ছোটবেলায় জামাই সাজার শখ ছিলো দেইখা বাবা একবার মার্কেট থেইকা পাগড়ি,শেরোয়ানী,আর নাগড়া আইনা দিছিলো।বিকাল হইলেই পাগড়ী,শেরোয়ানী লাগায়া মুখে রুমাল দিয়া ছোট মামার সাথে পাড়ায় ঘুরতে বের হইতাম।একবার বিকালে ছোটমামা তার নতুন বিয়া করা বন্ধুর বাসায় বেড়াইতে নিয়া গেলো আমাকে।বন্ধু আমাকে দেইখা হাসি দিয়া বললো,"ছোট জামাই তোমার বউ কই?",মামার বন্ধুর পাশে তার বউ দাড়ায় ছিলো।আমি নুরানী মার্কা হাসি দিয়া মামার বন্ধুর বউকে দেখায় বললাম,"এইটা আমার বউ"।এই কথা শুইনা মামার বন্ধুর পুর্ণিমার মতো ঝলঝলা হাসি মুখ শুকায়া অমাবশ্যার রাতের মতো অন্ধকার হইয়া গেলো।সে কোনরকম মুখ ভেংচায়া বললো,"এইটা তো আমার বউ"।আমি একদৌড়ে বন্ধুর বউয়ের কোলে উইঠা গলা জড়ায়া দেশ দখলের মতো বউ দখল কইরা বললাম, "এইটা আমার বউ"।বউ আমার কথা শুইনা হি হি কইরা হাসতে হাসতে বললো,"আচ্ছা! এখন থেইকা তুমি আমার ছোট জামাই"।নতুন বউয়ের মুখে এই কথা শুইনা মামার বন্ধুর প্রায় হার্টফেল করার দশা।যতক্ষন ঐ বাসায় ছিলাম মামার বন্ধুর বউয়ের কোল থেইকা নামি নাই।আসার সময় মামা তো আর আমাকে কোলের থেইকা নামাইতে পারে না।কোল থেইকা নামানোর জন্য মামা আমার দুই পা ধইরা যত টানাহেচড়া করে আমি তত জোড়ে বউয়ের গলা জড়ায় ধরি।এমন টানাটানিতে বন্ধুর বউয়ের দম আটকায় যাওয়ার দশা।কোল থেইকা না নামাইতে পাইরা অবশেষে মামা বললো,"আজকে চলো আরেক দিন এখানে নিয়ে আসবো",আমি বললাম,"বউরে ছাড়া বাসায় যাবো না"।আমার মুখে একথা শুইনা মামার বন্ধুর মুখ শুকায়া আমসির মতো হইয়া গেলো।শেষপর্যন্ত নতুন বউয়ের কোলে উইঠা বাসায় ফিরছিলাম।
গরমের সময় একবার বাবা সেলুন থেইকা আমাকে মাথা টাক করায়া নিয়া আসলো।এই টাক মাথা নিয়া লোকজনের সামনে যাইতে খুব লজ্জ্বা পাইতাম।এদিকে ছোটমামা আমার টাকটাকে তবলা মনে কইরা প্রায়ই দুই আঙ্গুল দিয়া টাকডুম টাকডুম বাজাইতো আর নাকি স্বরে হুঁ হুঁ কইরা গান গাইতো।ছোটমামার তবলা বাজানির যন্ত্রনা থেইকা বাঁচার জন্য আমি ব্যস্ত হয়া পড়লাম।তখনকার সময়ে মা খালারা খোপা বড় দেখানোর জন্য বড় বড় পরচুলা লাগাইতো।একদিন দুপুরে মা ঘুমায় পড়লে আলমারী খুইলা মার সবগুলি পরচুলা বের কইরা সোজা স্টোররুমে গিয়ে আঠা দিয়া মাথার সামনে,পিছনে,উপরে সবজায়গায় পরচুলা লাগায় নিলাম।একেকটা পরচুলার সাইজ ছিলো ২ হাতের মতো এদিকে আমি ছিলাম দেড়ফুটিয়া একটা বাচ্চা।