তেজগাঁয়ের একটি বিখ্যাত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য কিছু করার জন্য যখন ব্যাকুল হয়ে আইডিয়া খুজে মরছিলো,







অবশেষে পবিত্র দিন দেখে তারা ১৫ জন (১৩:২=পুরুষ:নারী) নেমে পড়ল দেশপ্রেমে। সেদিন ছিল মহান একুশে ফ্রেব্রুয়ারী ২০১৪ সাল। ১৯৫২ সালের পরে বাঙ্গালির জীবনে এত তাৎপর্যময় একুশে ফ্রেব্রুয়ারি আর আসেনি। লুপ্তপ্রায় বাংলা সিনেমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছে সারাদিন হলিউড-তামিল-বলিউড ঘুরা ১৫ যোদ্ধা। সকাল দশটায় তারা গিয়ে হাজির হলো বলকা সিনেমার হলে সামনে। সেখানে হাজির হয়ে সবার চোখে জল চলে আসার অবস্থা। এই সেই নিউমার্কেট এরিয়া। যেখানে তারা এর আগে এসেছে সেই প্রাগতৈহাসিক কালে পাইরেসি করা হলিউড-তামিল-বলিউডের আর বিশেষ ধরনের নীল-লাল-খয়েরী সিডি কিনার জন্য। তাদের মধ্যে একজন যে সালমান খানের একজন মরন হৃদয় (ডাইহার্ট) ফ্যান, যে সালমানের হিসু করা দেখেও আনন্দে থ্রী কোয়াটার খুলে ফেলে সে বলে বুড়িগঞ্জার অপর পাশ থেকে আসা ছেলেটাকে চল সিগারেট ফুকে শুরু করি আজকের এই বাংলা সিনেমা নামক প্যারার যাত্রা।
১০ঃ১০ মিনিটে সবাই তিনবার দুরুদ পড়ে বলাকার ভিত্রে প্রবেশ করে। আসন খুজে ভেতরে বসার সময় তাদের কানে ভেসে আসে একটি শব্দ, এই পিচ্চি পোলাপাইনের সাথে বসে কেমন করে সিনেমা দেখব। ডিজে নামক বগার মত দেখতে ছেলেটা সাথে সাথে প্রতিউত্তরে বলে উঠে সাইজ ডাস নট ম্যাট্যার ফর চপ উড। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে তারা সবাই আনন্দের আপ্লূত হয়ে পড়ে। তাদের পিছনের পুরোটা জুড়ে রয়েছে ইডেন থেকে আসা চিয়ার্স লেডিরা।






জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে সিনেমা শুরু হয়, আর সবাই ফিরে যায় তাদের স্কুলের জীবনের স্মৃতিতে। এসেমব্লি করার সেই প্যারার দিনে। শীতের রোদে কপালের সামনে সুর্যকে রেখে প্রতিদিন সঠান দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া কে পেইন মনে হলেও কিন্তু আজকে সবাই খুব সহাস্যেই দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে শ্রদ্ধা জানায়।
মর্নিং শোজ দ্যা ডেই। সিনেমার শুরুটা দেখেই সবাই নড়ে চড়ে বসে।
সিনেমার কাহিনী, সেই গতানুতিক বাংলা সিনেমার মতই। গুন্ডারা নায়িকার মা-বাবাকে মেরে ফেলে। মেয়েটি বড় হয়ে তার প্রতিশোধ নেয়। কিন্তু পরিচালকের মুন্সিয়ানায় এই সিনেমাটি হয়ে উঠেছে অনন্য।



