বাজ্জল (Basel, Switzerland) শহরে ঘুরাঘুরির শুরুতেই আমি আমার প্রিয় মাংকি ক্যাপ আর ছাতাটা হারিয়ে ফেলি। ব্যাপারটা ঘটে তাড়াহুড়া করে ট্রামে উঠতে গিয়ে...
সেদিন মাঝেমাঝে বেশ তুষারপাত হচ্ছিল।
অাজব এই শহর। এই রোদ, এই বৃষ্টি আবার হঠাৎই তুষারঝড়। বুদ্ধি করে ছাতাটা নিয়েছিলাম তাই রক্ষা। St-Louis Grenze স্টেশনে ট্রামের টিকিট কেটে তাড়াহুড়া করে উঠে দেখি ওগুলো আনা হয়নি। ওদুটো পাশে রেখে টিকিট কাটছিলাম।
যাই হোক Johanniterbrücke স্টেশনে নেমে ব্রীজ পার হয়ে উল্টো দিকে Feldbergstrasse এ এলাম। আবার ট্রামে উঠব - এবার গন্তব্য Kleinhüningen। এখান থেকে একটু হাটলেই Germany, French আর Switzerland এর বিখ্যাত Tripoint। রাস্তায় দাড়িয়ে আছি। বুঝতে পারছিলামটা স্টেশনটা কোথায়। এদিকে ট্রাম চলে এসেছে পেছনে। চট করে একটা সেলফি তুলে ফেললাম। তারপর দ্রুত সামনের দিকে হাটতে শুরু করলাম।
ট্রামটা আমাকে পেরিয়ে বেশ খানিকটা দুরে গিয়ে থেমে গেল।
আমি আরো দ্রুত হাটতে শুরু করলাম - যদি ধরতে পারি!
ট্রামের শেষ বগির পেছনের গেটটা দিয়ে একজন বৃদ্ধা নামলেন। মিনিমাম ৭০ বছর তো হবেই। আমার কাছাকাছি এসে হঠাৎ উল্টো ঘুরে আবার ট্রামের দিকে একরকম দৌড়ুতে শুরু করলেন। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই বুড়ি ট্রামের ভিতর কিছু ফেলে রেখে এসেছেন।
ট্রামের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি সুইচ টিপে আবার খুললেন। ইতোমধ্যে আমি দরজার প্রায় কাছে। অবাক কান্ড! তিনি ট্রামে না উঠে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন! আমার দিকে তাকিয়ে বিগলিত হাসি উপহার দিলেন। আমার জন্য দরজাটা খুলতে পেরে উনি ভীষন খুশি।
আমি অবাক! উনি ফিরে এসেছেন আমাকে ট্রামটা ধরিয়ে দেবার জন্য !!
বিষ্ময়ে হতবাক আমি। উনি কিভাবে বুঝলেন আমি ট্রামে উঠতে যাচ্ছিলাম? কি জানি... হয়তো খেয়াল করেছেন আমার হাতে ট্রামের টিকিটটা। তবে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেন কিভাবে সেটাও বোধগম্য হল না। আমি তাড়াহুড়া করে ট্রামে উঠে ফিরে তাকিয়ে আর তার দেখা পেলাম না। ইতিমধ্যে ট্রাম ছেড়ে দিয়েছে...
আমার চোখ ভিজে উঠল... সত্যিই...
এই বিদেশ বিভূইয়ে একজন অপরিচিত মাতৃতুল্য মহিলার এই কান্ড আমার সারাজীবন মনে থাকবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ রাত ১:৫৮