চুল লাগানোর পর আমার হাটু বাদে শরীরের উপরের সব অংশই চুলে চুলে ঢাইকা গেছিলো।যাই হোক,একটু পর চুপচাপ ছোটখালার রুমে গিয়ে খাটের উপর বইসা রইলাম।বিকালে ছোটখালা ঘুম ভাইঙ্গা দেখে তার বিছানায় বড় বড় চুলওয়ালা একটা জন্তু বইসা রইছে,যার চোখমুখ কিছুই নাই।এইটা দেইখা খালা চিকন স্বরে কাঁউ কাঁউ হুড়মুড় কইরা খাট থেইকা পইড়া দাত কপাটি লাগায় ফেললো।ঘটনা বেগতিক দেইখা আমি এক দৌড়ে আবার স্টোর রুমে গিয়ে লুকায় রইলাম।পরে ছোটমামা আইসা আমাকে বাইর করছিলো।ঐ ঘটনার পর সেলুন থেইকা নাপিত আইনা আবার ক্ষুর দিয়ে চুল ফালাইতে হইছিলো কারন হাজার টানাটানি কইরাও ঐ পরচুলা আমার মাথা থেইকা নামাইতে পারে নাই কেউ।বরন্চ মাথা থেইকা পরচুলা খোলার জন্য মা আর খালার যুগপৎ টানাটানি তে আমার শরীর দুই টুকরা হয়া যাইতে নিছিলো।
ছোটমামা একবার একটা পোষ্টার নিয়া আসছিলো।ঐ পোষ্টারে ছোট্ট একটা মেয়ে একটা সাদা ছাগল নিয়া দাড়ায় ছিলো।ছাগলের দুই শিং এ দুইটা ফুল ঝুলতে ছিলো।ঐটা দেইখা আমারও শখ হইলো আমিও নানার ছাগলটা নিয়া একটা ছবি তুলবো।একদিন বাসার বাগান থেইকা দুইটা সুর্যমুখী ফুল নিয়া নানার কালো ছাগলটার শিং এ বাধতে গেলাম।আমারে ফুল নিয়া আসতে দেইখা ছাগলটা এমন দৌড় দিলো যেন কেউ ওর ল্যাজে আগুন লাগায় দিছে।দুই-তিন ঘুইরাও ছাগলটা কে কায়দা করতে না পাইরা আমার মেজাজ গেলো খারাপ হয়া।একদিন রাতে কালো ছাগলটা তার ঘরে বইসা বইসা জাবর কাটতেছিলো এই ফাকে আমি নানীর কালো বোরখা পইড়ে চুপেচুপে ফুল আর আঠা নিয়া ছাগলের পিছনে আইসা দাড়াইলাম।সুর্যমুখী ফুলের ডগা একটা মোটা কাঠির সাথে বেধে ঐ কাঠিতে আঠা লাগায় সোজা ছাগলের পশ্চাৎদেশে ঢুকায় দিছিলাম।ঐ ঘটনা দেইখা সবাই চিন্তা করতে লাগলো কেমন কইরা ঐ কাঠি বাইর করা যায়।ছোট মামা বললো টানটানি করার দরকার নাই।ছাগলটা লাদি ছাড়ার সময় কোৎ দিলে এমনিতেই কাঠি বাইর হয়া যাবে।কিন্তু ছাগলটা কোন অজানা কারনে দুই দিন লাদি ছাড়ে নাই।ঐ দুই দিন ছাগলা উঠানের যেদিকে যাইতো সুর্যমুখী ফুলটাও তার সাথে সাথে মাথা উঁচু কইরা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হেইলা দুইলা ঘুইরা বেড়াইতো।
চলবে........................
আমার বান্দরবেলা......১
আমার বান্দরবেলা.......২
আমার বান্দরবেলা........৩
আমার বান্দরবেলা........৪
আমার বান্দরবেলা........৫
আমার বান্দরবেলা........৬
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০০৯ সকাল ৭:০৪