যখন আমি ছোট ছিলাম।যখন আমার ডানাগুলো উড়ার মত যথেষ্ট শক্ত হয়নি।তখন থেকেই আমি কিন্চিৎ টেকি ছিলাম।যন্ত্রপাতি ছিল আমার সংগী সাথী।সুযোগ মত পেলেই ঘড়ি টেপ রেডিও চার্জার +... এগুলোর বডি ঠিক রেখে নাড়িভুড়ি খুলে নেয়াটা আমার রীতিমত অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
তো এক্কেবারে পিত্তিবেলা যখন একটু একটু বুঝতে শিখেছি,তখন একদিন মনে হল টেপ রেকর্ডারটার ভিতরে এতগুলো মানুষ থাকে ক্যামনে।খায়-ইবা কি? ডানে বামে পিছন দিক দিয়ে কোনোভাবেই যখন তাদের দেখতে পেলাম না।তখন সামনে বসে মনে হল আরে এই ফুটাগুলা(স্পিকার) দিয়াই তো কথা শুনা যায়।তাইলে মনে হয় ব্যাটারা এইখানেই বসে থাকে।আর আমি কিনা তাদের দেখতে পাইনা।দাড়া ব্যাটা আমারেতো চিনিশনা দেখাচ্ছি মজা।খুজে খুজে আমার পেন্সিলটা নিয়া আসলাম।(যেটা দিয়া তখন অ... আ ... লিখার চেষ্টা চালাতাম।) ইয়াআআআ...ঘ্যাচাং! দিসি ব্যাটার প্যাট ফুটা কইরা! কিন্তু কোথায় কোন ব্যাটা, নষ্ট হইল একটা স্পিকার।ঐ স্পিকারটা পুরোপুরি নষ্ট হয়নি শুধু এর পর থেকে সামান্য একটু ঘর ঘর করত।তবু চলত ওটা।ওটা ন্যাশনাল কোম্পানির ইয়া বড় টেপ রেকর্ডার।
তারপর...
এলার্ম ঘড়ি।সকাল বেলা উঠার জন্য গুরুত্বপুর্ন একটা জিনিশ।একবার কি জানি গোলমাল দেখা দিয়েছিল ঘড়িটার প্যাটে।ওটা রাখা হয়েছিল মেকানিক দেখানোর জন্য।কিন্তু কিসের মেকানিক,আমি হাতের কাছে পেয়েই ঝটপট খুলে ফেল্লাম।আহা! আহা!! কত্ত সুন্দর মেশিন।ওরে রে... সার্কিট পিনিয়াম কাঁটা যেটা যেমনে পারলাম খুলে ফেললাম।আর নিজের কাজে নিজেই খুশিতে বাকবাকুম করতে থাকলাম।একটু পর আম্মু এসে দেখে তার আদরের ধন ঘড়িটাতে অপারেশন চালিয়ে দিয়েছে।কি আর করা আমাকে বল্ল ওটা লাগিয়ে ফেলতে কারন মেকানিক দেখাতে হবে।আমিও উচ্চবাচ্য নাকরে আম্মুর আদেশ পালন করলাম।আমি খুব ভালু ছেলে কিনা
তারপর ঘড়িটা মেকানিকের কাছে গেলেও সুস্থ হতে পারেনি।কারন আমি নাকি ওটার বারোটা বাজাই দিসিলাম
আরো কিছুদিন পরে...
আম্মুর একটা ঘড়ি ছিল সিলভার কালারের।সেটা আবার নষ্ট হইচিল বেশ ক'বার।প্রতিবারই ঠিক করে আম্মু হাতে দিত।কোন এক অজানা কারনে ঘড়িটার প্রতি তাঁর একটা আলাদা টান ছিল।এমনকি সেটা যখন চিরদিনের জন্য ছুটি নিল তার কর্তব্য থেকে,তখনও তিনি সেটা ফেলে দেননি।এমনকি রাখতেনও আমার নাগালের বাহিরে শোকেসে লক করে।আমি একবার ঘড়িটা তাঁর কাছে চাইছিলাম একটু দেখব বলে।ঘড়িটাতো নষ্টই,আর শুধু শধুই পড়ে আছে।কিন্তু আমাকে তো দিলইনা।উল্টো আমাকে সাবধান করে দিল ওটা যেন কখনো না ধরি।...
আমিও ভাল ছেলের মত চুপচাপ মেনে নিলাম।আর তক্কে তক্কে থাকলাম সুযোগের অপেক্ষায়
একদিন দুপুর বেলা... আম্মু ঘরে নাই... শোকেস আনলকড! ওয়াও!! আমারে আর পায় কে। চট করে ঘড়িটা নিয়েই অপারেশন।ভিতর থেকে মেশিনটা বাহির করে ঘড়িটা আবার আগের যায়গায় রেখে আমি ভাল মানুষ
ক'দিন পরে আম্মুর খেয়াল হল ঘড়িটার কাঁটা(ঘন্টা/মিনিট) দেখা যাচ্ছে না।দেখেই তো বুঝছে এটা কার কাজ।আমাকে ডেকে নিয়ে হালকার উপর বকে দিল।কিন্তু ঘড়িটার জন্য যতটুকু মন খারাপ হয়েছে,নিশ্চয় তার তুলনায় আমাকে বকাটা খুব সামান্যই দিয়েছেন।
তারও পরে...
