প্রিয়া ও রে প্রিয়া
প্রিয়ারে প্রিয়ারে প্রিয়া
তু মেরা প্রিয়া
এই বখাটে নিছক বুলি আওরাচ্ছিল নাকি তাকে দেখেই বিকট সুরে গান গাওয়া শুরু করেছে কে জানে । রুজির ইচ্ছে হচ্ছে কষে একটা থাপ্পড় দিয়ে হনহন করে চলে যেতে । কিন্তু প্রকৃতি তাঁর গায়ে সে জোর না দিয়ে কি অন্যায় করেছে সেটা হয়ত জানে না । মনটা খারাপ হতে থাকে রুজির ঠিক যেন সুর্যের অনুপস্থিতির সূযোগ পেয়ে কালো মেঘের আকাশটা দখল করে নেয়ার ব্যাপার । এখন রুজির মনটা তাই ভীষণ রকমের খারাপ।
শয়তানটাকে দেখে মনে হচ্ছে বাড়ীতে কোন গার্জিয়ান বলতে কেউ নেই। কি নির্ভার জীবন রে বাবা । ছিঃ। বেয়াদবটার ঠোঁট দুটো মুখের চেয়ে কতো কালো। মনে হয় সিগারেটও খায় । হয়তোবা বোতলও। শার্টের বোতাম ইচ্ছে করেই খোলা রেখেছে। গলায় ঝুলে থাকা লকেটটা ডেঞ্জার চিহ্ণের। সদম্ভে সমাজকে সে জানিয়ে দিচ্ছে আমি এ সমাজের বিপদ। আমার যা ইচ্ছে তাই করব ।
কিশোরী মনে ভীষন জেদ চাপে রুজির । যদি একটা পিস্তল পাওয়া যেত তবে লুকিয়ে একটা গুলি করে এঁকে মেরে ফেলা যেত । ব্যাস সব জ্বালা শেষ হয়ে যেত । নিস্তার পাওয়া যেত এই যন্ত্রণার হাত থেকে।
বাড়ীতে এগুলো বললে হয়তো বাবা কোন না কোন উপায়ে বন্ধ করতে পারতেন কিন্তু কিভাবে । কিন্তু বাবা তো সামান্য এক গাড়িচালক । ভাল করেই মনে আছে সেবার কমিশনারের ছেলে তাকে নিয়ে কটুক্তি করলেও বাবা তার প্রতিবাদ না করে উল্টো ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে উপদেশ দিতে গিয়ে তার সামনেই অপমানিত হয়েছিলেন । হুঁহ । ঘরে বলা যাবে না । হয়তো মা বাবা দুজনেরই গাল খেতে পারি । তাছাড়া আমার তো একটা আত্মসম্মানও আছে ।
আচ্ছা সুইসাইড করলেই তো সব ঝামেলা শেষ। আচ্ছা এইটাই তাহলে বেস্ট ওয়ে। তবে তাঁর আগে একবার শুয়োরটার মুখোমুখি হতে হবে ।
কয়েকবার সে ধারাল ছুরি হাতে নিয়েছে নিজের বুকে পুরে আত্মহত্যা করে সব কেচ্ছা খতম করার জন্য । খালি মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে প্রতিবারই রক্তাক্ত মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছে । কেন যেন হাত দুটি ছুরিটা নিয়ে তার বুক এফোঁড় ওফোঁড় করতে এগুতে পারে না । তাছাড়া আদরের ছোট্ট ভাইটা। স্কুল থেকে এসে ওকে কোলে নিয়ে কত আনন্দ করি। ওলে আমার ভাইয়া। তোমায় কি ছেড়ে যেতে পারি।
রুজির মনটা যেন বালি হাঁসের দেহ থেকে খসে পড়া হালকা পালক । প্রতিনয়ত সেই দ্বিধার পালক বাতাসে দোল খেতে থাকে ।
