somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈমানের আলোয় আলোকিত হৃদয়

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পূর্বের লেখা:
রাসূল সা. এলেন মদীনায়
রহস্যে ঘেরা মদীনা:
মদীনায় অবস্থানকারী জাতি-গোত্রসমূহ

পূর্ব প্রকাশের পর:
ঈমানের আলোয় আলোকিত হৃদয়
হযরত উম্মে মা’বাদ এর বাড়ী থেকে বের হয়ে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনার দিকে অগ্রসর হন। কিছুদূর যাওয়ার পর পথিমধ্যে বুরাইদা আসলামী নামক জনৈক ব্যক্তির সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়।
সুরাকা বিন জিশামের মতো বুরাইদা আসলামীও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গ্রেফতার করে কুরাইশদের কাছ থেকে একশত উট পুরষ্কার পাওয়ার আশায় নিজ গোত্রের সত্তর জন সশস্ত্র যুদ্ধবাজ যুবকের এক বিশাল কাফেলা নিয়ে মরুভূমি চষে ফিরছিলো। কিন্তু সে জানতো না যে, তার তাকদীর তাকে একশত উটের ক্ষুদ্র পুরষ্কারের পরিবর্তে ঈমানের মতো মহামূল্যবান নিয়ামত উপঢৌকন দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
বুরাইদা আসলামী যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ক্ষুদ্র কাফেলাকে মদীনার দিকে অগ্রসর হতে দেখলো, তখন সে তার দলবল নিয়ে এগিয়ে আসলো। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সুমধুর সূরে পবিত্র কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করছিলেন।

বুরাইদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাফেলার নিকটবর্তী হতেই থমকে দাঁড়ালো। তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে লাগলো এক অপূর্ব সূরলহরী। এক অদৃশ্য স্বর্গীয় আবেশ তাকে আচ্ছন্ন করে নিলো। ঐশী সূর মূর্ছনার এক অনির্বচনীয় প্রভাব তাকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করে দিলো। সে যেনো হারিয়ে গেলো কোনো এক অচিনপুরে। সে হতবাক হয়ে গেলো, আশ্চর্য ও বিস্ময়ের চূড়ান্ত সীমায় গিয়ে উপনীত হলো। সে খুঁজে পেলো না যে, এ কোন মহাকবির কবিতা। কোন মহামানব এর রচয়িতা।

আরবের কত বড় বড় কবি-সাহিত্যিকদের কবিতাই তো সে শুনেছে। মুক্তোর মতো স্বচ্ছ-সুন্দর-অপরূপ বাক্যের গাঁথুনির উপর সর্বোৎকৃষ্ট ভাষা-সাহিত্যের অলংকার পরিয়ে তাকে আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী করে শ্রোতাবৃন্দের সামনে পেশ করার কত দৃষ্টান্তই সে প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু সে আজ যা শুনলো, পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে তার তো কোনো তুলনাই হয় না। এতো অপূর্ব, অপরূপ, অকল্পনীয়, অতুলনীয়। এসব চিন্তা করতে করতে বুরাইদার মধ্যে ক্রমশই ভাবান্তর ঘটতে লাগলো। আস্তে আস্তে সে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এগিয়ে এলো। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন তুমি কে?
সে বললো আমার নাম বুরাইদা (খুব ঠান্ডা)।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন হযরত আবূ বকর রা. কে বললেন, আমাদের বিষয়টিও সুশীতল ও শুভ মনে হচ্ছে। অত:পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন গোত্রের?
সে বললো, আসলাম (কল্যাণ ও শান্তি) গোত্রের।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কল্যাণ ও নিরাপত্তাই বটে।
এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোন শাখার?
বুরাইদা বললো, বনু সাহমের (অংশ)।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি ইসলাম থেকে অংশ পেয়ে গেছো।

এসব প্রশ্নোত্তরকালে বুরাইদার মধ্যে ক্রমশই পরিবর্তন ঘটছিলো। তার ভাগ্যাকাশ থেকে কুফর ও শিরকের কালো মেঘ সরে গিয়ে সেখানে ঈমানের নূরের উদয় হচ্ছিলো। একের পর এক উজ্জ্বল তারকাদের আগমন ঘটছিলো। ঈমানের আলোয় আলোকিত হচ্ছিলো তার হৃদয়।
সে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো, আপনার পরিচয় জানতে পারি?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন অত্যন্ত নির্ভিক ও নিরুদ্বিগ্নভাবে জবাব দিলেন, আমি মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ।
একথা শোনার সাথে সাথে, এই পবিত্র নাম রাসূলের মুখে উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বুরাইদা আসলামী কেঁপে উঠলো। উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করলো,
‘আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।’

