রবীন্দ্রনাথ বললেন, আমি কখনওই চাই নাই শস্য শ্যামল ঢাকা কখনও শহর হয়ে উঠুক। রাজধানীতো দূর কি বাত!
কৌতুহলী হইয়া জিগাইলাম, এয়সে নেহি বলতা হায় ঠাকুর সাহাব। কটমট করে তিনি আমার দিকে তাকালেন, দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, আমি বাংলা ভাগের বিপক্ষে। কলকাতাকে ফেলে যখন তোমরা পশ্চাদমুখী ঢাকাকে রাজধানী করলা, তখন আমি দুঃখে লিখলাম, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’। লিখলাম, আমার সোনার বাংলা। অনুমতি না নিয়াই তোমরা সেইটারে জাতীয় সঙ্গীত বানাইলা, তোমরা কতোটা জাতীয়তা বোঝো, দেখলাম!
‘এটাই আপনার সেই আসল বাংলা, ওপারেরটা ইন্ডিয়া।’ চোখেমুখে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ফুটাইয়া স্মার্টলি জবাব দিলাম ঠাকুর সাহাবরে। এবার দরবেশের বেশ ছাড়লেন রবীন্দ্রনাথ। চুলগুলোকে মাথার ওপরে হিন্দু মনিঋষিদের মতো করে বাঁধলেন, দাড়িতে জট পাকালেন। লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কি দেখিতে পাইতাছো বৎস? কইলাম, বন্দে মাতারাম!!!
এবার আসল প্রশ্নটা ছুড়লেন রবীন্দ্রনাথ। বললেন, Saif Ibne Rafiq, ইসলামী নাম নিয়া মুক্তচিন্তা মারাও। আগে বলো, আমার অনুমতি না নিয়া ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটারে জাতীয় সঙ্গীত বানাইসো, এইটা গাইয়া ‘বন্দে মাতারাম’বিরোধী স্লোগান দিসো, কিছু কই নাই। কিন্তু ৩ লাখ মানুষের কণ্ঠে গানটা গাইয়া বিশ্বরেকর্ড করার অনুমতি তোমাগো কে দিলো?
আক্রান্ত হইসি, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এবার আমার পাল্টা আক্রমণের পালা। কইলাম, লম্বা দাড়ি রাইখ্যা ‘হিন্দু’ সাজবার চান ক্যামনে? গুরু, ভণ্ডামিতো আপনার কাছেই শিখছি। আপনেতো হিন্দু না, একেশ্বরবাদী ব্রাহ্ম ছিলেন। এ আমলে যেমন কাদিয়ানিরা মুসলিম ফ্লেবারে সংখ্যালঘু সুবিধা নেয়, সেই আমলেতো আপনারা ব্রাহ্মরা সেই সুবিধা নিতেন। জমিদারি বেইচ্যা সাহিত্য উদ্ধার করছেন, বাঙালিরে ব্রিটিশদের যোগ্য চাকর বানানোর ইজারা নিছিলেন। ইউনূসের স্টাইলে ক্ষুদ্রঋণের চর্চাও নাকি করছিলেন। নাইট উপাধি ফিরাইয়া দেওয়ার স্ট্যান্টবাজি করছেন, কই, নোবেলটাতো ঠিকই নিলেন। বিলেত যাইয়া জায়গা মতো এর জন্য তেলও দিসেন।
ঠাকুর সাহাব, সিন্ধু নদীরে পাকিস্তানে রাইখ্যা আপনার হিন্দুস্তান শুদ্ধ হইলো কেমনে? আমার মাথায় আইতাছে না। আপনার ভারতমাতা বন্দে মাতারাম আসলে কোনও দেশ নয়, এটা স্রেফ ব্রাহ্মণদের একটি সাম্রাজ্যবাদী ধারণা। কলকাতা থেকেও বাংলা ফুরাইয়া গেছে, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে সেখানে জাভেদ আখতারের হিন্দি গান বেশি চলে।
আমার চরম বেয়াদবি আচরণে জোরে জোরে কাদতে শুরু করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! মনটা খারাপ হইয়া গেলো, কিন্তু জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে বাপরেও ছাড় দিতে রাজি না, ঠাকুর কোন ছাড়।
খারাপ একটা মন নিয়েই বিছানা ছাড়লাম। স্বপ্নের ধাক্কাটা এখনও মগজে! যা, দিনটাই আজ খারাপ যাবে।