somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফ্রিটক
পরিচয় দেওয়ার মত বড় কিছু অর্জন করতে পারি নি। মানুষের ভাবনা গুলি কোথাও না কোথাও প্রকাশ করতে হয়। আমার মতবাদ বা ভাবনা গুলি আমি সবার সাথে এখানে শেয়ার করব। আপনার ভাল লাগতে পারে, নাও পারে। সবাই মানুষ হলেও ভাল লাগা, না লাগা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপ

গরুতে ইট খাওয়া( ইত্তেফাক থেকে নেওয়া)

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আর কতদিন গরুতে ইট খাবে?
ড. এজাজ মামুন
২৬ অক্টোবর, ২০১৭ ইং ০০:০০ মিঃ
আর কতদিন গরুতে ইট খাবে?
গবু চন্দ্র সরকারের বড় কর্মকর্তা। গবু সাহেবের একমাত্র কন্যার বিয়ের সব ঠিক হয়ে গেছে। একজন ইয়া বড় রাজনৈতিক নেতার একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বিয়ে। সাত শহরের লাখো মানুষকে খাওয়াতে হবে। পাত্রপক্ষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গবু সাহেবকেও উপহার উপঢৌকনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিন রাত গবু সাহেবের ঘুম হয়নি। আর গবু ম্যাডাম তো রেগে অগ্নিগিরি—তার এক অকর্মা, বেহুদা স্বামী জুটেছে! যার জন্য তাঁর মান-সম্মান সবই খোয়াবার জোগাড়। গবু সাহেব কূলকিনারা না করতে পেরে সকালে অফিসে ঢুকেই ডেকে পাঠালেন তার বিশ্বস্ত অধস্তন হবু সাহেবকে। হবু সাহেব সব শুনলেন মনোযোগ দিয়ে। তারপর গবু সাহেবকে এই বলে আশ্বস্ত করলেন, “বড় সাহেব আপনার মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড়ের দায়িত্ব আমার। আপনি নিশ্চিন্তে বাড়িতে গিয়ে মেয়ের বিয়ের এন্তেজাম করুন।” হবু সাহেব সব জেলার কর্মকর্তাদের বললেন, যে করে হোক কাল সকালের মধ্যেই তার ২০ লাখ টাকার দরকার। সবাই সময় চাইলেন কিন্তু লালপুর জেলার মহাকর্তা জানিয়ে দিলেন—মহাশয়, আজ রাতেই আপনার কাছে ২০ লাখ টাকা পৌঁছে যাবে। লালপুর জেলার মহাকর্তা তার একান্ত সহকারীকে নির্দেশ দিলেন ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের কেনা ১২ লাখ ইটের ১০ লাখ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিক্রি করে টাকাটা তার হাতে পৌঁছানোর জন্য। করিত্কর্মা সহকারীর এতো হাতের ভেলকি। মাত্র দু’ঘণ্টায় ১০ লাখ ইট বিক্রির ২৫ লাখ টাকা পেয়ে গেলেন জেলার মহাকর্তা। পাঁচ লাখ হাতে রেখে পৌঁছে দিলেন ২০ লাখ টাকা হবু সাহেবের কাছে। হবু সাহেবও তো কম নন—হাতে পাঁচ লাখ রেখে বাকিটা জমা দিলেন মহাকর্তা গবু সাহেবের কাছে। ঘটনা চাপা থাকল না। কদিন পরেই পত্রিকার পাতায় খবর চলে এল। সরকারের মন্ত্রী মহোদয় কমিশন গঠন করলেন এই ইট চুরির তদন্তের জন্য। গবু সাহেবের তো মাথায় হাত। ভয়ে রইলেন, এই বুঝি তার চাকরিটা গেল! সেই সঙ্গে মেয়ের বিয়েটাও ভেঙে যাবার আশঙ্কায় রাতে ঘুমুতে পারলেন না তিনি। সকালেই সাহায্য