বিক্রমপুর একটি সমৃদ্ধ জনপদ। সুদূর অতীতে এটি ছিল বজ্ঞ ও সমতট অঞ্চলের রাজধানী। প্রাচীন তাম্রলিপিতে একে "শ্রীবিক্রমপুর-সমাবাসিত-শ্রীমজ্জায় স্কন্ধবারাত" অর্থাৎ ভিক্টরি ক্যাম্প হসেবে এবং কোন কোন লিপিতে একে "শ্রীবিক্রমণিপুর" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীনকালে ভিক্টরি ক্যাম্প আর রাজধানী সমার্থক ছিল। এক সময়ের "বিক্রমপুর ভুক্তি" মোগল আমলে সুবাহ বাংলার একটি পরগনা হিসেবে গন্য হত। যা পূর্বে মেঘনা- বক্ষ্রপুত্র থেকে পশ্চিমে পদ্মা নদী ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, উত্তরে বুড়িগঙ্গা-কেরানীগঞ্জ-সাভার এবং দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কোটালিপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো।উনিশ শতকেও উত্তর ও দক্ষিনে বিক্রমপুর হিসেবে এই জনপদটি পরিচিত ছিল। ১৮৬৯ সালের ভূমিকম্পে পদ্মা নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় উত্তর ও দক্ষিন বিক্রমপুর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়। এখন মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৫ টি উপজেলায়ই (উত্তর বিক্রমপুর) কেবল বিক্রমপুর নামে পরিচিত।
এমন একটি এলাকায় কাজিনের বিয়ের দাওয়াতে যাব, আর ঐতিহ্য নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করব না, তা হয় নাকি?
আমার ভাগ্য ভালোই ছিল, তের ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে নেমেই একটু হিন্ট দিতেই সেই এলাকার মানুষ জন আমাকে এক স্বর্গের খোজ দিলেন। বাড়ির খুব কাছেই পেয়ে গেলাম একটি হারানো ইতিহাসে সন্ধান। নাম যদিও এখনও ঠিক হয় নাই,(স্থানীয় লোকজন দেউল বলে ডাকে) আমি নাম দিয়েছি নাটেশ্বর বিহার। কারন এটি পাওয়া গেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় সোনারং ইউনিয়নের নাটেশ্বর গ্রামে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে সেখানে ঘুরে আসলাম, ভালোই কাটল এইবারে ভালোবাসা দিবস।
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের "বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্তিক খনন ও গবেষনা" নামক প্রকল্পের আওতায় (প্রকল্প পরিচালক নূহ-উল- আলম লেলিন) কয়েকদিন ধরে এইখানে খুড়াখুড়ি চলছে। খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ।
তাই খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। কোন মিডিয়ায়ও আসেনি। তবে চলুন দেখে নিই কিছু ছবি।
প্রবেশ মুখেই রয়েছে একটি ডোবা, যাতে চলছে খুড়াখুড়ি।
জাহাঙ্গীর নগরে শিক্ষার্থী সাহায্য করছে লুপ্ত ইতিহাস বের করতে।
খননের একটি ধাপ।
পুরোদমে চলছে খনন কার্য, তাই বলে কি ক্যামেরাতে মুখ দেখানো যাবে না!!
বেরিয়ে আসছে ইতিহাস।
পুরো প্রকল্প এলাকা জুড়ে রয়েছে বাঁশ আর কলাবাগান।
প্রাপ্ত প্রাচীন ইট।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের থাকার তাবু।
এই পুরো এলাকায় আছে খননের অপেক্ষায়।
অনেক সুন্দর ঘর, যার মালিক মন্নাফ শেখের আতিথেয়তা ভুলার নয়। এটি প্রকল্পের সামনেই অবস্থিত।এরকম অসংখ্য ঘর রয়েছে এই এলাকাতে।
একটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পারবেন পানের বরজ।
আরেকটু এগিয়ে গেলেই দেখতে পারবেন, মন্দির। বাংলার আইফেল টাওয়ার।
মন্দিরের সাথে লাগোয়া সান বাধানো ঘাট।
পুকুর পাড়ে দুই কিশোরী।
সাকো পাড় হবার পরীক্ষাটাও দিয়ে দিতে পারেন।
আমার ভ্রমণসঙ্গী আমার ভাতিজী।সারাক্ষন খালি পায়ে দৌড়েছে, সেই উৎসাহ। যার মতে এই রাজপ্রসাধে রাজকন্যাকে আটকে রাখা হয়েছে।
যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকার গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারের কাছ থেকে টঙ্গিবাড়ির বাসে উঠে যাবেন, ভাড়া নেবে ৬০ টাকা। ২ ঘন্টার মত লাগবে। দু ধরনের বাস পাওয়া যায়। একটা জিঞ্জিরা-সিরাজদিখান হয়ে যায়। আরেকটি পোস্তগোলা-মুক্তারপুর হয়ে যায়। প্রথমভাবে গেলে সোনারং বাস স্টান্ডে নেমে রিকশা করে চলে যাবেন নাটেশ্বর প্রাইমারি স্কুলে। তার পাশেই অবস্থিত এই পুরাকীর্তি।
দ্বিতীয়ভাবে গেলে বাহার পাড়া বাস স্টান্ডে নামবেন। সেখানে থেকে হেটে বা রিকশায়ই যেতে পারবেন।
স্থানীয় মানুষজন একে দেউল বলে।
কি কি দেখবেনঃ
পুরাকীর্তি, মন্দির, পানের বরজ, আর বিস্তীর্ন আলুর চাষের জমি। যা আপনার মন কেড়ে নিবে। একটু এগিয়ে গেলে দেখতে পারবেন মীরকাদিমের বিখ্যাত ষাঁড় পালন। আর এইখানকার লোকের আতিথিয়েতার তো কোন তুলনা নেই।
দিন গিয়ে দিন ফিরে আসতে পারবেন।
সাবধান বানীঃ
স্থানীয় লোকজন একে দেউল নামেই চিনে। আর প্রকল্পের কাজ খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। তেমন কিছুই জানা যায়নি।
গবেষনা, অনুসন্ধান ও খননঃ
গবেষনা পরিচালকঃ ড সুফি মোস্তাফিজুর রহমান। ।
গবেষকঃ ঐতিহ্য অন্বেষণ
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রত্নত্তত্ব বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
দেখতে পারেন এটিওঃ আবিস্কৃত হলো বিক্রমপুরী বৌদ্ধবিহার