somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্মিত হলো কুবা মসজিদ

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পূর্বের লেখা:
রাসূল সা. এলেন মদীনায়
রহস্যে ঘেরা মদীনা:
মদীনায় অবস্থানকারী জাতি-গোত্রসমূহ
ঈমানের আলোয় আলোকিত হৃদয়

পূর্ব প্রকাশের পর:
নির্মিত হলো কুবা মসজিদ
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবায় চারদিন, মতান্তরে চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি সেখানে স্থানীয় লোকদের সহায়তায় কুলসুম ইবনে হাদামের খেজুর শুকানোর জন্য নির্ধারিত এক খন্ড পতিত জমির উপর একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যাকে মসজিদে কুবা বলা হয়। ইসলামের ইতিহাসে এটিই প্রথম মসজিদ -যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে কুবা পল্লীতে স্থাপিত হয়। এই মসজিদ নির্মাণের কাজে স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অংশগ্রহণ করেন এবং অন্যান্য সাহাবীদের সাথে সমান কাজ করতে থাকেন।
ভারী ভারী পাথর বহনের সময় পাথরের ভারে অনেক সময় হযরতের শরীর কুজো হয়ে যেতো। রাসূলের এই কষ্ট দেখে সাহাবায়ে কিরাম রা. আরয করতেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মাতা-পিতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আপনি ক্ষ্যান্ত হোন। আমরা তো আছি। আমরাই কাজ সম্পাদন করছি।
সাহাবায়ে কিরামের অনুরোধ রক্ষা করার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাঝে মধ্যে সামান্য অবসর নিতেন তবে পরক্ষণেই কাজ শুরু করে দিতেন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. আরবী সাহিত্যের একজন বিখ্যাত কবী ছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি সুন্দর সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতেন। এতে সাহাবায়ে কিরামের কাজের ক্লান্তি দূর হয়ে যেতো এবং সকলের মধ্যে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগ্রত হতো আসতো নবপ্রেরণা। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাথে কবিতায় সূর মেলাতেন। যেমন একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রা. আবৃত্তি করলেন,
“আফলাহা মাইয়ুআলিজু মাসজিদান। ওয়া ইয়াকরাউল কুর‘আনা কা’য়িযমান ও কা’য়িদান। ওয়ালা ইয়াবিতু লাইলু আনহু রাকিদান।”
অর্থ: “সফল ও কৃতকার্য সেই ব্যক্তি যে, মসজিদ নির্মাণ করে। উঠতে বসতে কুরআন পাঠ করে ও রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে।”

এভাবে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এক সময় তৈরী হয়ে গেলো মসজিদে কুবা। কুবাবাসীদের এমন নি:স্বার্থ ত্যাগ ও কুরবানী এবং অন্যান্য সাহাবীদের এমন আন্তরিক মেহনতের কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করে নিলেন এই মসজিদটিকে। সাথে সাথে এই মসজিদ এবং তাঁর অধিবাসীদের উপর এতো সন্তুষ্ট হয়ে যান যে, স্বয়ং পবিত্র কুরআনে তাদের সৎকর্মের প্রশংসা করে আয়াত নাযিল করেন-
لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيهِ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ.
অর্থ: “যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর (মসজিদে কুবা) -তাই বেশী হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৮)
মসজিদে কুবার অধিবাসী মুসলমানদের এই আন্তরিকতা ও ইসলামের জন্য এমন নি:স্বার্থ ত্যাগের কারণে স্বয়ং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা পোষণ করতেন এবং তাদেরকে অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। এজন্য মদীনার জীবনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় মসজিদে নববীতে কাটালেও যখনি সময় ও সুযোগ পেতেন মসজিদে কুবায় এসে নামায আদায় করতেন।

