আমাদের উপমহাদেশের অনেক মানুষের (বিশেষ করে ভারতে) একটা ধারনা হচ্ছে "আগে আমরা সবাই এক দেশ ছিলাম। ব্রিটিশরা ডিভাইড এন্ড রুল করে আলাদা করলো"। এই আলাপটা ভারতে ১০ বার ভ্রমণে কখনো মিস যায় নাই
জি না। ব্রিটিশ আমল বাদে পুরো ভারতবর্ষ কখনোই একক শাসক বা শাসনে ছিল না। উত্তরে কাশ্মীর, পূর্বে আসাম-নাগাল্যান্ড-মনিপুর, পশ্চিমে খাইবার-পাস্তুন বাদ দিয়ে যে ভারতবর্ষ আমরা জাতিগতভাবে, ঐতিহ্যভাবে "ভারতবর্ষ" ভাবি সেটাও কখনো এক ছিল না। না চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময়, না আশোকের সময়, না মুঘলদের সময়।
মৌর্য যুগে পুণ্ড্র, বরেন্দ্র জনপদ ছিল শুধু তাদের অধীনে; বঙ্গ আর সমতট যেখানে বর্তমান ঢাকা আর চট্টগ্রাম অবস্থিত সেটা মৌর্যদের অধীনে ছিল এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নাই। মৌর্য বা মুঘলদের সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত অবস্থাতেও দক্ষিণ ভারত ছিল না তাদের কারোরই নিয়ন্ত্রণে। দক্ষিণ ভারত শাসন করেছে তামিল শাসকরা প্রাচীনযুগে পাণ্ডু, চোল, পল্লব বা কের সাম্রাজ্য; আর মধ্যযুগে বিজয়নগর, নিজাম সাম্রাজ্য।
উপনিবেশিক শক্তিরা এসেও এখানকার নানান সাম্রাজ্যের সাথে আলাদা করে কূটনৈতিক সম্পর্ক করেছিল; তখন দক্ষিনে শাসন ছিল মারাঠা, শিখ, মুঘলদের মাঝে; বাংলায় ছিল স্বাধীন নবাব; মহীশূর রাজ্যে তিপু সুলতান। না, ব্রিটিশরা এসে বিভক্ত ভারত পায় নাই বরং ভারত তাই ছিল যা হাজার বছরের এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে এসেছে।
এতগুলো কথা বলার একটাই কারণ। ভারতবর্ষের সৌন্দর্য একক পতাকার ছায়াতলে থাকা কখনোই ছিল না। আমাদের সৌন্দর্য ছিল হরেক পতাকায় থাকা সত্ত্বেও ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম , উৎসব, বাণিজ্য আর যোগাযোগের মিলবন্ধনে। বৈচিত্র্যতার সৌন্দর্যই ছিল আমাদের ভারতবর্ষ।
"ভারত এক দেশ ছিল" ন্যারেটিভ ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের মাথায় দেয়া হচ্ছে সেটা একটা মিথ্যা। আর এই মিথ্যার ফাউন্ডেশনে তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়ার কূটনৈতিক আদর্শ। সেটা আমাদের হাজার বছরের বৈচিত্র্যতার সৌন্দর্যকে রক্ষা না উল্টো নষ্ট করছে।