১
ছাগুরাম কাঁদিতেছে।
গভীর রাত্রি- বাহিরে জ্যোৎন্সায় ফিনিক ফুটিতেছে।এই স্বপ্নময়ী আবেষ্টনীর মধ্যে শুভ্ররঙা খোয়াড়ের এককোনে উপুর হইয়া অঝোরে কাঁদিতেছে ছাগুরাম।একা।খোয়াড়ে আর কেহ নাই।ছাদের ফুটা দিয়া একফালি জ্যোৎন্সা খোয়াড়ে প্রবেশ করিয়াছে।প্রবেশ করিয়া পশ্চাৎদশের ব্যাথা কাতর ভগ্নহৃদয় ছাগুকে দেখিয়া সে যেন থমকিয়া দাঁড়াইয়া আছে।কেন এ ক্রন্দন???
সামুর প্রতি প্রেম! হইতে পারে বৈকি।এই জ্যোৎন্সা পুলকিত যামিনীতে দু'ঠ্যাঙা ছাগুর নয়ন পল্লবে অশ্রু সন্চারের কারণ প্রেম হইতে পারে।ছাগুর জীবনে একবার প্রেম আসিয়াছিল তো।তখনও আলু নামক গ্রামের জন্ম হয় নাই।সামু নামক সদ্য জন্ম নেওয়া গ্রামটিকে সে ভালোবাসিত কারণ ইহাই ছিলো একমাত্র স্থান যেইখানে সে মনের মাধুরী মিশাইয়া লাদি ছাড়িতে পারিতো।কাঠালপাতায় দেশের ইতিহাস নতুন করিয়া লিখিবার প্রয়াসও সে নিয়াছিলো অতীব সঙ্গোপনে।কিন্তু কতিপয় দুষ্টুলোকের কাঠির খোঁচায় সে বাধ্য হইয়া নিজের রক্ষার নিমিত্তে লোমশ গলদেশের অধিকারী কলুর বাহুদেশে নিজেকে সঁপিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছিলো।কিন্তু বহুদিন প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও তাহারা দুইজনে কোন প্রকার নতুন প্রজাতির জন্ম দিতে ব্যর্থ হইয়াছিলো।
নতুন প্রজাতি জন্ম দেওয়ার ব্যর্থতাও ছাগুর ক্রন্দনের কারণ হইতে পারে।আবার ইহাও হইতে পারে দুষ্টুদের অবিরাম কাঠির খোঁচায় পশ্চাৎদশে অশ্বরোগ হওয়ার দুঃখে ছাগু কাঁদিতেছে।
২
একদা সন্ধ্যায় সামু নামক গ্রামে অবস্থিত ছোট্ট নদী তীরে বসিয়া সার্কাসদলের ভাড়ের পোষাক পড়িয়া কতিপয় ব্যক্তি ম্লানমুখে জড়াজড়ি গলাগলি করিয়া কাঁদিতেছিলো।সামুগ্রামের কর্তাস্থানীয় ব্যক্তিদের পশ্চাৎদেশ তাহাদের লোলভরা জীহবা দিয়া অনবরত লেহন করিয়া ভিজাইয়া জবজবে করিয়া ফেলিয়াছিলো এইসকল ভাড়রা। সেই দুষ্টুলোকেরা তাহাদের এরূপ কর্মে বিরক্ত হইয়া তাহাদের পশ্চাতেও কাঠির মৃদূ খোঁচা দিয়াছিলো।কাঠির আঘাতে সৃষ্ট ব্যাথাতেই তাহাদের এই ক্রন্দন।খোঁচার হাত হইতে রক্ষা পাইবার জন্য তাহারা খলিফার দোকান হইতে রীতিমতো অর্ডার দিয়া লৌহ নির্মিত অন্তর্বাসও বানাইয়াছিলো কিন্তু তাহাতেও কোন লাভ হয় নাই।দুষ্টুবালকের দল সেই অন্তর্বাস ড্রলমেশিন দিয়া ছিদ্র করিয়া তাহাদের পশ্চাৎদশে কাঠি ভরিয়াছে।শুধু তাহাই নয় দুষ্টবালকেরা তাহাদিগকে উপহাস করিয়া রেসিডেন্ট ভাড় বলিয়াও সম্বোধন করিত।এই নামে ডাকার ফলে রাগে তাহাদের শরীর চিড়বিড় করিলেও খোঁচা খাইবার ভয়ে কিছু বলিতে পারিত না।
৩
একদিন প্রত্যুষে ছাগুরাম নদীতীরে কাঠালপাতা কুড়াইতে গিয়া দেখিল ভাড়ের মতো দেখিতে কতিপয় ব্যক্তি ম্লানমুখে অশ্রু-তর্পণ করিতেছে।ছাগুরাম নিকটে আসিয়া কাঁদিবার হেতু জিজ্ঞেস করিতেই তাহারা গলা ছাড়িয়া আরও জোরে কাঁদিয়া উঠিলো।তাহা দেখিয়া ছাগুরাম ব্যস্তসমস্ত হইয়া তাহাদের মাথায় হাত বুলাইয়া দিতে লাগিলো।কিছুক্ষন পর সামলাইয়া উঠিয়া ছাগুরামকে তাহাদের দুঃখের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করিতে লাগিলো।শুনিয়া ছাগুরামরেও তাহার কষ্টের কাহিনী মনে আসিয়া গেলে সেও ডাক ছাড়িয়া ম্যা ম্যা করিয়া কাঁদিতে লাগিলো।জড়াজড়ি গলাগলি করিরা কাঁদিবার পর্ব শেষ হইলে ছাগুরাম সেই সকল ভাড়দের তাহার খোয়াড়ে নিয়া গেলো।ছাগুর খোয়াড়ে থাকিতে থাকিতে ভাড়েরা ছাগুর প্রতি একরূপ আকর্ষন বোধ কৈতে লাগিলো।আহা! কি ছাগুর ল্যাজ নাড়ানোর ভঙ্গী,কি তাহার কোমড় দুলাইয়া লাদি ছাড়িবার ভঙ্গী,কেমন তাহার সলজ চাহনী যেন বুকে এসে বিঁধে।ছাগুও কিছুটা দুর্বল হইতে লাগিলো ভাড়দের প্রতি।
পরস্পরের প্রতি তাহাদের এরুপ দুর্বলতা একদিন প্রেমের রূপ ধারন করিলো।প্রতিরাতে তাহার সকলের অগোচরে মিলিত হতে লাগিলো।তাহাদের এইরূপ মিলনের ফলে জন্ম নিলো এক নতুন প্রাণী।ভাড় আর ছাগুর মিশ্রনে সেই প্রাণীটির গায়ের রঙ ছিলো লালকালোর ডোরাকাটা।
সেই ডোরাকাটা প্রাণীটি যতই বড় হইতে লাগিলো তাহার রুপ ফুটিয়া উঠিতে লাগিলো।স্থানীয় গ্রামবাসী তাহার মিথ্যাচার আর ভাড়ামী তে অতিষ্ঠ হইয়া নাম দিলো,
"ঠগ"...............লোকালঠগ