রুজির মষ্তিষ্কের অগ্রভাগে ক্ষোভসমুহ পুঞ্জিভুত হতে থাকে। পড়াশুনারও বিঘ্ন ঘটে। স্যারের পড়া আগে সে নিয়মিত শেষ করত। এখন করেনা। অপরিণত বয়সের মেয়েটার ইচ্ছেইতো করে-না ওগুলোতে মন দেবার। যদিও বই নিয়ে টেবিলে বসে মাঝে মাঝে এমন হয় যে সে চোখ বুজুক আর নাই বুজুক ঐ শয়তানটার গালি আর বিদ্রুপসমূহ বারবার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। তাছাড়া কি হবে পড়াশুনা করে । এই শয়তানটা তো তার জীবনটা খানখান করে তুলেছে। ইচ্ছে হয় ওর লম্বা চুলে ধরে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে দেই । ভন্ডা একটা।
আজ রুজি কাউকে কিছু না বলে একটা ছুরি নিয়েছে বুকে করে এক অভিনব উপায়ে। হাতে সেলাই করে ধারাল ছুরি রাখার একটা ব্যাগ সে তৈরি করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। সেই ব্যাগটি এমনভাবে ডিজাইন করে রেখেছে তার স্তনদ্বয়ের মাঝখানে যে কেউ সহসা টের পাবে না।
স্কুল থেকে ফেরার পথে রুজি তার দুই বান্ধবীকে বললো তাঁর সাথে থাকার জন্য। যদিও ওরাই এ বিষয়ে তাঁকে খোচায় । তারপরও দু একজন থাকলে মন্দ হয়না ।
আজো গুন্ডাটা তার দলবল নিয়ে স্পিড খাচ্ছে আর বখাটেপনা, হৈ-হুল্লোড় করছে অন্য দিনগুলির মতো।
তবে রুজির মনটা আজ অপবিত্র। সে যে আজ ক্ষ্যাপা পাগলি সেটা ক্লাসেই একবার বুঝা গিয়েছিল । যখন ক্লাসের ফার্স্টবয় তাকে কি একটা বিষয়ে জোকস বলছিল সে সেটা আমলে নেয়নি বরং চুপ বলে ধমকে ওঠেছিল । তার মষ্তিষ্কের ভেতর দিয়ে এই মুহুর্তে ১৮০ কি.মি. বেগে তরঙ বইছে । অতি বিক্ষিপ্ত এবং শৃঙ্খলাবিহীন সে তরঙ । তার মনে হচ্ছে আস্ত একটা হাতি তার সামনে এলে ক্রোধের আগুনে পুরে নির্ঘাৎ ছাই হয়ে যাবে ।
রুজিকে দেখা মাত্রই পাজিটা গান ধরেছে । হিন্দি গান । আশিকি ।
রুজি জীবনে প্রথমবারের মতো কোন দুঃসাহসিক কাজ করছে । হিমোগ্লোবিনের উষ্ণ প্রবাহে উভয় হাতের রগসমুহ দৃঢ় হতে থাকে । ধমনী-সমুহে অক্সিজেন পরিবহন বেড়ে যায় । দেহের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে নিঃশ্বাসের সংখ্যা বাড়তে থাকে । মাথার পেছনের বড় রগ দুটি অস্বাভাবিক রকমে ফুলে যেতে থাকে । কালো দিঘল চুলের গোড়াসমুহ শক্ত হতে থাকে । রক্তের প্রবাহ চনমন করছে তার গালের শিরাসমুহে । উজ্বল শ্যামল গালদ্বয় লাল হয়ে রাতজাগা শালের গুটোগুলোকে ভয়ানক লালটি করে তুলেছে ।
: কি ?
: তুই কাকে টার্গেট করে ডেইলি গান গাস ?
: এই বেয়াদব মেয়ে । এইভাবে কথা বলছিস কেন ।
: বেয়াদবির দেখেচিস কি? বল ইডিয়েট, কাকে টার্গেট করে গান গাস?
