somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : ভয়

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দূঁদে রাজনীতিক ভূপেন মন্ডল ভয় পাচ্ছেন। মারাত্মক ভয়। ভূপেন মন্ডল জানেন। ভয়কে পাত্তা দিলে সে আরও বেশি করে চেপে ধরে। এই একমাসে অনেকবার চেষ্টা করেছেন। ভয়কে ঝেড়ে ফেলতে। পারেননি। যতবার ঝাড়া মেরেছেন। ভয় যেন সাপের মত পেঁচিয়ে ধরেছে। আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে। আরেকটা কারণে ভূপেন মন্ডল কাবু হয়ে পড়েছেন। এই ঘটনা কাউকে বলতে পারছেন না। বলবেন কি করে ? সাধারণ মানুষ হলেও ভূপেন মন্ডল পরিশ্রমী। পরিশ্রম করে রাজনীতিতে নিজের একটা জায়গা তৈরি করেছেন। দুই-দুইবার পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবার তাঁর সামনে বড় সুযোগ আসতে চলেছে। আগামী বিধানসভা ভোটে টিকিট পাচ্ছেন ভূপেন মন্ডল। অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে এবার। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করেছেন। সেই প্রথম দিন থেকে স্বপ্ন দেখছেন। একদিন এম-এল-এ হবেন। অপেক্ষার পালা শেষ। এবার ভূপেন মন্ডলের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আদাজল খেয়ে কাজে নামতে হবে। নির্বাচন এখনও বছরখানেক পরে। কিন্তু দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতায় ভূপেন মন্ডল জানেন। রাজনীতিতে খরগোশের মত দৌড়লে হবে না। দৌঁড়তে হবে কচ্ছপের মত। ধীরে সুস্থে। ধারাবাহিক ভাবে। কিন্তু সব শেষ করে দিচ্ছে এই ভয়। কাছের মানুষরা ভূপেন মন্ডলের ওপর বিরক্ত। দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে। ভূপেন মন্ডলের কোন উৎসাহ নেই। ভোট নিয়ে। ওদিকে ভূপেন মন্ডলের সমস্যা তাঁর কাছের মানুষদের নিয়ে। যাঁদের তিনি ভালবাসেন। এবং বিশ্বাস করেন সেই মানুষগুলোও তাঁকে ভালবাসে।

কেউই তাঁকে ছাড়ছে না। প্রথম দিন দেখা হল থানার বড়বাবুর সঙ্গে। পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একা একা। হঠাৎ দেখতে পেলেন বড় দারোগা। আনন্দে মন ভরে গেল। নির্জন পাহাড়ি এলাকায় বোবা কালার মত ঘুরতে ভাল লাগছিল না। চেনা মানুষ পেয়ে মনে হল এবার কথাবার্তা বলা যাবে। যত সুন্দর জায়গায় হোক না কেন। একা একা ভাল লাগে না। আর দারোগাবাবু অল্প চেনা না। বড্ড বেশি চেনা। তাঁরা এক গ্লাসের বন্ধু। তুমুল গল্প শুরু হয়ে গেল। দুজনেই মনের কথা বলছেন। পাহাড়ের ধার ঘেঁষে রাস্তা। রাস্তার পাশে গভীর খাঁদ। নীচে তাকালে মাথা ঘুরছে। গল্প করতে করতে হাঁটছেন দুই বন্ধু। হটাৎ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন দারোগাবাবু। গভীর খাঁদে পড়ে যাচ্ছেন ভূপেন মন্ডল। অনেক নিচে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়ী নদী। সরু সুতোর মত নদীর চেহারা। শূন্যে ভাসছেন ভূপেন মন্ডল। পড়ে যাচ্ছেন পাহাড় থেকে। ঘুমটা ভেঙে গেল। ঠিক সেই সময়। পড়তে পড়তে। তখন শেষ রাত। বিছানায় উঠে বসলেন। ঘামে সারাদেহ জবজব করছে। একবার ভাবলেন। রমাকে ডাকবেন। তারপর আর ডাকলেন না। সারাদিন বড্ড ধকল যায় রমার ওপর দিয়ে। একাই সংসার সামলাতে হয় রমাকে। ভূপেন মন্ডল ব্যস্ত থাকেন। রাজনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে।

