সিনেমার নাম রঙ রাসিয়া,পরিচালক কেতন মেহতা, যদিও সিনেমাটি তৈরী হয়েছিল ২০০৮ সালে কিন্তু নানা প্রকার আইনি জটিলতার কারনে মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়নি।সিনেমাটি প্রথম প্রিমিয়ার হয় কান ফেস্টিভ্যালে।অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০১৪ সালে সিনেমাটি মুক্তি পায় ভারতে। পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে কেন এত দিনের অপেক্ষা? কেন সিনেমাটি আইনি জটিলতায় পড়েছিল? তার উত্তর হচ্ছে, সিনেমাটিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অশ্লীলতা দেখানোর অভিযোগ।
যাক এবার সিনেমার গল্পে আসি।সিনেমাটি তৈরী হয়েছে উনিশ শতকের একজন চিত্রকরের জীবনী থেকে যিনি সর্ব প্রথম হিন্দু ধর্মের দেব দেবীদের ছবি আকেন।সে সময় এত সাহস করে ধর্মীয় বিষয়ে কোন কিছু নতুন করে করা বিশাল একটা সাহসী পদক্ষেপ ছিল সে বলতেই হবে।নায়ক রাজা রবি ভার্মার জীবনে দেব-দেবীদের এই ছবি আঁকার ফল প্রথমদিকে প্রেরণাদায়ক হলেও পরে তা আর সেই অবস্থানে ছিল না। একদল উগ্র হিন্দু এই ছবি আঁকার বিষয় মেনে নিতে পারে না। যার ফলাফল চিত্রকর রাজা রবি ভার্মাকে আইনি জটিলতার দিকে ঠেলে দেয়।সামাজিকভাবে বিভিন্ন সময় হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়।অপরদিকে তার আঁকা ছবি দেখে তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অংশ যেন তাদের ধর্মে এক নতুন প্রাণ খুজে পায়।
গল্পের নায়িকা নন্দনা সেন ওরফে সুগন্ধা কে মডেল হিসাবে ব্যাবহার করে চিত্রকর রাজা রবি ভার্মা দেবীর যে ছবি আঁকেন যা একাধারে পুরষ্কৃত এবং তিরষ্কৃত।ছবি আঁকতে আঁকতে একটা সময় নায়কের সাথে নায়িকা সুগন্ধার প্রেম হয়,এবং যতটা গভীর হতে পারে নারী পুরুষের সম্পর্ক ততখানিই।সিনেমার শেষ দিকে এই ছবি আঁকার মূল্য নায়িকা নিজের জীবন দিয়ে তাতে প্রাণ দিয়ে যান।অবশ্য এমনটি হবার অনেক কারণ ও ছিল। বিবাহবহির্ভূত ভালবাসা,প্রেমিকের কাছে ভালবাসার মূল্য না,সামাজিক প্রতিবাদ ইত্যাদি।রাজা রবি ভার্মার জীবনে কেবল সুগন্ধা নয় আরো দুই জন নারী ছিল,তা জানতে হলে দেখতে হবে রঙ রাসিয়া সিনেমাটি।এই ছিল গল্পের সারমর্ম।
সিনেমাটিতে প্রথমদিকে খানিকটা একঘুয়েমি লাগলেও ধীরে ধীরে তা কেটে যায়।নায়ক চরিত্রের অতিরিক্ত প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। আর ভালগারিজমের দোষে যে দুষ্ট আসলেই তা সত্য।কিন্তু কাহিনী হিসাবে চমৎকার।একজন চিত্রকরের জীবনী নিয়ে যে এত সুন্দর একটি সিনেমা তৈরী করা যায় তা এই সিনেমা না দেখলে বোঝা যাবে না।সিনেমাটি দেখলে তৎকালীন হিন্দু সমাজের ধর্মীয় অবস্থান সম্পর্কে ভাল একটি ধারণা পাওয়া যাবে।আর সিনেমার গানগুলি বেশ ভাল,আমার কাছে “আনহাদ নাদ” এবং “ও কামিনী” গান দুটি খুব ভাল লেগেছে।
ছবিটির আইএমডিবি রেটিং ৬.৭ ,যা আমার কাছে অবমূল্যায়ন বলে মনে হয়েছে।কাজেই নিজে দেখে নিজের মতামত যাচাই করতে পারেন।হাতে সময় থাকলে আর মুভি লাভার হলে ডাউনলোড করে বসে যান ইতিহাস দেখে আসুন রং রসিয়া পরিচালক কেতন মেহতার হাত ধরে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২১