somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বান্দরবেলা.............৭

৩০ শে মে, ২০০৯ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় চাঁদ খাওয়ার খুব শখ ছিলো।রাতে চাঁদ উঠলেই খাওয়ার জন্য এমন চিল্লাচিল্লি করতাম যে আশেপাশের মানুষজন ঘরে ডাকাত পরছে মনে কইরা লাঠিসোঠা নিয়া দৌড়ায় চইলা আসতো।আমার যন্ত্রনায় একবার আমার খালাতো ভাই তার বাবার চকচকা টাক দেখায় বললো,"ঐ যে চাঁদ,দৌড় দিয়ে গিয়ে খেয়ে আসো।নাহলে অন্যকেউ খেয়ে ফেলবে"।অন্যকেউ আগেই খেয়ে ফেলার ভয়ে আমি এক দৌড়ে খালুর কোলে উঠে চকচকা টাকের মধ্যে আমার সামনের দুই দাত দিয়া দিলাম এক রামকামড়।খালু তখন বারান্দার চেয়ারে বইসা ঝিমাইতেছিলো,আমার অতর্কিত হামলায় দিশেহারা হইয়া "আক্রমন আক্রমন" চিল্লাইতে চিল্লাইতে একলাফে উঠানে আইসা এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি শুরু কইরা দিলো।খালুর এহেন উদ্বাহু নৃত্য আর নাক দিয়া ঘোঁত ঘোঁতের মতো বিচিত্র সংগীতে খালুর গলা থেইকা আমার হাত গেলো ছুইটা।তারপরও দুই দাত খালুর টাকে বাজায়া ঝুইলা থাকলাম।খালু একবার ডানদিকে ছুটলে আমি বাতাসে ভাসতে ভাসতে ডানদিকে যাই আবার বা-দিকে ছুটলে আমিও ভাসতে ভাসতে বা-দিকে যাই।একটু পর মা আইসা টাইনা হেচড়ায়া খালুর টাক থেইকা দাত ছুটায়া আমাকে ঘরে নিয়া গেছিলো।

ছোটবেলায় জামাই সাজার শখ ছিলো দেইখা বাবা একবার মার্কেট থেইকা পাগড়ি,শেরোয়ানী,আর নাগড়া আইনা দিছিলো।বিকাল হইলেই পাগড়ী,শেরোয়ানী লাগায়া মুখে রুমাল দিয়া ছোট মামার সাথে পাড়ায় ঘুরতে বের হইতাম।একবার বিকালে ছোটমামা তার নতুন বিয়া করা বন্ধুর বাসায় বেড়াইতে নিয়া গেলো আমাকে।বন্ধু আমাকে দেইখা হাসি দিয়া বললো,"ছোট জামাই তোমার বউ কই?",মামার বন্ধুর পাশে তার বউ দাড়ায় ছিলো।আমি নুরানী মার্কা হাসি দিয়া মামার বন্ধুর বউকে দেখায় বললাম,"এইটা আমার বউ"।এই কথা শুইনা মামার বন্ধুর পুর্ণিমার মতো ঝলঝলা হাসি মুখ শুকায়া অমাবশ্যার রাতের মতো অন্ধকার হইয়া গেলো।সে কোনরকম মুখ ভেংচায়া বললো,"এইটা তো আমার বউ"।আমি একদৌড়ে বন্ধুর বউয়ের কোলে উইঠা গলা জড়ায়া দেশ দখলের মতো বউ দখল কইরা বললাম, "এইটা আমার বউ"।বউ আমার কথা শুইনা হি হি কইরা হাসতে হাসতে বললো,"আচ্ছা! এখন থেইকা তুমি আমার ছোট জামাই"।নতুন বউয়ের মুখে এই কথা শুইনা মামার বন্ধুর প্রায় হার্টফেল করার দশা।যতক্ষন ঐ বাসায় ছিলাম মামার বন্ধুর বউয়ের কোল থেইকা নামি নাই।আসার সময় মামা তো আর আমাকে কোলের থেইকা নামাইতে পারে না।কোল থেইকা নামানোর জন্য মামা আমার দুই পা ধইরা যত টানাহেচড়া করে আমি তত জোড়ে বউয়ের গলা জড়ায় ধরি।এমন টানাটানিতে বন্ধুর বউয়ের দম আটকায় যাওয়ার দশা।কোল থেইকা না নামাইতে পাইরা অবশেষে মামা বললো,"আজকে চলো আরেক দিন এখানে নিয়ে আসবো",আমি বললাম,"বউরে ছাড়া বাসায় যাবো না"।আমার মুখে একথা শুইনা মামার বন্ধুর মুখ শুকায়া আমসির মতো হইয়া গেলো।শেষপর্যন্ত নতুন বউয়ের কোলে উইঠা বাসায় ফিরছিলাম।