বুরাইদা রা. ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে তার দলের অন্য সকলেও এক বাক্যে ইসলাম গ্রহণ করে নিলো।
বুরাইদা আসলামী রা. ইসলাম গ্রহণ করার পর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আরয করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যখন মদীনায় প্রবেশ করবেন, তখন আপনার সাথে একটি ঝান্ডা থাকা দরকার। এই বলে বুরাইদা রা. নিজের পাগড়ী খুলে সেটি একটি বর্শার মাথায় বেঁধে নিলেন এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগে আগে চলতে লাগলেন। বুরাইদার দেখা দেখি তার দলের অন্যান্যরাও নিজেদের পাগড়ী খুলে বর্শার মাথায় বেঁধে নিশান উড়িয়ে রাসূলের আগে আগে চলতে লাগলেন।

রাব্বুল আলামীনের কি অলৌকিক কারিশমা! একটু আগে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গ্রেফতার করার উদ্দেশ্যে অস্ত্রে-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছুটে এসেছিলো, তাঁরাই এখন রাসূলের আনুগত্য কবুল করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিলো। যাদের উদ্যত বর্শাগুলো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে দুর্দম নির্মমতার সঙ্গে এগিয়ে এসেছিলো, এখন সেই বর্শাসমূহের উপরই ইসলামের বিজয় কেতন উড়তে লাগলো।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাফেলা কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর তাদের সাথে সাহাবায়ে কিরাম রা. এর একটি ক্ষুদ্র বাণিজ্য কাফেলার সাক্ষাত হলো। হযরত যুবায়র রা. এর নেতৃত্বে তাঁরা সিরিয়া গিয়েছিলেন এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করে মক্কায় ফিরছিলেন।
মদীনার পথে একটি মনযিলে ঘটনাচক্রে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তাদের সাক্ষাত হয়ে যায়। তাঁরা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আবূ বকর রা. কে কিছু সাদা বস্ত্র উপহার দিলেন। এরপর তাঁরা সকলে আবার মদীনার দিকে চলতে লাগলেন।

রাসূলের অপেক্ষায় মদীনাবাসী...
মদীনা মুনাওয়ারা থেকে তিন মাইল দূরে ছোট্র একটি লোকালয়। সমতল ভূমি থেকে একটু উচুঁতে অবস্থিত হওয়ায় তাকে “আলিয়া” বা “কুবা” পল্লী বলা হয়। এই বসতির কোল ঘেসে বিস্তৃত শস্য ক্ষেত। এখানে বসবাস করতেন আনসারদের সম্ভ্রান্ত ও গন্য-মান্য কয়েকটি নওমুসলিম পরিবার।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা ত্যাগ করে মদীনার দিকে রওয়ানা হয়েছেন। এ খবর যথাসময়ে মদীনায় হিযরত করে আসা মুজাহির ও আনসার সাহাবীদের কাছে পৌছে গিয়েছিল। তাই তাঁরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলের রাসূলের আগমানের। তাঁর পথপানে চেয়ে গুনছিলেন প্রতীক্ষার প্রহর। প্রতিদিন তাঁরা ফজরের নামাজের পর শহরের শেষ প্রান্তে চলে যেতেন এবং রাসূলের আগমনের অপেক্ষা করতেন।
সময়টা ছিল গ্রীষ্মের। তাই রোদের প্রখরতা ছিল প্রচন্ড, গরমের তীব্রতা ছিল ভীষণ। তদুপরি তারা রোদ্রতাপের তীব্রতা ও গরমের প্রচন্ডতা সহ্য সীমার বাহিরে চলে যাওয়া এবং ছায়ায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সে স্থান ত্যগ করতেন না। এরপর যখন সূর্যের তাপ প্রচন্ড আকার ধারণ করত এবং তা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যেতো, তখন তারা অপারগ হয়ে, পরদিন আবারো আসার প্রত্যাশা নিয়ে যার যার বাড়ী ফিরে যেতেন।