ইমাম বুখারী রহ. ও ইমাম নাসায়ী রহ. বর্ণনা করেন যে, “মদীনার জীবনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক শনিবার কখনো পায়ে হেঁটে, আবার কখনো সওয়ারীতে আরোহন করে মসজিদে কুবায় তাশরীফ আনতেন। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত উসাইদ ইবনে হুজাইব আল আনসারী রা. বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“মসজিদে কুবায় এক ওয়াক্ত নামায আদায় করা সওয়াবের দিক থেকে একটি উমরার সমতুল্য।” (তিরমিযী)
মসজিদে কুবা এবং তাঁর অধিবাসীদের এই সম্মান ও মর্যাদার কারণে রাসূলের ইন্তিকালের পরও বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম রা. যেমন হযরত আবূ বকর রা., হযরত উমর রা. প্রমুখগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুকরণে প্রায়ই মদীনা থেকে মসজিদে কুবায় তাশরীফ আনতেন ও তাতে নামায আদায় করতেন। -বুখারী শরীফ।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পর ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. স্বীয় খিলাফতকালে সর্বপ্রথম মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুন:নির্মাণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন খলীফার সময়ে আরো সাত বার এই মসজিদের পুন:নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়।

মসজিদ নির্মাণের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো কিছু দিন সেখানে অবস্থান করেন। চৌদ্দ দিন কুবায় থাকার পর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান থেকে মদীনায় যাওয়ার ইচ্ছা করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি এক জুম‘আর দিন সঙ্গী সাহাবায়ে কিরামদেরকে সাথে নিয়ে রওয়ানা হলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে বিভিন্ন গোত্রের লোকজনও অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে, অশ্বে আরোহন করে এবং অনেকে পায়ে হেঁটে চলতে লাগলেন।
কুবার সর্দার গোত্র আমর ইবনে আউফ মনে করলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্ভবত: এখানে অবস্থানকালে কোনো কষ্ট পেয়েছেন যার ফলে তিনি তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে এখান থেকে অন্যত্র রওয়ানা হয়েছেন। এজন্য তাঁরা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলতে লাগলেন যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন? না অন্য কোথাও বসবাস করার ইচ্ছা করেছেন?
তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এই আশংকা ও ভুল সন্দেহ দূর করার জন্য বললেন, “আল্লাহ তা‘আলার যেখানে ইচ্ছা, সেখানেই আমাকে যেতে হবে। এক্ষেত্রে আমার নিজের পছন্দ-অপছন্দের কোনো অবকাশ নেই।”
এরপর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে অগ্রসর হন। কিছুদূর যাওয়ার পর বনু সালিম ইবনে আউফ গোত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় জুমু‘আর নামাযের সময় হয়ে গেলে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সওয়ারী থেকে নেমে পড়েন এবং ভক্তবৃন্দের সাথে মিলিত হয়ে সেখানকার মহল্লার মসজিদে জুমুআর সালাত আদায় করেন। এটাই ছিলো মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইমামতিতে জুমুআর প্রথম নামায। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের পূর্বে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় লোকদের উদ্দেশ্য করে একটি খুৎবা দেন। যাতে তিনি ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এবং কাফিরদের জন্য জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির বিবরণ তুলে ধরেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই নামায আদায়ের পর মসজিদটির নাম হয় ‘মসজিদে জুমুআ’। আজো সেটি এ নামেই প্রসিদ্ধ আছে। সালাতের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনার পথ ধরে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া আরম্ভ করেন।

মসজিদ থেকে বের হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পান যে, তাঁর যাত্রা পথের দু’পাশে কুবা থেকে মদীনা পর্যন্ত বসবাসকারী গোত্রগুলোর মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মদীনার সম্ভ্রান্ত গোত্র ‘বনু নাজ্জার’ ছিলো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিতামহের মাতুল বংশ। তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এগিয়ে আসে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধীরে ধীরে সামনে তাশরীফ আনলে রাস্তার দু’পাশের সারিবদ্ধ জনগণ স্বত:স্ফূর্তভাবে আনন্দ ধ্বনি তোলে। সকলের মাঝে তখন যেনো এক অদ্ভুত হিল্লোল ও আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিলো।
মদীনার ছোট-ছোট বালক-বালিকারা, অবুঝ কিশোর-কিশোরীরা তাদের নিষ্পাপ হৃদয়ের স্বর্গীয় সুরভী মেখে সমবেতকন্ঠে গেয়ে উঠলো এক অপূর্ব স্বাগত সঙ্গীত-
طلع البدر علينا, من سانية البداع
وجب الشكر علينا, ما دعا لله داع
أيها المبعوث فينا, جئت بالأمر المطاع
جئت شارادا المدينة, مرحبا يا خير داع
ত্ব-লাআল বাদরু আলাই না, মিন সানিয়াতিল বিদা’;
ওয়াজাবাশ শুকরু আলাইনা, মা দা‘আ লিল্লাহি দা’।
আইয়্যুহাল মাব উসু ফি-না, জি’তা বিল আমরিল মুতা’
জি’তা শাররাদ্দাল মাদিনা, মারহাবান ইয়া খাইরা দা’।

