বান্দরবান এর অদেখা রূপ (পর্ব-১) মেঘের কাছাকাছি
আমরা যখন থানচি বাজার এ পৌছলাম তখন প্রায় ৪টা বাজে। পেটের মধ্যে ছুচো দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে অনেক আগেই






আমাদের দেশের উঠতি ধনী ব্যাক্তিদের যন্ত্রনা ঢাকা ছেড়ে থানচিতে এসে উপস্থিত!!!




যাই হোক ঘটনা হল ব্লগ এর কল্যানে অনেক ভ্রমন বিলাসী এবার ঈদের ছুটি কাটাতে থানচি এসে উপস্থিত। এর মধ্যেকার একটি গ্রুপ তিন্দু পর্যন্ত ঘুরে এসে নৌকার ভাড়া দিয়েছে ৩৫০০ টাকা। মেজাজ কেন বলেন খারাপ হবে না বলেন?




নৌকা ঠিক করতে করতে কখন যে সূর্য ডুবতে বসেছে তা আর খেয়াল করিনি। তাই দ্রুত তাবু তৈরি করতে লেগে গেলাম। তাবু তৈরী করে যখন আমরা আমাদের ব্যাগ পত্র ঠিক করছিলাম তখন আমাদের এক শুভাকাঙ্খী!!


তাবু ঠিক করে বাজারে গেলাম রাতের খাবার শেষ করতে। তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরলাম পরের দিন তাড়াতাড়ি উঠতে হবে বলে।
ঘুম ভাঙল ভোরে। ঝটপট উঠে তৈরি হয়ে রওনা দিলাম নৌকার ঘাটে। ইচ্ছা হল তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করে তিন্দুতে যেয়ে নাস্তা করা!! কিন্তু কে জানত যে আজকে কোন নাস্তাই আমাদের কপালে নাই। ঘাটে যেয়ে গতকালকের ঠিক করা মাঝিকে খুজে বের করলাম। কিন্তু মাঝি আমাদের দেখে এমন ভাব করল যে সে আমাদের এর আগে কখনোই দেখে নাই






চিন্তা করতেছি রেমাক্রি বাদ দিয়া তাজিংডং সামিট করে আসব। এই সময় দেখা হল ৩ জনের ছোট একটা দলের সাথে তারা রেমাক্রি যাবে তারা এক বাঙালি মাঝি ঠিক করেছে ভাড়া ৪৫০০ টাকা কিন্তু ৩ জনের দলের জন্য এটা অনেক বেশী। ।আমরা যেন আকাশের চাদ হাতে পেলাম।


অবশেষে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করলাম।

আকাশে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি ফলে সূর্যের কড়া রোদ থেকে আমরা বেচে যাচ্ছিলাম। নৌকার ভটভট আওয়াজ প্রথমে কানে বাজলেও আস্তে আস্তে তা সয়ে এল। নৌকা এগোতে লাগল।
বর্ষায় পাহাড়ের আসল সৌন্দর্য দেখা যায় এত দিন এ কথা শুনে আসছিলাম এতদিন পর তা বাস্তবে দেখলাম। নদীর দু পাশে খাড়া পাহাড় সবুজে ঢাকা কোনটিতে জুম আর মাঝে মধ্যে একটি দুটি ঘর, এ যেন শিল্পীর ক্যানভাসে আকা কোন ছবি।
কয়েকটি ছোট পাহাড়ি ঝর্ণাও চোখে পড়ল। হঠা মনে পড়ল আমরা কেউই নাস্তা করিনি। তাই আমরা বসে গেলাম খাবার প্রস্তুতিতে!!

আমাদের এডভেঞ্চার গুলোর অন্যতম খাবার হল ঝালমুড়ি! ঝালমুড়ি বানানোর সকল উপকরন আমরা ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছি। এররকম পরিবেশে ঝালমুড়ি যে কি অনুভূতি দিবে তা না খেলে বুঝতে পারবেন না। এর মাঝে নৌকার ভটভট আওয়াজ ছাপিয়ে পানির স্রোতের আওয়াজ কানে আসল। সামনে তাকিয়ে দেখলাম পানি প্রবল স্রোতে উজান থেকে ভাটিতে নামছে ।
নৌকার মাঝি নৌকা একপাশে নিয়ে সবাইকে নামতে বলল।
ব্লগার শামশীর এর ব্লগ পরে ইতিমধ্যে আমরা নৌকা টানার প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছি। অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে নৌকা থেকে নেমে পরলাম। কিন্তু একি!! নৌকা দেখি মাঝিরা লগি দিয়ে ঠেলে স্রোতের অংশটুকু পার করে দিচ্ছে।
কিছুটা মন খারাপ করে ছোট বড় পাথর ডিঙিয়ে এগোতে লাগলাম। কিছু দূর হাটার পর আমরা আবার নৌকাতে উঠে পরলাম। নৌকা আবার এগোতে লাগল। কিছুদূর এগোতোই আবার নামতে হল এবার মাঝি আমাদের নৌকা টানার দড়ি এগিয়ে দিল। হাতে নৌকা টানার দড়ি। শুরু হল টানা।
মারোরে টান হেইয়ো……………………..


নৌকা সামলানোর চেষ্টা.............
যুদ্ধ শেষে আমরা.................
এরপর বেশ কয়েকবার নৌকা টানতে হল।কখনো পিচ্ছিল পাথর উপর দিয়ে। কখনো বুক সমান পানিতে নেমে নৌকা টানতে লাগলাম। এই রকম অভিজ্ঞতা এবারি প্রথম।
নৌকা থেকে উঠা নামা করতে করতে আমরা এসে পৌছলাম বড়পাথর বা রাজা পাথর এর সামনে। আমাদের অতি অভিজ্ঞ!! গাইড কোনটি যে বড়পাথর বা রাজা পাথর সেটাই ঠিক করে বলতে পারল না। এই যায়গায় এসে আসলেই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পানি যেভাবে ঘুরপাক খাচ্ছিল আর পাথর গুলোর গায়ে এসে বাড়ি খাচ্ছিল তা দেখলে যে কারোরই বুক কাপার কথা।








যাই হোক কোন বিপদ ছাড়াই আমরা বড় পাথর পের হয়ে তিন্দুর দিকে এগোতে লাগলাম। কিন্তু কিছু দূর এগোতেই ঝুম বৃষ্টি পড়া শুরু হল। চারপাশের ছবি তোলা বাদ দিয়ি ক্যামেরা ঢুকাতে হল প্লাস্টিকে।

চলবে...............
ছবি ব্লগ (বান্দরবানের অদেখা রূপ-১)
photo credit me
