ছবিটা দেখছেন? এটা কোন পশ্চিম ইউরোপের অভিজাত পরিবারের না, ছবির সর্বডানে যিনি বসে আছেন উনি হচ্ছে অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদ। হাতে বেহালা নিয়ে আছে তার প্রথম স্ত্রী। ছবিতে একটা রাজমহলের সব বৈশিষ্ট্যই আছে; শুধু নাই শরিয়াহ, শুধু নাই ইসলামের কোন ছিটেফটা। আজকে সোশ্যাল মিডিয়াতে খেলাফত নিয়ে, ৩ মার্চ ১৯২৪ নিয়ে অনেক পোস্ট দেখলাম। কিন্তু আদৌ কি আমরা জানি অটোমান খিলাফত কেমন ছিল?
১০১ বছর আগের সেই খেলাফত কতটুকু ইসলামিক ছিল? সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ, সুলতান সুলাইমানের গৌরবময় শাসন তখন দূর অতীত। ততদিনে অটোমান খলিফারা পশ্চিম ইউরোপের কালচার অন্ধঅনুসরণ, শ্লথচারিতা আর মদ্যপাতে বুদ। খলিফায় রাশিদিনদের মত সুরা কাউন্সিলের মাধ্যমে পরের খলিফা নির্বাচিত হত না বরং অটোমান সাম্রাজ্য ছিল অনেকটা পরিবারতন্ত্রই। এমনকি আঠারো শতক পর্যন্ত সহচরদের হত্যা করার চল ছিল অটোমানদের মাঝে; যাতে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে ঝামেলা না হয়। এগুলো কতটা ইসলামিক ছিল সেটা আলেমরা ভাল বলতে পারবে।
ইসলামের রাজনৈতিক গঠনতন্ত্র হচ্ছে খেলাফত; এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু এমন কিছুকে ইন্সপিরেশন হিসেবে দেখানো উচিত না যেখানে ইসলামিক এলিমেন্টের বড্ড অভাব ছিল। রোমান্টিসিজম ভাল কথা, কিন্তু খেলাফতটা আদৌ ইসলামিক কি না সেটা মুসলিমদের জন্যে বেশি প্রায়োরিটি নয় কি?
এটা সত্য যে অটোমান সাম্রাজ্য পতনের পর আরব ও উত্তর আফ্রিকার যে অঞ্চলগুলো তাদের অধীনে ছিল সেগুলো ইউরোপের উপনিবেশিক শক্তিগুলো ছিড়ে খেতে চেয়েছিল; সফলও হয়েছে। সেটা "খেলাফত" এর আলাপ না; আমরা প্রায়শ নানান প্রেক্ষাপট একসাথে গুলিয়ে ফেলি। ইরাকের সাদ্দাম, লিবিয়ার গাদ্দাফি, মিশরের নাসের, সিরিয়ার আসাদ এরাও পশ্চিমা আগ্রাসনের বিরদ্ধে ছিল। কিন্তু তাদের আদর্শ গঠনতন্ত্র ট্রিটমেন্ট ভিন্ন; পরিত্যাজ্য অনেকক্ষেত্রে। আজকে যদি হামাসের আন্ডারে পুরো প্যালেন্টাইন থাকতো একেবারে সানাই থেকে গোলান মালভূমি পর্যন্ত তাহলে আদর্শগত কারণে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হত হিজবুল্লাহ। তাই আমরা জিওপলিটিক্স আর ইসলামের থিউরেটিকাল আলাপ একটু আলাদা রাখি; প্লিজ।
খেলাফত ঘোষণা করলেই সেটা শরিয়ত হয়ে যায় না। ঠিক তেমনই বাংলাদেশে খেলাফত থাকলে সেটা অটোমেটিকভাবে দেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঠিক করবে এটারও গ্যারান্টি নাই। আফগানিস্তানের মত দেশও খেলাফত ঘোষণা করে নাই; তারা নিজেদের আমিরাত বলে। কারণ খেলাফতের ব্যাপ্তি শুধু একটা দেশে না; বরং পুরো মুসলিমজাহানে। বাংলাদেশের ইসলামিক দল বা সংগঠনগুলোর মাঝেই ঐক্য বলতে কিছু নাই। আজকাল দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে "তাওহীদী জনতা" এর নজির দেখছি এগুলো মোটাদাগে এক্সট্রাজুডিশিয়াল এক্সটিভিটি। আইন বহির্ভূতভাবে এই কাজগুলো ফেতনা সৃষ্টির মধ্যে পরে নাকি শরিয়ত সেটা না হয় আলেমরাই ভাল বলতে পারবে।
তাও বলব একটা স্বাধীন বাংলাদেশে খেলাফতের স্বপ্ন দেখা মানুষ নিজের মতপ্রকাশ করুক। আবার কোন হিপোক্রেসি থাকলে সেটাও যেন মানুষ নির্ভয়ে গঠনমূলক আলোচনা করতে পারে। একটা সুন্দর পরিবেশ কাম্য নতুন বাংলাদেশে। কালকে কারো মতের সাথে দেশের রাজনৈতিক গঠনতন্ত্র না মিললে তাও যেন সহযোগিতা আসুক; সমালোচনা আসুক। স্বপ্নে বিভোর হয়ে হিস্রতা না আসুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৪৭