সকালবেলা দারোগাবাবুর সঙ্গে দেখা। হেসে কথা বলছেন দারোগাবাবু। কিন্তু ভূপেন মন্ডল ঠিক তাল রাখতে পারছেন না। যদিও তিনি চেষ্টা করছেন। দারোগাবাবুর মতোই হাসি বজায় রাখতে। কিন্তু মাথার মধ্যে সেই দৃশ্যটা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয়ংকর দৃশ্য। পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছেন দারোগাবাবু। সেটাই শেষ না। প্রায় প্রতি রাতেই। বিশেষ করে ভোর রাতে। স্বপ্ন দেখছেন ভূপেন মন্ডল। ভয়ংকর সব স্বপ্ন। প্রতিবারই তাঁর মৃত্যু ঘটছে। এবং কোনবারেই মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে না। অপঘাতে মৃত্যু। খুব কাছের মানুষের হাতে খুন হচ্ছেন ভুপেন মন্ডল। বিশেষ করে যাদের সাহায্যে তিনি রাজনীতিতে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। তাঁরা প্রতিদিনই তাকে খুন করছে। ভয় ভূপেন মন্ডলকে চেপে ধরেছে। আষ্টেপৃষ্ঠে। কিন্তু যখন দেখলেন নিখিল তাকে খুন করছে। তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। নিখিল ভূপেন মন্ডলের ছোটবেলার বন্ধু। একসঙ্গে বড় হয়েছেন। দুজনেই একসঙ্গে রাজনীতিতে এসেছেন। এখনো প্রতিদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন। ভুপেন মন্ডলের রাজনৈতিক সাফল্যের পিছনে যথেষ্ট অবদান আছে নিখিলের। নিখিলের সামনেই বহুবার স্বীকার করেছেন সেকথা। এবং সত্যি সত্যি বন্ধু নিখিলের প্রতি তার যথেষ্ট কৃতজ্ঞতাবোধ আছে। এসব কথা নিখিলবাবু জানেন। সেই নিখিল তাঁকে জলে ডুবিয়ে মারল। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি চিৎকার করলেন--"আমাকে বাঁচা নিখিল। আমাকে বাঁচা।" কিন্তু বন্ধু শুধু নৃশংস দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল না। মৃত্যু নিশ্চিত করল। ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পর ভূপেন মন্ডল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। আর পারা যাচ্ছে না। এবার কিছু একটা করা দরকার। এই গোপন ব্যাপার কাউকে জানানো দরকার। বুক ভার হয়ে আছে। কিন্তু কাকে বলবেন ?

সবটা শোনার পর চামেলী ভুপেন মন্ডলকে জড়িয়ে ধরল। চামেলি বুঝতে পেরেছে ভুপেন মন্ডল ভয় পেয়েছে। মারাত্মক ভয়। ভূপেন মন্ডল চামেলীকে ধরেছে। সন্তান যেমন মাকে আঁকড়ে ধরে। খুব ভয় পেলে। চামেলি খারাপ পাড়ার মেয়ে। কিন্তু চামেলিও মানুষ। মানুষ হয়ে মানুষের কষ্ট বুঝতে পারাটাই স্বাভাবিক। চামেলী ভুপেন মন্ডলকে অনেক দিন ধরে দেখছে। আজ যেন লোকটা সত্যি সত্যিই ভয় পেয়েছে। শিশুর মতো করছে। এবং একসময় বুঝতে পারল। ভুপেন মন্ডল কাঁদছে। চামেলী ভূপেন মন্ডলকে বলল-"কোনো ভয় নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।" মা যেমন করে সন্তানকে সান্ত্বনা দেয়। এ যেন ঠিক সেইরকম। আশ্চর্য ব্যাপার। ভূপেন মন্ডলের বুকটা হালকা লাগছে। মাসখানেক ধরে পাথরের মতো ভারী এই ঘটনার ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন। সম্পূর্ণ একা। মন শান্ত হয়েছে। এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। ভূপেন মন্ডল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন।

