আপনি যখন ব্লগে বেশি সময় দিবেন কিংবা আসক্ত হয়ে পড়বেন, তখন আপনার সামুকোসিস বা সামু এডিকশন রোগ হতে পারে। এই রোগটির কয়েকটি প্রকারভেদ আজকে দেয়া হলো। আগামি পর্বে বাকিগুলো দেয়া হবে।
সামুসোম্যানিয়া
ব্লগে আসার পরে যে রোগটি আপনার সবার আগে হবে তা হলো সামুসোম্যানিয়া। অর্থাৎ আপনি রাতে ঘুমাতে পারবেন না। আপনার দুচোখ জুড়ে ঘুম থাকলেও আপনি রাত দুইটা কিংবা তার আগে ঘুমাতে পারবেন না। ব্লগ আপনাকে এক অদৃশ্য বাধনে আটকে রাখবে। যখন ঘুমে ক্লান্তিতে আপনি নুয়ে পড়বেন। সহ্য করতে না পেরে ঘুমাতে যাবার জন্য যেই পিসি/ল্যাপটপ শাট ডাউওন দিতে যাবেন, তখন আপনার চোখে পড়বে ঘুরুত্বপুর্ণ কোন পোস্ট কিংবা আপনার পোস্টে বা আপনার মন্তব্যের প্রতিউত্তরে এমন একটা মন্তব্য আসবে, যার উত্তর না দিয়ে আপনি লগ আউট করতে পারবেন না। আর এটি হতে পারে এক বা একাধিক সময়ের হ্যাপা।
আর যদিও আপনি সব মায়া কাটিয়ে পিসি/ল্যাপি অফও করে ফেলেন, তখন আপনি আবার মোবাইলে লগ ইন করতে পারেন।
সামুসিয়াল পারসোনালিটি ডিসঅডার্র
আপনি ব্লগে এতই সময় দিবেন যে, বাইয়ের পৃথিবীতে আপনার সময় দেয়ার সময়ই থাকবে না। কিংবা কোন ক্লাসে, অফিসে বা অন্য কোন কাজে গেলে,আড্ডাতে গেলে বা গেটটুগেদারে গেলে কিংবা প্রেমিকার সাথে গেলে, আপনার বারবার সামুতে ঢুঁ মারার ইচ্ছা জাগবে। এটি আপনাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে কিংবা সামাজিক আড্ডায় আপনি সে মজাটা পাবেন না, যেটা আপনি সামুতে আড্ডা দিয়ে পান। যে প্রেমিকাকে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন দিতেন কথা বলতেন, তার কোন ফোন কখন যে মিসড কল হয়ে যাবে আপনি খেয়ালই করতে পারবেন না। এক্সট্রিম পর্যায়ে এটি আপনার ব্রেক আপের কারনও হতে পারে।
টু ট্যাব ডিসঅডার্র
আপনি যখনই নেটে বসবেন, তখনই আপনি দুটি ট্যাব ওপেন করবেন। একটা হয়ত অন্য কোন ওয়েব সাইট থাকতে পারে, কিন্তু অন্যটাতে সব সময়ই সামু ধ্রুবক হিসেবে থাকবে। আপনি ফেইসবুকে লগ ইন করতে যাচ্ছেন, সাথে সাথে সামুতেও লগ ইন করছেন। ইমেইল চেক করতে যাচ্ছেন, সাথে সাথে সামুর একটা ট্যাবও ওপেন করছেন। হয়তবা জরুরি কোন চাকুরির সার্কুলারের জন্য কোন জব সাইটে লগ ইন করছে, অজান্তেই অন্য ট্যাবে আপনি সামুতে লগইন করছেন। উপরের পিকগুলো দেখুন। এগুলো একজন টু ট্যাব ডিসঅডার্র-এ আক্রান্ত ব্লগারের ব্রাউজারের স্ক্রিনশট।
লিংকোফ্রেনিয়া
সামুতে আপনি যখন কোন পোস্ট পড়েন তখন দেখতে পান যে, কিছু কিছু পোস্টের সব কালো রঙের ফন্টের মাঝে মাঝে কিছু কিছু রঙ্গিন ফন্ট থাকে।মানে এইগুলোতে কিছু লিঙ্ক এমভেডেড থাকে। অপ্রচলিত বিষয় বা শব্দ কিংবা বিতর্ক থাকতে পারে এমন ব্যাপারগুলোতে রেফারেন্স হিসেবে লিংক এমভেডেড থাকে। যাতে আপনি সহজেই ওই ব্যাপারটা জানতে পারেন কিংবা কনফিউশন দূর করতে পারেন।