গরমের সময় একবার বাবা সেলুন থেইকা আমাকে মাথা টাক করায়া নিয়া আসলো।এই টাক মাথা নিয়া লোকজনের সামনে যাইতে খুব লজ্জ্বা পাইতাম।এদিকে ছোটমামা আমার টাকটাকে তবলা মনে কইরা প্রায়ই দুই আঙ্গুল দিয়া টাকডুম টাকডুম বাজাইতো আর নাকি স্বরে হুঁ হুঁ কইরা গান গাইতো।ছোটমামার তবলা বাজানির যন্ত্রনা থেইকা বাঁচার জন্য আমি ব্যস্ত হয়া পড়লাম।তখনকার সময়ে মা খালারা খোপা বড় দেখানোর জন্য বড় বড় পরচুলা লাগাইতো।একদিন দুপুরে মা ঘুমায় পড়লে আলমারী খুইলা মার সবগুলি পরচুলা বের কইরা সোজা স্টোররুমে গিয়ে আঠা দিয়া মাথার সামনে,পিছনে,উপরে সবজায়গায় পরচুলা লাগায় নিলাম।একেকটা পরচুলার সাইজ ছিলো ২ হাতের মতো এদিকে আমি ছিলাম দেড়ফুটিয়া একটা বাচ্চা।চুল লাগানোর পর আমার হাটু বাদে শরীরের উপরের সব অংশই চুলে চুলে ঢাইকা গেছিলো।যাই হোক,একটু পর চুপচাপ ছোটখালার রুমে গিয়ে খাটের উপর বইসা রইলাম।বিকালে ছোটখালা ঘুম ভাইঙ্গা দেখে তার বিছানায় বড় বড় চুলওয়ালা একটা জন্তু বইসা রইছে,যার চোখমুখ কিছুই নাই।এইটা দেইখা খালা চিকন স্বরে কাঁউ কাঁউ হুড়মুড় কইরা খাট থেইকা পইড়া দাত কপাটি লাগায় ফেললো।ঘটনা বেগতিক দেইখা আমি এক দৌড়ে আবার স্টোর রুমে গিয়ে লুকায় রইলাম।পরে ছোটমামা আইসা আমাকে বাইর করছিলো।ঐ ঘটনার পর সেলুন থেইকা নাপিত আইনা আবার ক্ষুর দিয়ে চুল ফালাইতে হইছিলো কারন হাজার টানাটানি কইরাও ঐ পরচুলা আমার মাথা থেইকা নামাইতে পারে নাই কেউ।বরন্চ মাথা থেইকা পরচুলা খোলার জন্য মা আর খালার যুগপৎ টানাটানি তে আমার শরীর দুই টুকরা হয়া যাইতে নিছিলো।


ছোটমামা একবার একটা পোষ্টার নিয়া আসছিলো।ঐ পোষ্টারে ছোট্ট একটা মেয়ে একটা সাদা ছাগল নিয়া দাড়ায় ছিলো।ছাগলের দুই শিং এ দুইটা ফুল ঝুলতে ছিলো।ঐটা দেইখা আমারও শখ হইলো আমিও নানার ছাগলটা নিয়া একটা ছবি তুলবো।একদিন বাসার বাগান থেইকা দুইটা সুর্যমুখী ফুল নিয়া নানার কালো ছাগলটার শিং এ বাধতে গেলাম।আমারে ফুল নিয়া আসতে দেইখা ছাগলটা এমন দৌড় দিলো যেন কেউ ওর ল্যাজে আগুন লাগায় দিছে।দুই-তিন ঘুইরাও ছাগলটা কে কায়দা করতে না পাইরা আমার মেজাজ গেলো খারাপ হয়া।একদিন রাতে কালো ছাগলটা তার ঘরে বইসা বইসা জাবর কাটতেছিলো এই ফাকে আমি নানীর কালো বোরখা পইড়ে চুপেচুপে ফুল আর আঠা নিয়া ছাগলের পিছনে আইসা দাড়াইলাম।সুর্যমুখী ফুলের ডগা একটা মোটা কাঠির সাথে বেধে ঐ কাঠিতে আঠা লাগায় সোজা ছাগলের পশ্চাৎদেশে ঢুকায় দিছিলাম।ঐ ঘটনা দেইখা সবাই চিন্তা করতে লাগলো কেমন কইরা ঐ কাঠি বাইর করা যায়।ছোট মামা বললো টানটানি করার দরকার নাই।ছাগলটা লাদি ছাড়ার সময় কোৎ দিলে এমনিতেই কাঠি বাইর হয়া যাবে।কিন্তু ছাগলটা কোন অজানা কারনে দুই দিন লাদি ছাড়ে নাই।ঐ দুই দিন ছাগলা উঠানের যেদিকে যাইতো সুর্যমুখী ফুলটাও তার সাথে সাথে মাথা উঁচু কইরা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হেইলা দুইলা ঘুইরা বেড়াইতো।


চলবে........................

আমার বান্দরবেলা......১
আমার বান্দরবেলা.......২
আমার বান্দরবেলা........৩
আমার বান্দরবেলা........৪
আমার বান্দরবেলা........৫
আমার বান্দরবেলা........৬


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:০৪
৯৬টি মন্তব্য ৯৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×