somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকতা বনাম ঈশ্বরবিশ্বাস । একটি সম্পূর্ন নতুন আঙ্গিকে অ্যাকাডেমিক আলোকপাত।এই বিষয়ের গবেষকদের কাজে লাগবে।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব: এক
নাস্তিকরা নিজেরা নাস্তিক বলে তীব্র আত্মপ্রসাদ লাভ করে। তাদের ধারণা এর দ্বারা তারা আস্তিকদের থেকে যে অনেক উন্নত ও মেধাবী তা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয়। তারা খেয়াল রাখেনা মানুষ ছাড়া সমস্ত প্রাণীই নাস্তিক। চরম ঘিনঘিনে ঘেয়ো কুকুর থেকে পশুরাজ সিংহ অব্দি- সবাই।

এখন সমস্যা হলো এই অতিশিক্ষিত নাস্তিকরা নিজেদের ঔকাত সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারনা না থাকার কারণে "যত বড় করতল তারচেয়ে বড় মুষ্ঠি" তৈরি করতে সচেষ্ট হয়। আর গোলমালটা এখানেই লাগে।ভারতের মহাকাশবিজ্ঞান সংস্থা ইসরোর চেয়ারপার্সন ডঃ কৈলাশাভাদিভু শিবনের মন্দিরে পুজো দেওয়ার ছবি দেখে তারা এই কারণেই চিলচিৎকার শুরু করে। তারা বিশ্বাস ক‍রে( ঠিক আস্তিকদের মতোই) ...
১)ঈশ্বরের ধারণা কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নয়।
২)ঈশ্বরের ধারণার জন্ম মানুষের ক্ষতি, শুধু ক্ষতিই করেছে।
৩) কোন প্রাগৈতিহাসিক চতুর ও ঠগ মানুষ ব্যক্তিগত সুবিধা এবং দুর্বল দের শোষনের জন্য ঈশ্বরের ধারণা এনেছিল( এই ধারণাটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মার্ক্স ও এঙ্গেলস)।


এখানে আমি আলোচনা করবো ঈশ্বরের ধারণা সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তা ও পুরাতাত্ত্বিক বাধ্যবাধকতা।

