বই পড়তে কে না ভালোবাসে ? প্রিয় লেখকের বই হাতে পেলে অনেকে এক নিমিষে শেষ করে ফেলেন, রহস্য উপন্যাসের পাঠকেরা সাধারনত এই কাজটি বেশি করেন। কিন্তু বই নিজেই যখন রহস্য হয়ে দাড়ায় তখন কেমন লাগবে পাঠকের কাছে ? বই কি কখনো রহস্য হয়ে উঠতে পারে ? হ্যা পারে । আসুন জেনে নেই কিছু রহস্যময় বই এর ঘটনা।
রহন্ক কোডেক্সঃ
চিত্র এবং অক্ষরের সমন্বয় এই বইটি লিপীবদ্ধ ,বইর লেখকের কোন পরিচয় জানা যায়নি। জানা যায়নি কোন ভাষায় বইটি লেখা হয়ে সেই ভাষাটিও। অনেকে ধারনা করেন প্রাচীন হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় বইটি লেখা হয়েছে যে ভাষার অক্ষরগুলো বর্তমানে বিলুপ্ত। ১৮০০ শতকের দিকে বইটি খুঁজে পাওয়া যায় হাঙ্গেরিয়ান ধনকুবের কাউন্ট গুস্তাব বাটিয়ানির লাইব্রেরিতে। । কি নেই ৪৪৮ পাতার এই বইতে !খ্রিস্ট ধর্মীয় সিম্বল সহ আছে নানা রকমের জলছাপ দেওয়া সিম্বল , জাহাজের নোঙর, হুইল , রাজকীয় সেনাবাহিনীর চিত্র, ল্যান্ডস্কেপ গাছ পালা সহকারে বর্ননা। কিন্তু কি লেখা আছে সেই বর্ননায় তা আজও পাঠোদ্ধার হয়নি।
হাঙ্গেরি একাডেমি অফ সাইন্স লাইব্রেরিতে বইটি সংরক্ষিত রয়েছে।
কোডেক্স সেরাফিনিসঃ
রহস্যময় বইর লেখকের সন্ধান জানতে পারলে ভালোই লাগে কি বলেন ?১৯৮১ সালে কোডেক্স সেরাফিনিস বইটি লিখেছিলেন ইটালিয়ান চিত্রশিল্পী আর্কিটেক্ট এবং ইন্ডাসট্রিয়াল ডিজাইনার লুইগি সেরাফিনি। ৩৬০ পাতার এই বইটি সম্পুর্ন হাতে লিখতে তার সময় লেগেছে আড়াই বছর। বইটির মুল বৈশিষ্ঠ এটি একটি এনসাইক্লোপেডিয়া, মানুষের দেহের এনাটমি তথ্য সহ শুরু করে ফ্যাশন , জীবন যাত্রা সবই তুলে ধরা হয়েছে আধুনিক এনসাইক্লোপেডিয়ার মতো। তবে এর মধ্যে সন্নিবেশিত চিত্র গুলো বড়ই অদ্ভুত। দেখলেই বুঝতে পারবেন। লেখক কেন কি কারনে এই ছবি গুলো এঁকেছেন তা আজও রহস্য রয়ে গেছে। সাইফার এলফাবেট এনকোডিং পদ্ধতিতে বইটি লেখা হওয়ার কারনে আপাত দৃস্টিতে পাঠক বইটিতে যা পড়ছেন বাস্তবে আসলে ভিন্ন অর্থ বুঝাচ্ছে। এখন এই ভিন্ন অর্থটি আসলে কি তা প্রকাশ করেন নি এই পাগলা চিত্রশিল্পী।
কোডেক্স মেনডোজাঃ
কোডেক্স মেনডোজা হলো এজটেক ইতিহাসের একটি পর্ব। ১৫২১ এর দিকে স্প্যানিশদের মেক্সিকো আক্রমনের সময় এই বইটি স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্ল্স এর হাতে আসে। বইটিতে এজটেকদের দৈনন্দিন জীবন, সমর কৌশল, রাজনিতী, দেশ পরিচালনার ইতিহাস সহ অনেক তথ্য লিপীবদ্ধ আছে। সেই সাথে আছে সেই সময়ের মানুষ সহ বিভিন্ন বস্তুর চিত্র , যা দিয়ে এজটেক আমলের বিষয়ে অনেক কিছু ধারনা করা যায়।
