somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐশীর ফাঁসি, সুইসাইড নোট ও বিবিধ :(

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পুলিশের এসবি মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।

হত্যাকাণ্ডে সহায়তার জন্য ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে খালাস পেয়েছেন মামলার অন্য আসামি ঐশীর আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ বৃহস্পতিবার আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত ও নৃশংস। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা গেছে, ঘটনার সময় আসামি ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় ঐশীকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে।


ঐশীর লেখা সুইসাইড নোটঃ

প্রিয়,
আমি জানি না এই চিঠি আমি কাকে লিখছি। তারপরও কাউকে না কাউকে কিছু একটা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আরও কঠিন মনে হচ্ছে। বুক ভেঙে যাচ্ছে। আত্মহত্যার কারণ আমি কাউকে বলতে চাইছি না। একজনের দুঃখ সাধারণত আরেকজন কখনোই মন থেকে বুঝতে পারে না। আমার আত্মহত্যার কারণ তোমার কাছে খুবই অপ্রয়োজনীয় ও হাস্যকর মনে হতে পারে। সুতরাং সেই ঝামেলায় গেলাম না। আমার এই চিঠিটাকে সুইসাইডাল নোট বলা যেতে পারে। তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো, জীবনের শেষ কথাগুলো আমার আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মাকে না জানিয়ে কোনো অপরিচিত কাউকে কেন জানাচ্ছি! তারা কোনোদিনও আমাকে বুঝতে পারেনি।
আমার অনেক খারাপ দিক আছে- সেই খারাপ দিকগুলো চালাকি করে বুঝে ফেলা ছাড়া ভালো দিকগুলো কখনোই তারা বোঝার চেষ্টা করেছে কি-না সন্দেহ!
আমার এই চিঠিটি তাদের দেখাতে লজ্জা এবং ঘৃণা লাগে। কারও প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। মানুষকে দোষ দিয়ে কী লাভ বলো! প্রত্যেকেরই তো নিজস্ব চিন্তাধারা, আশা থাকে। প্রত্যেকেই চায় তার ইচ্ছা পূরণ হোক। শুধু যেটা বুঝতে পারে না অন্য মানুষের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। আনন্দের একটি নির্দিষ্ট কারণও থাকতে পারে।
আমি জানি, তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা দোষ ধরার ইচ্ছা, রাগ, শক্তি কোনোটাই আমার এখন আর নেই। শুধু একটাই আফসোস থেকে গেল- জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিলো কোনোটাই পূরণ করতে পারলাম না। এ পৃথিবীর মানুষ সবাইকে বুকের মাঝে নিয়ে যে স্বপ্নগুলো দেখেছিলাম সবই কেমন যেন ধুয়ে-মুছে গেল, সব শেষ। আচ্ছা সব কিছু এমন হয়ে গেল কেন, বলোতো?
ভাইয়া/আপু
আমিতো মানুষকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! পৃথিবীকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম! মানুষের হাসি-কান্না, আনন্দ ভালো লাগা, অনুভূতি, প্রেম, সবচেয়ে বড় কথা- মানুষকে ভালোবাসা। পৃথিবীর নানা জায়গার সৃষ্টি এতো সুন্দর যে বেহেস্তকেও যেন হার মানায়। কেন শেষ পর্যন্ত এখানে বাস করে যেতে পারলাম না! কেন এসব উপভোগ করে যেতে পারলাম না শেষ সময় পর্যন্ত!
আমি জানি, এর উত্তর একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে নেই। হয়তো বা ঈশ্বরের কাছেও নেই! আমি সবসময় শুনে আসছি, তুমি যদি মন দিয়ে কোনো কিছু চেয়ে থাকো তবে অবশ্যই তা পাবে। আমার স্বপ্ন আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আমি কী মন দিয়ে চাইনি! শুধু মন দিয়ে চাওয়া এই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য কত কষ্টই না করলাম। মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে।
শারীরিক কষ্টটা হয়তো অন্যের দৃষ্টিতে এত বেশি হবে না। আমার জন্য তা অনেক ছিলো। আহ, ওহ, মানসিক কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছে। একটা সময় ছিলো, এমন কোনোদিন যেত না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। দুইটা বছর একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না। হাজার কষ্টের মধ্যেও একটা জিনিস চিন্তা করে স্বস্তি পেতাম।
