somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবান এর অদেখা রূপ (পর্ব-২) বড় পাথর

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বান্দরবান এর অদেখা রূপ (পর্ব-১) মেঘের কাছাকাছি

আমরা যখন থানচি বাজার এ পৌছলাম তখন প্রায় ৪টা বাজে। পেটের মধ্যে ছুচো দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে অনেক আগেই :(( :(( । তাই থাকার জায়গা ঠিক করার আগে পেট পূজোর সিদ্ধান্ত নিলাম।বিকাল ৪টায় ঢাকা শহরে ভাত পাওয়া গেলেও থানচিতে অতটা সহজলভ্য নয়।। খুজে এক হোটেলে ভাত যা ও পেলাম কোন তরকারি পেলাম না। কি আর করা ভাজি আর ভাত দিয়ে কোন রকমে পেট পুরতে হল। খাওয়া শেষ করে আমরা গেলাম বাজারের পাশের স্কুল এর মাঠে তাবু ফেলতে। ওখানে যেয়ে পরিচয় হল স্থানীয় পুলিশ এর সাথে। সে আমাদের প্রথমে থানচি পুলিশ স্টেশনের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে বলল। আমরা তার সাথে দেখা করতে গেলাম। ভদ্রলোক আসলেই অনেক ভাল। আমাদের কথা মন দিয়ে শুনলেন। তিনি আমাদের তাবু ফেলার অনুমতি দিলেন অত:পর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করে গাইড এর ব্যবস্থা করে দিলেন। যদিও এ উপকারটুকু না করলেই ভাল হত /:) /:) । পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলব। আমরা উনার পরামর্শমত থানা থেকে প্রথমে গেলাম নৌকা ঠিক করতে। কিন্তু নৌকা ঠিক করতে গিয়ে চক্ষুচড়কগাছে B:-/ B:-/ উঠল। থানচি থেকে রেমাক্রির ভাড়া চাচ্ছে ৫০০০ টাকা। যেখানে ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৩৫০০ টাকা।

আমাদের দেশের উঠতি ধনী ব্যাক্তিদের যন্ত্রনা ঢাকা ছেড়ে থানচিতে এসে উপস্থিত!!! X( X( যাচাই না করে ইচ্ছামত টাকা ছড়ানোর ঝামেলায় আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষেরা যে কি পরিমান ভোগান্তিতে পরে তা নিয়ে একটা ব্লগ লেখার ইচ্ছা আছে। :-B :-B

যাই হোক ঘটনা হল ব্লগ এর কল্যানে অনেক ভ্রমন বিলাসী এবার ঈদের ছুটি কাটাতে থানচি এসে উপস্থিত। এর মধ্যেকার একটি গ্রুপ তিন্দু পর্যন্ত ঘুরে এসে নৌকার ভাড়া দিয়েছে ৩৫০০ টাকা। মেজাজ কেন বলেন খারাপ হবে না বলেন? X(( X(( B:-/ B:-/ তিন্দুর দূরত্ব রেমাক্রির অর্ধেক হবে আর ভাড়া বড়জোড় ২৫০০ টাকা!! অনেক খুজে এক মাঝিকে ৪০০০ টাকায় রাজি করাতে পারলাম। যাক ১০০০ টাকাতো বাচাতে পারলাম। ওদিকে আমাদের ক্যাশিয়ার এর মাথায় হাত কারন বাজেটে ১০০০ টাকা শর্ট!!!

নৌকা ঠিক করতে করতে কখন যে সূর্য ডুবতে বসেছে তা আর খেয়াল করিনি। তাই দ্রুত তাবু তৈরি করতে লেগে গেলাম। তাবু তৈরী করে যখন আমরা আমাদের ব্যাগ পত্র ঠিক করছিলাম তখন আমাদের এক শুভাকাঙ্খী!! :(( :(( এসে বাগড়া দিল। সে এসে বলতে লাগল আপনারা এখানে তাবু গেড়ে থাকতে পারবেন না। এখানে সাপ পোকামাকড় এর ভয় আছে, আপনাদের কোন ক্ষতি হয়ে গেলে কে দায়িত্ব নিবে ইত্যাদি। আমরা তাকে যত বোঝাই যে আমরা তাবুতে থেকে অভ্যস্ত তাছাড়া রেস্ট হাউস এও কোন রুম খালি নেই সে উল্টো আমাদের উপদেশ দিতে থাকে। এরই মধ্যে আরও কয়েকজন শুভাকাঙ্খী এসে উপস্থিত!! শেষে একজন বুদ্ধি দিল স্কুলের দোতালায় তাবু বসাতে !!! :-< :-< কি আর করা এদের কথা না শুনলে অপমান করা হবে তাই বাধ্য হয়ে তাবু খুলে নিয়ে দোতালায় স্থাপন করলাম। কি যে ঝামেলা হয়েছিল তা লিখে আর বিরক্ত করতে চাই না।

তাবু ঠিক করে বাজারে গেলাম রাতের খাবার শেষ করতে। তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পরলাম পরের দিন তাড়াতাড়ি উঠতে হবে বলে।

