইকেল নিয়ে গেলাম মোক্তারিয়া ঘাটে। অবশ্য সরাসরি ঘাটে আসতে পারতাম। বুঝার ভুলের কারনে বাজারেই নেমে গেছিলাম। এবারের মোটরসাইকেল ওয়ালা কিছুদুর যাওয়ার পর বলল ভাই আপনারা কিছু বলেননা কেন? আমি বললাম কি বলব, চুপচাপ বসে ভাবতেসি কোথায় কোথায় যাব? তারপর সে তার নিজের কিছু গল্প শোনালো আমাদের (যার সবটাই অশ্লীল)। লোকটারে বাধা দেই নাই। ঘাটে ট্রলারের অপেক্ষায় আরো আধা ঘন্টা। অবশেষে একটা ট্রলারের দেখা পেলাম। আরো প্রায় আধা ঘন্টা পর নিঝুম দ্বীপ। আহা!
দ্বীপে নেমে মোটরসাইকেলে চেপে সোজা নামার বাজার। ও একটা কথা বলা হয় নি, এদিকে মোটরসাইকেল ই একমাত্র বাহন। তখন বিকেল চারটা। সামনে হোটেল দ্বীপ সম্পদ (সৈয়দ চাচার খাবার হোটেল )। কয়েক রকম মাছ দিয়ে খাবার খেলাম। চাচার সাথে পরামর্শ করে মসজিদ বোডিং এ উঠলাম। দুই বেডের একটা রুম নিলাম। ব্যাগ রেখে বের হলাম।
চৌধুরীর খাল যাব। হরিন দেখতে হবে। ট্রলার ভাড়া করলাম আমরা দুই জন, আর সাথে আরো তিন জন পেলাম। এখন পাচটা বাজে। যেতে লাগলো আধা ঘন্টা। নেমে সোজা বনের দিকে ঢুকে গেলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিতরে হাটলাম, হরিনের পায়ের চিহ্নে পুরো জায়গা ভর্তি. কিন্তু হরিনের দেখা পেলাম না। আলো কমে এলে অন্য তিনজন আর আমাদের মাঝি বন থেকে বের হয়ে যায়। আমরা ভিতরে আরো কিছুক্ষণ ঘুরি। কিসের হরিন! কই হরিন? হাহ!! ওরা সবাই আমাদেরকে দেখে গাঢাকা দিয়েছে। যা হোক সন্ধা নেমে আসছে। ফিরতে হবে। অবশ্য বের হতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলছি। বুঝতে পারছি না কোন দিকে যাব। পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম গুগল ম্যাপ দেখে বের হব। ওরেব্বাস! বিপদ তো ভালই দেখছি। ইন্টারনেট এর সিগনাল নাই। যা হোক কি বুঝে তবুও ম্যাপ ওপেন করলাম। জিপিএস সিগনাল পাওয়া যাচ্ছে। আর কোনো ভাবে ওই জায়গাটার ম্যাপটা অফলাইনে ছিল। এই অফলাইনে থাকা ম্যাপ টাই কাজে দিলো। জিপিএস এর জন্য নিজের লোকেশন টা ম্যাপে দেখতে পাচ্ছিলাম। তাই দেখে দেখে বন থেকে বের হয়ে আসলাম। এসে দেখি মাঝি আমাদের দেরী দেখে খোজাখুজি শুরু করসে। আমরা বেশ ভাব নিয়া কইলাম কইসিনা আরেকটু থাইকা যান। আলো কমলে কি হইসে। সাথে লাইট আছে, জিপিএস আছে। কোনো ব্যাপার না। চোখ বুইঝা বাইর হই আসা যাইবো।(তবে আপনি যদি প্রমিজ করেন কথাটা কাউরে কইবেন না, তাইলে আপনার সাথে একটা গোপন কথা শেয়ার করতে পারি। আচ্ছা আসেন, আমার মুখের কাছে আপনার কানটা নিয়ে আসেন। (ফিসফিস) আমরা কিন্তু একটু একটু ভয় ঠিকই পাইসিলাম )
যা হোক হরিন না দেখতে পাওয়ার কষ্ট বুকে নিয়ে বাজারে ফিরে আসলাম। চাচার হোটেলে খেলাম। বাজারে ঘুরাঘুরি করলাম। এক জায়গায় একটা লোক জিলেপি ভাজছিল। গপাগপ গরম গরম সাবড়ে দিলাম বেশ কটা। পরের দিন সকালে চোয়াখালি যেতে হবে হরিন দেখতে। তো আগে থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া করে নিলাম। যা হোক একটা বাইক ওয়ালা(আব্দুর রহিম/০১৮৭১৩২৪৯০৭) বলল সে হরিন দেখাবে। আর যদি সে হরিন দেখাতে না পারে তাহলে সে বাইকের ভাড়া নিবে না। তবে তাই হোক। বোডিং এ ফিরে এলাম।
