গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমি একটি পোস্টে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বন্ধের পক্ষে কিছু কথা বলেছিলাম। ধুমসে চলছিল এই রেজিঃ প্রক্রিয়া। আম-জনতা গণহারে রেজিস্ট্রেশন করতে থাকে এক প্রকার চোখ বন্ধ করেই।
এ সময় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এ পদ্ধতির কারণে জনগণের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। আর ধীরে ধীরে সচেতন মানুষজন এ পদ্ধতি নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংশয়-উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন। আর এ পদ্ধতিতেও ভাটা পড়তে থাকে। বিবিসি থেকে শুরু করে অনলাইন/স্থানীয় পেপার পত্রিকাগুলো এ ব্যাপারে জনসাধারণের উদ্বেগ তুলে ধরতে ভুমিকা পালন করে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জনসাধারণের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া ছিল চোখে পড়ার মত।
✒ ফলোআপঃ
✐ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫ঃ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু
বিটিআরসির সচিব ও মুখপাত্র সরওয়ার আলম সুত্রে জানা যায়, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন চালু করতে ২০১৫ নভেম্বরে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করা হয়। পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ থেকেই এ পদ্ধতি চালু হয়। বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্বে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব আর সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধানে আছে বিটিআরসি।
সিম নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল সব বিদেশি মোবাইল অপারেটররা।(শেয়াল তো মুরগিরে বাগে পাইলে খুশি হৈবৈ। ) গ্রামীণফোনের প্রধান করপোরেট অ্যাফেয়ার্স কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বায়োমেট্রিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, গ্রামীণফোন তা বাস্তবায়নে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।’ আরেক অপারেটর রবি আজিয়াটার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মুখপাত্র ইকরাম কবির বলেন, আমরা আশা করি, সিম নিবন্ধনের জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নে যথাযথ সময় দেওয়া হবে।
✐ ২ মার্চ ২০১৬ঃ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কর্তৃক লিগ্যাল নোটিশ
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধন বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব খায়রুল হাসান সরকার নামের এক নাগরিকের পক্ষে এ নোটিশ পাঠান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, আইন সচিব ও মোবাইল ফোন অপরারেটসহ ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বুধবার ফ্যাক্স ও রেজিস্ট্রি ডাকে ওই নোটিশ পাঠানো হয়।
✐ ১৪ মার্চ ২০১৬ঃ হাইকোর্ট হতে রুল জারি
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল সিম নিবন্ধন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। বিটিআরসি, আইন, স্বরাষ্ট্র এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ছয়টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি, এবং নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র বিভাগের মহাপরিচালককে সাতদিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
✐ সরকারের দেয়া তথ্য
বৃহৎ অপারেটর গ্রামীণফোনের ২ কোটি ৫৪ লাখ, বাংলালিংকের ১ কোটি ৩৮ লাখ, রবি আজিয়াটার ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার, এয়ারটেলের ১৮ লাখ ১৭ হাজার ও টেলিটকের ১ লাখ ৮২ হাজার সিম এবং সিটিসেলের ২৯ হাজার রিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে।
প্রায় ৮০ লাখ নিবন্ধন বাতিল।
নাগরিককে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে উৎসাহ দিতে ৩ জিবি ইন্টারনেট (নুন্যতম ৯ টাকায় দেয়ার প্রস্তাব) দিতে প্রণোদনার চেষ্টা চলে। শেষমেষ ৩৫% নাগরিক সিম নিবন্ধন করেছেন। এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬০ লাখ মুঠোফোন সিম নিবন্ধিত হয়েছে, বর্তমানে দেশে চালু থাকা সংযোগের সংখ্যা ১৩ কোটি ১০ লাখ।
পরিসংখ্যান হতে সরকারের এই কাজে জনসাধারণের অসম্পৃক্ততার ব্যাপারটা পরিস্কার। সরকারের লোকেরা হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যসিদ্ধি করে ফেলবেন আর জনসাধারণ গোগ্রাসে গিলতে থাকবেন প্রকৃতপক্ষে ব্যাপারটা এমন নয়।
অনেক ভুল কাজ সরকার করছে যেগুলো স্রেফ জনগণকে দেখানোর জন্য আর কিছু করছে নানান চাপে। এই যে পদ্ধতিটা চালু করতে গেল সরকার, এটা করবার আগে একটি টাস্কফোর্স করে দেখা উচিত ছিল এর সুবিধা-অসুবিধা ও নিয়ন্ত্রন-কর্মপন্থা নিয়ে।
জনগণের নিরাপত্তার সাথে জড়িত এই বিষয়ে খেয়াল খুশিমত যেকোন কিছু করাটা মোটেই মানার মতো কিছু নয়। ভিনদেশী অর্থপূজারী লেলুপ গোষ্টির কাছে এত সেনসিটিভ একটি ব্যাপার দু হাতে তুলে দেয়াটা যে কত বড় আহম্মকী কাজ সেটা সরকার মোটেই ভ্রুক্ষেপ করছে না।
যারা এখনো মনে করছেন, বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ ক্ষতিকর/উদ্বেগজনক নয় তাদের বলছি- উপরে ৩টি অপারেটরের অফারগুলো কি নির্দেশ করে সেটাও কি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে?
ডাল মে কুচ কালা হ্যায়, এর পরও যদি না বুগেন, তাহলে আর কি করা। আপনাদের মতো মহাপন্ডিত হওয়ার সখ নাই। আমরা নিজেদের পিঠ বাঁচাইতে চাই।
আমি আবারও বলছি- নাগরিক নিরাপত্তার সাথে জড়িত এই আংগুলের ছাপ সংরক্ষণের অধিকার কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত নিরাপত্তা প্রতিষ্টানই রাখে। এবং যেকোনও ঘটনা ঘটলে নিয়ন্ত্রিতভাবে এটা প্রক্রিয়া করতেও অনেক গোপনীয়তা বজায় রাখার কথা।
হ্যাঁ, সন্ত্রাস ও জঙি মোকাবেলায় এটা ভাল ভূমিকা পালন করতে পারবে। তবে এজন্য সরকার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পাবলিকের ডাটাবেস তৈরি করুক। আপত্তি করব না আমরা। বিদেশি কোম্পানির হাতে আমাদের প্রাইভেসি বিক্রি হতে চাইবো কেন?
সিম নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয় পত্রের আইডি নাম্বারই তো যথেষ্ট। ব্যাপারটা সিম্পল। শুধু ব্যবহারকারীর নাম ও নাম্বার থাকবে ব্যস।
চৌদ্দ গোষ্টির তথ্য তাদের কাছে কেন থাকবে? চৌদ্দ না চুয়াল্লিশ গোষ্টির তথ্য থাকুক আমাদের আইন-নিরাপত্তা-শৃংখলা বাহিনীর লোকদের হাতে। কোন সমস্যাই নাই।
✒ তথ্যসুত্রঃ
✐ সিম নিবন্ধনে আসছে আঙুলের ছাপ পদ্ধতি
✐ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন নিয়ে ✐ হাইকোর্টের রুল
✐ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ
✐ আঙুলের ছাপ পদ্ধতিতে ৪ কোটি ৬০ লাখ সিম নিবন্ধিত
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৫