ঘুম ভাঙল ভোরে। ঝটপট উঠে তৈরি হয়ে রওনা দিলাম নৌকার ঘাটে। ইচ্ছা হল তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করে তিন্দুতে যেয়ে নাস্তা করা!! কিন্তু কে জানত যে আজকে কোন নাস্তাই আমাদের কপালে নাই। ঘাটে যেয়ে গতকালকের ঠিক করা মাঝিকে খুজে বের করলাম। কিন্তু মাঝি আমাদের দেখে এমন ভাব করল যে সে আমাদের এর আগে কখনোই দেখে নাই :-* । এ কথা ও কখা বলার পর সারমর্ম যা দাড়ালো সে ৬০০০ এর নিচে এক পয়সা কমে যাবে না :-& । আমরা আকাশ থেকে পরলাম না সাকা হাফং এর চুড়ার থেকে পরলাম বুঝতে পারলাম না। যেইটারে আমরা বলি নগদে পল্টি!!! X(( X(( X(( X(( X((

চিন্তা করতেছি রেমাক্রি বাদ দিয়া তাজিংডং সামিট করে আসব। এই সময় দেখা হল ৩ জনের ছোট একটা দলের সাথে তারা রেমাক্রি যাবে তারা এক বাঙালি মাঝি ঠিক করেছে ভাড়া ৪৫০০ টাকা কিন্তু ৩ জনের দলের জন্য এটা অনেক বেশী। ।আমরা যেন আকাশের চাদ হাতে পেলাম। B-) B-)


অবশেষে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। :D


আকাশে সাদা মেঘের ছড়াছড়ি ফলে সূর্যের কড়া রোদ থেকে আমরা বেচে যাচ্ছিলাম। নৌকার ভটভট আওয়াজ প্রথমে কানে বাজলেও আস্তে আস্তে তা সয়ে এল। নৌকা এগোতে লাগল।










বর্ষায় পাহাড়ের আসল সৌন্দর্য দেখা যায় এত দিন এ কথা শুনে আসছিলাম এতদিন পর তা বাস্তবে দেখলাম। নদীর দু পাশে খাড়া পাহাড় সবুজে ঢাকা কোনটিতে জুম আর মাঝে মধ্যে একটি দুটি ঘর, এ যেন শিল্পীর ক্যানভাসে আকা কোন ছবি।


কয়েকটি ছোট পাহাড়ি ঝর্ণাও চোখে পড়ল। হঠা মনে পড়ল আমরা কেউই নাস্তা করিনি। তাই আমরা বসে গেলাম খাবার প্রস্তুতিতে!!

আমাদের এডভেঞ্চার গুলোর অন্যতম খাবার হল ঝালমুড়ি! ঝালমুড়ি বানানোর সকল উপকরন আমরা ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছি। এররকম পরিবেশে ঝালমুড়ি যে কি অনুভূতি দিবে তা না খেলে বুঝতে পারবেন না। এর মাঝে নৌকার ভটভট আওয়াজ ছাপিয়ে পানির স্রোতের আওয়াজ কানে আসল। সামনে তাকিয়ে দেখলাম পানি প্রবল স্রোতে উজান থেকে ভাটিতে নামছে ।


নৌকার মাঝি নৌকা একপাশে নিয়ে সবাইকে নামতে বলল।
ব্লগার শামশীর এর ব্লগ পরে ইতিমধ্যে আমরা নৌকা টানার প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছি। অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে নৌকা থেকে নেমে পরলাম। কিন্তু একি!! নৌকা দেখি মাঝিরা লগি দিয়ে ঠেলে স্রোতের অংশটুকু পার করে দিচ্ছে।




কিছুটা মন খারাপ করে ছোট বড় পাথর ডিঙিয়ে এগোতে লাগলাম। কিছু দূর হাটার পর আমরা আবার নৌকাতে উঠে পরলাম। নৌকা আবার এগোতে লাগল। কিছুদূর এগোতোই আবার নামতে হল এবার মাঝি আমাদের নৌকা টানার দড়ি এগিয়ে দিল। হাতে নৌকা টানার দড়ি। শুরু হল টানা।
মারোরে টান হেইয়ো…………………….. B-)B-)








নৌকা সামলানোর চেষ্টা.............


যুদ্ধ শেষে আমরা.................
এরপর বেশ কয়েকবার নৌকা টানতে হল।কখনো পিচ্ছিল পাথর উপর দিয়ে। কখনো বুক সমান পানিতে নেমে নৌকা টানতে লাগলাম। এই রকম অভিজ্ঞতা এবারি প্রথম।

নৌকা থেকে উঠা নামা করতে করতে আমরা এসে পৌছলাম বড়পাথর বা রাজা পাথর এর সামনে। আমাদের অতি অভিজ্ঞ!! গাইড কোনটি যে বড়পাথর বা রাজা পাথর সেটাই ঠিক করে বলতে পারল না। এই যায়গায় এসে আসলেই একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পানি যেভাবে ঘুরপাক খাচ্ছিল আর পাথর গুলোর গায়ে এসে বাড়ি খাচ্ছিল তা দেখলে যে কারোরই বুক কাপার কথা। :|:|











যাই হোক কোন বিপদ ছাড়াই আমরা বড় পাথর পের হয়ে তিন্দুর দিকে এগোতে লাগলাম। কিন্তু কিছু দূর এগোতেই ঝুম বৃষ্টি পড়া শুরু হল। চারপাশের ছবি তোলা বাদ দিয়ি ক্যামেরা ঢুকাতে হল প্লাস্টিকে।/:)

চলবে...............


ছবি ব্লগ (বান্দরবানের অদেখা রূপ-১)

photo credit me :) and Shakil
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:১৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×