চমৎকার লাল একটা ড্রেস পড়ে সিনথিয়া নামক এক লালপরি দেখা করতে যায় গাউস নামক এক আমেরিকা ফেরত ব্যবসায়ীর কাছে- যে কিনা । আহা কি সুন্দর মেয়েটার ব্যাক ভিউ। রিসিপসন থেকে গাউসকে ইনফর্ম করা হলে, সে বলে দেয় সিনথিয়া নামের কাউকে সে চিনে না। কিন্তু ওয়েব ক্যামে ব্যাক ভিউ দেখে সে তার মন পালটায়। রিসিপসনিস্ট মেয়েটিকে বলে সিনথিয়ার চেহেরা তোর চেয়ে ভালো হলে ভেতরে পাঠিয়ে দে। এই ডায়লগ শুনে পুরো হলো চিল্লানো দিয়ে উঠে আর, এটা ছিলো শুরু। সারা সিনেমা জুড়েই সবাই চিৎকার করেছে। যদিও তেজগাঁয়ের বিখ্যাত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চেয়েছিল চিল্লানোতে তারা প্রথম হবে, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার শিরোপাটা নিয়ে গেছে ইডেন কলেজ।




তারপর মাহির লিফটে এন্ট্রি, আর লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যাবার একেবারে শেষ মুহর্তে মাহিকে পর্দায় উপস্থাপনে পরিচালক যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তা একেবার অনন্য। বাংলা সিনেমায় এই রকম দৃশ্য খুব কমই হয়েছে। পুরা হলিউড মানের।


গাউস যে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে, দেশি মুরগী খাওয়ার জন্য, কারন ফার্মের মুরগী খেতে খেতে তার রুচি নস্ট হয়ে গেছে।



একশন দৃশ্যের চিত্রায়ন ছিল বাস্তবসম্মত ও সুন্দর। মাহির ডেলিভারিও ছিল সেই, এক্কেরে সেই।
তারপরেই মাহিকে চলে যেতে হয় থাইল্যান্ড। কারন সেখানেই বর্তমানে থাকে তার সব টার্গেট- গুলজার গংরা।
থাইল্যান্ডে ইতিমধ্যে গুলজার গংদের মাঝে পৌছে যায় তাদের পার্টনার মারা যাবার খবর। তখন তাদের বস, মিশা সওদাগর নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শঙ্কিত হয়ে পড়লে গুলজার রুপি আলী রাজ জানায় যে তাদের কোন ভয় নেই। কারন ড্রাগন তাদের নিরাপত্তা দেবে। কে এই ড্রাগন? ড্রাগন হচ্ছে, থাই বক্সিং এ দুইবার চ্যাম্পিয়ন আরেফিন শুভ। আরেফিন শুভর পর্দায় এন্ট্রিটা অসাম ছিল। এইটার জন্য পরিচালক ধন্যবাদ পেতেই পারেন।
ইতিমধ্যে ঢাকার বলাকা প্রেক্ষাগৃহে শুরু হয়ে গেছে সেই মানের টু ভার্সেস টু।






থাইল্যান্ডে এসে এক উইকেট ফেলে দেয় তানিশা মানে মাহি। কিন্তু স্লো বলার করার কারনে পিছনে পিছনে বাইক নিয়ে দৌড়েও ড্রাগন ধরতে পারে না। বাইক নিয়ে রেসটা অনেক দিন মনে থাকবে। কিছুক্ষন বাইক রেস করার পর মাহি লুকিয়ে পড়ে এবং তার ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলে। কিন্তু আরেফিন শুভ রুপি ড্রাগন চুপি চুপি এসে অস্ত্র তাক করে তো অবাক হয়ে যায়। কোথায় সেই কিলার মেয়ে, এই তো দেখি লালপরি। আর মাহিও বাচ্চা মেয়েদের মত বাচাও বাচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। যেন জীবনেও সে অস্ত্র দেখে নাই। এইম্নেই মরে পোলাপাইন। রুপের মোহে পাগল হয়ে যায়। কেন ভাই জানস না তোর হৃদয় নাই, মাথা আছে মাথা খাটা। হৃদয় কেন খাটাইতে যাস।



