অনেকেই হয়ত খেয়াল করেছেন, শাবির ৫১ জন শিক্ষকের একটা বিবৃতি বের হয়েছে, যেখানে তারা প্রস্তাবিত স্বাধীনতা ভাস্কর্য তৈরীর বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন, ইসলামের সাথে "মূর্তি নির্মাণ সঙ্গতিপূর্ণ নয়" এই উছিলায়।
খবরের লিংক
আমি শাবির অনেককাল আগের ছাত্র, তাই ওখানের কয়েকটা নাম দেখে অবাক হয়নি, তবে ধাক্কা খেয়েছি শহীদ স্যারের নাম দেখে, তার ছাত্র ছিলাম, তাকে অনেক পছন্দও করতাম, কম বেশী সবারই তিনি প্রিয় শিক্ষক, সবার সাথেই হাসি ঠাট্টা করছেন, আবার কাজেও সিরিয়াস, এইতো মাসখানেক আগেই তিনি নতুন হেড হলেন, সেই নিয়ে ডিপার্টমেন্টে বেশ আনন্দময় পরিবেশ, জাফর স্যারও খুশী, তিনি তাঁর সেই রুম, যেটাকে আমরা সারাজীবন জাফর স্যারের রুম বলে জেনে এসেছি, সেটাও ছেড়ে দিচ্ছেন নতুন হেডের জন্য, এমনকি শহীদ স্যারের মানাও তিনি শুনছেননা----এইসব মনভালোলাগা খবরের মধ্যে হঠাৎ করে এই ভাস্কর্য তৈরীর বিরোধিতায়, শহীদ স্যারের নাম দেখে বিনা মেঘে বজ্রপাত!
ভাস্কর্যের বিরোধিতা করা ছাগুদের অত্যন্ত প্রিয় একটা কাজ, এটা কমবেশী সবাই জানেন। তবে কী শহীদ স্যার ছাগু?
আমার মতামত---না, স্যার তাতে ছাগু হয়ে যাননা।
ছাগু বলতে আসলে কী বুঝি, সেটা আরেকবার রিভাইস করি, খুব সংক্ষেপে। জামাত-শিবির, ধূর্ত ধর্ম ব্যাবসায়ী। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ত্যানা প্যাচায় যারা। যুদ্ধাপরাধ এর বিচারটাকে যেকোনো মূল্যে বিতর্কিত করতে চায় যারা। ধর্মের নাম নিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে, যুক্তির প্যাঁচে চেপে ধরলে এরা বাইন মাছের মত পিছলায়। এই ব্লগে ৫ বছর ধরে আছি, ছাগু দেখলেই আমার গা চিড়বিড়ায়, চামড়ায় কুটকুট করে।
শহীদ স্যার তাবলীগ করেন। আমরা যে ৬ বছর (কেন ৬ বছর সেইটা আরেক ছাগু কাহিনী, এইখানে একটু ইঙ্গিত আছে) স্যারকে দেখেছি, কখনো জামাত শিবিরকে স্যার প্রশ্রয় দিতেছেন এরকম কিছু দেখি নাই, কোথাও প্যাঁচ লাগানোর চেষ্টা করতেছেন এরকমও দেখিনাই---মোটামুটি স্ট্রেটফরওয়ার্ড মানুষ, তার কাজেকর্মে কখনৈ আমরা চামড়া কুটকুট করে নাই।
তাহলে স্যার কীভাবে স্বাধীনতা-স্তম্ভ তৈরীর বিরোধিতা করেন? আমার জবাব, স্যারের কনজার্ভেটিভ ইসলামিক মাইন্ড। খিয়াল কৈরা, এইটা কিণ্তু ছাগুগিরি থেকে আলাদা। স্যার তাবলীগ করেন, আমার ইসলাম বোধ থিকা উনারটা অনেক কনজার্ভেটিভ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমি জানি, অনেকেই বলবেন (এবং তারাই হয়ত ঠিক) যে ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ মানা করা নাই, কারণ এইটাতো আর পূজা করার জন্য বা আইডলশীপের জন্য বানানো হয় নাই! তবে মনে রাখতে হবে, আমার ইসলামী বোধ আপনার থেকে আলাদা হইতে পারে, আপনি মনে করতেই পারেন যে সবধরনের ভাস্কর্যই ইসলামে নিষিদ্ধ। শুধু সেই কারণেই কিন্তু আপনারে আমি ছাগু বলতে পারিনা!
