মুসলিম প্রধান দেশসমূহে মদ একটি নিষিদ্ধ বিষয়। মদ নিয়ে প্রকাশ্যে মতপ্রকাশ এখানে ভালো চোখে দেখা হয় না। কিন্তু ইউরোপ আরেরিকার দেশসমূহে মদ নিয়ে মাতামাতি কম নয়। আজ আমি আপনাদেরকে মদ সম্পর্কিত মজার কিছু তথ্য দেবো।
মধ্য জার্মানির মোজেল নদীর উপত্যকায় আঙুরচাষ শুরু হয় রোমান আমলে, কাজেই মোজেল-কে জার্মানির সবচেয়ে পুরনো ওয়াইন তৈরির এলাকা বলা চলে৷ আঙুরখেতগুলো নদীতীরের খাড়াই পাহাড়গুলোর ঢালে৷ নীচে একটির পর একটি ওয়াইন তৈরির শহর বা গ্রাম, যেমন এখানে কখেম৷ এ’রকম একশো ওয়াইন তৈরির শহর আছে মোজেল উপত্যকায়৷
বোর্দো: শহর, এলাকা এবং ওয়াইন
পশ্চিম ফ্রান্সের একটি শহর৷ অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলের আবহাওয়া৷ বোর্দো এলাকার মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে চুনাপাথরের কারণে৷ বিশ্বখ্যাত বোর্দো রেড ওয়াইনের আঙুরগুলো এই পরিবেশে স্বচ্ছন্দে বাড়তে পারে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফ্রান্সের প্রতীক মোরগটিকে, ‘শাতো লা ফ্রঁস’ ভিনিয়ার্ডের আঙুরখেতগুলোর উপর নজর রাখছে৷
জার্মান ওয়াইন রুট প্রতিষ্ঠা করা হয় আশি বছর আগে৷ আঠারো মিটার উঁচু ওয়াইন গেট তার সাক্ষী৷ ওয়াইন রুট যাবে প্যালেটিনেটের ভিতর দিয়ে, যা কিনা বিশ্বে রিজলিং ওয়াইন তৈরির সবচেয়ে বড় এলাকা৷ রিজলিং-কে বলা হয় ‘জার্মান ওয়াইনের রাজা’, সারা বিশ্বে এর কদর৷ ১৮৬৯ সালে যখন সুয়েজ ক্যানেল খোলা হয়, তখন তার ‘স্বাস্থ্যপান’ করা হয়েছিল প্যালেটিনেটের রিজলিং ওয়াইন দিয়ে৷
বার্গান্ডি ঠিক বোর্দোর মতোই একটি বিখ্যাত ওয়াইন - যেমন হোয়াইট, তেমনই রেড৷ প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এই এলাকাতেই একটি নিলাম হয়৷ সেই নিলামে গতবছর এক পিপে ‘কর্তঁ-ব্রেসন্দ গ্রঁ ক্রু’ ওয়াইন বিক্রি হয়েছে দু লাখ বিশ হাজার ইউরো মূল্যে৷
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ওয়াইন তৈরি হয় ইটালি-তে৷ টাস্কানি অঞ্চল হল সেই ওয়াইন তৈরির কেন্দ্রবিন্দু৷ পাহাড়ি জমি, নরম আবহাওয়া মিলিয়ে কিয়ান্তি ক্ল্যাসিকো, ভিনো নোবিলে দি মন্তেপুলচিয়ানো, ব্রুনেল্লো দি মন্তালচিনো-র মতো ওয়াইন তৈরি করার পক্ষে আদর্শ স্থান৷ যে সাঙ্গিওভেজি আঙুর থেকে এই সব ওয়াইন তৈরি হয়, তা শুধু ইটালিতেই পাওয়া যায়৷
ডোরু উপত্যকার ঢালে যে ছোট্ট, মিষ্টি আঙুর ফলে, তা থেকে প্রখ্যাত পোর্ট ওয়াইনের ঘন, গাঢ় স্বাদটি আসে৷ পোর্ট আসলে খাওয়ার পরে খাওয়ার একটি ভারী ওয়াইন৷ তৈরি হবার পরে এই ওয়াইন ওক কাঠের পিপেয় পুরে পোর্ট শহরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ওকের ব্যারেলে সেই ওয়াইন রাখা থাকে অন্তত দু’বছর৷ ডোরু নদীর উপত্যকা বিশ্বের প্রথম সংরক্ষিত ওয়াইন এলাকা৷ ২০০১ সালে ডোরু ভ্যালিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়৷
স্পেনের রিয়খা অঞ্চলের বোডেগা ইসিওস ওয়াইনারি৷ ডিজাইন করেছিলেন স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা৷ সেডার কাঠের লম্বা বাড়িটার ঢেউখেলানো ছাদ অ্যালুমিনিয়ামের বড় বড় বার দিয়ে তৈরি৷ পুরোটা দেখে একটা সুবিশাল ওয়াইন পিপের কথা মনে হবে৷ ওক কাঠের পিপেতে আঙুর ফার্মেন্ট করার প্রথা শুরু হয় উনিশ শতকে৷ ‘ব্যারিকা’ নামধারী ওক কাঠের পিপেগুলো থেকেই রিয়খা ওয়াইন তার বিশেষ স্বাদটা পায়৷
টোকাই হাঙ্গেরির একটি শহর৷ আবার টোকাই একটি হোয়াইট ওয়াইন৷ টোকাই ওয়াইন তৈরির নিয়ম হল, এই ওয়াইনকে দশ বছর পিপেতে ‘ম্যাচিওর’ করতে হবে, অর্থাৎ ‘পাকতে’ হবে; পরে আরো পাঁচ বছর বোতলে৷ ফলে গোটা এলাকাটিতেই মাটির নীচে সুড়ঙ্গ করা আছে, যেখানে টোকাই ওয়াইন তার বিশেষ ফ্লেভার পায়৷
ওয়াইন ও ওয়াইন তৈরির দেবতা হলেন ডায়োনিসাস, জাতিতে গ্রিক৷ খ্রিষ্টজন্মের ষোলো শতাব্দী আগে থেকেই গ্রিকরা ওয়াইন তৈরি করছিল৷ সেই ওয়াইন ‘অ্যাম্ফোরা’ বা লম্বা-গলা পাত্রে রেখে, আলেপ্পো-র পাইন গাছের রজন ‘রেটসিনা’ দিয়ে সেই পাত্র সিল করা হতো৷ এর ফলে সেই ওয়াইন একটা বিশেষ ফ্লেভার পেতো৷ আজও গ্রিসের রেটসিনা ওয়াইন ফার্মেন্ট করার সময় তা’তে রজনের ছোট ছোট টুকরো দেওয়া হয়৷
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:৪৩