তারপর কাকতালীয়ভাবে ড্রাগনের বাসায়ই সাবলেট থাকে মাহি। আর অনেক জোস অভিনয় করতে থাকে যে সে অস্ত্র দেখলে ভয় পায়। কিলার এই মেয়েটাকেই ভালোবেসে ফেলে ড্রাগন। কিন্তু ফুলের বদলে সকাল বেলা অস্ত্র নিয়ে গিয়ে আবারও অজ্ঞান করে ফেলে মাহিকে।



ইতিমধ্যে সব খোলাসা হয়ে যায়, গুলজার গংদের কাছে। আর ড্রাগনের বাসায় সাবলেট থাকার কারনে তাকেও ভুল বুঝে গুলজার গং। আর মেরে ফেলে ড্রাগনের বাংগালি মামা আর থাই মামীকে। বিশ্বাসের প্রতিদান না পেয়ে আর ভালোবাসার জন্য বেইমানী করতে বাধ্য হয় ড্রাগন। আটকে রাখা মাহিকে উদ্দার করতে যায় ড্রাগন। এইখানে অনেক ভালো চিত্রায়ন করেছেন পরিচালক।
আর এইভাবে শেষ হয় একটি সফল বাংলা সিনেমার দেখার মিশন। যখনই পর্দায় মাহি-শুভর রসায়ন দেখানো হয়েছে (যদিও পরিমানে কম) তখনই আমরা চিল্লানো দিয়ে উঠেছি ফিলিং মারুফ বলে। আর কোন দৃশ্য একটু বাজে হলে হালায় পুরাই বস্তি বলে।
সিনেমার ভালো দিকঃ
- মাহির অনেক ভালো ফাইট করেছে।
- আরেফিন শুভর অভিনয় অসাধারণ, বাংলার নেক্সট সালমান।
- ছোট কালের মাহির অসাধারণ অভিনয় (মেয়েটা ব্যাফুক সুন্দর)।

- গানের দৃশ্যায়ন, কথা, সুর চমৎকার।
- ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিকে ব্যাফুক পরিবর্তন।
- প্রথম থেকেই নায়ক-নায়িকার রোমান্স না দেখানো। (ইনফ্যাক্ট এমন কোন দৃশ্য নেই, খালি লাস্ট সিন ছাড়া)
- তুমারে ছাড়া বাচুম না, এমন ডায়লগ না থাকা।
- চিত্রায়ন, ক্যামেরার কোয়ালিটি জোস।
সিনেমার খারাপ দিকঃ
- কলাম্বিয়ানা মুভির কাহিনী মেরে দেওয়ার একটু ট্রাই করা। (বলিউড এমন অহরহ করে)।
- থাই ভাষা ব্যাবহারের সময় সাবটাইটেল না দেওয়া।
- কাবিলা ও তার থাই বউয়ের মধ্যকার বাংলা-থাই গ্যাঞ্জাম।
- মাহির একই এক্সপ্রেশোন বার বার দেয়া।
- আর মাহির পা বার বার দেখানো। গানে, একশন দৃশ্যে, নরমাল কথা বার্তায় মাহির পাকে কেন জানি বার বার দেখানো হয়েছে।
- আরেফিন শুভর বারবার স্টপ, স্টপ ডায়লগটাও কানে লাগছে।
- সিনেমার চলাকালীন সময়েই ওয়েলকাম টিউনের এড দেয়া।

র্যাকিংঃ
৯.৫/১০ (ব্যক্তিগত)
ভালোমানের একটি একশন মুভি বলতে যা বোঝায় তার সবই করার চেস্ট্রা করা হয়েছে এই মুভিতে। সময় থাকলে দেখে আসতে পারেন। সময় কিংবা টাইম কিছুই নষ্ট হবে না। খালি মাহির দিকে নজর দিয়েন না। মাহি কিন্তু আমার ক্র্যাশ ভাইয়েরা। গরিবরে মাইরেন না।