বইটি মোট ৭১ পৃষ্ঠার এবং ৩টি অধ্যায়ে বিভক্ত।
বুক অফ সোয়েগাঃ
যাদু বিদ্যার উপরে লিখিত এই বইটির যতোটুকু অংশ পাঠোদ্ধার করা হয় সেটুকু লিখিত ছিলো প্রাচীন হিব্রু ভাষাকে উল্টো করে লিখে। বইটির ইতিহাস খুঁজলে জানা যায় এর কয়েকটি কপি ছিলো যার একটি ছিলো ডন ডি নামের একজনের কাছে , যিনি ছিলেন ইংরেজী গনিতবীদ , এস্ট্রলজার , এস্ট্রনমির পন্ডিত, এবং কুইন এলিজাবেথ এর উপদেস্টা। এরপর হাতে লেখা এই ম্যানস্ক্রিপটির দুইটা কপি পাওয়া যায় ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে। বইর লেখকের নাম জানা যায়নি তবে যাদুবিদ্যার কৌশল, শয়তানের উপাসনা, এস্ট্রলজি ও এস্ট্রনমি ছিলো বইটির মুল কন্টেন। বইটির সম্পুর্ন অনুবাদ সম্ভব হয়নি।
ভয়নিক ম্যানস্ক্রিপ্টঃ
অজানা ভাষা আর অজানা লেখকের লেখা এই বইটির কার্বন টেস্টে জানা যায় ১৫ শতকেরও আগের লেখা এই বই। বইটির শুরুর দিকের পাতায় দেখা যায় কতো গুলো গাছের ছবি , গাছ গুলোর কোন অস্তিত্ব নাই বলেই গবেষকরা মন্তব্য করেছেন। ২য় অধ্যায়ের দিকে দেখা যায় একটা বৃত্তাকার ডায়াগ্রাম যা রাশি চক্র বিষয়ক বলে ধারনা করা হয়।৩য় অধ্যায়ে কিছু উলঙ্গ নারীর ছবি আছে যার অর্থও বোধগম্য নয়। ১৯১২ সালে একজন পোলান্ড বই ব্যবসায়ী কিছু পুরাতন বই কিনে তার মধ্যে এই বইটি পেয়েছিলেন।
কোডেক্স গিগাসঃ
বইটির অপর নাম শয়তানের বাইবেল, রহস্যময় বই গুলোর মধ্যে এটিই সবচাইতে বেশি আলোচিত। ধারনা করা হয় ১২০০ শতকের সময় , চামরা দিয়ে পৃষ্ঠা আর কাঠের উপর বিভিন্ন ধাতুর দ্বারা এর মলাট প্রস্তুত করা হয়। কথিত আছে ৩১০ পৃষ্ঠার পার্চমেন্ট কাগজের ৭৪ কেজি ওজনের বইটি তৈরীতে ১৬০ টি গাধার চামরার প্রয়োজন পরেছে। বর্তমানে বইটির অনেক পৃষ্ঠা গায়েব , গবেষকদের মত্যে শয়তানের সাথে যোগাযোগের বিস্তারীত আলোচনা অই পৃষ্ঠাগুলোতে ছিলো।
বইটির উদ্ধারকৃত কন্টেন গুলো কিকি ?
বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত বস্তু দিয়ে ওষুধ প্রস্তুত , অশুভ শক্তির আছর ছারানো , মেডিকেল সাইন্স এর সাথে মিল রয়েছে এমন কিছু টপিক অশুভ লুসিফার বিষয়ক অনেক তথ্য বইটিতে রয়েছে।
বইটির লেখক কে ছিলো?
