somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতি তুমি বদনা..........

০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট থেকেই "বদনা" জিনিষটা আমাকে খুব আকর্ষন করতো।ছোটবেলার অনেকগুলি খেলার মধ্যে খুব প্রিয় একটা খেলা ছিলো,বদনায় পানি ভরে গাছের গোড়ায় পানি ঢালা।একটা বদনায় বারবার পানি ভরা ঝামেলা মনে হওয়ার মাঝে মাঝেই বাসার সবগুলি বদনায় একসাথে পানি ভরে গাছের গোড়ায় ঢালতাম।বদনা দিয়ে গাছে পানি ঢালার মধ্যে যে নির্মল আনন্দ পেতাম তা বোধকরি একমাত্র, কোন বাসার দেওয়ালে লাল রঙে বড় বড় অক্ষরে লেখা,"এখানে পশ্রাব করা নিষেধ"লাইনটির মধ্যে প্যান্টের জিপার খুলে ছ্যাড় ছ্যাড় শব্দে স্বগৌরবে তলদেশের চাপ হালকা করার আনন্দের সাথেই তুলনা করা যায়।আমার বদনা প্রীতির কারনে বাসার মানুষজনকে প্রায়ই হ্যাপা পোহাতে হতো; বিশেষ করে সকালবেলায়।

বদনা নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতিতে বিরক্ত হয়ে একদিন মা সবার সামনেই বদনা নিয়ে হালকা দুইটা গাট্টা মেরে মাথায় মাঝারী সাইজের একটা আলু গজিয়ে দিয়েছিলো।সে অপমানের প্রতিশোধ নিতে পরদিন খুব ভোরে বাসার সবগুলি বদনা চুরি করে রাস্তার পাশে ড্রেনে ফেলে দিয়ে আসলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে বাবা,মামারা প্রাত্যকৃত্য সারার জন্য কমোডে বসার পর খেয়াল করলো বদনা নামক শৌচবাটি টা টয়লেটে অনুপস্থিত।ছোটমামার অবস্থা ছিলো সবচেয়ে শোচনীয়।বদনা আছে কি না তা ভালোমতো খেয়াল না করেই অর্ধেক কর্ম সেরে ফেলেছিলো।পানি নেবার সময় বদনার দিকে হাত বাড়িয়ে যখন বদনার জায়গায় এক খাবলা বাতাস হাতের মুঠিতে আবদ্ধ করলো তখন অনুভব করলো জায়গায় বসে চীৎকার দেওয়া ছাড়া তার আর কিছুই করার নাই।ছোটমামার চীৎকার শুনে বাসায় অনিরাপদ বোধ করায় মানে মানে বাসার গেট দিয়ে বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিলাম।গেটের সামনে গিয়ে পিছনে একবার চোখ ফেরাতেই দেখি বাবা উদভ্রান্তের মতো উদ্বাহু নৃত্য করতে করতে ছুটে আসছে আমার দিকে।বাবাকে দেখে তখন খালাতো বোনের কাছে শোনা শীর্ষেন্দুর গল্পের একটা ক্যারেক্টার,'জগাই পাগলার' কথাই বারবার মনে পড়ছিলো।নিশিচন্দপুর গ্রামের উসকোখুশকো চুলের,বোশেখ মাসের কাঠফাঁটা রোদ্দুরেও তালিমারা বিদঘুটে রঙের কোট পরা, বড় বড় লাল চোখে তাকিয়ে থাকা জটাধারী জগাই পাগলার সাথে বাবার কোন অমিল খুজে পাইনি সেদিন।

অত্যাধিক বদনা প্রীতি দেখেই অথবা বদনার ঝামেলা থেকে রক্ষা পেতেই কি না কে জানে, একদিন বাবা দোকান থেকে লাল রঙের ছোট একটা খেলনা বদনা কিনে এনেছিলো আমার জন্য।বদনার শরীরে ছোটছোট অক্ষরে লেখা ছিলো,"রবিউল।ফুলবাড়িয়া ঢাকা।"তখন ভেবেছিলাম রবিউল ফুলবাড়িয়া নামের কেউ হয়তো আমার জন্য এই বদনাটা বানিয়ে দিয়েছিলো।এজন্য প্রায়সই তাকে ধন্যবাদ জানাতাম মনে মনে।নতুন বদনা পাওয়ার পর আমার আনন্দ দেখে কে!। সকাল-বিকাল পুরো দিনরাত জুড়ে বদনাই আমার ধ্যানজ্ঞ্যান হয়ে উঠলো।সকালে ঘুম থেকে উঠেই বদনায় পানি ভর্তি করে দৌড়াদৌড়ি,দুপুরে খাওয়ার সময় লাল রঙের ছোট বদনাটাকে পাশে বসিয়ে ভাত খাওয়া,রাতে ঘুমাবার সময় বদনাকে পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরা।ধীরে ধীরে আমার পুরো জগৎটাই বদনাময় হতেশুরু করলো....................


আজকে স্টোররুমে পুরানো জিনিষপত্র ঘাটতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো ছোটবেলার সেই বদনাটা।সারাগায়ে ধুলোময়লা আর মাকড়শার জাল মেখে ঘরের এককোনে নিতান্ত অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে।বদনা নিয়ে বাথরুমে ভালো মতো ধুয়ে নিজের ঘরে এসে খেয়াল করলাম এতদিনের অবহেলার দরুন অভিমানে শরীরের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলেছে অনেকখানি।কিন্তু শরীরে খোদাই করা "রবিউল ফুলবাড়িয়া ঢাকা" নামটা এখনও আগের মতোই স্বমহিমায় জ্বলজ্বল করছে................

বদনাটা হাতে নেওয়ার পর থেকে বারবার মনে হচ্ছে,স্মৃতি তুমি রবিউল কোম্পানীর বদনা..............
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ৩:০৪
৮৬টি মন্তব্য ৮৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×