অন্তত আর কেউ না থাকুক ঈশ্বর আমার পাশে থাকবে। আর কেউ না বুঝুক, উনি আমার কষ্টটা বুঝবেন। আমি এখনও জানি তিনি আমার পাশে আছেন। যা হোক এসব কথাবার্তা
বলা এখন অর্থহীন। মনের ভেতর এক অজানা উল্লাস হচ্ছে। কেন জানি মনে হচ্ছে, মৃত্যুর পর আমার পছন্দের জায়গায় চলে যাব। জায়গাটা পৃথিবীর মতোই হবে। কিন্তু এই পৃথিবীতে আমার স্বপ্নগুলো এখনো পূরণ হয়নি। যেগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ কেমন আজব প্রাণী তাই না! আশা (হোপ) মানুষ ছাড়তে পারে না। মরতেও চাই আশা নিয়ে। আমি জানি না মৃত্যুর পর কী হবে! দেখা যাক কী হয়! আসলে মৃত্যুর পরের জীবন বলতে হয়তো কিছুই নেই!
শুধুই মাটির সঙ্গে মিশে যাবো। তাহলে তো সবই শেষ। যা হোক, মৃত্যুর পর যদি কিছু নাও পাই, এই পৃথিবীতে যতটুকু সময় কাটিয়েছি, আমার এ ছোট্ট জীবন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তুমি হয়তো বা মনে করতে পারো, এ পৃথিবীতে এসে তো কিছুদিন পর আত্মহত্যাই করলাম। সময় নিশ্চয় ইহকালে ভালো কাটেনি, তাহলে কৃতজ্ঞ হওয়ার কী আছে? ন্যাকামির আর জায়গা পাই না! কি জানি!
ভাইয়া/আপু,
কেন জানি ভালো লাগে। পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার ওপর ভেঙে পড়ার কষ্ট। মানুষ কি আশা ছাড়া বাঁচতে পারে বলো, এই একটা জিনিসই তো আছে! যা কি-না বহুদিন পর্যন্ত আঁকড়ে ধরে রাখা যায়। কিন্তু আমি যদি বলি পৃথিবীতে আমার জীবনের সময়গুলোতে কোনো সুখ স্মৃতি নেই- তাহলে তো মিথ্যা বলা হবে। কত ভালো, কত আনন্দ, কত কি-ই না আছে! কত সুন্দর মানুষের হাসি, সেই সুখগুলো, কোনো ছেলেকে প্রথম ভালো লাগা- সেই অনুভূতিগুলো।
পছন্দের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার সেই সময়গুলো, পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে, সুন্দর জায়গার দৃশ্য দেখে অভিভূত হওয়ার সময়গুলো….কত কি-ই না আবিষ্কার করলাম! পৃথিবীর ব্যাপারে, মানুষের জীবনের ব্যাপারে। মানুষের জীবন সম্বন্ধে কত সুন্দর সুন্দর তথ্যই না জানলাম। এর থেকে সুন্দর জিনিস আর কি-ই বা হতে পারে! মানুষের তৈরি কত অদ্ভুত-চমত্কার জিনিসই না দেখার সৌভাগ্য হলো।
ঈশ্বরের বিশাল ও তুলনাহীন সৃষ্টি দেখতে পারলাম। এই জায়গাটায় না আসলে এসব কীভাবে জানতাম! কীভাবে দেখতাম! মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয় বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবন যুদ্ধ আর আমাকে করতে হবে না।
জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস। আমি সব সময় শুনে এসেছি, যারা আত্মহত্যা করে তারা নাকি দোজখে যায়। জিনিসটা কেন জানি বিশ্বাস করতে পারি না। কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভেতরে কী পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! এই জায়গাটাকে আমরা কতই না ভালোবাসি।
হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই শুধুমাত্র এই জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য, একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক কতটা ভেঙে গেলে এই ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে! তার বুক ভাঙা কষ্টের কি কোনো দাম নেই। পৃথিবীর যেখানে আমরা এক টুকরো সুখের জন্য কত কিছুই না করি, এত কষ্ট পাওয়ার পরও। ঈশ্বর কী এতোটাই পাষাণ! কি দোষ করেছিলাম আমি। জীবনের কথা না হয় বাদই দিলাম।
আমি এমনকি খারাপ কাজ করেছিলাম যে, কোনো কিছুই সত্যি হতে দেখলাম না। মাঝখান দিয়ে জীবনে আরো যে যুদ্ধ করে যাব সেই উপায়টাও শেষ হয়ে গেল। ঈশ্বর বুঝি আসলেই পাষাণ।
লেখার মতো আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ নাই। থেকেও যেন নাই। এই কথাটা সত্যি- মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কত ভালোবাসার, কত সাধের! আমি ভাববো এক সময় পৃথিবী নামে আমার পরিচিত একটা ছেলে ছিলো!