এমনিভাবে কয়েকদিন চলার পর, একদিন যখন সকলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে পরিশেষে নিজ নিজ স্থান ত্যাগ করছিলো, ঠিক এমনি সময় সর্বপ্রথম এক ইহুদির দৃষ্টি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাফেলার উপর পতিত হয়। সে অনুমান করে বুঝে নেয় যে, এটাই মুসলমানদের সেই প্রতিক্ষিত সেই রাসূলের কাফেলা। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে টিলার উপর থেকে চিৎকার করে বলে উঠে,
‘ইয়া মা’শারাল আরব! হাযা জাদ্দুকুম’
“হে আরবের লোকসকল! তোমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। ঐ দেখো তিনি আসছেন। ঐ তো তোমাদের আরাধ্যজন।”
ব্যাস! এই একটি কথাই ‘জিয়ন কাঠি’র ছোঁয়ার মত মুহুর্তেই জাগিয়ে তুলল সমগ্র মদীনাবাসীকে। রাসূলের আগমনের এই সংবাদ প্রচার হতেই লোকজন দলে দলে নিজ নিজ বাড়ী ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো। মুসলমানগণ চতুর্দিক থেকে নগর প্রান্তে এসে সমবেত হতে লাগলেন। মুসলমান ছাড়া অন্যান্য ধর্মের লোকেরাও প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক নজর দেখার জন্য সমবেত হলো। বাঁধ ভাঙ্গা শ্রোতের মত ছুটে আসতে লাগলো আবাল, বৃদ্ধ, বনিতার ঢল।

মুসলমানদের আজ যেন আনন্দের শেষ নেই, খুশির অন্ত নেই। সকল চাওয়া পাওয়া যেন আজ ষোলকলায় পূর্ণ হয়েছে। অবসান ঘটেছে দীর্ঘ অপেক্ষা প্রতিক্ষার। স্বয়ং আল্লাহর নবী আজ তাদের মাঝে তাশরীফ এনেছেন -তাদের জন্য এর চেয়ে খুশি ও আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে? কত যুগ যুগান্তের সাধনা, কত দীর্ঘ দিনের কামনা। কত সহস্র মহা মানবের বিনিদ্র রজনী যাপন, কত অজুত নবী-রাসূলের ভবিষ্যতবাণী জ্ঞাপন; সবই যেন আজ সত্য হয়ে, বাস্তব হয়ে ধরা দিলো তাদের কাছে।

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ধীরে ধীরে কুবা পল্লীতে উপনীত হলেন। বেলা তখন দ্বিপ্রহর। সূর্য যেনো তার সর্বশক্তি নিয়ে মহা আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মরুভূমির উপর এবং প্রতিটি বালুকণায় তার শক্তি প্রয়োগ করে তাকে তপ্ত থেকে উত্তপ্ত করে তুলছে।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটের উপর থেকে নেমে একটি খেজুর বৃক্ষের ছায়ায় বিছানো শয্যার উপর বসে পড়লেন। আস্তে আস্তে ভীড় বাড়তে লাগলো। দলে দলে লোকজন এসে রাসূলের চার পাশে ভীড় জমাতে লাগলো। সালাম জানিয়ে, মুসাফাহা করতে লাগলো একেরপর এক। কিন্তু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আবূ বকর রা. প্রায় একই বয়সের এবং একই ধরণের সাদা কাপড় পরিহিত হওয়ায় অনেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে চিনতে পারছিলেন না। কেননা, আনসারদের অধিকাংশই ইতিপূর্বে আর কখনও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেন নি। এজন্য তাদের অনেকেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে, হযরত আবূ বকর রা. ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে কে কোনজন। যার ফলে অনেকেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভেবে হযরত আবূ বকর রা. কে সালাম করছিলেন এবং মুসাফাহা করছিলেন।

হযরত আবূ বকর রা. নিজ প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানুষের সন্দেহ আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই লোকদের এই সন্দেহ-সংশয় দূর করার জন্য তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাথার উপর আপন চাঁদর মেলে ধরে ছায়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। এক বর্ণনা মতে হাত পাখা দিয়ে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বাতাস করা আরম্ভ করলেন। ফলে সকলে রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে চিনতে পারলেন এবং তাদের সব সন্দেহ-সংশয়ের অবসান হলো।