ছাগুদের ভাস্কর্য বিরোধিতা আর কনজার্ভেটিভ ইসলামী মাইন্ডেড দের ভাস্কর্য বিরোধিতা ২ টাএকটু আলাদা জিনিস। ছাগুদের ভাস্কর্য বিরোধিতার আরো কিছু ক্লাসিক লক্ষণ বলি---ইনায়ে বিনায়ে মূর্তি ভেঙে ফেলার হুমকী দিবে, আস্তে কইরা সরকাররে ইসলামি-বিরোধী বানানোর ট্রাই করবে, তারপর পুরা ব্যাপারটা নিয়া জল ঘোলা কইরা ফায়দা লুটার চেষ্টা করবে, ওয়াজে এইটা নিয়া মুখে ফেনা তুলে জিহাদের ডাক দিবে, আর আরো বেশী তেল হইলে মাদ্রাসা-ছাত্রদের মূর্তি টেনে নামানোর উস্কানি দিবে । আর অন্যদিকে, বেশী ধার্মিকেরা এইটার বিরোধিতা কইরা কথা বলবে, কিন্তু বাকী লক্ষণ গুলা তাদের কাজে কর্মে পাবেননা।
শহীদ স্যারের ক্লাসমেট আলমগীর স্যার/ভাই এর তরফে জানলাম, শহীদ স্যার বলেছেন "দিস ইজ মাই পার্সোনাল স্ট্যান্ড, সরি ইফ ইট হার্টস ইউ।" ছাগু হইলে এইটাইপ কথাকেউ বলতোনা বলেই মনে হয়, ভালো করে ভেবে দেখেন। শহীদ স্যারের সহকর্মী শিক্ষকদের মন্তব্যে বুঝেছি, তাদের অনেকেই ব্যাপারটায় মনক্ষুণ্ন হলেও শেষপর্যন্ত স্যারের পার্সোনাল স্ট্যান্ডএর (স্যার তাবলীগ করেন, এইটা মনে রাখা দরকার) একটা প্রকাশ হিসাবে মেনে নিয়েছে। এবং স্যার এই ইস্যু নিয়ে অন্যান্য দিকে জল ঘোলা করা শুরু করছেন, এমনও কিছু শুনিনি।
তবে একটা কথা হইল, জীবনে অনেক ভালো মানুষকেই পল্টি খেতে দেখছি। শহীদ স্যার কি তাহলে পল্টি খেলেন? এই দুনিয়ায় কিছুই অসম্ভব না। তবে, লক্ষণ বিচারে, শহীদ স্যার ছাগু না বলেই মনে হয়, অন্তত আজ পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি, বুঝেছি।
দুঃখ একটাই, স্যার হয়তো বোঝেন নাই যেতার এই বিবৃতি ছাগুদের পালেই জোরালো হাওয়া যোগাবে। সিলেটে ধর্মীয় অনুভূতির স্থান বেশ ওপরে, তাই ছাগুর দল এটাকে কাজে লাগিয়ে পলিটিক্স করে, এটা ওখানকার পুরোনো স্টাইল। ছাগুদের সেই ধর্মানুভূতির রাজনীতির এক ক্লাসিক উদাহরণের চাপে পড়ে আমার ভার্সিটি জীবনের মূল্যবান ৭টি মাস এক ধাক্কায় হারিয়েছিলো, ছাগুগুলাকে তাই ২ চোখে দেখতে পারিনা। শহীদ স্যার একটু বুঝে শুনে এইধরনের কাজ করবেন ভবিষ্যতে, এটাই আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১২