ইতি
ঐশী/ডালিয়া




কি করত ঐশী?
- ঐশী রহমান ধানমন্ডির অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের 'ও' লেভেলের শিক্ষার্থী। অসৎ সঙ্গ তার জীবনে নিয়ে আসে বিপর্যয়। ইংরেজি মাধ্যমেই পড়ুয়া বন্ধু-বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে আসক্ত হয়ে পড়ে ইয়াবায়। অন্যান্য মাদকদ্রব্যও তার নিত্যসঙ্গী। বযফ্রেন্ডের সংখ্যাও ছিল অনেক। গভীর রাত পর্যন্ত বাসার বাইরে কাটানোও পরিণত হয় অভ্যাসে। কখনও কখনও রাতে বয়ফ্রেন্ডকেও নিয়ে আসতো বাসায়। বিষয়টি নজরে পড়েছিল বাবা-মায়ের।

- ঐশী ছিল বেপরোয়া প্রকৃতির। বখাটে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করতো। তাদের সঙ্গে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতো।

- মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় তার আচরণ ছিল খিটখিটে। এসব বিষয় নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তার দ্বন্দ্ব ও ঝগড়া বাধতো। যখন হত্যা করা হয়, তখন ঐশী নিজেও উপস্থিত ছিল।



আদালত বলেছেঃ
হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত ও নৃশংস। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা গেছে, ঘটনার সময় আসামি ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় ঐশীকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে

মেয়ে ঐশী রহমানের বন্ধুদের হাতে খুন হন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান। আর হত্যার নির্দেশ দেয় ঐশী নিজেই। হত্যাকাণ্ডে চার থেকে পাঁচ জন বন্ধু অংশ নেয় বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে ঐশী। বাবা-মাকে




বিশ্লেষণঃ
- আত্মসমর্পণ করার আগ মূহুর্ত পযর্ন্ত আমরা ঐশীর বয়স জানতাম মাত্র ১৭ বছর । নাবালিকা ঐশী অভিজাত ড্যান্সার ক্লাবে নাচতো। যেখানে অশ্লীলতা আর বেলাল্লাপনার ছড়াছড়ি ছাড়া আর কিছুই হয় না । একটা মেয়েকে তার গভীর রাতে ফেরার কারণে গর্ভধারিনী মা যদি বেশ্যা বলতে পারে তাহলে তার কতটুকু অবনতি হয়েছিল সেটা আর ভাবতে হয়?

- ঐশীর বাবা মাহফুজুর রহমান এবং মা স্বপ্না রহমান কোন সাধারণ মা বাবা ছিলেন না। তারা উভয়েই ছিলেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল।

- ঐশীর সুইসাইডাল ১২ পৃষ্ঠার ডায়েরী পড়ে যেটা মনে হয়েছে বাবা-মা কারো সংঙ্গেই ঐশীর বন্ধুত্ব হয় নি। সময়্মত হাত খরচের চাইতে অনেক বেশি টাকা পেয়েছে কিন্তু সন্তানের যে সাহচর্য দরকার সেটা বয়সন্ধির পর থেকে মোটেই পায়নি ঐশী । যার কারনে শান্তশিষ্ঠ ঐশী ইতিহাসের এক ঘৃন্যতম পৃষ্ঠায় স্থান করে নিয়েছে ।

- মাহফুজুর রহমান বেতন পেতেন অনুর্ধ ৩৫ হাজার টাকা। মধ্যবিত্ত একটা পরিবারের জন্য টাকাটা যথেষ্ট। অথচ মাহফুজুর রহমানের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান ঐশীকেই প্রতিমাসে হাতখরচ বাবদ ‍দেয়া হত লক্ষাধিক টাকা। তারপর তার পরিবারের খরচ। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া অনুসন্ধান করে তার অবৈধপথে আয়ের যে ফিরিস্তি বের করেছে তা ৮ লক্ষ টাকাকে ছাড়িয়ে গেছে ।

- আমরা কি ভাবতে পারি না এ টাকা ঘুষের? যে ইয়াবাসেবী মেয়ের হাতে মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমান নিহত হল সেই ইয়াবা বাজারে ছাড়ার জন্যও হয়তোবা মাহফুজুর রহমান কোন একদিন ঘুষ নিয়েছিলেন । তাহলে এটা কি খাল কেটে কুমির আনার মত অবস্থা নয় ?