এরপর আনসারদের পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচশত জনের একটি বিরাট জামা‘আত এই মোবারক কাফেলাকে অভ্যর্থনা জানালো। সাথে সাথে তাঁরা অত্যন্ত বিনীতভাবে, গভীর শ্র্রদ্ধার সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এই আরয করলেন যে,
“হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাশরীফ নিয়ে চলুন। এখানে আপনি সর্ব দিক থেকে নিরাপদ। এখন থেকে আপনার কথাই শোনা হবে এবং তা মানা হবে। প্রয়োজনে আমরা আপনার একটি কথার বাস্তবায়নে আমাদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে দিবো।”

এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেলার অগ্রভাগ থেকে সম্মুখে রওয়ানা হলেন। কুবা পল্লীতে যেন তখন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিলো। মহিলারা পর্যন্ত নিজ নিজ ঘর-বাড়ীর ছাদে উঠে দেখছিলো শেষ নবীর মুবারক এই কাফেলাকে। কাফেলার মাঝে তারা আল্লাহর প্রিয় হাবীবকে খুঁজে ফিরছিলো। প্রতিটি অলি-গলিতে সর্বসাধারণ ছুটোছুটি করছিলো। সকলেই যেনো আজ আনন্দে আত্মহারা। খুশিতে মাতোয়ারা। পথে-ঘাটে, ঘরের ছাদে, খিরকি পথে; সর্বত্রই শোনা যাচ্ছিলো একই কথা। সকলের মুখ থেকেই উত্থিত হচ্ছিলো একই ধ্বনি-
“আল্লাহু আকবার, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। আল্লাহু আকবার, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন।”

হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমনের সময় মদীনাতে যেই অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিলো আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও এমন দৃশ্য দেখিনি। হযরত বারা ইবনে আযিব রা. বলেন, আমি মদীনাবাসীকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনে যত খুশি হতে দেখেছি, অন্য কিছুতেই আর তত খুশি হতে দেখিনি।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বরকতময় পদার্পণ লাভে সর্ব প্রথম ধন্য হয় আমর ইবনে আউফ গোত্রের জনপদ। দিনটি ছিলো প্রথম হিজরী সনের ১২ ই রবিউল আউয়াল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে আমর ইবনে আউফ গোত্রের সর্দার কুলসুম ইবনে হাদামের ঘরে উঠেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের পূর্বে যে সকল সাহাবী মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই এই কুলসুম ইবনে হাদামের ঘরে ছিলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনেরর অপেক্ষা করছিলেন।

হযরত হামযা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কা থেকে বের হওয়ার তিন দিন পর যাত্রা করেন এবং ইতোমধ্যেই এখানে এসে রাসূলের সাথে মিলিত হয়ে অন্যদের সাথে অবস্থান করতে থাকেন।
দুই দিন পর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সা’দ ইবনে খাইসামা রা. এর আতিথ্য গ্রহণ করেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুবায় অবস্থানের তৃতীয় দিন হযরত আলী রা. এসে তাদের সাথে মিলিত হন। হযরত আলী রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের কারণে মক্কায় থেকে গিয়েছিলেন এবং রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর নিকট লোকদের গচ্ছিত রাখা বিভিন্ন দ্রব্যাদি তাঁর প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে অতি সংগোপনে কুরাইশ কাফিরদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হন।
কুরাইশদের হাতে বন্দী বা নিহত হওয়ার আশংকায় তিনি দিনের বেলা গুহার মধ্যে লুকিয়ে থেকে রাত্রিকালে যথাসম্ভব দ্রুতবেগে পথ চলতেন। মরুভূমির এবড়ো-থেবড়ো, উঁচু-নীচু পথ চলতে গিয়ে হযরত আলী রা. এর পদদ্বয় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। ঝোঁপ-ঝাড়ের কন্টকাকীর্ণ পথ মাড়িয়ে হযরত আলী রা. যখন মদীনায় এসে পৌঁছেন, তখন তাঁর পা দিয়ে অঝোর ধারায় রক্ত ঝড়ছিলো। কুবা পল্লীতে পৌঁছার পর হযরত আলী রা. এমন অবসন্ন হয়ে পড়েন যে, তখন তাঁর আর চলার কোনো শক্তি ছিলো না। কিন্তু প্রিয় নবী সা. এর সাথে সাক্ষাতের পর তিনি তার সকল কষ্ট ভুলে গেলেন। সুস্থ হয়ে উঠলেন। ধীরে ধীরে আগের চেয়েও বেশি ক্ষমতা ফিরে পেলেন।

চলবে... পরবর্তী পর্ব: নির্মিত হলো কুবা মসজিদ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×