1.
আজ ৪ঠা মে, আমার মেয়ে দ্বিপৃর জন্মদিন।
এই প্রথম মেয়ে আমাকে ছাড়া জন্মদিন করল...
আমি অবশ্য আজকে জন্মদিন বিষয়ে কিছু লিখতে চাইনি। আমি লিখছিলাম পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ "পায়ে-হাটা" ব্রিজ প্রসঙ্গে...
কিন্ত কিছুক্ষন আগের একটি ফোনালাপ জন্মদিনের বিষয়টা যোগ করতে বাধ্য করল...
2.
ব্রিজটির আক্ষরিক নাম La passerelle des Trois Pays । ইংরেজীতে এর মানে দাড়ায় the gateway for three countries.
সোজা বাংলায় ব্রীজটি ফ্রান্স আর জার্মানী ও সুইজারল্যান্ড এর মধ্যে ভাতৃত্বের সেতুবন্ধন।
জার্মানীর Weil am Rhein শহরের ঠিক উল্টোদিকে রাইন নদীর অপরপারের গ্রামটির নাম "উনেগে"(Huningue)। ফ্রান্সের Alsace region এর অন্তর্গত।
এই দুটি এলাকার মাঝদিয়ে প্রবাহিত হয়েছ রাইন নদী। ব্রীজটি রাইন নদীর উপর স্থাপিত হয় ২০০৭ সালে যা তিন দেশের তিন শহরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছে।
3.
Weil am Rhein কে শহর বলছি কারন ওখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ঘরবাড়ি, দোকান পাট - এমনকি রয়েছে বড় একটা সুপার মার্কেটও।
রাইন নদীর নামে সুপার মার্কেটের নাম রাইন সেন্টার।
অথচ ঠিক এর উল্টাে চিত্র নদীর অপরপারে। Huningue মোটামুটি নির্জন একটা এলাকা। বেশীরভাগ পুরোনো ধাঁচের বাসাবাড়ী। আর রয়েছে অল্প দু-একটা দোকানপাট।
যে কারনে এগ্রামের বেশিরভাগ লোকই (আমার ধারনা) জার্মানীর Weil am Rhein থেকে বাজার করে। বেশিরভাগই রাইন সেন্টার থেকে। ট্রলি ভরে বাজার করে ব্রীজের পারে ট্রলি রেখে যায়। যেকারনে বেশ কয়েকবারই দেখলাম এপাড় থেকে কেউ একজন রাইন সেন্টারের ট্রলিগুলো ফেরৎ নিয়ে যাচ্ছে।
4.
"উনেগে"তে ঘুরাঘুরি শেষে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ম্যাপ আর কম্পাস দেখে হাটতে হাটতে বাস স্টেশন খুজছিলাম।
ফুটপাথ ধরে হেটে যাচ্ছি। একটু সামনে একটা ছোট দোকান চোখে পড়ল। দোকানের সামনে দুজন দশসাই চেহারার লোক দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে।
আমি পাশ কেটে চলেই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ থেমে জিজ্ঞেস করলাম -
"আশেপাশে কি কোন বাসস্টেশন আছে?"
ওদের একজন উত্তর দিল "এদিকে কোন বাসস্টেশন নেই।"
তারপর আবার জিজ্ঞে করল "তুমি কোথায় যাবে?"
"এয়ারপোর্ট"
"তোমার ফ্লাইট আছে?"
"হ্যা"
"কিন্ত তুমিতো এখান থেকে কিছুই পাবে না।"
"তাহলে উপায়?"
এক মুহুর্ত চিন্তা করল লোকটি "উম্...আমি তোমাকে লিফট দিতে পারি।"
আমি বিনা বাক্যব্যায়ে একেবারে ছ্যাবলার মত রাজী হয়ে গেলাম। ভদ্রতার ধারে কাছেও গেলাম না।
লোকটি তার বন্ধুর কাছ থেকে বিদায় নিল। আমাকে তার গাড়ির সামনে বসাল।
গাড়ীর পেছনে ছোট্ট একটি মেয়ে উঠল, আমার দ্বিপৃর সমান। এতক্ষন ওর সাথেই ছিল খেয়াল করিনি। পরে জেনেছিলাম সে ওরই মেয়ে।
"তুমি আজ কোথায় যাচ্ছ" - গাড়ীতে উঠে ওকে জিজ্ঞেস করলাম।
"কেন এয়ারপোর্টে"
"না, মানে এয়ারপোর্ট থেকে কোথায়, দেশের বাইরে যাচ্ছ নাকি দেশেই অন্য কোন শহরে?"
"আরে না, আমিতো শুধু তোমাকে নামিয়ে দিতে যাচ্ছি..."
আমি অবাক! আমি ভেবেছিলাম ও নিশ্চয়ই কোথাও যাচ্ছে, যে কারনে আমাকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যেতে রাজী হয়েছে...
অথচ ও শুধুই আমাকে সাহায্য করার জন্য এয়ারপোর্টে যাচ্ছে...
5.
ওর নাম 'এইচ'। তিনবার জিজ্ঞেস করার পর আমি নাম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলাম। এইচের সাথে সারা পথ আলাপ হল। একটা ক্যাসিনোতে কাজ করে। সিকিউরিটি অফিসার। বাবা মা দুজনেই ভিনদেশী। এখন ফ্রান্সে স্থায়ী হয়েছেন। ওর আর একটি ছেলেও আছে।
এয়ারপোর্টে পৌছে তেপ্পান্নবার ধন্যবাদ দিলাম আমাকে লিফট দেবার জন্য।
তারপর নেমেই মনে হল কেন যে একটা ছবি তুললাম না ওর সাথে!একবারও ছবি তোলার কথাটা মাথায় আসেনি!
6.
যাই হোক, আজ এ লেখা লিখতে লিখতে হঠাৎই মনে হল আমিতো ওকে ফোন করতে পারি! এয়ারপোর্টে ফেরার সময় ওর ফোন নম্বরটাতো নিয়েছিলাম - এখনই ফোন করি না কেন!
প্রায় সাথে সাথেই ওকে ফোন করলাম। পরিচয় দিতেই চিনল আমাকে। বেশ অনেক্ষন কথা হল ওর সাথে। ওর মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই সবচে' আশ্চর্যের ব্যাপারটা জানলাম ।
আজ সে বেশ ব্যাস্ততার সাথে মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করছে!
আমি হতবাক হয়ে গেলাম! কি অদভুত কোইনসিডেন্স !!
ওর মেয়ে আর আমার মেয়ে দুজনেরই জন্মদিন আজকে !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