ডাক্তার, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট এবং মুক্তিযুদ্ধ!
হোম পেইজে আজ একটি ভিডিও বারবার চোখে পড়ছে। ইতোমধ্যে অনেকেই হয়তো তা দেখেছেন। ভিডিওটি এক ডাক্তারের সাথে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটের বাকযুদ্ধের। আর সেই বাকযুদ্ধের শুরুটা বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে মুভমেন্ট পাস নিয়ে।
ভিডিওতে দেখা গ্যাছে, এক ডাক্তার মহিলার গাড়ি থামিয়ে মুভমেন্ট পাস ইস্যুতে পুলিশ তার আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছে। তখন মহিলা বলেন তিনি একজন ডাক্তার এবং ডাক্তারের আবার কীসের মুভমেন্ট পাস? তাছাড়া করোনায় জীবন গ্যাছে কয়জন ডাক্তারের………!
আমরা জানি, করোনা মহামারীতে ডাক্তারদের ত্যাগ এবং ভালোবাসার কথা। করোনার এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে যে পেশার মানুষ সবার সামনে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে সে পেশার নাম ডাক্তার। দেশের মানুষকে সুস্থ করে তুলতে তারা যে আত্মত্যাগ করেছে তাদের সে অবদানের কথা জাতি কখনও ভুলবে না। তবে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রশাসন তথা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও করোনা সিচুয়েশনে দেশের জন্য কম অবদান রাখেন নি। আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে দীর্ঘদিন তারা সেবা দিয়ে গেছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকার থেকে শুরু করে আরও অনেকেই আছেন। কারও অবদানই ফেলে দেওয়ার মত নয়।
যে কথা বলছিলাম, পুলিশ ডাক্তার মহিলার গাড়ি থামিয়ে আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছেন। তারপরই গন্ডগোল বাঁধতে শুরু করলো।
আমরা জানি লকডাউন পরিস্থিতিতে ১৮ শ্রেণির মানুষের কোন মুভমেন্ট পাস লাগে না। তার মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে ডাক্তাররা। তার মানে, কোন ডাক্তার লকডাউনের মধ্যে বাইরে বের হলেও তার মুভমেন্ট পাস লাগবে না।
এখন কথা হচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে বুঝবেন কেউ ডাক্তার কি না! কারও চেহারায় তো আর ডাক্তার লেখা থাকে না। অনেকেই হয়তো বলবেন গায়ে এপ্রোন পরা কিংবা গাড়িতে লগো থাকার মানেই তো সে ডাক্তার। আসলেও কি তাই? অন্য পেশার মানুষও তো গায়ে এপ্রোন পরতে পারে কিংবা গাড়িতে লগো লাগিয়ে নিতে পারে। তাই বলে কি তারা ডাক্তার? তা তো নয়! তার মানে লকডাউন সিচুয়েশনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সহজে যেভাবে বুঝতে পারবেন যে ডাক্তার যাচ্ছে এবং তাদের যাওয়ার সুবিধা করে দিতে হবে, এর সহজ সমাধান হল তার আইডি কার্ড। রাইট? এক্সক্টলি!
আমরা ভিডিওতে তো সেটাই দেখলাম, পুলিশ মহিলার আইডি কার্ড দেখতে চেয়েছেন। তারপর মহিলা বললেন, তিনি আইডি কার্ড নিয়ে আসেন নি। হয়তো ভুলে বাসায় ফেলে আসছেন। এটা হতেই পারে। খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যেহেতু উনি আইডি কার্ড নিয়ে আসেন নি তাহলে পুলিশ সদস্য কিভাবে বুঝবেন উনি আসলেই ডাক্তার নাকি ভুল পরিচয় দিয়ে পার পেতে চাচ্ছেন! কিভাবে বুঝবে? কারণ, প্রতিদিন অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে।
আর যদি ধরেই নিই, উনি সত্যিই একজন ডাক্তার তাহলে তিনি এই বিষয়টা পুলিশকে সফটলি বললেই তো পারতেন। উনি সফটলি বলার পরেও যদি পুলিশ সদস্য সেটা না বুঝতেন তাহলে না হয় মেনে নিতাম যে এখানেও পুলিশের দোষ। কিন্তু এখানে তো তা হয় নি। উল্টা ওই মহিলা পুলিশ সদস্যকে তুই তোকারি থেকে শুরু করে গালি গালাজ অবধি দিয়েছেন আর। তাহলে?
আমি বলছি না যে, পুলিশ মানেই ফেরেশতা। পুলিশের অনেক দোষ আমরা নানান সময় দেখেছি এবং আমি সেগুলো নিয়ে কথা অবধি বলেছি। তবে আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই একদম নিরপেক্ষ জায়গা থেকে কথাগুলো বলার প্রয়োজন অনুভব করছি।
তারপর আমরা কী দেখলাম? মহিলা নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করেছেন নানান ভাবে। এরপর আসলো ডাক্তার-পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় প্রসঙ্গ। কেন রে ভাই? এখানেও কেন বাবার মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনতে হবে? সন্তান দোষ করবে আর পার পাওয়ার জন্য টেনে আনা হবে বাবার মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গ? ইজন’ট ইট লেইম?
তারপর দেখলাম, মহিলা পুলিশকে লক্ষ করে বলছেন তিনি চান্স পেয়েছেন দেখেই তিনি আজ ডাক্তার আর পুলিশ চান্স পাননি দেখে তিনি আজ পুলিশ? ইতোমধ্যে অনেককেই দেখলাম এই লাইনকে লগ লাইন বানিয়ে পোস্ট দিতে। মানে কী এসবের বলতে পারেন? মহিলা যেভাবে বলছেন সেভাবে নাও তো হতে পারে। এমনও তো হতে পারে যে লোকটি আজ পুলিশ কিংবা ম্যজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করছেন তারা হয়তো কোনদিন ডাক্তার হতেই চান নি। পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট হতে চেয়েছেন কেবল! হতেই তো পারে, তাই না? তাহলে কী প্রয়োজন এমন অহমের? দেশের সবচেয়ে মেধাবী মানুষগুলোর কথা হবে সর্বোচ্চ মেধাবীর মত। কিন্তু তা যখন ব্যক্তি অহমের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন খুব আফসোস লাগে!
একজন পুলিশ খারাপ হলে সেটা দিয়ে যেমনিভাবে সকল পুলিশকে জাজ করা ঠিক না, একইভাবে একজন ডাক্তার খারাপ আচরণ করলে তা দিয়ে বাকি ডাক্তারদের জাজ করা ঠিক না। ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে নম্র, ভদ্র এবং অসম্ভব বিনয়ী ডাক্তার যেমনিভাবে দেখেছি তেমনিভাবে নম্র, ভদ্র এবং অসম্ভব বিনয়ী পুলিশ কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটও দেখেছি। তাই বলি কী, ব্যক্তি দিয়ে প্রফেশনকে জাজ করা ঠিক নয়।
তবে কেউ ভুল করলে তার ভুল শুধরে দেওয়া প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব সেটা যেই প্রফেশনের মানুষই ভুল করুক না কেন! সো, উই শুড স্পিক আপ! উই শুড রেইজ আওয়ার ভয়েস। এন্ড অফ দ্যা ডে, উই শুড বি নিউট্রাল হয়েন উই উইল টক।
-গোলাম রাব্বানী