- ঐশী কি কিশোর অপরাধী নাকি পূর্ন বয়সী অপরাধী হিসেবে শাস্তি পাবে তা নিয়ে এখন চলে গবেষণা । ঐশীর জন্ম সনদে বয়স ১৭ বছর । যা কিশোর অপরাধের সীমায় পড়ে । কিন্তু তাতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট নন । তাদেরও যে সন্তান আছে । পরবর্তীতে তাদের সন্তানের হাতে তারা আর খুন হতে চান না । এ জন্য ঐশীকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি পাওয়ানোর জন্য যে টুকু করা দরকার তা করতে তারা মরিয়া ।


অভিযোগ রয়েছেঃ
- হত্যার সহযোগিরাই তদন্তে নিয়োজিত ছিল। স্কুল বয়স রেকর্ড অগ্রাহ্য জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের রেকর্ড গায়েব করে করে বেশি বয়স দেখানো হয়। অবশ্য কিছুদিন পর নির্যাতন আঘাত সামলে সুস্থ হয়ে আদালতে তার স্বীকারক্তি প্রত্যাহার করে।

- সাধারন কমনসেন্স বলে এত ছোট মেয়ে কোনমতেই দু’জন বলিষ্ঠ প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষকে হত্যা করতে পারেনা। কঠিন চার্জশিট দিয়ে প্রায় নিরবে বিচারও সম্পন্ন হয়ে গেছে।

- ঐশী রহমানের বাবার ন্যায় আরো পুলিশ অফিসার রয়েছেন যাদের মেয়ে আছে ঐশীর ন্যায়। তারা শংকিত তাদের ছেলেমেয়েও একই ঘটনা ঘটাতে পারে। তারা যেন সাবধান হয় যে মা বাবাকে খুন করলেও রেহাই হবে না। নিজেকেও মরতে হবে।
এই আশংকায় তাঁরা একটি দৃষ্টান্ত রাখতে চান। যাতে এইরুপ ঘটনা না ঘটে।
২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখানো হয় ঐশিকে। একপর্যায়ে এমনও বলা হয় যে, "আমাদের কথামতো তুমি যদি আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সামনে আমাদের শেখানো কথা না বলো, তাহলে তোমাকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে মেরে ফেলবো অথবা ক্রশফায়ারে মেরে ফেলবো।!"



পুনশ্চঃ
আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন মৃত্যুদন্ডের পক্ষেই নই। কেবল আমি কেন, সভ্য দেশগুলোতে দেখা যায় মৃত্যুদন্ড প্রথার বিলোপ হওয়ার প্রবণতা। অথচ আমরা অসভ্যতার দিকে ধাবিত হচ্ছি দিনে দিনে। একজন মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেওয়া কারো জন্যই শোভনীয় নয়।
আদালতের রায়ের ওপর শ্রদ্ধা রেখেই বলছি- আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ঐশীর উপর অমানবিক ও সম্পুর্ণ অন্যায় একটি শাস্তি আরোপ করা হলো।
এটা বললে বেশি বলা হবে না যে, ঐশীকে জুডিশিয়াল কিলিং করা হচ্ছে। সভ্যতার যুগে যেকোন বয়সের মানুষকে মৃত্যুদন্ডের মতো সাজা দেয়ার প্রশ্নই যেখানে ওঠে না সেখানে কিশোর একটি মেয়েকে জীবনের সংজ্ঞা বুঝার আগেই ফাঁসির দড়ি গলায় পরিয়ে পরপারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সে এখনো দেখেনি দুনিয়ার প্রকৃত রুপ, তার আগেই স্তদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তাঁর পথচলা। জোর করে বয়স বাড়িয়ে অপরাধী হিসেবে উপস্থাপন করা হলো। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জুডিশিয়াল কোর্টের অবিচারের একটি কলংক হিসেবে একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ন্যায়বিচারের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে এ রায় ও বিচার।
প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে গেল আর বলি হলো একটি সদ্য কৈশোর পার হওয়া একটি মেয়ে।



ঐশীকে নিয়ে লেখা কয়েকটি পোস্ট, যেগুলোর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে এ পোস্টে-
১। বাঙালি মেয়ে ঐশী কি করত ?
২। ঐশী খুনি, কিন্তু সুমির দোষ কি?
৩। নিন্দিত-নন্দিত ঐশী রহমান : দায়ভার পরিবেশ, রাষ্ট্র, নাকি পরিবারের ?
৪। ঐশী কে ক্রশফায়ারের হুমকি দেয়া হলো কেন?
৫। কন্যা ঐশীর নির্দেশেই খুন করে বন্ধুরা
৬। হতভাগ্য ঐশী রহমান, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে নিশ্চিত।
৭। বাবা-মাকে খুনের আগে লেখা ঐশীর চিঠি (যুগান্তর )
৮। সুইসাইড নোট লিখেছিল ঐশী (সমকাল)
৯। বাবা-মাকে হত্যার আগে ঐশীর লেখা দীর্ঘ চিঠি (অনলাইন পেপার)

মুল পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২১
৭৩টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×