ইচ্ছা ছিল নারায়নগঞ্জ থেকে মাওয়া ঘাটে যাব ইলিশ খেয়ে সুন্দরমত বাসায় ফিরে আসব। দিন শেষে যেঁ ঠিক ৭২ঘণ্টা পর এমন এডভেঞ্চারের ব্লগ লিখব আশা করিনি।
মাওয়া ঘাটে যাওয়া
দুপুর ১ টায় নারায়ণগঞ্জ টাউন থেকে রওনা দিলাম মাওয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে। ২ বার সিএনজি বদলিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টাপর গ্রামের মেঠো পথ হয়ে পৌঁছলাম মাওয়া ঘাটে। সাথে ছিল আরও ২ জন। জনপ্রতি লেগেছে প্রায় ২০০ টাকার মত। এরপর মাওয়া ঘাটের রেস্তোরাগুলো খুজছিলাম। এখানে ইলিশ খাওয়ার আগে দামাদামি করে কিনতে হয়। দূরের মানুষ বুঝলে ঠকিয়ে রাখবে। আমরা দামাদামি করে ৭০ টাকা পিস কিনতে পারলাম। যদি আপনারা যান তাহলে চেষ্টা করবেন সাথে অন্য কোন আইটেম না খাওয়ার। অখানে টাকা লুট করার জায়গা অদের। দেখা যায় আপনার সামনে ভাত দিয়ে যাবে। এরপর অনেকক্ষণ আপনাকে মাছ দিবে। অনেকে অপেক্ষা না করে অন্য কোন আইটেম অর্ডার দেয়। অখানেও অদের সব লাভ। তবে পরিবার সাথে নিয়ে গেলে টাকার চিন্তা করলে চলবে না। তবে বন্ধুবান্দব গেলে খেয়াল রাখা উচিত। আমরা সব মিলিয়ে ৬টুকরা নিয়েছিলাম, ভাতসহ প্রায় ৪৬০ টাকায় পেট ও মন ভরে ইলিশপূর্তি করতে পেরেছিলাম।
পদ্মা পাড়ে
ঘাটে গিয়ে বসে দেখলাম। অনেক সুন্দর লাগছিল। অখানে ফেরি,লঞ্চ আর স্পীডবোট দিয়ে জাওয়া যায়। আমার আগে কখনো স্পীডবোট এ জাওয়া হয়নি তাই ইচ্ছা করছিল ঘুরে আসার। বাকি ২ জন রিসাদ ভাই আর ওয়ালী ভাই। একটু পর রিসাদ ভাই বলে উপার দিয়ে খুলনা যেতে মাত্র ২ ঘণ্টা লাগবে। চল যাই । সবাই রাজি। এক কাপড়ে দৌর দিব খুলনায়। খুলনায় রিসাদ ভাইয়ের বন্ধু আছে অখানে রাতে থাক তেও পারব।
স্পীডবোটে পদ্মাপাড়
মাওয়া থেকে স্পিডবোট নিলাম। ১৫০ টাকা প্রতিজন। গন্তব্য কাউরাকান্দি। অনেক ভাল লাগলো যেতে। আমার সাতার জানা নেই। তবে লাইফ সাপোর্ট থাকার একটু আশ্বস্ত ছিলাম। আকাশে ঘন ঘন মেঘের পরত, মেঘের ফাক দিয়ে সূর্যের আলো এসে নদীর উপর পড়ছে। আসে পাশে অনেক দূরে শুধু চর দেখা যাচ্ছে আর কিছু না। ২০ মিনিট সময় লাগলো পাড় হতে।
খুলনায় রাত্র পাড়
কাউরাকান্দি থেক্কে মাইক্র করে গেলাম খুলনা জেলা শহরে। ৩০০ টাকা প্রতিজন। সময় লাগলো প্রায় আড়াই ঘণ্টা। কোন জ্যাম ছিল না। বৃষ্টি ছিল বাইরে। প্রকৃতির লিলা দেখে দেখে চলে আসলাম খুলনায়। তখন খুলনায় অনেক বৃষ্টি। একবারে ভিজা কাক হয়ে রিসাদ ভাইয়ের বাসায় গেলাম। রাত কাটালাম আড্ডা দিয়েই।
পরের দিন
ষাট গম্ভুজ মসজিদ
সকাল ১০ টার দিকে রওনা দিলাম রুপ্সা থেকে ষাট গম্ভুজ মসজিদের উদ্দেশ্যে। বাসে প্রতিজনের লাগলো ৬০ টাকার মত। সময় লেগেছে প্রায় ৪০ মিনিটের মত। ষাট গম্ভুজ মসজিদের সংস্করণের কাজ চলছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম পুরোটা। ভিতরে ঢুকলাম মসজিদের। অনেক সুন্দর পুরামাটির কারুকাজ। তবে স্থপতির নাম জানার অনেক ইচ্ছা ছিল, সেটা কোথাও দেখলাম না। পৃথিবীর বড় বড় ঐতিহাসিক স্থাপত্যগুলোর মতই এই মসজিদের স্থপতির নামও কি হারিয়ে গিয়েছে? কেউ যদি জেনে থাকেন কমেন্টে বলবেন।
খান জাহান আলির মাজার
অখান থেকে অটোরিক্সায় গেলাম খান জাহান আলির মাজারে। ২০ টাকা লাগলো প্রতিজন। গিয়ে বসলাম দিঘির পাড়ে। মাইকিং এ বলছিল গুনা মাফের জন্য বা মানত করার জন্য খাসি, মুরগি দেয়ার কথা। প্যাকেজগুলো সুনে অবাক হচ্ছিলাম। যাই হোক অখান ফিরে আসলাম রুপসায়। এরপর দুপুরে খেয়ে ৪ টায় রওনা দিলাম কাউরাকান্দির উদ্দেশ্যে।
কাউরাকান্দি ও আসল এডভেঞ্চার
৫ টায় মাইক্রো ছাড়ার পর প্রায় ৮টার দিকে পৌঁছলাম কাউরাকান্দি। ভাড়া রেখেছে ৪০০ টাকা করে। এরপর দৌরে উঠলাম ফেরিতে। ততক্ষণে ফেরি ছাড়া বাকি সব কিছু বন্ধ। ফেরিতে উঠে শুনি ফেরি কখন ছাড়বে সেটা অনিশ্চিত। ৩ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়া। আমরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফেরিতে বসে থাকার পর ফিরে কেল্কুলসন করে দেখলাম বাসায় ফিরা আজ উচিত হবে না। তাই ফেরি থেক নেমে গেলাম। রাতের খাবার খেলাম। এরপর খুজতে থাকলাম বডিং আর হোটেল। সবকিছু ফুল। এখন কি আর করার। কিছু না পেয়ে রাতটা বাইরে কাটালাম। কিছুখন ফুতপাথের বেঞ্চে ঘুমিয়েছিলাম। কনকনে বাতাসে মনে হচ্ছিল এই বুঝি যান গেল। রাত কেন শেষ হয় না। এভাবে চিন্তা করতে করতে ঘুম এসে পরে। যদিও সব মিলিয়ে ১ ঘণ্টাও ঘুমাইনি।
পরের দিন সকালে ফেরিতে পাড় হলাম পদ্মা। নদীর শান্ত অবস্থা দেখে মনেই হচ্ছিল না গতকাল কি রাক্ষসি হয়ে উঠেছিল এই পদ্মা। এরপর সিএনজি, টলার পেরিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। এক কাপড়ে ঘুরে আসার অভিজ্ঞতাটা ভালই ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