অর্থ: “সানিয়াতুল বিদা পর্বতের রেখা ধরে, আজ আমাদের মাঝে উদিত হয়েছে পূর্ণিমার নূরানী চাঁদ। ততদিন পর্যন্ত আমাদের উপর এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব হবে, যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর পথের দিকে কোনো একজন আহ্বানকারী থাকবে। আমাদের মাঝে প্রেরিত হে প্রিয়জন! আপনি বাধ্যতামূলক আনুগত্যের নির্দেশনা নিয়ে এসেছেন, এসেছেন অকল্যাণসমূহ দূর করতে। শুভেচ্ছা স্বাগতম! হে সর্বোত্তম পথের প্রতি আহ্বানকারী।”
যুগের পর যুগ ধরে আনন্দ উল্লাসের কত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। কত দেশ, কত জাতি তাদের প্রিয়জনকে অভিবাদন জানিয়েছে, স্বাগতম নিবেদন করেছে। কত গান কত কবিতা তাদের উদ্দেশ্যে রচিত ও পঠিত হয়েছে। কিন্তু মদীনাবাসীরা আজকে তাদের প্রিয় ব্যক্তিকে যে অভিভাবন ও স্বাগতম জানালো, মদীনার নিষ্পাপ বালক-বালিকারা তাদের হৃদয়ের সুরভী মেখে রাসূলের উদ্দেশ্যে যে স্বাগত সঙ্গীত পরিবেশন করলো, তার কি কোনো তুলনা হয়?
রাসূলের আগমনে আজ যে আনন্দ-উল্লাসের ঢেউ উঠেছে সমগ্র মদীনা জুড়ে, তার সামনে আনন্দ উল্লাসের অন্য সকল ঘটনাবলী যেনো ম্লান ও বিবর্ণ হয়ে গেলো।

এরপর সকলের মাঝে শুরু হলো আশ্চর্য মধুর এক নতুন প্রতিযোগিতা। প্রত্যেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিজ মেহমান করে নিতে যেনো ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। এ লক্ষ্যে সকলেই প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে এই আবেদন ও অনুরোধ জানাচ্ছিলেন যে, হে আল্লাহর প্রিয় হাবীব! আপনি আমার বাড়ীতে, আমার মহল্লায় তাশরীফ আনুন। এখানকার সব কিছুই আপনার জন্য নিবেদিত, উৎসর্গীত।
কেউবা আগ্রহাতিশয্যে রাসূলের উটনীর রশি ধরে টানছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো মাত্র একজন। তিনি একই সময়ে, একা তাদের সকলের ইচ্ছা কিভাবে পূরণ করবেন? একই সাথে সবার বাড়িতে কিভাবে মেহমান হবেন?
আবার তিনি তো সকলেরই প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাই তিনি তো কোন একজনকে খুশী করে বাকী সকলকে কষ্ট দিতেও পারেন না। তাদের স্বচ্ছ-সুন্দর হৃদয়গুলোকে ব্যথিত করতে পারেন না। তাই তিনি মহান আল্লাহর অদৃশ্য ইঙ্গিতে একটি চমৎকার কৌশল অবলম্বন করলেন। তিনি সকলের জন্য রহমত ও কল্যাণের দোয়া করলেন। অত:পর বললেন,
“আমি তো তোমাদের সকলের মেহমান, তবে আমি বলতে পারি না যে, কোথায় কার বাড়িতে আমার প্রভু আমাকে তুলবেন। তোমরা আমার উটনীকে ছেড়ে দাও। তাকে যাওয়ার জন্য পথ করে দাও। সে যেখানে গিয়ে বসবে, সেখানেই আমার অবস্থান হবে। কেননা, সে আল্লাহর তরফ থেকে আদিষ্ট।”