ছোট মামার রেডিওটা নষ্ট হলে রিপেয়ার হওয়ার অপেক্ষায় ছিল।মামাটা যেন কই ঘুরতে গেসিল।সুযোগতো এখনই আমার।আস্তে আস্তে গিয়ে রেডিওটা খুললাম।স্পিকারটা বাহির করলাম।সুন্দর করে ডায়াফ্রামটা খুলে নিলাম।কিন্তু ওটাতো আর লাগাতে পারিনা।কি আর করা।জিনিশটা ছাড়াই রেডিওটা আবার আগের মত রেখে আসলাম। কালো কাগজটা(ডায়াফ্রাম) কোথায় যেন পরে লুকিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।পরে শুনেছি রেডিওটা ঠিক করা যায়নি।কারন ঐটার কিযেন একটা জিনিশ পুরোপুরি নষ্ট হই গেসিল।যেটা মেকানিকের দোকানে ঐ মাপের নাই।আর রেডিওটা ঠিক করে মামা ভেবেছিলেন আমাকে দিয়ে দিবেন।আমি সেদিন অনেক আফসুস খাইসিলাম।কারন আমিতো জানি ঐ জিনিশটা ঠিক না হওয়ার পিছনে আমার হাত কতটুকু।
তবু আমিতো আমার গবেষনা থামিয়ে রাখতে পারিনা।শত হইলেও আমি একজন বিজ্ঞানি
আরেকটু বড় হয়ে...
টর্চলাইটের ব্যাটারি চার্জ দেয়ার জন্য যে চার্জারটা, সেটার মধ্যে একটা মিটার ছিল ব্যাটারির চার্জ কট্টুক হইচে দেখার জন্য।তখন বুঝতে শিখছি ঐ কাঁটাওলা জিনিশটার নাম গ্যালভানো মিটার।কিন্তু শুধুই একটা গ্যালভানো দিয়ে যে ব্যাটারির চার্জ টেষ্ট করা যায় না সেটা বুঝলাম জিনিশটা খুলে নিয়ে একটা ব্যাটারিতে লাগানোর পর।পঁচা ব্যাটারি, কিন্তু ওটা রিডিং দিচ্ছে ফুল চার্জ! আরেকটু গবেষনার পর বুঝলাম এটা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য এটার সাথে আরো কিছু কম্পোন্যান্ট লাগে।কিন্তু ঐ কাজ তো তখনও করতে পারি না।মনের দুঃখে স্ক্রু-ড্রাইভার নাড়াচাড়া করতে করতে মিটারের স্প্রিংটা গেল ছিঁড়ে।ব্যাস অকেজো।কি আর করা,ওটার মাঝের চুম্বকটাই খুলে নিলাম।ভাবলাম অনেক হইচে এইবার চার্জারটা আবার আগের মত আটকিয়ে রেখে দিই।
সবগুলো স্ক্রু লাগিয়ে সন্তুষ্টচিত্তে যেই না তাকালাম, দেখি মিটারের যায়গাটা মিটারের অভাবে কেমন হা করে তাকিয়ে আছে।হায় হায় এখন কি হবে! যে দেখবে সেই বুঝবে এটা কার কাজ।মুহুর্তেই বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়।নিজের পাপ ঢাকতে পুরো চার্জারটা খুলে ফেললাম আবার।খুলে ফেললাম সবগুলো পার্টস।বড় সার্কিট টাকে টুকরো টুকরো করলাম।টুকরো করলাম বডিটাকেও।তারপার সবগুলোকে কয়েকভাগে ভাগ করলাম। বাড়ির তিনপাশে ফেললাম তিনভাগ।কিছু মাটিতে পুঁতে ফেললাম।আর ওটার পাঁচটা সুইচ, বাটন-সেল চার্জ দেয়ার ট্রে যেগুলো ছোট হলেও দেখলেই একনজরে বুঝা যায় এটা কিসের জিনিশ- সেগুলো পুড়িয়ে ফেললাম।চুম্বকটা অনেকদিন ছিল আমার কাছে।
চার্জারের ব্যাপারে কেউ আমাকে কিছু বলেনি
যা হোক আমার এসব কাহিনি আরো টানলে আলিফ লায়লার মত খালি ডালপালা গজাইতই থাকবো। এখনকার মত ফুটি...
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১০ সকাল ৭:৫০