বিভিন্ন ধারনার মধ্যে এই ধারনাটিকেই গ্রহনযোগ্য ধরে নেয়া হয় যে, বর্তমানের চেক রিপাবলিকের একটি গ্রামের চার্চে ছিলেন এক সাধু , চার্চের কিছু গুরুত্বপুর্ন নিয়ম ভংগ করার জন্য তাকে একটি ঘরের মধ্যে স্বেচ্ছায় বন্দিত্বের শাস্তি দেয়া হয়।
বন্দি থাকা অবস্থায় সাধুর সাথে শয়তান লুসিফার যোগাযোগ করে এবং বইটি লিখার জন্য অনুরোধ জানালে সাধু বইটি লেখার কাজ শুরু করে। অনেকে বলে এক রাতের মধ্যে বইটি লেখার কাজ শেষ হয় আবার অনেকে বলে ৩০ বছরের কাছা কাছি সময় লেগেছিলো।
বইটির পরীক্ষা করে দেখা যায় এটির লেখক একজনই , বইতে লেখার পাশা পাশি বিভিন্ন ধরনের চিত্র আঁকা হয়েছে, বইর প্রথম পরিচ্ছেদে শয়তান লুসিফারের একটি পোটরেইট রয়েছে। এছারাও যাদু বিদ্যার টিউটোরিয়াল বুঝাতে রয়েছে অনেক অদ্ভুত ছবি। বইতে জেরুজালেম নগরের ছবিও রয়েছে বলে জানা যায় ।
বইটি বর্তমানে সুইডেনের স্টকহোমের জাতীয় লাইব্রেরিতে বইটি রয়েছে।
সংক্ষেপিত আকাড়ে তথ্য গুলো দেয়ার কারনে হয়তো বিষয় বস্তু সম্পুর্ন তুলে ধরতে পারিনি কিন্তু আমার লেখা থেকে সব জেনে গেলে হবে ? নেটে সার্চ দিয়ে এই টপিকে আরও নতুন তথ্য খুঁজে বের করার জন্যই তথ্য সংক্ষেপিত করা হয়েছে ।
সুত্রঃ
উইকি
গুগল
জিন্দ্রিচ মারেক
জোসেফাইন লিভিংস্টোন
ইয়েল ইউনিভার্সিটি (নিউ হাভেন আমেরিকা)
হিলারি সল্টারব্রেক (এরিজোনা আর্ট একাডেমি আমেরিকা।)
কোডেক্স ম্যানডোজাঃ এজটেক ম্যানস্ক্রিপ্ট (লেখক রস কোর্ট)
[ একটা মজার বেপার কি জানেন ? সামুতে নিক খোলার পরে এই লেখাটি ই ছিলো আমার প্রথম পোস্ট। কিন্তু লেখাটি গুছায় লিখতে পারি নাই আর ছবি ইনসার্টেও প্রবলেম ছিলো তাই পোস্ট করা হয় নাই । এর মধ্যে আমার দুই ফ্রেন্ড তারাও সামুতে নিক খুলে কিন্তু তারা জেনারেল না হওয়ায় কাউকে মন্তব্য দিতে পারতো না, পোস্ট দিতে পারতো না তাই তাদের হয়ে , তাদের লেখা পোস্ট আমার নিকে পোস্ট দিতাম আর তাদের লেখা মন্তব্য তাদের পছন্দের লেখকের পোস্টে গিয়ে পোস্ট করে দিতাম। ওদের যন্ত্রনায় আমার মন মতো লেখা পোস্ট দিতে পারতাম না , যাই হোক সেই নিকটি আমার ব্যান হয়েছিলো , আর আমার বন্ধু দুটিও এখন ব্লগ এর প্রতি আগের মতো আকর্ষন বোধ করে না , কিন্তু আমি এখনও রয়ে গেছি। নিকটির নাম ছিলো রাফাত নুর ]
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:৪৭