চাইলেন হবু সাহেবের। হবু সাহেব লালপুরের অধিকর্তাকে জানালেন, যে করে হোক এই যাত্রায় বাঁচবার পথ বের করতে হবে। লালপুরের মহাকর্তা আবারো আশ্বস্ত করলেন তাঁর ঊর্ধ্বতন হবু সাহেবকে। তার করিত্কর্মা সহকারীকে ডেকে নির্দেশ দিলেন যে করে হোক প্রমাণ করতে হবে তারা নির্দোষ। আজ তদন্তের দিন। করিত্কর্মা সহকারী তার লোকবলকে এলাকার সব গরু ইট সংরক্ষণের এলাকায় যেখানে তদন্ত কমিটি আসছে সেখানে আনবার নির্দেশ দিলেন। আর জেলার সব মনোহারী দোকানের কয়েক মণ নালীগুড় কিনে আনালেন। ইটের উপর ছিটিয়ে দেওয়া হলো একই রঙের সেই নালীগুড়। গরুগুলো নালীগুড়ের স্বাদে মত্ত হয়ে চাটতে লাগল বিক্রির পর অবশিষ্ট ইটগুলো। লালপুরের মহাকর্তা তদন্ত কমিটিকে দূর থেকে দেখিয়ে দিলেন গরুতে ইট খাওয়ার দৃশ্য। শক্ত করেই বললেন, এই গরুগুলোই ১১ লাখ ইট খেয়ে ফেলেছে, পড়ে থাকা বাকি ইটগুলোও দ্রুত সাবাড় হয়ে যাবে। ধন্য হলেন গবু সাহেব। নিষ্কলঙ্কই থেকে গেলেন গবু, হবু আর লালপুরের মহাকর্তা। বাড়তি ইট বিক্রির পাঁচ লাখ টাকাও তাঁরা পকেটে পুরলেন মহানন্দে। তদন্ত রিপোর্ট বেরুল। বলা হলো, “আজকাল হাভাতে গরুরা সব কিছু ফেলে ইটে বেশি তৃপ্তি পাচ্ছে। আর সে কারণেই লালপুরে মাত্র সাত সপ্তাহে সরকারের ফেলে রাখা ১২ লাখ ইটের ১১ লাখই গরুতে খেয়ে ফেলেছে। বাকি এক লাখও এ সপ্তাহেই নাই হয়ে যাবে”।
এটি একটি কাল্পনিক ঘটনা। তবে আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অসঙ্গতি আর অন্যায়-অবিচারগুলোর সঙ্গে এর দূরত্ব যে খুব বেশি নয় তা ভুক্তভোগী মাত্রই স্বীকার করবেন। চতুরতার আবর্তে চোখের নিমেষেই বহু গুরুতর অন্যায় অনিয়ম এবং জনগণের সমপদ আত্মসাতের ঘটনা অলৌকিকভাবে সহজেই হয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ, সঠিক। এসব দেখলে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। ক্ষোভে ও ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে হয় যখন শুনি বাংলাদেশের, বাঙালির অহংকার মুক্তিযুদ্ধের সনদ জালিয়াতি করেছেন দেশের উপরের সারির কর্মকর্তারা, বিদেশি গুণীজনদের জন্য দেওয়া পদকেও ঘটেছে সোনা চুরির ঘটনা। অফিস, আদালত, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষালয়, হাসপাতাল, পরিবহন, খাদ্যগুদাম কোথায় নেই অনিয়ম আর দুর্নীতি! কিন্তু কেন যেন সবার চোখ অন্ধ। আমরা দেখেও দেখি না, শুনেও শুনি না। কেন এই নীরবতা? সব মেনে নেওয়ার নতজানু মানসিকতা? সময় এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে হবে। দেশটাকে আর বিশ্বটাকে নতুনরূপে সাজাবার জন্য আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক নতুন প্রজন্ম। তাদের আলোকিত পথের দিশা দেবার দায়িত্ব আমাদের সবার।
n লেখক :প্রবাসী বিজ্ঞানী



সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×