: ওঃ সে-কি জানো না । সে তো তুমি ।
: কিন্তু আমি তো তোকে ভালবাসি না ।
: তাতে আমার কি ? আমি ভালবেসেই যাব । আপত্তি থাকলে কিচ্ছু করার নাই । হেহ ।
: ওঃ তাহলে তোকে আর বেঁচে থাকতে দেয়া যায় না রাবিশের বাচ্চা খবিশ ।
: হাঃ হাঃ হাহ । কি করবে প্রিয়া তুমি । তোমার তো ..
কথাটা পুরো বলতে পারেনি বখাটে শয়তান । সুপ্ত আগুন আজ দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠেছে । ভয়ানক নীলচে চোখ বিদ্যুতের ন্যায় জ্বলে ওঠল । দু-পা পিছিয়ে তার আগেই ক্ষীপ্ত বাঘিনী যেভাবে শিকার নিয়ে লুটিয়ে পড়ে ঐভাবেই লিকলিকে শরীরের পাভেলকে নিয়ে সর্বশক্তি খরচ করে লুটিয়ে পড়ে । বিদ্যুতের খুঁটি মাটিতে ফেললে যে রকম শব্দ হয় অনেকটা সেই রকম শব্দ হলো । মাথাটার অনেকটাই থেতলে গেছে সাথে সাথে । পড়ে যাবার পরে মুহুর্ত দেরী না করে রুজি চড়ে বসলো শয়তানটার বুকের ওপর । একেবারে দুই হাত অবশ করে ফেলেছে । অপরিণত স্তনদ্বয়ের মাঝখানে রাখা ছুরির ব্যাগ থেকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ডান হাতে ঝট করে টান দিয়ে লুকানো ছুরিখানা বের করল । উপরে চারদিকে ২ বার ঘুরিয়ে বললো যে আসবে তাকেই আজ খতম করে ফেলব ।
শয়তানটা আচমকা এরুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে ভাবেনি । তার দুই চোখে ভয়াবহ অসহায়ত্বের সাথে নির্বুদ্ধিতা ফুটে ওঠলো । মেয়েটি তার বুকের ওপর চকচকে একখানা ছুরি নিয়ে উদ্যত । বিকেলের সোনালি আলো ছুরিটাকে আরো ভয়ানক করে তুলেছে । বুঝেই নিল আজই জীবনের শেষ দিন । পৃথিবীর কোন আইনই যে এই ক্ষেপে যাওয়া কিশোরীকে বিরত করতে পারবে না ।
রুজি চিৎকার করে বললো "তুই আর কোনদিন আমাকে জ্বালাতে পারবি না । খুন করে ফেলবো শয়তান তোকে । তুই হলি সমাজের আবর্জনা । তুই কেবল দুর্ঘন্ধই ছড়াবি । তোর বেঁচে থাকার কোন দরকার নাই ।"
" এই ছুরিটা দেখে নে বাস্টার্ড । আমি তোর চোখগুলি প্রথমে উপড়ে ফেলব । এই দেখ । দেখে নে জীবনের শেষ দেখা । আমাকে দেখে নে । তাকা । আমার মুখের দিকে তাকা । আর নরকে গিয়ে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হ ।"
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষের যেটা করার থাকে সেটা হলো ভয়ানকভাবে চিৎকার করা । বখাটে শয়তানটা চিৎকার করতে গিয়ে গোঁ গোঁ করে ওঠল । ছুরি দিয়ে সাথে সাথে ডাইরেক্ট তার হা করা মুখগহব্বর লক্ষ্য করে তীব্র গতিতে বসিয়ে দিল ।
ফিনকি দিয়ে রক্ত এলো । চোখের দিকে আসাতে চোখ বন্ধ করে একটু একপাশে সরে গিয়ে দ্বিতীয়বার ছুরি উদ্যত করল । কিন্তু কেন যেন সে এবার আর আঘাত করলো না । সুকরুণ মুখাবয়বে জগত অসহায় অক্ষিগোলকের নিদারূণ বেঁচে থাকবার আর্তনাদ রুজির উদ্যত হাতকে আঘাত করতে দিল না । রুখে দিল ।
পরের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১২