বাংলাদেশের আবাসিক খাতে গ্যাসের সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীই হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণ। গত ১৫ জুন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ঘোষণা দেন আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দেশের সব আবাসিক ব্যাবহারকারী কে এল পি জি ব্যবহার করতে হবে। এল.পি.জি হচ্ছে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস যা আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। আমাদের দেশের ৯৫% গ্যাস মিথেন ও ৫% ইথেন সমন্বয়ে গঠিত, তাই এই এল.পি.জি কে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া ভাষ্য থেকে এটা দেখা যায় যে দেশের মোট গ্যসের রিজার্ভ পরিমাপ করা হয়েছিল ২৭.১২ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট) যার মধ্যে ১২.৮ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে এবং মোট মজুত আছে ১৪.১৩ টিসিএফ। এই ১৪.৩ টিসিএফ গ্যাস আগামী ২০৩১ সাল নাগাদ চলবে (বিডি নিউজ ২৪. কম,২৮ জুন ২০১৫)। মোট গ্যাসের ৬৫% ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে, ১৭ শতাংশ উতপাদন খাতে, ১২ শতাংশ আবাসিক ও ৬ শতাংশ সিএনজি স্টেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে (বাংলানিউজ ২৪.কম, ১৫ জুন ২০১৫)।
পেট্রোবাংলা সরবরাহ করে ২৩০ কোটি ঘনফুট যার মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী ঘটতির পরিমাণ ৫০ কোটি ঘনফুট (বিডিনিউজ২৪.কম, ১১ নভেম্বর ২০১৩) যার মধ্যে তিতাসের ঘটতি ২০ কোটি ঘনফুট। দেশের ৭ টি সার কারখানায় গ্যাসের চাহিদা ২৮ কোটি ঘনফুট কিন্তু সরবরাহ হয় ১৭ কোটি এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলির চাহিদা ১৪৩ কোটি কিন্তু সরবরাহ অপর দিকে তিতাসের সিস্টেম লস প্রায় ১.৭ বিসিএফ (এম আই এস, ১৫ এপ্রিল ২০১৫)। এত বিশাল পরিমাণ গ্যাসের মূল্য উঠাতে ব্যর্থ হয় তিতাস। অন্যদিকে সরকার বেশি মুল্যে দিয়ে গ্যাজপ্রোম এর সাথে দেশের ভূ ভাগে কূপ খনন করার জন্য চুক্তি বদ্ধ হয়। বাপেক্সের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোন এ অজানা কারনে সরকার এই রাশিয়ান কোম্পানির সাথে একের পর এক চুক্তি করেই চলছে। ফলে এখানে ভবিষ্যতের গ্যাসের উত্পাদন খরচ বেড়ে যাবে যার মূল্য দিতে হবে সাধারণ ভোক্তাদের। অথচ যদি এই খনন কাজ বাপ্রেক্স করত তাহলে উৎপাদন খরচ কমে যেত এবং ডলারের সাশ্রয় হত। ধরা যাক আবাসিক খাতে ব্যবহৃত ১২% গ্যাস বিদ্যুতৎ উৎপাদনের কাজে লাগানো যাবে কিন্তু যে পরিমাণ টাকা সিস্টেম লস ও অযাচিত বিদেশী চুক্তিতে নষ্ট হচ্ছে তার পরিমাণ কি এর চেয়ে কম?
এই এল.পি.গ্যাস আমদানী করতে কি কোন ডলার যাবে না নাকি বিদেশি কোম্পানিগুলো ফ্রি দিবে, এর আমদানি মূল্য মেটাতে হবে সেই সব শ্রমিকে যারা অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে দেশে ডলার পাঠানোর জন্য। আবাসিক ব্যাবহারকারীর এল পি গ্যাসের উচ্চ মূল্যের কারণে ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছে না ( প্রথম আলো, ৯ জুন ২০১৫) একারণে সরকার এল.পি গ্যাসের উপর ভর্তুকি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কথা হচ্ছে এই ভর্তুকি কার পকেটে যাবে, সাধারণ ব্যাবহারকারী নাকি এল পি গ্যস সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠানের? তাহলে এল পি গ্যাস সরবরাহ কারী প্রতিষ্ঠান গুলো কি সরকারের উপর এক ধরণের প্রচ্ছন চাপ সৃষ্টি করেছে যাতে সাধারন ব্যাবহারকারী বাধ্য হয় এল পি গ্যাস ব্যবহার করতে? এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম লস ও সরকারের অযাচিত চুক্তি মধ্যবিত্ত ব্যাবহারকারীর কাঁধের উপর দিয়ে এল.পি.জি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ফায়দা হাসিল করা ছাড়া আর কিছুই না। সরকারের পক্ষ থেকে লাভ নামক শব্দটা উচ্চারণ করা বেমানান এটা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কোম্পানি বা লিমিটেড কোম্পানিগুলো। সরকার লাভ করার জন্য নয় শুধুমাত্র সেবাদানকারী হিসেবে কাজ করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