আপনি যখন খুব বেশি ব্লগে আসক্ত হয়ে পড়বেন, তখন মাঝে মাঝে আপনার বাস্তব জীবনেও এটা হতে পারে। হয়ত খবরের কাগজ পড়ছেন, অপরিচিত কোন জায়গার নাম আসছে, তখন আপনার মনে হতে পারে, এইখানে তো একটা লিংক থাকলে পারত। এটা পাঠ্যবই পড়ার সময় নতুন কোন টার্মের বেলায়ও হতে পারে। ছবিতে লাল মার্ক করা অংশটুকু দেখুন।
এই রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আর প্রমিনেন্ট লক্ষণ হচ্ছে, কেউ যখন অবিশ্বাস কথা বলবে কিংবা আপনার মতের বাইরে গিয়ে নিজের মত প্রতিষ্টা করতে চাইবে, তখন আপনি অজান্তেই বলে উঠবেন। আন্দাজে কথা বলেন কেন, লিংক দেন।
স্ক্রীনশটিজম
এটা মানে হচ্ছে আপনি খুব বেশি স্ক্রীন শটের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বেন। কেউ যখন কথা দিয়ে ভুলে যাবে বা অস্বীকার করবে। তখন আপনার মনের অজান্তেই মনে হবে ইস! যদি স্ক্রিনশট রেখে দিতাম। তবে এখন আর অস্বীকার করতে পারত না। পরক্ষনেই আপনার মনে হবে এটা তো ব্লগ নয়, বাস্তব জীবন।
এইমনেশিয়া
এটা আপনাকে আপনার আগের এইম অর্থাৎ জীবনের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিবে। আপনি হতে আগে হতে চাইতেন ডাক্তার-কবিরাজ-ইনজিনিয়ার-গায়ক-নায়ক-শায়ক। কিন্তু এখন আর আপনার জন্য এইগুলো বেশি গুরুত্বপুর্ণ লক্ষ্য থাকবে না। কিংবা আপনি এইগুলোর জন্য বেশি এফ্রোর্ট দিবেন না। তবে আপনার এইম কী হবে?? এটা দুইভাবে হতে পারে।যদি আপনি পুরান ব্লগার হউন, মানে শাহবাগ আন্দোলনের আগেই ব্লগে আসক্ত হন, তবে আপনি হতে চাইবেন-নাফিস ইফতেখার, ফিফা, দাসত্ব কিংবা এইরকম কোন হিট ব্লগার।
আর যদি গজাম আন্দোলনের পরে ব্লগে আসেন, তবে আপনি সম্ভতঃ ইমরান এইচ সরকার হতে চাইতে পারেন।
সতর্কতাঃ আপনি পুরান ব্লগার হউন আর নতুনই হন উপরের দুইটি যেকোন একটি কিংবা দুইটি এইম যে আপনি ঠিক করবেন না, তা কিন্তু না। উপরে শুধু বেশি সংখ্যক ব্লগারের প্রবনতার একটা তুলনা করা হয়েছে মাত্র।
পলিটক্যাল ইনটক্সিকেশন
আপনি হয়ত বাস্তব জীবনে রাজনীতির প্রতি তেমন কোন আগ্রহই রাখতেন না। আপনার এলাকার চেয়ারম্যান কিংবা কমিশনারের নামও জানতেন না। কিন্তু সামুতে আসার পর আপনি রাজনীতির প্রতি ব্যাপক আগ্রহী হয়ে পড়বেন। হাতি-ঘোড়া মেরে পোস্ট দিবেন। হাম্বা-ছাগু-বাম-জাতীয়তাবাদীদের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে পড়বেন।
ডিসক্লেইমারঃ উপরের সবগুলো রোগ যে সবার মধ্যে থাকবে কিংবা সমান মাত্রায় থাকবে-তা কিন্তু নয়। এক বা একাধিক কিংবা সবগুলো রোগই থাকতে পারে। আবার নাও পারে। ব্লগার বিশেষে রোগের তীব্রতার রকমফের হতে পারে।
কি! টেনশিত হয়ে পড়ছেন?? দূর এইটা একটা আজাইরা ফানপোস্ট পোস্ট। মৃত-জীবিত-বিবাহিত কিংবা অর্ধমৃত কারো সাথে এটা মিলে গেলে তা কোন কাকতাল নয়। বরং যার সাথে মিলে যাবে তার দোষ।
ফানও কিন্তু সত্যি হয়ে যায়,
ছোট ছেলেও একদিন বাবা হয়ে যায়।
আ,আ,আ..............আ.আ।
লালা লা, লালা লা...........।
পিক ক্রেডিটঃ বিটস্ট্রীপ
নামকরণে সাহায্যঃ উকিপিডিয়া ও মেডিক্যালের এক বান্ধবী
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:২৭