মানুষের পুরাতাত্ত্বিক ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করলে জানা যায় তিন লাখ বছর আগেই হোমোইরেকটাস, নিয়ানডার্থাল বা হোমোস্যাপিয়্যান্সের পূর্বপুরুষেরা আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়। নিত্যব্যবহার্য হিসেবে তখন থেকেই আগুন প্রাইমেটদের সাথেই আছে। কিন্তু আগুনের ব্যবহার জানা স্বত্ত্বেও আদিম মানুষ তখনো খাদ্যশৃঙ্খলের মাঝামাঝির থেকে একটু ওপরের একটা প্রাণী ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। চারলাখ বছর আগে নিয়ানডার্থালরা বড় বড় পশু শিকার শুরু করলেও সিংহ বা হায়নারা তাদের কোনদিনও সমীহ করেনি। বরং সিংহ বা হায়নার পেটে যাওয়া ছিল আদিম মানুষের নিত্যদিনের ঘটনা। এক লাখ বছর আগে প্রায় হঠাৎই হোমোস্যাপিয়্যান্সের উত্থানের সময় থেকে আদিম মানুষ খাদ্য শৃঙ্খলের ওপরে উঠে আসে। আর সত্তরহাজার বছর আগে আদিম মানুষের দুটো যুযুদান প্রজাতির মধ্যে নিয়ানডার্থালরা হোমোস্যাপিয়্যান্সদের হাতে চরম পরাজিত হয়ে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হতে শুরু করে। আফ্রিকা থেকে এক লাখ কুড়ি হাজার বছর আগেও একবার হোমোস্যাপিয়্যান্স বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে চেয়েছিল কিন্তু সেবার পশ্চিম এশিয়ায় নিয়ানডার্থালদের কাছে চরম লাঞ্ছিত হয়ে হোমোস্যাপিয়্যান্সরা ফিরে যায় পূর্ব আফ্রিকায়। এনথ্রোপোলজি অনুসারে হোমো স্যাপিয়েন্সের এই পরাজয়ের মূল কারণ হলো নিয়ানডার্থালদের মস্তিষ্কের আকার ছিল হোমোস্যাপিয়্যান্সের থেকে বড়। বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে বিবর্তনে আগ্রহী দুটো প্রজাতির মধ্যে সম্মুখসমরে হোমোস্যাপিয়্যান্স হেরে যায়। কিন্তু সত্তর হাজার বছর আগে হোমোস্যাপিয়্যান্স ফের আফ্রিকা বেরিয়ে পড়ে আর তখন থেকেই গোটা মানবের ইতিহাসটার একছত্র অধিপতি হয় হোমোস্যাপিয়্যান্সের বিজয়ের ইতিহাস। এই সময়টার পর থেকে হোমোস্যাপিয়্যান্স তার জ্ঞাতিগুষ্টির প্রায় সব মানুষ প্রজাতিকে একে একে মেরে লাট করে দেয়। তবে তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নিয়ারডার্থালদের বিরুদ্ধে তারা যে চরম হিংস্রতার পরিচয় দেয় তা সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে যাওয়া প্রথম এথেনিক ক্লিনজিং। স্টাডি বলছে দশহাজার বছর আগে মানে যখন ভারতবর্ষে মেহেরগড় সভ্যতার রমরমা তখনো হোমোস্যাপিয়্যান্স ছাড়া আরো অনেকগুলো মানব প্রজাতি টিকে ছিল পৃথিবীতে। কিন্তু স্বভাব হিংস্র হোমোস্যাপিয়্যান্সরা তাদের কাউকেই নিস্তার দেয়নি।এখন প্রশ্ন হলো আগুন যে কাজটা করতে পারেনি মানে খাদ্য শৃঙ্খলের পিরামিডের শীর্ষে অবস্থান করার কাজটা হোমোস্যাপিয়্যান্সের করলো কার সাহায্যে? তাদের থেকেও বুদ্ধিমান নিয়ানডার্থালরাও পর্যন্ত হেরে গেল কিভাবে এমন শোচনীয় ভাবে? এর উত্তরে আসার আগে বলে নেওয়া ভালো যে হোমোস্যাপিয়্যান্সের হিংস্রতার অন্যতম কারণ হলো এই শীর্ষ স্থান হারানোর ভয়। যে চরম হিংস্রতায় তারা অপরাপর মানব প্রজাতিগুলি ছাড়াও বেশীরভাগ প্রাণীগুলিকেও বিলুপ্ত করে দিয়েছে( যেমন অস্ট্রেলিয়ার মার্সুপিয়াল সিংহ{ক্যাঙারুর মতো পেটে বাচ্চা রাখার থলি যুক্ত}, এশিয়ার বিশাল গিরগিটি, ইউরোপের সুবিশাল সর্প সহ অগুনতি প্রজাতি) তার কারণ হলো হোমোস্যাপিয়্যান্সের হঠাৎ শীর্ষ স্থান লাভ। এই নব্য মস্তানের সাথে বাস্তুতন্ত্র খাপ খাইয়ে নেবার সুযোগ পায়নি যথেষ্ট। আগে ফুড চেনের শীর্ষে বাস করা সিংহ বা হাঙর লাখ লাখ বছরের প্রচেষ্টায় এই অবস্থানে আসতে পেরেছিল। সেকারণেই সিংহের শক্তিশালী হবার সাথে সাথে হরিণরা সুযোগ পেয়েছিল আরো জোরে দৌড়তে শেখার কিম্বা হায়নারা শিখে নিয়েছিল দলবদ্ধ শিকার কৌশল। আর এই হোমোস্যাপিয়্যান্স নামক একনায়ক তাই এলাকা বিস্তার ও খাদ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টায় যথেচ্ছ প্রাণী নিধন শুরু করে। কম পরিশ্রমে প্রচুর পোড়া মাংস পাবার অভিপ্রায়ে গোটা জঙ্গলটাকেই পুড়িয়ে ফেলেছে হোমোস্যাপিয়্যান্স। জেমস্ জে ম্যাককান্নার " প্রাইমেট এগ্রেশন", রবার্ট আড্রের "আফ্রিকান জেনেসিস" কিমবা ইউভাল নোয়া হারারির "স্যাপিয়েন্স:এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ হিউম্যান কাইন্ড" পড়লে আশ্চর্য হতে হয় এই ভেবে যে এমন হিংস্র একটা প্রজাতির বর্তমান উত্তর পুরুষেরা কি অপরিসীম পটুতায় শান্তির অভিনয় করে যায় অবিরত!
(পরের পর্ব আসছেে ....)
কৃতজ্ঞতা....জয়ন্ত সিনহা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৭
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুনাজাত

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৫

ধরতে ধরতে হয়না ধরা,
ফসকে গেল শেষে।
মান-অভিমান দিলাম ঝেড়ে,
তোমার কাছে এসে।

ঠকতে ঠকতে যায়নি ঠেকা,
অতলে গেলাম ভেসে।
ধূলির মতো জীবন হেসে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।

কত শতবার পাশ কেটে যাই,
অবহেলার মন ঠেসে।
হোঁচট খেলেই ফের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

লামিয়ার আত্মহনন: রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা, সামাজিক নিষ্ঠুরতা ও মনুষ্যত্বের অন্তর্গত অপমান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১


সেদিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫। পটুয়াখালীর দুমকীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। সে বাবা, যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩



সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'! তৈরি হচ্ছে সূর্যালোক ছাড়াই, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা:—

♦️সমুদ্রের ৪ হাজার মিটার তলদেশ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক জগৎ। আর সেখানেই নাকি রয়েছে অক্সিজেন! বিজ্ঞানীরা যাকে ডাকছেন 'ডার্ক অক্সিজেন' নামে। 'নেচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


আজ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়ায় এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশ কি তবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×