রাসূলের এই কথায় সকলেই প্রীত ও সন্তুষ্ট হলেন। শ্রেষ্ঠনবী, রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সকলের ‘মেহমান’ এ কথা শুনতে পেরে সকলের মনের কামনা পূর্ণ হলো। তাই তাঁরা উটনীকে যাওয়ার জন্য পথ করে দিলো।
এবার সকলের লক্ষ্য রাসূলের উটনীর উপর কেন্দ্রীভূত হলো। উটনী চলতে শুরু করলে সকল লোক তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগলো। উটনী কোথায় গিয়ে থামে, কার বাড়ির সামনে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে তা দেখার জন্য সকলেই এক দৃষ্টিতে, উৎসুক নয়নে উটনীকে অনুসরণ করতে লাগলো।
উটনী চলতে লাগলো। একেরপর এক অলি-গলি পেরিয়ে, বিভিন্ন বাড়ী-ঘরের সামনে দিয়ে সে তার নিজস্ব গতিতে চলতে লাগলো। চলার সময় উটনীটি এদিক সেদিক তাঁর ঘাড় ঘুরাচ্ছিলো। ভাবটা এমন যেনো সে তার পরিচিত কোনো বাড়ী খুঁজছে বা কারো সন্ধান করছে।

চলতে চলতে এক সময় উষ্ট্রীটি বনু নাজ্জার গোত্রের অন্যতম শাখা বনু সালিম ইবনে নাজ্জারের বস্তির ভেতরে প্রবেশ করলো। খানিক দূর দিয়ে সে থেমে গেলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে এবার সে বনু নাজ্জার গোত্রের অন্যতম সম্মানিত ব্যক্তি হযরত আবূ আইউব আনসারী রা. এর বাড়ীর সামনে গিয়ে নিজে নিজেই বসে পড়লো।
সাথে সাথে সকলে আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠলো। অন্য সব গোত্র বাদ দিয়ে বনু নাজ্জারকে উষ্ট্রী তার বসার জন্য বেছে নেয়ায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের প্রতিবেশী হিসেবে পাওয়ায় বনু নাজ্জার গোত্রের সকলে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে গেলো। ছোট ছোট বালিকারা আনন্দে দল বেঁধে, দফ বাজিয়ে বাজিয়ে গাইতে লাগলো,
“আমরা বনু নাজ্জার গোত্রের বালিকা। আহ! কত আনন্দের কথা যে, স্বয়ং হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতিবেশী হয়েছেন।”

হযরত আবূ আইউব আনসারী রা. আনন্দে অভিভূত হয়ে দৌঁড়ে এলেন। উটের উপর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিছানাপত্র নামিয়ে ঘরে নিয়ে গেলেন। হযরত আবূ আইউব আনসারী রা. এর এই মহাসৌভাগ্যের জন্য সকলে তাঁকে মারহাবা দিতে লাগলো।
হযরত আবূ আইউব আনসারী রা. এর এই অভাবিত সৌভাগ্য দেখে সকলে বিস্মিত হয়ে গেলো। মদীনার কত বড় বড় ধনী ব্যক্তিত্ব রয়েছে, কত সম্পদের মালিক গোত্রাধিপতী আছে; কিন্তু তাদের সকলকে পেছনে ফেলে কুদরতী ফায়সালায় আজ হযরত আবূ আইউব আনসারী রা. যেই সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করলেন, তাতে সকলে অবাক হয়ে গেলো। কেউ এই কুদরতী সিদ্ধান্তের অজানা রহস্যের কোনো কূল খুঁজে পেলো না।

প্রিয় পাঠক!
যদি জানতে চান এই রহস্যের সমাধান, যদি শুনতে চান এই অলৌকিক সিদ্ধান্তের অন্তর্নিহিত কারণ, তাহলে চোখ একটু মেলে ধরতে হবে। দৃষ্টি প্রসারিত করে তাকে ঘোরাতে হবে একটু অতীতের দিকে। চলে যেতে হবে হাজার বছর পূর্বে এই মদীনা সৃষ্টির একেবারে সূচনাতে।
তাহলে চলুন না, এবার একবার নজর বুলিয়ে আসি অতীতের সেই রহস্যময় দিনগুলোতে।

চলবে... পরের পর্ব: সৌভাগ্যের রহস্য
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:২৩
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×