- বাবাময় পূর্ণ ঘরটা হয়ে যেদিন বাবাহীন শুন্য ঘর হবে সেদিন টের পাবে বাবা কী ছিল?
-বাবার বালিশের পাশে যখন একলা একা চশমাটা পড়ে থাকবে কিন্তু সেই চশমা পরার মানুষ থাকবে না তখন বুঝবে বাবা কী ছিল?
-হেঙ্গারে ঝুলানো বাবার সাদা পাঞ্জাবিটা যখন ঝুলবে কিন্তু সেটা পরার মানুষ থাকবে না তখন বুঝবে বাবা কী ছিল?
-বকা দেওয়ার পর যখন মাথায় এসে হাত বোলানোর মানুষ খুঁজে পাবে না তখন বুঝবে বাবা কী ছিল?
-যখন পকেট ভর্তি টাকা থাকবে কিন্তু মাস শেষে পকেট খরচের টাকা নিয়ে ঝগড়া করার মানুষ খুঁজে পাবে না তখন বুঝবে বাবা কী এবং কে ছিল?
-ঘুম থেকে আগে ডাকা নিয়ে প্রতিদিন মায়ের সাথে এক ধরনের মিষ্টি ঝগড়াই করো। তবুও মা পরের দিন ঠিকই আগে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। কেন তোলে, জানো? তোমার ভালোর জন্যই। যেদিন সকালে মায়ের অমন মিষ্টি ডাকে তোমার ঘুম ভাঙবে না সেদিন বুঝবে তোমার মা আর এই পৃথিবীতে নেই। আর তখনই হাড়ে হাড়ে টের পাবে মা কী ছিল?
-শত শত মানুষ তোমার পাশে থাকা সত্ত্বেও যেদিন টের পাবে কোন এক শান্ত আঁচলের নীচে তুমি এখন আর ঠাঁই পাচ্ছ না সেদিন বুঝবে মা কী ছিল?
-১০৩ ডিগ্রী জ্বর থাকার পর যখন বুঝবে এখন আর রাত জেগে তোমাকে কেউ পাহারা দেয় না কিংবা তোমার মাথার পাশে বসে কেউ তোমার দিকে গভীর মমতাময়ী দৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে থাকে না তখন বুঝবে মা কী ছিল?
-চারপাশের সকল রাগ আমরা দেখাই মায়েদের সাথে। তবুও তারা সব নীরবে সহ্য করে যান। কিন্তু যখন টের পাবে রাগ আছে অভিমান আছে শুধু তা দেখানোর মানুষটি নেই তখন টের পাবে মা কী ছিল?
-রাতে ঘুমুতে গেলে যখন টের পাবে এখন আর গভীর রাতে কেউ বুকে কাঁথা টেনে দেয় না তখন বুঝবে মা কে এবং কী ছিল?
'বাবা-মা' কি কেবলই দুটি শব্দ? তার চেয়ে বেশি কিছু নয়? প্রতিয়িনিয়ত বাবা-মাকে আমরা কি অন্য আট দশজনের মানুষের সাথে মিলিয়ে ফেলছি না? কমার্শিয়াল ইরার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বাবা-মাকে কি কথা শোনাচ্ছি না? আমাদের জন্য বাবা-মায়ের নীরব সেক্রিফাইসের কথা কি একবারও জানতে চেষ্টা করেছি? একবারও কি উচিত ছিল না তাঁদের কাঁধে হাতটা রাখার? আলতো করে হলেও খানিকটা স্পর্শ করার? গভীর করে ছুঁয়ে দেওয়ার? বুকের সাথে বুক মিলিয়ে এক পৃথিবীর পাওয়া না পাওয়া সকল অনুভূতির গল্প করার? আমরা কি করেছি? কেন করিনি? একবারও কি ভেবেছি?
সত্যি বলতে, বাবা-মায়ের মত করে এই পৃথিবীর আর কেউই আমাদের ভালোবাসতে পারে না আর পারবেও না। যদি সম্ভব হত, তবে তারা তাদের কলিজাটাও আমাদের জন্য ছিঁড়ে দিত কার্পণ্য করতো না। কারণ, তারা বাবা-মা।
যা হবার হয়েছে। চলুন না, সব ভুলে যাই। সব ভুলে আমাদের বাবা-মায়ের সাথে সুন্দর করে কথা বলি। খানিকটা হেসে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে গভীর করে বুকে জড়িয়ে নেই তাদের। চলুন না! বিশ্বাস করুন, এর চেয়ে বেশি কিছু তারা চায় না। তারা আমাদের জন্য জীবনটা দিয়ে দেবে। আর বিনিময়ে কেবল আমাদের ওই হাসিমুখটাই চায়। যেন, আমরা অন্তত হাসিমুখে তাদের সাথে কথা বলি।
আপনি আপনার জায়গা থেকে, সে তার জায়গা থেকে, আমি আমার জায়গা থেকে এক হয়ে যখন আমরা সবাই আমাদের জায়গা থেকে আমাদের বাবা-মায়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলবো তখন হয়তো পৃথিবীটাও থমকে যাবে। আর পৃথিবীটা হয়ে উঠবে মায়ার, মমতার, ছুঁয়ে দেওয়ার আর শুদ্ধ ভালোবাসার। চলুন না, অতীতের সব ভুলে মিষ্টি হেসে আমাদের বাবা-মাকে বুকে গভীর করে জড়িয়ে ধরি!
-গোলাম রাব্বানী