১৭/১২/১৫
সকালে উঠে বাইক ওয়ালারে ফোন দিলাম। সে এসে আমাদেরকে নিয়ে গেল। তবে সে চোয়াখালি গেল না। তার অনেক আগেই বাইক টা একটা বাড়িতে রেখে আমাদেরকে নিয়ে খেত পেরিয়ে বনের ভিতর ঢুকে পড়ে। কিছুদুর যাওয়ার পর সে হাটার গতি কমিয়ে দেয়। আমরাও.. সাবধানে পা ফেলে শিকারী বিড়ালের মত। চুপি চুপি পিছু নিচ্ছিলাম লোকটার। ডানে বামে উকি ঝুকি দিচ্ছিল সে। হঠাত থেমে গেল, আর হাতটা সামনে ইশারা করা..। একটা গরুর বাছুরের সাইজের হরিন আমাদের আট দশ হাত সামনে দিয়ে লাফ দিয়ে বাম থেকে ডানে চলে গেল। এবার আমরা আরো সতর্ক হয়ে গেলাম। আরো বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ার পর। লোকটা এবার একটু দুরে ইশারা করল. বেশ খানিকটা দুরে একটা হরিনকে চলে যেতে দেখলাম। আরো আরও কিছুটা সময় পর দেখলাম এক জোড়া হরিন, যেন মর্নিং ওয়াকে বেরিয়েছে। অবশ্য এদের কারোই ছবি তুলতে পারিনি।
এবার বাইকে করে চুয়াখালি। বনে প্রায় ঘন্টা খানেক ঘুরা ঘুরি করলাম। হরিণে দেখা নাই। বাইক ওয়ালা পরে বলসে যেদিকে লোকজন বেশি যায় সেদিকে হরিন থাকে না। মানুষজনের শব্দ পেলে হরিন বনে ঢুকে যায়।
এরপর বাজারে ফিরে চাচার হোটেলে ভাত খেলাম। কারণ ততক্ষণে নাস্তা শেষ হয়ে গেছে। খেয়ে দেয়ে আবার ট্রলার নিলাম। আজকেও তিন জনের অন্য একটা দল পেয়ে গেলাম যারা আমাদের সাথে যেতে আগ্রহী।
প্রথমে গেলাম কবিরাজের চর। তারপর কমলার দ্বীপ। বোটেই গেল অনেক সময়। কমলার দ্বীপ জায়গাটা সেই লেভেলের সুন্দর। বোটে করে ফিরে আসছি। ফিরার পথে অনেক মহিষ দেখেছি নদীর পাড়ে। বিকেল হয়ে গেছে। বাজারে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাজারের কাছেই সি-বিচ। নামার বাজার সি-বিচ। দুই বন্ধু হাটতে হাটতে চলে গেলাম। বিচের পাশে হাটলাম। বসে সূর্যাস্ত দেখলাম। বহুদিন এমন সময় পাইনি। কত বছর...
সন্ধ্যায় চাচার হোটেলে খেলাম। মহিষের দুধ খেলাম কাচা । আরো খেলাম খেজুরের কাচা রস।
পরদিন... ১৮/১২/১৫
সকালে ফিরার পালা। ওখান থেকে ট্রলার ছাড়ে সরাসরি নোয়াখালী। ভাবলাম ঝামেলা বাচবে। আর তাই করতে গিয়ে যে বাম্বু টা খেলাম সেটা এই দুই দিনে খাওয়া সব কিছু থেকেই বড় বেশি ছিল। আমরা ভাবসিলাম ঘন্টা তিনেক লাগবে। সেখানে লাগচে সাত ঘন্টার উপরে। তার পর গোদের উপর বিষফোড়ার মত মাঝপথে আসল বৃষ্টি। ঠান্ডা ও পড়ছিল বেশ। যদিও আমরা ভিজি নাই।
সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগছে। দারুন একটা ট্যুর।
ছবি দিতে পারছি না। অনেকক্ষণ চেষ্টা করলাম। আপলোড হয়, কিন্তু তারপর কই যে হারাই যায় কে জানে
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৬