সিদ্ধান্তের কথা বাড়িতে জানিয়ে দিলেন। হইচই পড়ে গেল। অবশ্য এরকমটা হবে। আগেই তিনি জানতেন। প্রিয়জনরা বারবার তাকে অনুরোধ করছে। সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে। কিন্তু ভুপেন মন্ডল অনড়। শেষ পর্যন্ত রমা তাকে জিজ্ঞেস করল-"তুমি সারাজীবন ধরে রাজনীতি করছ। কিসের জন্য ? এম-এল-এ হবে বলে। আজ সেই সুযোগ নিজেই হাত ছাড়া করছ। ব্যাপার কি ?" ভূপেন মন্ডলকে বলতে হল। স্বপ্নের কথা। ভয়ের কথা। স্বামীর কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন রমাদেবী। এরকম ভীতু টাইপের লোকের সঙ্গে সংসার করছেন। ভাবতেই রাগ হয়ে গেল রমাদেবীর। কোন কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

বেশ কিছু জমি-জমা আছে। আজকাল ভুপেন মন্ডল চাষাবাদের কাজেই মন দিয়েছেন। ঠিক করেছেন ভবিষ্যতেও কোনো পদে থাকবেন না। হাসি মুখেই বেঁচে আছেন ভূপেন মণ্ডল। অবসরে পড়াশোনা করেন। দর্শন তার প্রিয় বিষয়। দর্শনের চর্চা করছেন আজকাল। ভূপেন মন্ডলের এই জীবনযাপনে চারপাশের লোকজন খুবই অবাক হয়েছে। নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে কিছুদিন আগে। তাদের দলই জয়ী হয়েছে। তিনি নিজে গিয়ে নবনির্বাচিত বিধায়কের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। একটা কাজ বাকি আছে। ভূপেন মণ্ডল ঠিক করেছেন। একদিন চামেলীর কাছে যাবেন। চামেলী অবশ্য যাওয়ার কারণ শোনার পর অবাক হয়ে যাবে। চামেলীর কাছে তিনি সত্যি ঋণী। সেই ভয়ংকর সময়ে চামেলী তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিল। মায়ের মত।
....ছবি সৌজন্য:গুগল ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। পাকিস্তান কি ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:২৭








ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আকস্মিক সামরিক সংঘাতের চার দিন পর দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও যুদ্ধক্ষেত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

তেমনই একটি হচ্ছে ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈশ্বরের ভুল ছায়া: জীবনের ঋণ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:০৯



১। ময়মনসিংহের শহরটা সকালে কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকে। ব্রহ্মপুত্রের ধার দিয়ে হাঁটলে নদীর কুয়াশার গন্ধে মনে হয়—সময়ের বুক চিরে কোনো প্রাচীন কিছু ফিসফিস করছে। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্বশুর বাড়ীর ভূতের যাতনা: সত্য ঘটনা অবলম্বনে

লিখেছেন অপলক , ১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৪১

নিচের ঘটনাটা দিনাজপুর, উপশহরের। ঘটনাগুলো জেনেছি আমার স্ত্রীর কাছে।



আমার শ্বশুর শহরের পাশে একটি পুরাতন টিনের বাড়ি কেনেন। বাড়ির প্রথম মালিক ছিলেন একটি হিন্দু পরিবার। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৫

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৬ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



প্রিয় কন্যা আমার-
আজ শুক্রবার। তোমার স্কুল নেই। অথচ আজ তুমি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বসে আছো। বলছো, মেকাপ বক্স দাও। মাকে মেকাপ করে দিবো। যেদিন তোমার স্কুল থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২০

এক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া আহ্বান

ক্যালিগ্রাফি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় যামিনী সুধা,

আপনার নাম আমাদের হৃদয়ে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার এক অমলিন আলো জ্বালায়। একজন প্রবীণ নাগরিক হিসেবে আপনি শুধু জীবনের অভিজ্ঞতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×