দুষ্টামিঃ এক শীতের সন্ধ্যায় আমি আর আরিয়ান
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
গতবছর শীতের ঘঠনা। আমি, বোন আর চার বছরের ভাগ্নে আরিয়ান আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গেছি। গল্প করতে করতে একসময় সন্ধ্যা হয়ে যায়।
বাসায় ফেরার জন্য সিএনজি আনতে বের হব এমন সময় আরিয়ান বায়না ধরল সেও আমার সাথে যাবে। মেইন রোডে না আসলে সি এন জি পাওয়া যাবে না। আর বাসা থেকে মেইন রোড খানিকটা দূরেই। ঠান্ডার মধ্যে তাই আরিয়ান কে নিয়ে আসা ঠিক হবে না। আমি তাকে বললাম তোমার যাবার দরকার নাই। আমি যাব আর আসব।
সাথে সাথে সে বলল.. আমিও তোমার সাথে এই যাব, এই আসব।
আমি দেখলাম পোলা তো ভালই ত্যাদর।
এবার একটু ডিফেনসিভ মুডে গিয়ে গলার স্বর যতদূর পারা যায় মোলায়েম করে বললাম, মামা! বাইরে তো ঠান্ডা। ঠান্ডা লেগে তোমার শরীর খারাপ ...।
কথা শেষ করার আগেই তার জবাব, কিচ্ছু হবে না। দেখছ না জ্যাকেট পড়ে আছি।
আমি বললাম, মাথায় তো কিছু নেই। কানও খোলা। কান দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে মাথার ভেতর গিয়ে বাসা তৈরি করে ফেলবে। তখন কিছু শুনতে পাবে না।
সে তখন আমার মাথায় উলের ক্যাপের দিকে ইশারা করে বলল, ওটা আমাকে দিয়ে দাও।
ওটা তোমাকে দিলে আমার কি হবে? আমার তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
অ্যারে না। তোমার কিচ্ছু হবে না। তুমি বড় ব্যাটা না?
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম, এরকম দুষ্টামি করে না। মা জানলে পিটুনি দিবে।
আমার এ কথা সে পাত্তাই দিল না। তার এক কথা, আমাকে নিয়ে যাও।
আমি দরজা খুলতে যাব..এমন সময় তার চিৎকার, এই ব্যাটা আমারে নিয়ে যা।
আমি দেখলাম পোলা তুই তোকারীতে নেমে এসেছে। ফাজিল পোলা। তবে পাত্তা দিলাম না।
আমি দরজা খুলে বের হয়ে আসব..দৌড়ে এসে আমার হাটু জড়িয়ে শুরু করল কান্না কাটি। কান্না জড়ানো কন্ঠে আবদার, মামা! প্নিজ..আমাকে নিয়ে যাও।
কান্না দেখে আমার খারপাই লাগল। কিন্তু করি কি। ফার্মের মুরগ টাইপের এই সব বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে বিরাটা যন্ত্রনা।
কান্না শুনে তার মা সহ অন্যরা এসে হাজির। আরিয়ান তখনো আমার হাটু জড়িয়ে আছে। এটা দেখে অনেকে বিশেষ করে মেয়েরা আফসুস করে বলছে..
আহারে! বেচারার বাইরে যাবার কি শখ। কি হয় একটু নিয়ে গেলে?
তার মা দেখলাম কই থেকে একটা মাফলার এনে মাথা গলা কান ভালভাবে জড়িয়ে দিয়ে বলল, নিয়ে যাও। না হলে আযরাইল ঠান্ডা হবে না।
বাসা থেকে বের হয়ে আরিয়ান আমার হাত ধরে হাটছিল। আমার মাথায় এই সময় একটা দুষ্ট বুদ্বি আসল..আজকে ব্যাটারে একটা শিক্ষা দিতে হবে।
কিছুদূর আসার পর আমি আমার হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।
আরিয়ান ধরার চেষ্টা করল।
আমি হাত সরিয়ে নিলাম।
এবার সে গলার স্বর মোলায়েম করে বলল, মামা..দেখছ...কি অন্ধকার!
আমি শুনেও না শোনার ভাণ করলাম।
সে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বেশ লম্বা করে বলল, মা..মাআআ!
আমি এবার আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, তুমি কে?
সে দেখলাম কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু কিছু বলল না।
মেইন রোডে গাড়ী নাই বললেই চলে। সিলেটে দিনের বেলাই কিছুই পাওয়া যায় না। আর সেটা ছিল শীতের সন্ধা। রাস্তাঘাট পুরোটাই ফাকা। আরিয়ান আমার পাশে দাড়িয়ে আছে। আমি একটু দূরে গেলেই আরিয়ানও আমার সাথে যাচ্ছে। আমি ল্যাম্প পোস্টের পাশে গিয়ে দাড়ালাম যাতে আরিয়ান আমাকে স্পষ্ট দেখতে পায়। এবার শুরু করলাম আসল খেলা।
ইয়াহু বলে..শুন্যে লাফিয়ে উঠলাম। তারপর শুরু করলাম বিড়বিড় করে কথা বলা। আরিয়ান আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তার কাছে গিয়ে চোখ বড় বড় করে, চোখের দুই মণি কে কাছে নিয়ে এসে গলার স্বরকে ভূতুরে করে বললাম, তুই কে রে??
তারপর দুই হাত উচিয়ে বিকট স্বরে বললাম, হালুম!
আরিয়ান...কাঁদু কাঁদু গলায় বলল..মামা! আমি ভয় পাচ্ছি।
ভাগ্না দেখি মামার চেয়েও ডরপুক।
'মো হু হা হা..হা হা..' বলে বিকট স্বরে হাসতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম আর দুষ্টামি করবি? না কি তোর ঘাড় মটকে খাব।
আরিয়ান কাতর স্বরে বলে...মামা প্লিজ! থামো মামা। আমি সত্যি ভয় পাচ্ছি।
আমি আরিয়ান কে ভয় দেখিয়ে যখন তার দিকে যাই..সে দৌড়ে সরে যায়। আবার আমি যখন আরিয়ানের উল্টোদিকে আস্তে দৌড় দিই তখন সে আমার পিছু পিছু আসতে থাকে।
এক সময় আরিয়ানের মা ফোন করে বলে...সিএনজি খুঁজার দরকার নাই। চলে আস। আরিয়ানের বাবা গাড়ী পাঠাচ্ছে।
বাসায় ফেরার পথে আরিয়ান গাড়ীতে দাড়িয়ে আছে। ওর মা বলল সিটে বস না হলে ব্রেক ধরলে পড়ে ব্যাথা পাবে। সে শুনছে না। এবার আমি তাকে একটা চিমটি দিলাম। পেছন দিকে তাকাকেই চোখ দুটি বড় করে চোখের মনি এক করে তার দিকে তাকালাম। উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ আগের ঘঠনা মনে করিয়ে দেয়া। কিন্তু আমি কিছু বুঝার আগেই দুম করে আমার গালে আরিয়ানের পাঞ্চ।
আর বলছে, আমাকে ভয় দেখাস, আমার সাথে পাগলামী করিস..না?
ওর মা বলছে..ছি ছি..বেয়াদব ছেলে! মামা কে কেউ মারে? আজকে বাসায় যাও। তোমার বাবাই কে বলব।
'মামা কেন আমাকে ভয় দেখায়? আমিও নানা ভাই কে ফোন করে বলব।'
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন