বান্দরবান এর অদেখা রূপ (পর্ব-১) মেঘের কাছাকাছি
বান্দরবান এর অদেখা রূপ (পর্ব-২) বড় পাথর
আমরা যখন তিন্দু পৌছলাম আকাশ তখনও মুখ গোমরা করে আছে। তিন্দু বাজার দেখে পেটের ক্ষুধাটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। মনে পড়ল সকাল থেকে এ পর্যন্ত পেটে মুড়ি ছাড়া আর কিছু পরে নি। কিন্তু একি......!!!!


বাজারে গিয়ে দেখি আমাদের আগের দুটো দল এসে সব খাবার শেষ করে গেছে। এমনকি কলা পর্যন্ত নাই।



যত আগাচ্ছিলাম বৃষ্টি তত কমে আসছে। চারপাশের পাহাড়ি সৌন্দর্য কয়েকশ গুন বাড়িয়ে দিচ্ছিল বর্ষার সবুজ। কত রকমের সবুজ যে হতে পারে না দেখলে বিশ্ষাস করা কঠিন।
এররকম প্রচুর ঝরনা পরবে রেমাক্রি যাওয়ার পথে।
মাঝে একবার নৌকাথেকে নামতে হল। এ পর্যন্ত যতবার নেমেছিলাম তার মধ্যে এবারে সবচেয়ে গভিরে নামতে হয়েছিল। আমার প্রায় কাধ পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল। (যদিও আমার উচ্চতা খুব একটা ভাল!!! না :!> :!> :#> :#> )
যাই হোক চড়াই উতরাই পেরিয়ে এগোতে এগোতে মাঝি আমাদেরকে দূরের পাহাড়ে দৃষ্টি আকর্ষন করল। দেখলাম কিছু ঘর দেখা যাচ্ছে। আমরা গন্তব্য স্থল দেখতে পেয়ে একটু স্বস্তি পেলাম।
রেমাক্রি বাজার
কিন্তু একটা বড় সারপ্রাইজ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল তা আমরা তখনো ভাবতে পারিনি।
বেশ কিছুক্ষন আগানোর পরে আমাদের কানে পানির স্রোতের আওয়াজ আসতে লাগল। আরো কিছুক্ষন আগানোর পর যা দেখলাম তা দেখে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
রেমাক্রি খাল এ যায়গায় এসে সাংগুর সাথে মিশেছে। জায়গার নাম রেমাক্রিখুম। বাংলাদেশে এররকম জলপ্রপাত আছে আর তার সামনে আমি দাড়িয়ে আছি এ কথা বিশ্বাসই হচ্ছিল না।
এটা বাংলাদেশে বিশ্বাস হয়?
ততক্ষনে আমরা নৌকাকে ঘুরিয়ে রেমাক্রিখুম এর পাশে নিতে বললাম। নৌকা একপাশে রাখার সাথে সাথে আমরা নেমে পরলাম পানিতে। এখান পাথর গুলো বেশ পিচ্ছিল।খালি পায়ে না নামাটাই উত্তম। আমরা জুতো পরে নামার পরেও কয়েকজন আছাড় খেল!!!
আপনি হেটে প্রায় পুরো জলপ্রপাতের উপর দিয়ে হাটতে পারবেন।
এখানে এসে এইরকম ভাব আপনি ধরতেই পারেন.........!!
আমরা এখানে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটানোর পরে নাফাখুম এ যাওয়ার পথটা একটু দেখে আসতে চাইলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু হল হাটা। নাফাখুম এ যেতে হলে রেমাক্রিখুম ধরে ভেতরের দিকে আপনাকে এগোতে হবে।
নাফাখুম এর পথে
নাফাখুম এর পথে
এররকম প্রচুর পাথর চোখে পরবে নেফাখুমএ যাওয়ার পথে।
নেফাখুমএ যাওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই!!
কিছুক্ষন আগানোর পর আমরা খেয়াল করলাম আমাদের সাথে আমাদের গাইড নেই!!! মেজাজ টা কেমন লাগে। গাইড ছাড়া আমরা আর বেশিদূর এগোলাম না। তা ছাড়া সূর্যি মামাও ততখনে একদিকে হেলতে শুরু করেছে। কি আর করা আমরা ফেরত আসলাম। ফেরত এসে দেখি আমাদের নৌকা নেই সেখানে দাড়িয়ে আছে উপজাতিদের একটা নৌকা!!! এবার দু:শ্চিন্তায় পরে গেলাম। উপজাতিদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম আমাদের নৌকা বাজারে চলে গেছে। তারা বলল তাদের নৌকায় আমরা দুইজন যেতে পারব কি আর করা দুইজনকে পাঠালাম আমাদের নৌকাকে খুজে নিয়ে আসতে। কিছুক্ষন পর আমাদের নৌকা আসল। গাইড ব্যাটাকে একধাপ ঝাড়ার ইচ্ছাটা খুব কষ্ট করে সংবরণ করলাম। রেমাক্রি বাজারে এসে আমরা বি,ডি.আর. এর কাছে রিপোর্ট করলাম। তারা আমাদের কে রেমাক্রি রেস্ট হাউজে থাকার ব্যবস্থা করে দিল।
আমরা ফ্রেশ হয়ে খাবার এর ব্যবস্থা করতে গেলাম। খাবার এর ব্যবস্থা করতে করতে রাত্র হয়ে গেল। ।ঈদের তিনদিন পর চাদের যে আকার হয় তাতেই চাদের যে আলো না জানি ভরা পূর্ণিমায় চাদের কি অবস্থা হয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম এর পরের বার ভরা পূর্ণিমায় চাদের আলোতে নেফাখুম এ বারবিউ করতেই হবে!!
রাত্র প্রায় আটটায় আমরা রাতের খাবার খেলাম। খাবার টা বেশ ভাল ছিল। পেট ভরে খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরলাম পরেরদিনের অভিযানের জন্য। কারন আগামীকাল আমাদের তাজিংডং যাত্রা।


চলবে...........
ছবি ব্লগ (বান্দরবানের অদেখা রূপ-১)
ছবি ব্লগ (বান্দরবানের অদেখা রূপ-২)